খাঁটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা খুব জরুরি ।আমরা সকলেই জানি ঘি একটি পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু ঘি খাওয়ার সঠিক নিয়ম অনেকে জানিনা। ঘি  প্রায় সকল ধরনের খাবারের সাথে খাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশ উপকার পাওয়া যায় খালি পেটে খাওয়ার ফলে।

সম্পন্ন  লেখাটি পড়লে, খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম ও খাঁটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। ঘি খাওয়ার নিয়ম মতো না খেলে কোনো উপকার পাওয়া যাবেনা। সকালে উঠে  এক চামচ  ঘি আর এক গ্লাস গরম পানি মিশ্রিত করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

গরম পানির সাথে ঘি মিশ্রিত করে খেলে আরথ্রােইটিস, চুল পড়া প্রতিরোধসহ  বিভিন্ন কাজে  সাহায্য করে। তবে খালি পেটে ঘি  খেলে অন্তত ৩০ মিনিট এর মধ্যে কোন কিছু খাওয়া ঠিক না। খালি পেটে ঘি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুনঃ খেজুরের উপকারিতা এবং অপকারিতা

খালি পেটে ঘি খাওয়ার উপকারিতা

আসলে ঘি একটি চর্বি জাতীয় খাবার যা ইংরেজিতে ক্লারিফাইড বাটার (Clarified Butter) নামে পরিচিত। ঘি এর পুরোপুরি চর্বি। এটাতে প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ চর্বি হয়েছে। বাকি ০.১ শতাংশ জলীয় দ্রবণ রয়েছে। ঘি তৈরি করা হয় দুধ থেকে। সম্পূর্ণ চর্বি হওয়ার কারণে সকল ধরনের তাপমাত্রা সংরক্ষণ করা যায়

অনেকে মনে করে খালি পেটে খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়। এই কথাটি পুরোপুরি  ভুল। কারণ খালি পেটে ঘি খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খালি পেটে ঘি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। সেটা আমাদের অনেকের জানার বাহিরে। নিম্নে খালি পেটে হওয়ার কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলো:

  •  সকালে ফ্রেশ হওয়ার পর খালি পেটে এক চামচ পরিমাণ ঘি খেতে পারেন। এতে করে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়।
  •  সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক চামচ পরিমাণ কি মিশ্রিত করে খেতে পারেন। গরম পানির সাথে কি খাওয়ার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  •  খালি পেটে কালোজিরা কালোজিরা সাথে ঘি মিশ্রিত করে খেতে পারেন। কালোজিরার সাথে ঘি খেলে সকল ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

উপরে যে কয়টি খাওয়ার নিয়ম এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এইভাবে খেতে পারেন। খালি পেটে ঘি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। গরম পানির সাথে কি খাওয়াবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়। তার পাশাপাশি  যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে সেটা দূর হয়। গরম পানির সাথে ঘি মিশ্রিত করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম

ঘি এর উপকারিতা

ঘি অত্যস্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মূলত শীতকালে খাওয়া অনেক উপকারী। তবে গরম কালেও ঘি খাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক মতে,ঘি শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ঘিতে প্রচুর পরিমাণ বিউটারিক অ্যাসিড যা ইন্টেস্টাইনর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এজন্য কেউ যদি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের সঙ্গে গেমিস খেলে  গ্লাইসেমিক ইনপডেক্স সামান্য হলেও কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঘি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ঘি আমাদের দেহের নানা ধরনের উপকার করে থাকে।  নিম্নে  ঘি এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বিভিন্ন সময় গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত ঘি খাওয়া শুরু করলে কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সামগ্রিক শরীরে শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সকালে খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ, ঘিয়ে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি থাকে। আমাদের দেহের সকল ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে।

যার ফলে শরীরে  নতুন কোষ তৈরি হয়। নতুন কোষ উৎপন্ন হওয়ার ফলে মাংসপেশি পরিপূর্ণ হয় এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঘি কোষকে নতুন জীবন দেয়। নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম? খাঁটি ঘি খাওয়ার উপকারিতা।

মস্তিষ্কের কোষ সক্রিয় রাখে

ঘিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এসেনশিয়াল ফ্যাট, যা ব্রেনের সেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর যদি ব্রেনের সেলেরা ঠিকমতো কাজ শুরু করে তাহলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। প্রতিদিন খালি পেটে ঘি খেলে মস্তিষ্কের কোষ অনেক সক্রিয় থাকে। নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গিয়ে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার ফলে মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে। ঘি ডিমেনশিয়া ও  আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।

আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

আর্থ্রাইটিস রোগ দূর করে

নিয়মিত খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে শরীরে নতুন কিছু উপাদান মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যা জয়েন্টের সফলতাকে বাড়িয়ে তোলে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আর্থ্রাইটিস মতো হাড়ের রোগের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা  একেবারে কমে যায়। ঘিয়ে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড শরীরের গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চুল পড়া প্রতিরোধ করে

প্রতিদিন খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। স্বাস্থ্য ভালো থাকালে মানুষ সুস্থ থাকে। কারণ, ঘি পুরোপুরি তেল জাতীয় খাবার। নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে মাথায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। যার ফলে চুলের গোড়া  শক্ত হয়। এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।  নিয়মিত ঘি খেলে চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

মানুষের স্বাস্থ্য যতটা সুস্থ থাকে, তার স্ক্রিন ততো উজ্জ্বল হয়। যার ফলে দামি দামি কসমেটিক ব্যবহার করেও সুফল পাওয়া যায় না। মানুষের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় তার ভেতর থেকে। ঘি এর মধ্যে কোষকে পূর্ণগঠন করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। ঘি চর্বিযুক্ত খাবার যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ঘি ত্বকের প্রাকৃতিক  উজ্জলতা  বাড়ায় এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করে। ঘি ত্বককে ময়েশ্চার করে। ত্বকের রোগ সোরিয়াসিম কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঘি খাওয়ার ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার দূর হয়।

ঘি ওজন কমাতে সাহায্য করে

একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঘিয়ের মজুত মিডিয়াম ফ্যাটি এসিড, শরীরে জমে থাকা ফ্যাট  গলাতে শুরু করে। যার ফলে তাড়াতাড়ি ওজন কমতে শুরু করে। অনেকে মনে করে ঘি খেলে মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একথা সম্পূর্ণ ভুল। প্রতিদিন খালি পেটে ৫ থেকে ১০  মিলি লিটার ঘি খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে বিপাকের হার বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ঘি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

প্রতিদিন ঘি খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। প্রতিদিন গরম ভাতের সাথে এক চামচ পরিমাণ ঘি মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত খাওয়ার ফলে মলত্যাগের সমস্যা দূর হয়। যাদের দীর্ঘ স্থায়ী কোষ্ঠ কাঠিন্য তারা নিয়মিত গরম ভাতের সাথে ঘি খেতে পারেন। নিয়মিত ঘি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রক্তে দূষিত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়

গত এক দশকে বাংলাদেশের যুব সমাজের মধ্যে  হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সব পরিস্থিতির পিছনে হাত রয়েছে কোলেস্টেরলের। তাই ডাক্তারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সি মানুষদের সকালে খালি পেটে ঘি খাওয়ার। নিয়মিত খালি পেটে ঘি খাওয়ার ফলে শরীরের ওমেগা থ্রি এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। রক্তের কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

ঘি খাওয়ার অপকারিতা

সবকিছুর উপকারের পাশাপাশি উপকারিতা রয়েছে। প্রত্যেকটা জিনিসের নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। এবং খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। মাত্রা অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করলে বা ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। ঠিক একইভাবে ঘিয়ে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে। যার ফলে অতিরিক্ত সেবন করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পাকস্থলীর সমস্যা ও সম্ভাবনা বেশি থাকে।

কারণ, হঠাৎ করে পাকস্থলিতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খেলে পরিপাকতন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যার ফলে হজমে ব্যাঘাত ঘটে। পেটের সমস্যা না হলে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ হচ্ছে, ঘিয়ে প্রচুর পরিমাণ চর্বি থাকে। এসব কারণে মাত্রা অতিরিক্ত কোন কিছু সেবন করা উচিত না। খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম? খালি পেটে ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

শেষকথা

ঘিয়ে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। নিয়মিত খালি পেটে ঘি খাওয়ার অপকারিতা ফলে শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়। খাঁটি ঘি খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেহের নতুন কোষ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। যার ফলে, শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

খালি পেটে ঘি খাওয়ার নিয়ম? খালি পেটে ঘি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ঘি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই উপকৃত হয়েছেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল হলে ক্ষমা করে দিবেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন-

কমলা খাওয়ার উপকারিতা

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment