গর্ভাবস্থায় সহবাস

গর্ভাবস্থায় সহবাস

প্রত্যেক নারীর জীবনে খুবই বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো গর্ভাবস্থা (pregnancy)। গর্ভাবস্থায় একজন নারীকে নানা নিয়ম-কানুন ও রুটিন মেনে চলতে হয়। অনাগত শিশুর সুরক্ষায় গর্ভবতী নারীরা নিজেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে আমূল-পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। কারণ এই সময় প্রত্যেক পদক্ষেপই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সহবাস করলে কোনো সমস্যা হয় কিনা এবং সহবাসের সঠিক নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানা থাকতে হবে।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়

গর্ভাবস্থায় অন্যতম জটিল এক প্রশ্ন হলো এই সময় সহবাস করলে গর্ভে থাকা সন্তানের কেনো সমস্যা হবে কিনা অথবা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে কিনা। যদিও এই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই নানা ভুল ধারণা রয়েছে। তবে ডাক্তারদের সংজ্ঞানুযায়ী গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে অনাগত সন্তানের ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ হলো অনাগত শিশু মায়ের পেটের ভিতর পেশিবহুল আবরণে আবৃত থাকে যা তাকে সুরক্ষা প্রদান করে।

তবে আমরা মনে করি যে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস সহবাস করা উচিত নয়। এর ফলে পেটের সন্তানের সমস্যা হতে পারে। যদিও এটি সম্পূর্ণই ভুল ধারণা। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলে অথবা ডাক্তার কর্তৃক কোনোরকম বাধ্যবাধকতা আরোপ করা না হলে স্বামী-স্ত্রী নিঃসঙ্কোচে সহবাস করতে পারবেন। 

তবে গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে শারীরিক মিলনের ফলে জরায়ু পেশীগুলো সংকোচনের ফলে জরায়ু টান খাচ্ছে বলে মনে হয়। যাকে মেডিকেল ল্যাঙ্গুয়েজে বলা হয়, “Braxton Hicks Contractions”। এটি সাধারণ একটি বিষয়। এতে চিন্তিত হওয়ার কোনো দরকার নেই। গর্ভাবস্থায় (pregnancy) শেষের দিকে সহবাসের ফলে প্রায় নারীর এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছুক্ষণ আরামে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিলে পেশীগুলো শিথিল হলে সমস্যাটি দূর হয়ে যায়। 

গর্ভাবস্থায় সহবাসের সঠিক পদ্ধতি 

সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর স্বাচ্ছন্দ্যেবোধের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। তবে গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সময় স্ত্রীর শারীরিক পরিবর্তন মাথায় রেখে সহবাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ গর্ভাবস্থায় সহবাসের সময় দম্পতির (বিশেষ করে স্ত্রীর) কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিরাপদ কিছু পজিশনে সহবাস করা উচিত। সহবাসের সময় স্বামী নিচে এবং স্ত্রী তার ওপরে থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ হলো এই সময় স্ত্রীর পেট বেশ অনেকটা উপুড় হয়ে থাকে যা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া স্বামী যদি স্ত্রীর উপরে থাকে তাহলে পেটে থাকা সন্তানের ওপর প্রেসার পড়ে। 

এছাড়াও আরো একটি উপায় হলো একপাশ হয়ে সহবাস করার চেষ্টা করুন। এতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। তাছাড়া স্ত্রী হাঁটু অথবা হাতে ভর দিয়ে সহবাস করার সময় তার নিচে বালিশ অথবা কুশন রাখতে হবে। সেইসাথে সহবাসের সময় স্ত্রীর ওপর যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেই বিষয়েও সচেতন থাকা জরুরি।

আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম

কখন সহবাস এড়িয়ে চলা জরুরি 

অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সময় এমন কিছু টার্ম দেখা দিতে পারে যার ফলে সহবাস এড়িয়ে চলা জরুরি হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক গাইডলাইন মেনে চলতে হয়। গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাসের ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব কারণে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় সেগুলো হলো :

  • প্রসবের নির্ধারিত সময়ের আগেই পানি ভেঙ্গে গেলে
  • অনাগত সন্তান অথবা মায়ের যেকোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি জনিত কারণে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস ও শেষের ২ মাস সহবাস হতে বিরত থাকতে বলা হয় 
  • গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নারীর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। তবে কোনো কারণে যদি মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হয় তবে সে-সময় সহবাস থেকে বিরত থাকা জরুরি 
  • যদি গর্ভবতী মায়ের পেটে জমজ সন্তান থাকে সেক্ষেত্রেও সহবাস না করার পরামর্শ দেওয়া হয় 
  • গর্ভবতী মায়ের জরায়ুমুখে কোনে জটিলতা দেখা দিলেও সহবাস এড়িয়ে চলা জরুরি 

