ঘুমের ঔষধের নাম কি, কাজ ও ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

ঘুমের ঔষধের নাম কি

ঘুম হলো শরীরের আধা অচেতন একটি প্রক্রিয়া। পুরো চেতন নয়, পুরো অচেতন নয় এবং এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় যাওয়া এবং ফিরে আসার মধ্যবর্তী সময়টুকুই ঘুম। ঘুম শরীরের একটি গুরুপ্তপূর্ণ কাজ।

ঘুমের কাজ শরীরে অন্য কাজগুলোকে রি-চার্জ করা। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত ঘুম নিয়মিত খাবারের মতোই একটি অংশ। খাবার শরীরের ফুয়েল যোগায়, ঘুম শরীরের ইঞ্জিন ঠিক রাখে।

বাজারে ঘুমের ঔষধের নাম এর অভাব নেই। তবে ঘুমের বেশিরভাগ ওষুধ মস্তিষ্কের কাজের গতিকে ধীর করে দিয়ে শরীরকে রিলাক্স করে ফেলে, পেশিগুলোকে শিথিল করে ফেলে, মস্তিষ্কের নিউরোনাল এক্টিভিটিতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে শরীরকে ঘুম পাড়ায়।

পুরো কাজটাই ঘটে মস্তিষ্কের বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে। ঘুমের ওষুধগুলো গামা এমাইনো বিউটারিক এসিড বা সংক্ষেপে গাবা নামের নিউরোট্রান্সমিটার উপাদানকে মস্তিষ্কে সিক্রেট করে। আর এই গাবার কাজ হল মস্তিষ্কে স্নায়ুর কাজের গতি কমিয়ে দেয়া। মস্তিষ্কে এমন স্নায়ুবিক কাজের ফ্লো কমে গেলে ঘুম আসতে থাকে। তাই ঘুমের ঔষধ সেবনে আমাদের ঘুমের ঔষধের নাম কি ও তার কাজ সম্পর্কে জেনে সেবন করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ব্রণ দূর করার উপায় ও রূপচর্চা করার পদ্ধতি সমুহ  

ঘুম না হলে কি হয়

ঘুমের ঔষধের নাম কি

ঘুম কম হওয়া বা ঘুমের সমস্যার কারণে ব্যক্তি শারীরিকভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ পর্যন্ত ১৫৩টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।

জার্নাল সায়েন্সের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, অনিদ্রার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার সঙ্গে ইনসমনিয়ার যোগসূত্র রয়েছে।

ঘুম না হলে করনীয় 

আপনি ঘুমাতে বিছানায় শুয়েছেন কিন্তু আপনার কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না।ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করে ও চোখের পাতায় নেই ঘুম।বহু লোকেরই এ সমস্যা হয়েছে কোনো না কোনো সময়। এই অনিদ্রার সমস্যা থেকে বাচতে অনেকেই ঘুমের ঔষধ খেয়ে থাকেন।

তাই ঘুমের ঔষধের নাম কি শুনলেই সেটা না কিনে,আমাদের ঘরোয়া ভাবে কিছু টিপস ফলো করা উচিত। নিম্নোক্ত উপায় গুলি,আমাদের ফলো করে দেখা উচিত।

১. বিছানায় লেগে থাকবেন না

যদি ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে যান এবং কিছুক্ষণ শিথিল করার কাজ করুন। বই পড়া, শান্ত সঙ্গীত শোনা, হালকা গরম পানিতে গোসল করা, বা ধ্যান করা আপনাকে ঘুম আনতে সাহায্য করতে পারে।

২. ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন

মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, এবং টেলিভিশনের নীল আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে এই ডিভাইসগুলি ব্যবহার করা বন্ধ করুন।

৩. নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী বজায় রাখুন

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। এটি আপনার শরীরের একটি নিয়মিত ঘুমের ছন্দ তৈরি করতে সাহায্য করবে।

৪. শোবার ঘরকে আরামদায়ক রাখুন

ঘরের তাপমাত্রা, আলো এবং শব্দ স্তর নিশ্চিত করুন যে আপনার ঘুমের জন্য উপযুক্ত।

৫. ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে এই পদার্থগুলি এড়িয়ে চলুন।

৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। তবে, ঘুমাতে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে জোরালো ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলুন।

৭. শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন

ঘুমাতে যাওয়ার আগে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান, বা প্রগতিশীল পেশী শিথিলকরণের মতো শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন।

৮. ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য চিকিৎসা সহায়তা নিন

যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তারা আপনার ঘুমের সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসার বিকল্পগুলি সুপারিশ করতে সাহায্য করতে পারে।

ঘুমের ঔষধের নাম কি ঔষধের নাম

এখানে কিছু সাধারণ ঘুমের ঔষধের নাম দেওয়া হলোঃ

• জোলপিডেম (অ্যাম্বিয়েন): এটি একটি নন-বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা দ্রুত ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

