কফির উপকারিতা ও অপকারিতা

কফির উপকারিতা ও অপকারিতা

যারা কফি প্রেমী আছেন, তাদের কাছে কফি নামটা শুনলেই মনটা ভরে যায়। কেননা কফি খেতে তো বেশ মজা লাগে। কফি খাওয়ার যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত কফি খাওয়ার আবার বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে কফির বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং কফি খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম যা কিনা আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি। তাই আমদেরকে অবশ্যই জানতে হবে কফির উপকারিতা ও অপকারিতা ও গ্রীন কফি খাওয়ার নিয়ম।

কফি এমন একটি পানীয় যা কিনা শরীরকে রিফ্রেশ করে, একটা শান্তির অনুভূতি দেয় মুহূর্তের মধ্যেই। শীত কিংবা গরম শরীরকে চাঙ্গা ও এনার্জেটিক করার জন্য এক কাপ কফিই যথেষ্ট। 

কফির উপকারিতা

  • কফিতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে এনার্জি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। এই উপাদান শারীরিক ও মানসিক এনার্জি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • কফি খেলে মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে।
  • মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি উন্নত হয় এবং দক্ষতা উন্নত হয়।
  • যদি চিনি ছাড়া কফি নেওয়া হয় তাহলে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
  • নিয়মিত কফি খেলে পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি কমে।
  • এছাড়া কফি খেলে হতাশার ঝুঁকিও কমে যায়।
  • লিভারের ক্ষতি এবং কলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
  • কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন ছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন বি যা কিনা শরীরের জন্য উপকারি।
  • কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস মন ভালো করতে সাহায্য করে।
  • যাদের মুড স্যুইংয়ের সমস্যা আছে তাদের জন্য কফি উপকারি।
  • অবসাদ কমাতেও কফি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

কফির অপকারিতা

  • অতিরিক্ত কফি পান করলে অনিদ্রা, খিটখিটে মেজাজ, পেট খারাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
  • কখনই সকালে খালি পেটে কফি খাওয়া উচিত না। কেননা সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। আর পাকস্থলীতে এই অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে জমলে হজমে সমস্যা হয়।
  • এছাড়াও কফির বীজে ক্যাফেইন ও অন্যান্য অম্লীয় উপাদান থাকার ফলে এটি পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার, গ্যাসট্রিকের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। 
  • দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রচুর পরিমাণে কফি পান করলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যহত হতে পারে।
  • অতিরিক্ত কফি খেলে ঘুমের সমস্যা হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা সন্ধ্যার পর কফি খেতে নিষেধ করেন।
  • অতিরিক্ত কফি খেলে হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়।
  • কফি শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করলেও অতিরিক্ত কফি স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
  • প্রচুর পরিমাণে কফি পান করলে শরীরের স্বাভাবিক উদ্দীপনাও নষ্ট হতে পারে।
  • শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত কফি খেলে বুকধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে। 
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়া অনুভুতির মাত্রা বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মক্রটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই গর্ভধারণের পর পুরোপুরি ভাবে কফি বাদ দিতে হবে।
কফি’র উপকার অপকার coffe khwoar upokar opokar

কফি খাওয়ার নিয়ম

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দিনের শুরুটা করেন ১ কাপ কফি দিয়ে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফি পান করা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। প্রতিটি খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেই রয়েছে কিছু সঠিক ও নির্দিষ্ট সময়। কফির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষজ্ঞতের মতে, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত কফি পান না করাই উত্তম।

কারণ কফি পানের ফলে সকালে শরীরে ক্যাফেইনের মাত্রা হুট করে অনেক বেড়ে যায় এবং কয়েক ঘন্টা পর ক্যাফেইনের মাত্রা স্বাভাবিক নিয়মে কমেও যায়। এতে করে সারাদিন নিজেকে ক্লান্ত ও অবসন্ন লাগে। তাই মধ্য-সকাল থেকে বিকালের আগ পর্যন্ত সময় হলো কফি পান করার জন্য সঠিক ও উপযুক্ত সময়। 

ঘুম থেকে উঠার অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর ক্যাফেইন গ্রহণের উদ্দেশ্য হলো, শরীরকে ক্যাফেইনবিহীন অবস্থায় জাগ্রত করার অভ্যাস গড়ে তোলা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শরীর যখন ক্যাফেইন পাবেনা, তখন নিজে থেকেই জেগে উঠার ও সচল হওয়ার চেষ্টা করবে এবং এক সময় এটিই অভ্যাস হয়ে যাবে।

আর মধ্য-সকালে কফি পান করলে শরীর ক্যাফেইনের সাহায্যে আরও চাঙ্গা হবে। তবে এতে করে সাধারণ নিয়মের উপর কোন প্রভাবই পরবে না। আর প্রতিদিন কফি পান করাকেই অতিরিক্ত বোঝায় না। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ মিলিগ্রাম কফি পান করতে পারবেন।

