প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ 

প্রথমবার মা হওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। পবিত্র কোরআনে সন্তানকে মানব জীবনের সৌন্দর্য এবং রূপ বলা হয়েছে। সন্তান-সন্ততি বান্দার প্রতি আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। প্রথম সন্তান সকল বাবা-মায়ের কাছে অমূল্য সম্পদ। প্রথমবার বাবা-মা হওয়ার অনুভূতি প্রথম সন্তানের মাধ্যমেই হয়।

যে মুহূর্তে বুঝতে পারবেন আপনি মা হতে চলেছেন, সেই মুহূর্ত থেকেই পুরো পৃথিবীটা অন্যরকম হয়ে যাবে আপনার কাছে। গর্ভধারণের সময় একটি মায়ের শরীরে অনেক রকম পরিবর্তন আসে। প্রথম সন্তানের বেলায়

মায়েরা চিন্তায় পড়ে যান, কারণ অনেক কিছু সম্পর্কই তারা জানেন না। সংকোচবোধ করার কারণে অনেকের কাছে প্রকাশ করতে পারেন না এই ব্যাপারে। অনেকে আবার গর্ভবতী (pregnancy) হয়েছে কিনা এইটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকেন । তাই তাদের জন্য আজকে আলোচনা করব প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। 

একজন মহিলা গর্ভবতী (pregnancy) হয়েছে কিনা তা যত তাড়াতাড়ি জানা যাবে ততই ভালো। কারণ স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একজন গর্ভবতী মায়ের অনেক বেশি যত্ন নিতে হয়। অনেকেই মনে করেন পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলেই গর্ভবতী হয়। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার এছাড়াও অনেক লক্ষণ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ কাঠবাদাম এর উপকারিতা

আজকের আলোচ্য বিষয়

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণসমূহ 

প্রতিটি মেয়ের জীবনে প্রথমবার গর্ভবতী (pregnancy) হওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। গর্ভবতী হওয়ার অনেকগুলা লক্ষণ প্রকাশ পায় । গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। এছাড়াও বেশ কিছু লক্ষণ আছে গর্ভবতী হওয়ার। প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ নিচে আলোচনা করা হলো – 

১. মাসিক বন্ধ হওয়া

গর্ভবতী (pregnancy) হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। মিলনের পর পিরিয়ড বন্ধ হলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করা জরুরী। যাদের নিয়মিত পিরিয়ড হয় তাদের ক্ষেত্রে, পিরিয়ডের সময় পার হয়ে যাওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে হবে। যাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয় তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার অন্যান্য লক্ষণসমূহ দেখে টেস্ট করে নিন। 

২. মর্নিং সিকনেস

সকালে ঘুম থেকে উঠে দুর্বল এবং ক্লান্তি বোধ অনুভব করা গর্ভধারণের অন্যতম লক্ষণ। দিন অথবা রাত যেকোনো সময় এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের একমাস পর থেকে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। 

৩. বমি হওয়া এবং বমির ভাব

সাধারণতো গর্ভধারণের চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর বমি শুরু হয়। অ্যাস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই সময় সকালে উঠে বমির ভাব হয়ে থাকে। শুধু যে সকালে বমি হয় তা না, দিনের যে কোন সময় বমি হতে পারে। এমনকি দিনের যেকোনো সময় একাধিক বারও বমি হতে পারে। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিক মিস করার আগে অর্থাৎ গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহতেই ৮০% নারী বমির সমস্যায় ভোগেন। ৫০% নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ছয় সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি অনুভূত হতে থাকে। 

৪. স্তনের পরিবর্তন

গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে মেয়েদের স্তনে নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। এই সময় স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়, স্তনে হালকা ব্যথার অনুভূতি হয়, স্তনের উপরের ধমনীগুলো মোটা ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, স্তনের বোঁটাতে (Nipple) পরিবর্তন আসে, স্তনের বোঁটার চারপাশের গোলাকার চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে গাঢ় বাদামি বা কালো হয়। গর্ভধারণের ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই অনেকের স্তন ভারী হয়ে যায় এবং স্তনে ব্যথা হয়।

আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

৫. ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ ( Vaginal Discharge) বা যোনিস্রাব হল  পানি, কোষ এবং ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ। যা যোনিকে পিচ্ছিল করে এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যোনিস্রাব গর্ভবতী (pregnancy) হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। কিছু কিছু গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে হয় এটি। এই সমস্যা হতে পারে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়। 

৬. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি

গর্ভধারণের আরো একটি লক্ষণ হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। এই সময় বিভিন্ন কারণে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভধারণকালের সময়ে প্রোজেস্টেরণের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই লক্ষণটি দেখা যায়। 

৭. ক্লান্তি ও দুর্বলতা

প্রাথমিক পর্যায়ে মাসিক বন্ধ না হলেও গর্ভধারণ (pregnancy) করার সম্ভাবনা আছে। ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনেক সময় গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। বিবাহিত মহিলারা শরীর দুর্বল এবং ক্লান্তি অনুভব করলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিতে পারেন। 

৮. মুড সুইং

গর্ভধারণকালে মুড সুইং বা মন-মেজাজ এর ওঠানামা করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে আকস্মিক কান্না, হঠাৎ রেগে যাওয়া, খুশি হওয়া কিংবা অতিরিক্ত এক্সাইটেড হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

৯. মাথা ব্যথা

গর্ভধারণের শুরুর দিকে মাথা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে রক্ত সঞ্চালন এবং হরমোনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এমনটা হয়। তীব্র মাথা ব্যাথার পাশাপাশি ক্লান্তিও অনুভব হয়। 

১০. ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ

গর্ভধারণের আরও একটি লক্ষণ হচ্ছে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ। ওভ্যুলেশান প্রক্রিয়ার পর গর্ভধারণ সম্পূর্ণ হলে দিনে বারবার প্রস্রাবের চাপ আসে। গর্ভধারণের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হয়। গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে। যা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। 

১১. মুখের স্বাদ বদলে যায়

অধিকাংশ নারীরই মুখের স্বাদ বদলে যায় গর্ভধারণের শুরু থেকেই। আগে যে খাবারগুলো খেতে ভালো লাগত না সেগুলোও অনেকে খাওয়া শুরু করে দেন গর্ভধরণের সময়। অনেকের আবার পছন্দের খাবার খেতেও ভালো লাগে না এই সময়। এছাড়াও গর্ভবতী (pregnancy) মহিলাদের দিনে বা রাতে যেকোনো সময় যেকোনো খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে।  

১২. জ্বর এবং পেটব্যথা

জ্বর এবং সেই সাথে পেট ব্যথা হলে গর্ভবতী (pregnancy) হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। এই সময় জ্বর হলে তাপমাত্রা খুব একটা বৃদ্ধি পায় না। দুই এক দিনের মধ্যে সেরে যায় জ্বর। এই লক্ষণ দেখা দিলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। 

১৩. খাবারে অনীহা

খাবারে অনিহা হওয়া গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কোন খাদ্য দ্রব্যের গন্ধে (যেমন – পেঁয়াজ, আমিষ) যদি আপনার বমি বমি ভাব হয়, তাহলে খেয়াল করুন এটি ক্রমাগত হচ্ছে কিনা। শরীরে ক্রমবর্ধমান ইস্ট্রোজেন হরমোনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে এমনটা হয় । যার ফলে খুব পছন্দের খাবারও ভালো লাগবে না অথবা অপছন্দের খাবারও স্বাদ লাগবে। 

১৪. স্পটিং এবং সাদাস্রাব

মিলনের পর নিষিক্ত ডিম্বাণু নিজেকে জরায়ুর দেয়ালে আটকে নেয়। যার ফলে স্পটিং বা স্বল্প রক্তপাত হয় যা মাসিকের মতো ব্যথা হতে পারে। স্পটিং গর্ভধারণের প্রাথমিক সময়ের লক্ষণ। গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

এছাড়াও গর্ভধারণের সময় মহিলাদের সাদাস্রাব হয়। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পর যোনির অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারণে হয় এটা। অনেক নারীদের ক্ষেত্রে পুরা গর্ভকালীন সময়ে এই সাদাস্রাব চালু থাকে। তবে স্রাবের যদি গন্ধ থাকে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হয় হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

