গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কি জায়েজ?  ইসলামিক উপায়ে সহবাস করার নিয়ম কি? গর্ভকালীন সময়ে সহবাস করলে অনাগত সন্তানের কি ক্ষতি হবে? এরকম অনেক প্রশ্ন দ্বীনি ভাইবোনদের মাথায় ঘুরপাক খায়।

কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই প্রশ্নগুলো প্রকাশ করতে পারেন না। গর্ভকালীন সময়ে সহবাস সংক্রান্ত এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই আজকের আর্টিকেলটি সাজিয়েছি। আজকে আলোচনা করা হবে গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে।

একজন নারী এবং একজন পুরুষের দৈহিক মিলনের বৈধ পন্থাকে সহবাস বলা হয়। সহবাসের কারণেই নারীর গর্ভে নতুন জীবনের সৃষ্টি হয়। সহবাস করার জন্য ইসলামিক নিয়ম বা সুন্নতি তরিকা আছে। অনেকের ধারণা গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে বাচ্চার ক্ষতি হয়। কিন্তু ইসলাম গর্ভাবস্থায় সহবাস সম্পর্কে কি বলে? গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাস করার নিয়ম বা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে তা আমাদের জানা জরুরী।

মানবজাতির কোনো ক্ষতি হবে এমন কোন নিয়ম ইসলামে নেই। তাই আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম মেনে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো ।আশা করছি আপনারা এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা কি জায়েজ 

ইসলামে স্বামী এবং স্ত্রীর সহবাস করার গুরুত্ব অনেক বেশি দেওয়া হয়েছে। বৈধ উপায় সহবাসের ফলে লজ্জাস্থানের সংবরণ হয়, নজরের হেফাজত হয়, ঈমানী জজবা বজায় থাকে, নেক সন্তানের জন্ম হয়। এছাড়াও আরো অনেক উপকার আছে বৈধ উপায়ে সহবাস করলে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় কি সহবাস করা জায়েজ? 

গর্ভাবস্থায় সহবাস করাকে ইসলাম জায়েজ করে দিয়েছে। গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন – “তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র, তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। ” (সূরা বাকারা : ২২৩) এই আয়াত দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, মুসলিম দম্পতিরা যেকোনো সময় সহবাস করতে পারবেন। মাসিক বা ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ব্যতীত যেকোনো সময় সহবাস করা জায়েজ রয়েছে ইসলামে। 

গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে স্ত্রীরা অনেক নাজুক থাকে। এই সময় স্ত্রীর শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার প্রতি যত্নশীল হওয়া স্বামীর কর্তব্য। এই অবস্থায় যৌন-আসন সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী । স্ত্রীর এই অবস্থায় যদি মিলন নিরাপদ এবং সহজ মনে না হয়, তাহলে স্বামীর উচিত হবে কিছুদিন ধৈর্য ধারণ করা যাতে গর্ভবতী স্ত্রীর কষ্ট না হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননা তারা তোমাদের নিকট বন্দী। (তিরমিযী ১১৬৩) 

সহবাসের ইসলামিক বিধি-বিধান 

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী মিলনের একটি বৈধ প্রক্রিয়া হচ্ছে সহবাস। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে সহবাস বা যৌন-মিলন । গর্ভাবস্থায় সহবাস করাকে ইসলাম জায়েজ করে দিয়েছে। গর্ভাবস্থায় সহবাসের ইসলামিক নিয়ম রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহবাসের দুইটি ক্রিয়াকে  নিষেধ করেছেন- 

  • স্ত্রীর সাথে পায়ুকাম বা এনাল সেক্স করা যাবে না। 
  • স্ত্রীর পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালে সহবাস করা যাবে না। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন – ” যে ব্যক্তি ঋতুস্রাবগ্রস্ত স্ত্রীর সাথে বা স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করলো বা গণকের কাছে এসে তার কথা বিশ্বাস করে নিলো, সে প্রকৃতপক্ষে মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ সবকিছু অস্বীকার করলো। ” (তিরমিযী – ১৩৫) 

ইহরাম এবং রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামে। এছাড়া যেকোনো সময় এবং যেকোনো অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা যাবে। তাইতো গর্ভাবস্থায় সহবাস করতে কোন আপত্তি নেই। তবে স্বামীর উচিত স্ত্রীর এই অবস্থায় তার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তার সুবিধা অনুযায়ী সহবাস করা।

