পাসপোর্ট করার নিয়ম
একটা সময় ছিল যখন পাসপোর্ট পেতে অনেকটা বেগ পেতে হতো। পাশাপাশি পাসপোর্ট এর জন্য অনেক রকম কাগজ বা ডকুমেন্ট জোগাড় করতে হত এবং পাসপোর্ট হাতে পেতে মিনিমাম তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগত। এছাড়া বিভিন্ন রকমের ঝামেলা পোহানো বা দৌড়াদৌড়ি করতে হত।
কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকার এর ডিজিটাল আইন উদ্বগের কারণে দেশে বিভিন্নভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করছে। অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট তার মধ্য অন্যতম। তাই পাসপোর্ট পেতে আর আগের মত মাসের পর মাস বেগ পেতে হয়না। খুব অল্প কিছু ডকুমেন্ট এর মাধ্যমেই আমরা পাঁচ থেকে
সাত দিনের মধ্যে এখন পাসপোর্ট হাতে পেতে পারি। আজকের অর্টিকেলে আমরা জানব সহজে ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেরি না করে যেনে নেওয়া যাক-
ই-পাসপোর্ট কি
ই পাসপোর্ট হল এমন একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যাতে একটি মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে। এই চিপের মধ্যে পাসপোর্ট কারীর সকল তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। ই পাসপোর্টে ছবি ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আইরিশ বায়োমেট্রিক গ্রহন করা হয়ে থাকে। চিপের ভেতরের সংরক্ষিত ডাটা যাচাই করনের ক্ষেত্রে পাবলিক কি অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিপের বাইরের ডাটা যাচাই করার ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
- আপনি ই-পাসপোর্ট করার জন্য যা আবেদন করেছেন তার প্রিন্টকপি।
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র
- নাগরিক সনদ ( থাকলে)
- শিক্ষাগত সনদ
- পেশাগত সনদের ফটোকপি
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর প্রিন্টকপি
- আগে যদি পাসপোর্ট করা থাকে তবে তার ডেটা পেজের প্রিন্টকপি।
ই পাসপোর্ট করার প্রতিটি ধাপ
step – 1
- ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম এর মধ্যে সর্বপ্রথম রেজিস্ট্রেশন করা। মোবাইল বা কম্পিউটার এর মাধ্যমে ব্রাউজার এ গিয়ে ই-পাসপোর্ট লিখে ক্লিক করতে হবে। ই পাসপোর্ট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পোর্টাল নামে একটি ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক আসবে সরাসরি সেই লিঙ্কে চলে যাবেন। দেখবেন অফিসিয়াল সাইট ওপেন হয়ে যাবে।
- সেখানে অ্যাপ্লাই ফর e-passport অথবা রি-ইস্যু নামে একটি অপশন আসবে সেই অপশনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পরে আপনাকে step-1 দেখাবে।
- সেখানে আপনি কি বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট এর জন্য এপ্লাই করতেছেন কিনা বা বাংলাদেশের বাহিরে থেকে এপ্লাই করতে চান কি না। সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে (ইয়েস অর নো দেওয়া থাকবে)। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে না হন তাহলে নো তে ক্লিক করবেন। নো তে ক্লিক করার পর আপনাকে আরও দুটি অপশন দেখাবে। সেখানে ই-পাসপোর্ট এভেলেবেল আছে কিনা সেই জন্য সেই জায়গার লোকেশনগুলো আপনাকে সঠিকভাবে দিতে হবে। যদি ই- পাসপোর্ট সেই দেশে এভেলেবেল না থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে এপ্লিকেশন করতে পারবেন না।
- তারপর দ্বিতীয় অপশনে আপনাকে দেখাবে আপনার আশেপাশের পুলিশ স্টেশন কোনটা সেটি সিলেক্ট করবেন। এরপর আপনাকে আপনার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস টি দেখিয়ে দিবে। তারপর কনটিনিউ বাটনে ক্লিক করবেন।
আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
step – 2
- সেখানে আপনাকে আপনার ইমেল দিতে হবে। তারপর কনটিনিউ দিতে হবে। ইমেইল এ্যাড্রেস দেওয়ার পর আপনাকে দুইবার পাসওয়ার্ড দিতে হবে এবং দুটি অপশন দেখাবে পাসওয়ার্ডের। পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই ৬টি অক্ষরের হতে হবে এবং একটা বড় হাতের একটা ছোট হাতের এবং একটি সংখ্যা বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। তারপর আপনি গিভেন নেম নামক একটি অপশন দেখবেন সেখানে আপনার ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী আপনার নিজের নামটা বসাবেন এবং পদবী বসাবেন। তারপর মোবাইল নাম্বার অপশনে গিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বারটি দিবেন। এরপর কনটিনিউ তে ক্লিক করবেন
Step – 3