আরও পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

১৫. ওজন বৃদ্ধি

গর্ভধারণের (pregnancy) প্রথম কয়েক মাসে যেকোনো নারীর ওজন বৃদ্ধি পায় (২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত) । দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (Second Trimester)  এর শুরুতে ওজন বৃদ্ধি আরো লক্ষণীয়ভাবে প্রকাশ পায়। 

১৬. উচ্চ রক্তচাপ 

উচ্চ রক্তচাপ গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ এর মধ্যে পড়ে। বেশ কিছু কারণ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন – ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, স্থূলকায় হওয়া, ধূমপান ইত্যাদি। 

১৭. রক্তশূন্যতা

গর্ভবতী (pregnancy) মায়েদের জন্য রক্তশূন্যতা একটি সাধারন সমস্যা। কারণ এই সময়ে শিশুর বুদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রচুর পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকার প্রয়োজন হয়। লোহিত রক্তকণিকার চাহিদা মায়ের রক্ত থেকেই পূরণ হয়। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের রক্তশূন্যতার ঝুঁকি বেশি থাকে। রক্তশূন্যতার ফলে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অপরিপক্ক সন্তান জন্মের সম্ভাবনা থাকে রক্তশূন্যতার কারণে। 

১৮. অনিদ্রা

গর্ভবতী (pregnancy) হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অনিদ্রা। হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, শারীরিক অস্বস্তি ইত্যাদি কারণে এ সময়ে ঘুম সঠিকভাবে হয় না। এই সময় গর্ভবতী মায়েদের ভালো ঘুমের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। 

উপরে আলোচনা করা হয়েছে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। এ লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে  যত দ্রুত সম্ভব প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়ে নিন অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

গর্ভবতী মায়ের যত্ন 

“মা” শব্দটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ডাক এবং অনুভূতি। একজন নারীর সবচেয়ে বড় সার্থকতা “মাতৃত্ব“। কিন্তু একটা নারী যখন প্রথমবার গর্ভধারণ করে অনেক কিছুই সে জানে না। উপরে আলোচনা করা হয়েছে প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। গর্ভবতী হওয়ার পর সেই মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ন করতে হয় মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য। গর্ভবতী মায়ের যত্ন সম্পর্কে নিয়ে যা আলোচনা করা হলো –

সুষম খাবার গ্রহণ 

অনেকের ধারণামতে, একজন গর্ভবতী নারীর দুজনের খাবার একসাথে খাওয়া উচিত। এই তথ্যটি সঠিক নয়। গর্ভবতী (pregnancy) নারী যদি অতিরিক্ত খাবার খায় সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত মোটা হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ওজন কিন্তু মায়েদের ক্ষেত্রে মৃত শিশুর জন্মদান অথবা ছোট শিশু জন্মদানের কারণ হতে পারে। তাই যেমন খাবারই হোক না কেন সেটা হতে হবে পুষ্টিকর। সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে অর্থাৎ প্রতিদিন খাবারের তালিকায় যেন সবরকম পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। 

প্রি-ন্যাটাল ভিটামিন

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম তিন মাস বা ১২ তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সেবন করতে হবে। ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায় ফলিক অ্যাসিড। প্রতিদিন ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। 

ভারী কাজ না করা

গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে নারীদের প্রথম দুই-তিন মাস এবং শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম করা উচিত নয়। ভারী কাজ না করে শুধু হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। এই সময় ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। পিচ্ছিল জায়গায় হাঁটা যাবে না এই সময়।

আরও পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম

পর্যাপ্ত ঘুম

গর্ভকালীন সময়ে রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। দিনের বেলাতেও কমপক্ষে দুই ঘন্টা ঘুম বা বিশ্রাম করতে হবে। ঘুম বা বিশ্রাম করার সময় বাঁ-কাত হয়ে শোয়া ভালো। 

পরিধেয় পোশাক

গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। সঠিক মাপের এবং নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে। গর্ভকালীন সময় হিল পড়া থেকে বিরত থাকুন। 

ভ্রমণে সতর্কতা

গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়া উচিত। উঁচু নিচু পথ অথবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে এই সময় ভ্রমণ করা খুবই ক্ষতিকর। স্বাস্থ্যকর এবং মনোরম পরিবেশে সকালে এবং বিকেলে কিছু সময়ের জন্য ভ্রমণ করলে গর্ভবতী মায়েদের শরীর সুস্থ এবং মন প্রফুল্ল থাকে। 

