ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা

ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম

সর্দি জ্বর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হওয়া রোগগুলোর একটি। হঠাৎ ঠান্ডা লাগা বা সর্দি জ্বর হওয়া যে কারো জন্য খুবই সাধারণ একটি বিষয়। ঠান্ডা বা সর্দি জ্বর মানুষকে খুবই সামান্য কারণে যেমন ভোগাতে পারে, তেমনি সহজেই সেরেও যেতে পারে।

সাধারণত ঠান্ডা লাগা বা সর্দি জ্বরের বেশকিছু সাধারণ উপসর্গ থাকে যেগুলো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে একই রকম হয়ে থাকে। সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা অথবা সর্দি-জ্বর এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামণ রোগ যা মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসণালী, বিশেষ করে নাকে আক্রমণ করে।

এছাড়া এই রোগে গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার দুই দিন পর বা তারও আগেই এই রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি প্রকাশ পেতে পারে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা খুব দ্রুতই সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগে।

সাধারণত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই সমস্যা হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম, কাশির সিরাপ, উপসর্গ ও ঘরোয়া কিছু সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করব।

আরও পড়ুনঃ ঘুমের ঔষধ এর নাম, সেবনবিধি ও চিকিৎসা পদ্ধতি

ঠাণ্ডা কাশির লক্ষণসমুহ

ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম

নাক বন্ধ হওয়া, সর্দি থাকা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা,মাংসপেশিতে ব্যথা, কাশি, হাঁচি, জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা, স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসা। বাজারে ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম এর অভাব নেই,তবে প্রথমে ঔষধ না দিয়ে ঘরোয়া ভাবে আমাদের আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। 

এসব রোগের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই নিজের যত্ন নেয়া যায়। তাছাড়া প্রাথমিক ভাবেই কিছু ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম রয়েছে,সেটা খাওয়ানো যেতে পারে।

তা ছাড়া কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়। সব ধরনের ঔষধ সেবন করার আগেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। লক্ষণ দেখা গেলেই হুট করে কোনো ঔষধ সেবন করলে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

ঠান্ডা কাশির ঔষধের নামসমুহ

যখন আপনি এই সমস্যায় হাঁচি দিচ্ছেন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের মধ্যে ঠান্ডা অনুভব করছেন, তখন আপনি ঠান্ডার উপসর্গগুলো উপশম করার জন্য ঠান্ডার ঔষধের নাম খোঁজ করবেন।

যখন আমাদের ঠান্ডা কাশি উপসর্গগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা আসে, ঠিক তখন বিভিন্ন ধরণের ঠান্ডা কাশির ওষুধ পাওয়ার কথা মাথায় আসে। ডাক্তার আপনার জন্য যথেষ্ট ভালো ঔষধ কি তা চেক করে আপনাকে দিবে।

ঠান্ডা এবং কাশির জন্য অনেকগুলি ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ পাওয়া যায়। এখানে সবচেয়ে সাধারণ কয়েকটি রয়েছে:

সর্দির ট্যাবলেট 

1. Ambrox

2. Adovas

3. Tuska Plus

4. Fenadin

5. Purasol

6. Basok

7. Dexporten

8. Tulsi

9. Tuspel

10. Dextrim

12. OfCaough

11.Carva 75

12. Cefotil

13, Cefotil Plus

14. Cinaron

 15. E-Cof

16. Fexo 60

17. Napa Extand

18. Remocof

19. Flamex 400

20. Metril

21. Histasin

22. Histanol

23. Histin

24. Tofen

কাশির সিরাপ

1. Adovas

2. Ambrox

3.. Tuska Plus

4. Boxol

5. Ambolit

6. Sudocof

7. Ocof

8. Dexpoten

ব্যথানাশক এবং জ্বরনাশক

1.অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল),

2.আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মোট্রিন)

3.ন্যাপ্রোক্সেন (অ্যালেভ) ব্যথা এবং জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে।

অ্যান্টিহিস্টামাইনস

1.ডিফেনহাইড্রামাইন

2.লোরাটাডিন (ক্লারিটিন)

3.সেটিরিজিন (জিরটেক) হাঁচি, সর্দি এবং চোখ জ্বালা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ডিকনজেস্ট্যান্টস

1.স্যুডোফেড্রিন (সুডাফেড)

2.অক্সিমেটাজোলিন (অফ্রিন) নাক বন্ধ উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

কাশির ঔষধ

1.ডেক্সট্রোমেথরফান (রোবিটাসিন),

2.গাইফেনেসিন (মুসিনেক্স)

3.কোডিন কাশি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ঠান্ডা কাশি হবার কারন

সাধারণ সর্দি-কাশি সাধারণত কোনো ঔষধ ছাড়াই ৭–১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়।তবে কিছু কিছু পর্যাপ্ত কারনে ঠান্ডা কাশি হয়ে থাকে। অনেক ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম আপনি জেনে থাকলেও, নিম্নোক্ত কারন গুলোর জন্য,ঔষধ এর প্রয়োজন নেই।

ঘরোয়া কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে চললেই,আপনি এসব কারন থেকে নিজেকে আড়াল রাখতে পারবেন। নিম্নোক্ত কারন গুলির জন্য আপনার ঠান্ডা কাশি লেগে থাকতে পারে।

১। ভাইরাস

 রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস, এবং অ্যাডিনোভাইরাস ঠান্ডা কাশির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

২। ঠান্ডা আবহাওয়া

ঠান্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসযন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে শুষ্ক করে দেয়, যা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

৩। শুষ্ক বাতাস

শুষ্ক বাতাস শ্বাসযন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে শুষ্ক করে দেয় এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪। অ্যালার্জি