আরও পড়ুনঃ কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়

গর্ভাবস্থায় সহবাসের ইসলামিক নিয়ম 

আল্লাহ তায়ালা গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাস করাকে জায়েজ করে দিয়েছেন।  ইসলামে গর্ভাবস্থায় সহবাসের কোন বিধি-নিষেধ নেই । তবে গর্ভধারণের প্রথম দিকে এবং প্রসবের পূর্ব মুহূর্তে সহবাস করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রিয় নবী (সাঃ) স্বামী-স্ত্রী মিলনের পূর্বে দোয়া পড়তে বলেছেন । 

সহবাস করার দোয়া 

স্বামী স্ত্রী মিলনের পূর্বে দোয়া পড়তে হয়। দোয়াটি হল – ” বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।” অর্থ : “হে আল্লাহ! তোমার নামে (যৌন মিলন বা সহবাস) আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের (স্বামী-স্ত্রী উভয়ের) কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, সে সন্তানকেও শয়তান (যাবতীয় আক্রমণ) থেকে দূরে রাখ।” 

গর্ভাবস্থায় সহবাস

শারীরিকভাবে কোন ঝুঁকি না থাকলে গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাসের কোন বাধা নেই। গর্ভকালীন সময়ে সহবাস করাকে ইসলাম একদম জায়েজ করে দিয়েছে। স্বামীরা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারে। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে বাধা ধরা কোন নিয়ম নেই। তবে গর্ভকালীন সময়ে স্ত্রীদের পেটের আকার বড় হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। ফলে সব রকম আসনে তারা সহবাস করতে পারে না বা কষ্ট হয়। এজন্য স্বামীদের উচিত স্ত্রীর সুবিধার জন্য সহজ উপায়ে সহবাস করা। স্ত্রীর সুবিধার কথা চিন্তা করা এবং স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া স্বামীর একান্ত দায়িত্ব। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার সহজ কিছু যৌন-আসন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১। নারী উপরে উঠে সহবাস 

গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পেটের আকার বড় হয়। সহবাস করার সময় নারীর ওপর পুরুষ থাকলে পেটের ওপর চাপ পড়ে এমনকি বাচ্চার ক্ষতিও হতে পারে। তাই এই অবস্থায় গর্ভবতী নারী পুরুষের উপরে উঠে সহবাস করলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে কত গভীরতায় লিঙ্গ প্রতিস্থাপন হবে তা নারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সহবাসের এই অবস্থায় বেশিরভাগ কার্যক্রম নারী ইচ্ছা এবং সুবিধামতো করতে পারায় ঝুকি কম থাকে। 

২। এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে সহবাস

গর্ভাবস্থায় (pregnancy) এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে সহবাস করলে নারীরা স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এক্ষেত্রে পেটে কোন চাপ পড়ে না। নারীকে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে এক পাশ কাত হয়ে শুতে হবে। এরপর স্বামী তার স্ত্রীর পিছন থেকে যৌন-মিলন করবে । পুরুষ নারীর উরুর মধ্য দিয়ে লিঙ্গ সঞ্চালন করলে বেশি ভালো হয়। এই প্রক্রিয়াটি আস্তে আস্তে করলে গর্ভবতী মেয়েদের কোন সমস্যা হয় না। 

৩। হাঁটু এবং হাতে ভর দিয়ে সহবাস

সহবাসের এই সময় শরীরের সম্পূর্ণ ভর হাঁটু এবং হাতের উপর থাকে। অর্থাৎ আসনটি দেখতে হামাগুড়ি দিয়ে চলার মত। এই আসনে পেটে চাপ না পড়ায় গর্ভবতী মেয়েদের জন্য অনেক আরামদায়ক। এক্ষেত্রে পুরুষদের লিঙ্গ সঞ্চালন করতে হয় পিছন থেকে হার্টের ওপর ভর দিয়ে। খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী নারী যেন আঘাত না পায়।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চা নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

গর্ভাবস্থায় সহবাস কখন এড়িয়ে চলবে 

ইসলাম ধর্ম গর্ভাবস্থায় সহবাস করাকে বৈধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় সহবাস করলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে এই সময় নারীদের শারীরিক অবস্থার কারণে এবং বিভিন্ন জটিলতা এড়াতে সহবাসকে এড়িয়ে চলা উত্তম হবে। গর্ভকালীন সময়ে সহবাস কখন এড়িয়ে চলতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো :

  • গর্ভবতী নারী যদি কোন কারনে মাসিকের রাস্তায় চাপ অনুভব করে। 
  • গর্ভবতী অবস্থায় যদি জরায়ুর মুখে কোন জটিলতা দেখা দেয় তাহলে সহবাস এড়িয়ে যেতে হবে। 
  • চিকিৎসক যদি এই সময় গর্ভপাতের সম্ভাবনা আছে বলে উল্লেখ করে। 
  • আগে যদি কখনো গর্ভপাত হয়ে থাকে অর্থাৎ গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে থাকলে। 
  • গর্ভবতী নারীর পূর্ব অভিজ্ঞতা যদি এমন থাকে যে, প্রসবের সময়ের পূর্বেই বাচ্চা হয়েছে। 
  • যদি গর্ভফুল নিচে নেমে আসো অথবা কোন কারণে রক্ত জমাট বাঁধে। 
  • মাঝে মাঝে যদি প্রসবের আগে পানি ভাঙ্গে। 
  • একই সাথে যদি জমজ বাচ্চা থাকে। 

উপরের লক্ষণগুলো যদি গর্ভবতী মহিলার মধ্যে থাকে সেক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পূর্বে সহবাস করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। নইলে সন্তানের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। 

সহবাস করার ইসলামী শিষ্টাচার 

বিবাহিত জীবনের সব কাজ হতে হবে আন্তরিকতা, সতর্কতা, হৃদ্যতা এবং মমতায় জড়ানো। ইসলামের নির্দেশনা মতে- “… স্ত্রীদের সঙ্গে সতভাবে জীবন যাপন করবে… ” (সূরা নিসা :আয়াত- ১৯)। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে ওপরে জানলাম। এখন জানবো সহবাস করার ইসলামী শিষ্টাচার সম্পর্কে।

  • সহবাস করার শুরুতে সহবাসের দোয়া পড়ে নেওয়া । 
  • সহবাস করার সময় স্বাচ্ছন্দ্যময় পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। 
  • নিষিদ্ধ স্থানে সহবাস করা যাবে না অর্থাৎ স্ত্রীর পায়ুপথে লিঙ্গ সঞ্চালন করা যাবে না। 
  • নারীদের মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সহবাস করা যাবে না। 
  • সহবাসের পর ঘুমাতে বা পানাহার করতে চাইলে অথবা পুনরায় যৌন-মিলন করতে চাইলে মধ্যবর্তী সময়ে ওযু করা সুন্নত। 
  • মিলনের পর প্রস্রাব করা স্বস্তিদায়ক এবং এটি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সহবাসের পর লজ্জাস্থান ধৌত করা সুন্নত। 
  • যদি সম্ভব হয় তাহলে ঘুমের আগেই ফরজ গোসল করে নেওয়া উত্তম। ঘুম থেকে উঠে ফরজ গোসল করাতেও কোন বাধা নেই। 
  • সহবাসের পর স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে গোসল করা বৈধ। 

গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে কি বাচ্চার ক্ষতি হয়

গর্ভাবস্থায় যদি স্বাভাবিক এবং জটিলতামুক্ত হয় তাহলে সহবাসের ফলে গর্ভপাত বা সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তবে গর্ভাবস্থার (pregnancy) শেষের দিকে যৌন-মিলন করলে জরায়ুতে মৃদু সংকোচন অনুভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে মনে হবে, জরায়ুর পেশিগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে অথবা টান খাচ্ছে। এই সংকোচনকে ডাক্তারি ভাষায় বলে “Braxton Hicks Contractions”। কিছুটা অস্বস্তি বোধ হলেও সত্যিকার অর্থে এটি প্রসব বেদনা নয়। সহবাস করা ছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এরকম অনুভূতি হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তাই চিন্তার কোন কারণ নেই। এরকম হলে কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিন, অন্য কোন বিষয়ে চিন্তা করে রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করুন। এসব মৃদু সংকোচন সাধারণত কিছুক্ষণ পরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এখন আলোচনা করা হবে গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে বাচ্চার ক্ষতি হয় কিনা সেই সম্পর্কে।