শরীরের যত্ন নেওয়া

গর্ভকালীন (pregnancy) সময়ে নিয়মিত প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। হাত এবং পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের দাঁতগুলো অনেক নরম হয়ে যায়। তাই দাঁত এবং মাড়ির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। 

রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ 

টিটেনাসের টিকা দিতে হবে চার থেকে আট মাসের মধ্যে। গর্ভকালীন সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে। এজন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। 

নিয়মিত শরীরচর্চা 

নিয়ম মেনে গর্ভাবস্থায় কিছু ব্যায়াম করা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। অনাগত সন্তানের কথা ভেবে ব্যায়াম করা দরকার। স্বাভাবিক সময়ের থেকে গর্ভকালীন সময়ের ব্যায়াম কিছুটা আলাদা। খুবই সাবধানতার সাথে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। হাটাহাটি হতে পারে সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। 

নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার

ধূমপান বা অন্য কোন নেশার অভ্যাস থাকলে গর্ভাবস্থায় তা পরিত্যাগ করতে হবে। নেশা করার কারণে গর্ভপাত, সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব, বাচ্চার ওজন কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। কোন অবস্থাতেই গর্ভবতী (pregnancy) মায়ের ধূমপান করা যাবে না। মা এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য ধূমপান পরিত্যাগ করুন। 

নিয়ন্ত্রিত ক্যাফেইন গ্রহণ 

চা, কফি ইত্যাদিতে ক্যাফিন থাকে। ক্লান্তি দূর করার জন্য এগুলো কার্যকর হলে গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে শিশুর ওজন কম হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩৩% নারী গর্ভাবস্থায় বিষন্নতায় (depression during pregnancy)  ভোগেন। এ সময়ের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর ওপর প্রভাব পড়বে। তাই প্রথম থেকেই গর্ভবতী মহিলার বিষন্নতার লক্ষণ খুঁজে বের করে তার প্রতিকার করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

ওজন বৃদ্ধের দিকে খেয়াল রাখা

ওজন বৃদ্ধি পাওয়া গর্ভাবস্থায় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময় ওজন বৃদ্ধি পাওয়া মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই উপকারী। তবে ব্যক্তি বিশেষে ওজন বৃদ্ধির পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা ওজন না বৃদ্ধি পাওয়া দুটিই মা এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। 

শেষকথা 

উপরের আলোচনা থেকে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগব্যাধি ইত্যাদি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই যতটা সম্ভব এসব বিষয় থেকে দূরে রাখতে হবে নিজেকে। গর্ভাবস্থার (pregnancy) প্রথম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস স্বামীর সহবাস থেকে দূরে থাকা উত্তম হবে। এই সময়ে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য বেশি বেশি পানি খাবেন। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। গর্ভাবস্থায় নানা রকম ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সময় কাঁচা বা ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন খাবার পরিহার করুন ।সব ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যারা প্রথমবার মা হন তারা অনেক কিছুই জানেন না। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন যে কি করবেন। তাদের জন্যই ছিল আজকের আর্টিকেল। আশা করছি অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। গর্ভবতী সময় নিজের সঠিক যত্ন নিন এবং আপনার মাতৃত্বকে করে তোলেন সুন্দর এবং স্মৃতিময়। 

প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ’s  

১. কনসিভ করলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়?

উত্তর : মর্নিং সিকনেস প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ মনে করা হয়। এছারাও ​মুড সুইং ও মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা ও মাথা ভারী হওয়া, ​বার বার টয়লেটে যাওয়া, খেতে অরুচি বা খিদে বেড়ে যাওয়া, গলা শুকিয়ে আসা।

২. গর্ভবতী হওয়ার কত দিন পর বোঝা যায়?

উত্তর : পিরিয়ড মিস করার আগে থেকেই প্রথম সপ্তাহে ৮০ শতাংশ মহিলা বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন। আবার ৫০ শতাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৬ সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি অনুভূত হতে থাকে।

৩. গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়?

উত্তরঃ কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে তা গর্ভপাত বা মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন-

আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম

মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

Leave a Comment