ধুলো, পরাগরেণু, পোষা প্রাণীর লোম, ইত্যাদির অ্যালার্জি ঠান্ডা কাশির লক্ষণগুলির মতো লক্ষণ দেখাতে পারে।

৫। ধূমপান

 ধূমপান শ্বাসযন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

ঠান্ডা কাশি হতে বাচতে ঘরোয়া উপায়

ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম এর অভাব নেই। যে যার ইচ্ছামত ঔষধ সেবন করতে পারে। তবে ঘরোয়া ভাবে কিছু টিপস অনুসরণ করলেই,আমরা নিজেদের ঔষধ থেকে বিরত রাখতে পারব।চলুন দেখে নেই,নিজেকে ঠান্ডা – কাশি থেকে বাচাতে ঘরোয়া কিছু উপায়।

১.প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

সুষম খাবার: প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (কমলা, লেবু, আঙ্গুর, আমলকী), ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার (গাজর, মিষ্টি আলু, পালং শাক) এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার (ডিম, মাছ, মাংস) খান।

হাত পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে এবং বাইরে থেকে আসার পর।

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো।

মানসিক চাপ কমানো: যোগব্যায়াম, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।

২.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাবার

আদা: আদা চা, আদা-রস, আদা-রসুন পেস্ট, আদা-মধু মিশ্রণ।

তুলসী: তুলসী পাতা চা, তুলসী রস।

মধু: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ মধু।

গরম পানি: প্রচুর পরিমাণে গরম পানি পান করা।

লবণ জল: লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা।

৩.কাশির উপশম:

মধু: এক চা চামচ মধু, এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া।

গরম পানি: প্রচুর পরিমাণে গরম পানি পান করা।

আদা: আদা চা, আদা-রস, আদা-রসুন পেস্ট।

তুলসী: তুলসী পাতা চা, তুলসী রস।

ভাপ: গরম পানিতে ভাপ নেওয়া।

৪.সর্দির উপশম

গরম পানি: প্রচুর পরিমাণে গরম পানি পান করা।

লবণ জল: লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা।

ভাপ: গরম পানিতে ভাপ নেওয়া।

স্যুপ: মুরগির স্যুপ, সবজির স্যুপ।

টক দই: টক দই সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে।

নাক বন্ধ হলে: লবণ মিশিয়ে গরম পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।

নাকের ড্রপ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নাকের ড্রপ ব্যবহার করা।

ঠান্ডা এবং কাশির জন্য ওষুধ বেছে নেওয়ার সময়, আপনার উপসর্গগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার জ্বর থাকে, তাহলে আপনাকে এমন একটি ওষুধ নিতে হবে যাতে অ্যাসিটামিনোফেন, আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন থাকে।

আপনার যদি নাক বন্ধ থাকে, তাহলে আপনার একটি ডিকনজেস্ট্যান্ট নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এবং আপনার যদি কাশি হয়, তাহলে আপনার একটি কাশির ঔষধ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

এটা মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ যে ৭ দিনের বেশি সময় ধরে ওটিসি ঔষধ নেওয়া উচিত নয়। আপনার উপসর্গগুলি যদি ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।

এখানে কিছু অতিরিক্ত টিপস রয়েছে যা আপনাকে ঠান্ডা এবং কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে:

• প্রচুর পরিমাণে পানি এবং অন্যান্য তরল পান করুন।

• প্রচুর বিশ্রাম নিন।

• ধোঁয়া এবং দ্বিতীয় ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন।

ঠান্ডা কাশি হলে সতর্কতা

হাত ধোয়া – বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়াই ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

ঘর পরিষ্কার – নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা, বিশেষ করে দরজার হাতল, টেবিল, মোবাইল ফোন ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা।

ভিড় এড়ানো – অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

মাস্ক ব্যবহার – জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক ব্যবহার করুন।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা – পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শিশুদের ক্ষেত্রে: শিশুদের কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে: গর্ভবতী নারীদের ঔষধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 অন্যান্য: যাদের ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ আছে তাদের ঠান্ডা-কাশি হলে সতর্ক থাকা উচিত।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

 ১.কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে (২ সপ্তাহের বেশি)

২. শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে

৩. জ্বর বেশি হলে (১০২°F এর বেশি)

৪. বুকে ব্যথা হলে

৫. কাশির সাথে রক্ত বের হলে

শিশুদের ক্ষেত্রে,দ্রুত শ্বাস নেওয়া, নাকের ডগা ঢুকে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

পরিশেষে

মনে রাখতে হবে যে, ঠান্ডা-কাশি সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। আপনার বিভিন্ন ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম জানা থাকলেও, আপনি উপরে বর্ণিত সতর্কতাগুলো মেনে চললে আপনি জটিলতা এড়াতে পারবেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ঠাণ্ডা কাশির ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়েছেন।

ঠান্ডা কাশি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১.২৪ ঘন্টায় সর্দি দূর করার উপায়?

উত্তরঃ কিছু প্রতিশ্রুতিশীল ভিটামিন এবং সম্পূরক গ্রহণের পাশাপাশি ভাল স্ব-যত্নে নিযুক্ত করে আপনার অসুস্থতার সময়কাল কমাতে পারেন। 

২.সর্দির ঔষধ খেলে কি ক্ষতি হয়?

উত্তরঃ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । 

৩.সবসময় নাক দিয়ে পানি পড়ার কারণ কি?

উত্তরঃ নাকের ভিতর জ্বালাপোড়া করে এমন যেকোনো কিছুর কারণে নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। 

আরও পড়ুন-

বাচ্চাদের টোফেন সিরাপ এর কাজ কি ও খাওয়ার নিয়ম

doxicap এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম ও প্রতিক্রিয়া

Leave a Comment