গর্ভাবস্থায় সহবাসের কিছু উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাস অনেকের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হলেও এর বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় নিয়ম মেনে সঙ্গম করা একদিকে যেমন নিরাপদ অন্যদিকে এর উপকারি দিক রয়েছে। গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাসের ক্ষেত্রে যদি মিলন সীমাবদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করেন তাহলে অবশ্যই এর কিছু উপকারিতাও জেনে নেওয়া জরুরি।

  • গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে শরীর কিছুটা রিলাক্স হয় যার ফলে গর্ভবতী নারীর রক্তচাপ কিছুটা কমে যায়। রক্তচাপ কম থাকা মা ও গর্ভের সন্তান উভয়ের জন্যই ভালো
  • গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে পেলভিক পেশি সংকুচিত হয় যা জরায়ুকে খুলতে সাহায্য করে। তাই নরমাল ডেলিভারি বা যোনিগত প্রসবের ক্ষেত্রে সহবাস কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি অনেক চিকিৎসক তো প্রসবের কিছুদিন পূর্বে সহবাসের জন্য পরামর্শ দেন
  • এছাড়া গর্ভাবস্থায় সহবাস গর্ভবতী নারীর প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রস্রাব ক্রিয়ার কিছু খুটিনাটি সমস্যা দেখা দেয়। সহবাসের ফলে এসব সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়
  • যেহেতু যৌন ক্রিয়াকলাপ মানুষের দেহে IGA অ্যান্টিবডির মাত্রা বৃদ্ধি করে তাই গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে গর্ভবতী নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সামান্য হলেও বৃদ্ধি পায়
  • এছাড়াও গর্ভাবস্থায় সহবাসের ফলে গর্ভবতী মায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়
  • পরিশেষে গর্ভাবস্থায় সহবাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকার হলো এর ফলে গর্ভবতী নারীর মন ফ্রেশ থাকে যা তার অনাগত সন্তানের জন্য বিশেষ ভুমিকা রাখে। কারণ এই সময় প্রতিটি নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকাটা খুব বেশি জরুরি। 

শেষকথা

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর সুরক্ষা নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারই অংশ হিসেবে এই সময় সহবাস নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরণের অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। তবে উপরোক্ত আলোচনা হতে সকলেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে গর্ভাবস্থায় সহবাস করা অনিরাপদ নয়। বরং এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। পাশাপাশি এর বেশ কিছু উপকারিতাও রয়েছে।

যদিও এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে মাথায় রাখা জরুরি যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন সীমাবদ্ধ করতে হয়। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে  ডাক্তার কর্তৃক সহবাস বন্ধের পরামর্শ থাকলে অবশ্যই তা পালন করতে হবে। নতুবা অনাগত সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই একদিকে গর্ভাবস্থায় সহবাস (pregnancy) যেমন উপকারি ঠিক একইভাবে ক্ষেত্রবিশেষে সহবাস হতে দূরে থাকাও জরুরি। 

গর্ভাবস্থায় সহবাস সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১/ গর্ভাবস্থায় সহবাসের সবচেয়ে উত্তম সময় কখন?

উত্তর: গর্ভাবস্থায় সহবাস করা সবসময়ই নিরাপদ। তবে কিছু কিছু চিকিৎসকদের মতে প্রেগনেন্সির মাঝের মাসগুলোতে সহবাস করা সবচেয়ে উত্তম। 

২/ গর্ভাবস্থায় নারীদের যৌন আকাঙ্খার কোনো তারতম্য ঘটে?

উত্তর: একজন গর্ভবতী নারীর যৌন আকাঙ্খা পূর্বের তুলনায় কিছুটা হলেও কমে যায়। এর কারণ হলো গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে যৌন উদ্দীপক হরমোন নিঃসরণের হার কমে যায়৷ যার ফলে নারীর যৌন উদ্দীপনা কিছুটা হ্রাস পায়। 

৩/ সহবাসের পর অর্গাজম হলে পেটে থাকা সন্তানের নড়াচড়া বেড়ে যায় কেন?

উত্তর: সহবাসের পর অর্গাজম হলে গর্ভবতী নারীর হার্টবিট বা হৃৎস্পন্দনের হার কিছুটা বেড়ে যায়, যার কারণে পেটে থাকা সন্তানেরও নড়াচড়া বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে চিন্তিত হওয়ার কোনো দরকার নেই। 

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

Leave a Comment