গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

সহবাস একটি স্বাস্থ্যকর (healthy) ও স্বাভাবিক কাজ, যা একটি স্বামী স্ত্রীর জীবনে পূর্ণতা দেয়। যখন কোন দম্পতি সন্তান জন্ম দিতে চান তখন তাদেরকে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে হয়। আপনার গর্ভাবস্থা যতক্ষণ স্বাভাবিক থাকবে

এবং কোন জটিলতা থাকবে না ততক্ষণ আপনার সহবাস নিরাপদ। যদি আপনার শারীরিকভাবে কোন সমস্যা না হয়, গর্ভকালীন (pregnency) পানি না ভেঙ্গে যায় এরকম কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন না হন তবে অবশ্যই আপনার সহবাস নিরাপদ।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস নিরাপদ কিনা সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারনা থাকা জরুরী।   আপনি যদি সদ্য গর্ভবতী (pregnency) হওয়ার পরিকল্পনা করেন বা গর্ভবতী হন তবে আপনার মনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হতে পারে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সহবাস কি নিরাপদ? আসুন দেরি না করে আমরা গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

এবং গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সহবাস নিরাপদ নাকি, গর্ভকালীন (pregnency) নানান তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসে। গর্ভাবস্থায় কোন ঝুঁকি না থাকলে, আপনার সহবাস নিরাপদ। আপনার এবং আপনার গর্ভের বাচ্চার কোন সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুনঃ কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের সহবাস কি নিরাপদ 

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। তাই এই সময়টুকু সহবাস করা যথেষ্ট নিরাপদ হবে কিনা তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গর্ভকালীন মায়েরাই এই প্রশ্নটি করে থাকেন। কারণ গর্ভকালীন এই প্রথম তিন মাস তারা খুবই অস্বস্তি বোধ করেন। এই সময় বমি বমি ভাব হয় আবার অনেকের বেশি বমিও হয়। প্রেগনেন্সি হরমোন এইচসিজি এর প্রক্রিয়ার কারনে তিন চতুর্থাংশেরও বেশি মহিলা মর্নিং সিকনেসের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

এই মর্নিং সিকনেসের কারণে যদি গর্ভাবস্থায় (pregnency) প্রথম কয়েক সপ্তাহ ক্লান্ত বোধ করেন তবে আপনি অবশ্যই গর্ভকালীন (pregnency) প্রথম তিন মাসের কিছু সময় সহবাস থেকে বিরত থাকবেন। আবার যখন আপনি স্বাভাবিক বোধ করবেন, তখন আপনার সহবাস নিরাপদ হবে। আপনার সহবাসের ফলে আপনার গর্ভস্থ শিশুর কোন ক্ষতি হবে না। জড়ায়ুতে থাকা অ্যামনিওটিক তরল সহবাসের সময় শিশুকে রক্ষা করে। 

তাছাড়াও মিউকাস প্লাগ (mucus plug) জরায়ুকে ঢেকে রাখে এবং সংক্রমণ থেকে গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষা করে। তারপরও আপনার উচিত অবশ্যই আপনার নিকটস্থ গাইনোকোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া।

গর্ভাবস্থায় কখন সহবাস নিরাপদ নয় 

গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের কোন ঝুঁকি না থাকলে, কোন জটিলতার সম্মুখীন না হলে অবশ্যই আপনার সহবাস (intercourse) নিরাপদ। তবে অনেক সময় গর্ভাবস্থায় (pregnant) অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই প্রথম তিন মাস বা তারচেয়েও বেশি সময় সহবাস করা এড়িয়ে যাবেন। অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। তারপর সেরকম কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো, যেগুলোর সম্মুখীন হলে অবশ্যই আপনার গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাস নিরাপদ নয়। 

  • আগে কখনো গর্ভপাত হয়ে থাকলে 
  • যমজ অথবা তিনটির মতো একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ করলে 
  • গর্ভাবস্থায় সময়ের আগে প্রসবের লক্ষণ বুঝতে পারলে 
  • যোনি পথে অতিরিক্ত রক্ত বা স্রাব বেরোলে 
  • পানি ভেঙ্গে গেলে 
  • কোন যৌনবাহিত রোগ আপনাকে বা আপনার সঙ্গীকে সংক্রমিত করবে, এমন কিছু থাকলে 
  • সময়ের আগে প্রসবের রেকর্ড থাকলে 
  • জড়ায়ুতে কোন সমস্যা থাকলে 
  • ডাক্তার নিষেধ করলে, অবশ্যই তা পুরোপুরি মানতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় সহবাস কি গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি করে

গর্ভাবস্থার সময় স্বাভাবিক এবং জটিলতা মুক্ত থাকলে সহবাসের কারণে গর্ভপাত বা সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ুতে মৃদু সংকোচন অনুভব করতে পারেন সহবাসের কারনে। ধরুন আপনার মনে হচ্ছে, আপনার জরায়ুর পেশিগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে বা টান খাচ্ছে। এ ধরনের সংকোচনকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় Braxton hicks (contraction)। এর ফলে আপনার কিছুটা অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কিন্তু এটা সত্যিকার অর্থে প্রসব বেদনা নয়। 