আরও জানুনঃ কালোজিরার উপকারিতা

কফির প্রকারভেদ

কফি তো কম বেশি আমরা সবাই খেয়ে থাকি। কিন্তু কফির প্রকারভেদ তা হয়তো অনেকেরই অজানা। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের কফি রয়েছে। আমাদের কাছে সাধারণত ব্রু এবং নেসলে কফি বেশি পরিচিত। তবে এর বাহিরেও আরও অনেক ধরনের কফি আছে। পৃথিবীতে এতো ধরণের কফি আছে যেগুলো হয়তো আমরা চিনিও না। তেমন এই উল্লেখযোগ্য কিছু কফি নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কফির প্রকারভেদ সম্পর্কে-

এসপ্রেসো কফি

বিশ্বের সব ধরনের কফি এসপ্রেসো কফি থেকেই তৈরি করা হয়। কেননা এই কফি কে বিশুদ্ধ বলে মনে করা হয়। এই কফি সাধারণত ব্ল্যাক কফি নামেও পরিচিত। বিশ্বের পছন্দের কফির তালিকায় এটি এক নম্বরে। মূলত এই কফির স্বাদ সামান্য তেতো হয়ে থাকে কারন এসপ্রেসো গুঁড়া এই কফিতে মিশ্রিত করা হয়। 

অ্যামেরিকানো কফি

অ্যামেরিকানো কফিটি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কারন এই কফি তুলনামূলক ভাবে বেশি পান করা হয়। মুলত এই ধরণের কফি তৈরি করার জন্য এসপ্রেসো কফির মধ্যে আধা কাপ গরম পানি, একটু দুধ এবং পরিমাণ মতো চিনি মেশানো হয়।

ক্যপাচিনো কফি

ক্যপাচিনো কফি মূলত এসপ্রেসো কফির মধ্যে আলাদাভাবে দুধ এবং চকোলেট সিরাপ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। তাই ক্যপাচিনো কফি স্বাদে, এসপ্রেসো কফি থেকে খুবই আলাদা।

মকা চিনো কফি

মূলত মকা চিনো কফি ক্যাপাচিনো কফিতে কোকো পাউডার মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও এই কফিগুলি পরিবেশনের জন্য হুইপড ক্রিম ব্যবহার করা হয়।

ল্যাটে কফি

ল্যাটে কফি খেতে দুর্দান্ত মজা। ল্যাটে কফিতে মূলত এসপ্রেসো কফি থেকে তিনগুণ বেশি দুধ মেশানো হয়। পরিমাণে বেশি দুধ মেশানোর কারণে এই কফিতে অনেকটা সাদাটে ভাব চলে আসে। এই কফিতে চিনির পরিমানও কিছুটা বেশি হয়। 

আইরিশ কফি

কফি প্রেমিদের কাছে আইরিশ কফি খুবই প্রিয়। কারন এই কফি সামান্য পরিমাণ হুইস্কি, এসপ্রেসোর গুঁড়া এবং চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়।

গ্রীন কফি খাওয়ার নিয়ম

যদিও সাধারণ কফি ও গ্রীন কফির মধ্যে বেশির ভাগ স্বাস্থ্য উপকারিতা একই ধরনের কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গ্রীন কফি বেশি উপকারি। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি পানীয় হিসেবে অনেকেরই খাদ্যাভাসে আজকাল শোভা পাচ্ছে গ্রীন কফি। সাধারণ কফির মতো এটি কোন রকম প্রক্রিয়াজাত করা বা ভাজা হয় না।

একদমই কাঁচা থাকে। তারপর কাঁচা বীজ কে রোদে শুকিয়ে, গ্রীন কফির বীজ থেকেই মূলত গ্রীন কফি তৈরি করা হয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গ্রীন কফি খাওয়ার নিয়ম-গ্রীন কফির বীজ ব্যবহার করলে, আগের দিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সেই পানি পরদিন সকালে ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে পান করতে হবে।

আর যদি গ্রীন কফির গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় তাহলে যে ভাবে ব্ল্যাক কফি তৈরি করে অর্থাৎ গরম পানিতে পরিমান মতো গ্রীন কফির গুঁড়ো মিশিয়ে লিকার করে খেতে হবে। স্বাদ বৃদ্ধি করতে চাইলে প্রয়োজন মত মধু যোগ করা যেতে পারে।

এই গ্রীন কফি খাওয়ার আবার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমনঃ-

  • ব্লাড সুগার এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে।
  • উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে।
  • শরীরের ওজন কমাতে।
  • ত্বকের উন্নতি করতে।
  • তারুণ্য বজায় রাখতে।
  • শক্তি বর্ধক পানীয় হিসেবে কাজ করে।
  • ভালো লাগার অনুভূতি বজায় রাখে।

গ্রীন কফি’র উপকার থাকলেও বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। খুব বেশি পরিমাণে গ্রীন কফি পান করা যাবে না। এতে করে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব পরতে পারে। ব্লাড সুগার লেভেল অনেক কমে যেতে পারে । টানা ১ থেকে ২ মাসের বেশি কখনোই গ্রীন কফি খাওয়া উচিত না। তাহলে এটি উপকারের বদলে অপকারই বেশি করবে।

পরিশেষে

পরিশেষে বলতে পারি, আজকে আমরা কফির উপকারিতা ও অপকারিতা ও গ্রীন কফি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম। আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা কফি খাওয়ার নিয়ম ও কফির প্রকারভেদ সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবেন, যা থেকে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন-

কালোজিরা ও রসুনের উপকারিতা

কাঠবাদাম এর উপকারিতা

Leave a Comment