• জোপিক্লোন (লুনেস্টা): এটি আরেকটি নন-বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা দ্রুত ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

• এসজোপিক্লোন (এস্টোরিক): এটি একটি নন-বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা দ্রুত ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

• টেমাজেপাম (রেস্টোরিল): এটি একটি বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে এবং ঘুমের সময়কাল বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

• ডায়াজেপাম (ভ্যালিয়াম): এটি একটি বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে এবং ঘুমের সময়কাল বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

• লোরাজেপাম (অর্ফিট্রান): এটি একটি বেঞ্জোডায়াজেপিন হিপনোটিক যা ঘুমের সূত্রপাত ঘটাতে এবং ঘুমের সময়কাল বাড়াতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়।

এগুলি কেবলমাত্র কয়েকটি সাধারণ ঘুমের ঔষধের নাম। আরও অনেকগুলি ঔষধ পাওয়া যায় এবং আপনার জন্য কোনটি সঠিক তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের ঔষধের ক্ষতিকর দিক

ঘুমের ঔষধের নাম কি বা কোনটি, যদিও স্বল্পমেয়াদী ব্যবহারে উপকারী হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

১.নির্ভরশীলতা: দীর্ঘদিন ঘুমের ঔষধ ব্যবহারের ফলে শরীর ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

২.হ্যাংওভার: ঘুমের ঔষধের প্রভাবে পরের দিন সারাদিন ঘুমঘুম ভাব, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষমতা (slow reaction time) ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

৩.স্মৃতিশক্তি হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

৪.মানসিক অবসাদ: হঠাৎ করে ঘুমের ঔষধ বন্ধ করলে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, চিন্তা বেড়ে যেতে পারে।

৫.শারীরিক সমস্যা: শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি।

৬.দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি: ঘুমের ঔষধের প্রভাবে গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি চালানো বিপজ্জনক হতে পারে।

কিছু কিছু ঘুমের ঔষধের নাম রয়েছে,যেটা সেবন করলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।যেমন:

১.বেঞ্জোডায়াজেপিন

২.Zolpidem (Ambien

১.বেঞ্জোডায়াজেপিন ঔষধ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে আসক্তি, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

২.Zolpidem (Ambien) ঔষধের প্রভাবে হ্যালুসিনেশন, বিভ্রান্তি, অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

ঘুমের ঔষধ ব্যবহার পূর্ব সতর্কতা

১.আপনার ডাক্তারের সাথে ঘুমের ঔষধ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করুন।

২.ঔষধের ডোজ, ব্যবহারের সময়কাল এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সাবধানে জেনে নিন।

• ঔষধ ব্যবহারের সময় গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি চালানো থেকে বিরত থাকুন।

• দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের ফলে ঔষধের প্রভাব কমে যেতে পারে (tolerance)।

• হঠাৎ করে ঔষধ বন্ধ করার পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে আনুন।

বাজারে বিভিন্ন ঘুমের ঔষধের নাম রয়েছে, ঘুমের ঔষধের নাম কি ও তার কাজ কি তা জানা জরুরী। আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা উচিত। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে,ঘুমের ঔষধ সেবন না করাই উত্তম।

পরিশেষে

আশা করছি আপনি ঘুমের ঔষধের নাম কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ঘুমের ওষুধ কখনই বিনা চিকিৎসকের পরামর্শ সেবন করা উচিত নয়। কারন অনেক ঘুমের ওষুধ শুধু বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া খাওয়া যায় না। তাই সমস্যা ও লক্ষণ বুঝে ঘুমের ওষুধ সেবন করা উচিত।

ঘুমের ঔষধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১. প্রতিদিন ঘুমের ঔষধ খেলে কি অভ্যেস হয়ে যায়?? 

উত্তরঃ হ্যা,তাই ঘুমের ঔষধ না খেয়ে ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করাই শ্রেয়। 

২.সাধারণ একটি ঘুমের ঔষধের নাম?

উত্তরঃ ডায়াজিপাম

৩.গর্ভাবস্থায় কি ঘুমের ঔষধ খাওয়া যায়? 

উত্তর: গর্ভাবস্থায় প্রচলিত ঘুমের ওষুধ সেবনের ফলে সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া, জন্মের সময়ে শিশুর ওজন কম হওয়া ও আকারে ছোটো হওয়ার মতো জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।তাই না খাওয়াটাই শ্রেয়।

আরও পড়ুন-

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ, খাওয়ানোর নিয়ম ও সতর্কতা

ন্যাপ্রোসিন 500 এর কাজ কি, ব্যবহার ও কার্যকারিতা

Leave a Comment