  • সহবাস করার সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া ভ্রুনের কোন ক্ষতি করে না। ভ্রুণ তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। 
  • গর্ভের শিশুকে একটি অ্যামনিওটিক থলিতে রাখা থাকে, যা তাকে রক্ষা করে। 
  • সার্ভিক্স একটি মিউকাস প্লাগ দ্বারা সিল করা থাকে, যা শিশুকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। 
  • সহবাস করার সময় পুরুষের যৌনাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গ পর্যন্তই প্রবেশ করে। ভ্রুণের কাছে এটি পৌঁছাতে পারেনা। যার ফলে ভ্রুনের ক্ষতি হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। 
  • সহবাসের পর অর্গাজম শিশুর নাড়াচাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। এর কারণ হলো অর্গাজমের পর আপনার হার্টবিট বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে শিশুর কোনো অসুবিধার কারণে হার্টবিট বেড়ে যায় না। 

উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে গর্ভাবস্থায় সহবাসের কারণে শিশুর কোন ক্ষতি হয় না। তবে মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় (pregnancy) সহবাস করার কিছু উপকারিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বামীর খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী স্ত্রী যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় এবং সন্তানের যেন কোনো রকম ক্ষতি না হয়। গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম এর পাশাপাশি এর উপকারিতাও রয়েছে। উপকারিতা সমূহ নিচে দেওয়া হল। 

  • দেহে রক্ত সংবহনে সাহায্য করে। 
  • তৃপ্তি মেলে এবং অর্গাজম ভালো হয়। 
  • পেলভিক ফ্লোর পেশীকে শক্তিশালী করে। 
  • অনাক্রম্যতা উন্নতি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 
  • স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক বজায় রাখে। 
  • রক্তচাপ কমায়। 
  • আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে। 
  • মূত্রথলির ভালো নিয়ন্ত্রণ এবং মুত্রের লিকেজ কমায়। 
  • প্রসবোত্তর আরোগ্য লাভের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। 
  • প্রসব প্রক্রিয়া সহজ করতে সাহায্য করে। 

শেষকথা

প্রতিটি মায়ের জন্য গর্ভকালীন অবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম একজন মাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছে। মা হওয়ার প্রক্রিয়া এত সহজ নয়। স্বামী স্ত্রীর মিলনের ফলে স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় সন্তান। গর্ভাবস্থায় অনেক নারী এবং পুরুষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন যে তারা এ অবস্থায় সহবাস করতে পারবেন কিনা। ইসলাম গর্ভাবস্থায় সহবাস করাকে জায়েজ করেছে। গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে সহবাস করলে কোন সমস্যা নেই। তবে গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য ঝুকির কথা চিন্তা করে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে সহবাস করতে হবে। যেন গর্ভবতী নারী এবং সন্তান দুই জনে সুস্থ থাকে। আশা করি ওপরের আলোচনা থেকে গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কোন স্বাস্থ্য জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় যৌন-মিলন করা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তবে গর্ভাবস্থায় অনেকেরই সহবাস করার ইচ্ছা কমে যায়। এটা নিয়ে খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক। এই সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s

১. গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম কি? 

উত্তর : গর্ভাবস্থায় সহবাসের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি-নিষেধ নেই। শারীরিক অবস্থার কারণে গর্ভবতী নারীরা এই সময় সব পজিশনে সহবাস করতে পারে না।  কারণ পেটের আকার বড় হয় এবং ওজনও বৃদ্ধি পায়। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

২. সহবাস করা কখন হারাম? 

উত্তর : সহবাস করা হারাম –

  • মহিলাদের হায়েজ বা মাসিকের সময়। 
  • নেফাস বা প্রসব পরবর্তী ৪০ দিন। 
  • রোজা রাখা অবস্থায়। 
  • হজ্বের ইহরাম বাধা অবস্থায়। 
  • মসজিদে অবস্থানরত অবস্থায় বা ইত্তেকাফ করা অবস্থায়। 

৩. সহবাসের দোয়া কি? 

উত্তর : সহবাস করার পূর্বে দোয়া পড়ার সুন্নত। দোয়াটি হল :  ” বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।” 

আরও পড়ুন-

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

কালোজিরার উপকারিতা

Leave a Comment