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস নিয়ে প্রায় নারীরাই খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। গর্ভবতী (pregnency) মায়েদের মধ্যে অনেক সংকোচবোধ কাজ করে, যে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস কি সহবাস করা উচিত নাকি গর্ভস্থ শিশুর উপর কোন খারাপ প্রভাব পড়বে। এই বিষয়গুলোর উপরেই নির্ধারিত হয়েছে আজকের আর্টিকেল এর পুরো বিষয়।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের সর্তকতা

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস খাবারের দিক থেকে একটু সমস্যা হয়, যেমন খাবার খেতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু তারপরও আপনার গর্ভের শিশুর কথা চিন্তা করে হলেও যতটা সম্ভব ততটা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস একটু সর্তকতার সহিত চলাফেরা করা উচিত। সেরকমই গর্ভকালীন কিছু নির্দেশনা হচ্ছে, 

  • বমি বমি ভাব থাকলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে থাকা অবস্থায় দাত ব্রাশ না করাই ভালো। 
  • খাওয়ার পরপরই শুতে যাবেন না। 
  • হালকা শরীরচর্চার অভ্যাস রাখা ভালো। 
  • সব সময় মন ফ্রেশ রাখবেন। 
  • চা কফি কম খাওয়াই ভালো। 
  • গর্ভাবস্থায় প্রথম থেকে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। 
  • একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার অভ্যাস করুন। 
  • গর্ভকালীন সময়ে অনেক মায়েদের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে, সুগারের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট করিয়ে সেই ফর্মুলা অনুযায়ী চলাফেরা করবেন। 
  • বুকে জ্বালাপোড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ও ঔষধ সেবন  করবেন। 

মনে রাখবেন গর্ভবতী (pregnency) হওয়ার আগের সময় আর পরের সময় একই রকম চলাফেরা করলে চলবে না। গর্ভকালীন সময় একটু সতর্ক হয়ে চলতে হবে। সব সময় যে বিশ্রাম করবেন তা নয়, স্বাভাবিক কাজকর্ম করবেন তবে ভারি কোন কাজ বা  গর্ভবতী (pregnant) সময় কিছু নিয়ম রয়েছে যা থেকে একটু সতর্ক থাকবেন। 

শেষকথা

গর্ভকালীন সময়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় প্রতিটা মায়ের কাছে। এ সময় আপনার চলাফেরা বা খাওয়া-দাওয়ার উপর গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নির্ভর করে। তাই অবশ্যই আপনার কোন সমস্যা হলে, এমনকি সামান্য গ্যাসের সমস্যা, মাথাব্যথা, জ্বর হলেও নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওষুধ সেবন করবেন না। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন। গর্ভবতী (pregnant) হওয়ার আগে যতটুকু ঘুমাতেন তার থেকে একটু ঘুমের সময় বাড়িয়ে দিন। দিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। এমনকি সারাদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিবেন। 

অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর একটু খাবার খাবেন, অবশ্যই একসাথে বেশি খাবার খাবেন না। এবং বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস এবং গর্ভকালীন অনেক তথ্য ও নিয়ম কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। গর্ভকালীন (pregnency) সময়ের কোন সাজেশন বা তথ্য জানতে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। গর্ভকালীন সময় সতর্কতার সহিত চলাফেরা করুন এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। আল্লাহ হাফেজ। 

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১। মাসিকের ১৪ দিন পর কি গর্ভবতী হওয়া যায় ?

উত্তর :- একজন মহিলা তার মাসিক চক্রের সময় যে কোন সময় গর্ভবতী হতে পারে। ডিম্বস্ফোটনের সময় গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, যা সাধারণত 10-14 দিন । মাসিকের মধ্যে মাসিকের সময় রক্তপাত হতে পারে।

২। কত দিনে গর্ভবতী হওয়া যায় ?

উওর :- যখন আপনি আপনার গড় মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য জানেন, আপনি যখন ডিম্বস্ফোটন করেন তখন আপনি কাজ করতে পারেন। আপনার পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রায় 14 দিন আগে ওভুলেশন হয়। যদি আপনার গড় মাসিক চক্র 28 দিন হয়, তাহলে আপনি 14 দিনের কাছাকাছি ডিম্বস্ফোটন করেন এবং আপনার সবচেয়ে উর্বর দিনগুলি হল 12, 13 এবং 14 দিন।

৩। ১২ সপ্তাহের বাচ্চা কোথায় থাকে ?

উত্তর :- এই সময় গর্ভবতী মায়ের গর্ভের শিশু পুরো জরায়ু পূরণ করে থাকে, মাথার দৈর্ঘ্য শরীরের প্রায় অর্ধেক। 

৪। গর্ভাবস্থায় কোন সবজি খাওয়া যাবেনা ? 

উত্তর :- যেকোনো ধরনের কাঁচা ফল ও সবজি  ভালো করে ধুয়ে নিবেন। গর্ভাবস্থায় ক্লোভার,মুলা,মুগ ডাল সহ যেকোন ধরনের কাঁচা স্প্রাউট এরিয়ে চলুন। এবং যেকোন সবজি ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করবেন।

আরও পড়ুন-

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

বয়স্ক ভাতার আবেদন

Leave a Comment