- একাউন্ট খোলার জন্য যে মেইল দিয়ে অ্যাপ্লাই করেছিলেন সেই ই-মেইলে কনফার্মেশন একটি লিংক যাবে মেসেজ হিসেবে যাবে। সেই লিংকে গিয়ে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার একাউন্টে কনফার্ম হয়ে যাবে। ই পাসপোর্ট একাউন্ট এক্টিভেট হয়ে গেলে সেখানে সাইন ইন অপশন থাকবে সেই সাইন-ইন অপশনে গিয়ে ক্লিক করে নিজের ইমেইল এবং পূর্বে যে পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করেছিলেন সে পাসওয়ার্ড সেখানে দিয়ে নিজের একাউন্টে সাইন-ইন করুন। ই-পাসপোর্টের ওয়েব পোর্টালের সঠিকভাবে সাইন ইন করার পর আপনি আপনার ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার অপশন দেখতে পারবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন
- প্রথম অপশনে আমরা দেখতে পারবো পাসপোর্টের টাইপ সম্পর্কে। সেখানে দুই রকমের পাসপোর্ট এর অপশন দেখাবে প্রথমটি হল ওর্ডিনারি পাসপোর্ট দ্বিতীয়টি অফিসিয়াল পাসপোর্ট।যারা সরকারি চাকুরিজীবি আছেন তাদের জন্য অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সেখানে আপনাকে আপনার অফিসের বিভিন্ন ডকুমেন্ট (এনওসি)দিতে হবে।আর অর্ডিনারি পাসপোর্ট হলো সকল জন্যই। তারপর সেভ এন্ড কনটিনিউতে ক্লিক করবেন।
- এরপর পারসোনাল ইনফরমেশন দিতে হবে। আই এপ্লাই ফর মাইসেফ দিলে সব তথ্য ই-মেইল থেকে পূরন হয়ে যাবে।তারপর নিজের পার্সোনাল ইনফরমেশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন। তারপর সেভ এন্ড কনটিনিউতে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর নিজের ঠিকানা অপশন আসবে। সেখানে সকল তথ্য ঠিক ভাবে দিতে হবে। ভুল হলে পরবর্তীতে পাসপোর্টে সমস্যা হবে। তথ্যটি অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী দিতে হবে। এরপর সেভ এন্ড কনটিনিউ তে ক্লিক করতে হবে।
- এরপরে নিচে একটি অপশনে আইডি ডকুমেন্ট শো করবে ।সেখানে আইডি ডকুমেন্টের মধ্যে যদি আপনি যেহেতু নতুন পাসপোর্ট বানাতে চাচ্ছেন তাই ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি পাসপোর্ট এই অপশনে ক্লিক করতে হবে। নিচে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার অপশনে আপনার পরিচয়পত্রের নাম্বার বসাতে হবে। তারপর সেভ ও কনটিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপরে নিচে একটি অপশনে আইডি ডকুমেন্ট শো করবে। সেখানে আইডি ডকুমেন্টের মধ্যে যদি আপনি যেহেতু নতুন পাসপোর্ট বানাতে চাচ্ছেন তাই ইউ ডোন্ট হ্যাভ এনি পাসপোর্ট এই অপশনে ক্লিক করতে হবে। নিচে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার অপশনে আপনার পরিচয়পত্রের নাম্বার বসাতে হবে। তারপর সেভ ও কনটিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- তারপরের অপশনে নিয়ে যাবে আপনাকে। সেখানে আপনি বিবাহিত বা আবিবাহিত কী না সেই তথ্য দিতে হবে। তারপরে অপশনটি হল ইমারজেন্সি কন্টাকক্ট। যেখানে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নাম্বার দিতে হবে (যাকে সিলেক্ট করবেন অব্যশই তার)।
পাসপোর্ট অপশন ও ভ্যালিডিটি
- এরপর হল পাসপোর্ট অপশন। সেখানে আপনাকে দুটি অপশন দেওয়া থাকবে একপাশে দেওয়া থাকবে পাসপোর্ট পেইজ। আপনি যদি বেশি ঘোরাঘুরি করে থাকেন তাহলে আপনি ৬৪ পেজের পাসপোর্ট এর জন্য এপ্লাই করতে পারেন অন্যথায় আপনি ৪৮ পেজের পাসপোর্টটি ক্লিক করবেন।
- আর অপরপাশে ভ্যালিডিটি। আপনি কত বছরের জন্য পাসপোর্টটি করতে যাচ্ছেন পাঁচ বছরের জন্য হলে ৫ এবং ১০ বছরের জন্য হলে ১০ এ ক্লিক করতে হবে।
- এরপরের অপশনটি হল আপনি কীভাবে পাসপোর্টি ডেলিভারী চাচ্ছেন। সেখানে রেগুলার ডেলেভারী ও এক্সপ্রেস ডেলিভারি অপশন থাকবে। নিজের মন মত যেটা প্রয়োজন সিলেক্ট করুন। তারপর সেভ এন্ড কনটিনিউ।
- তারপরের অপশনে আপনাকে আপনার সকল দেওয়া তথ্যগুলো কে ভালোভাবে চেক করার জন্য আবার দেখাবে। সেখানে আপনি খুব ভালোভাবে আপনার তথ্যগুলো সঠিক আছে কিনা চেক করে নিবেন। যদি কোথাও ভুল থাকে তাহলে এডিট অপশন থেকে সেখানে এডিট করে সঠিক তথ্যটি বসিয়ে দিবেন। তারপর কনফার্ম এ ক্লিক করুন।
- তারপর পেমেন্ট অপশন দেখাবে। আপনি চাইলে অনলাইন/অফলাইন দুই ভাবেই পেমেন্ট করতে পারবেন।
- তারপর আপনার এপ্লিকেশন ফর্ম দেখাবে। যেটি প্রিন্ট করতে হবে।
ই-পাসপোর্টের খরচ
পাঁচ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট
- নিয়মিত- ১৫ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ৪০২৫ টাকা
- জরুরী- ৭ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ৬৩২৫ টাকা
- অতি জরুরী- ২ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ৮৬২৫ টাকা।
দশ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট
- নিয়মিত- ১৫ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ৬৭৫০ টাকা
- জরুরী- ৭ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ৮০৫০ টাকা
- অতি জরুরী- ২ দিনের মধ্যে প্রদান। ফি- ১০৩৫০ টাকা।
পাঁচ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট
- নিয়মিত- ১৫ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ৬৩২৫ টাকা
- জরুরী- ৭ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ৮৩২৫ টাকা
- অতি জরুরী- ২ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ১২০৭৫ টাকা।
দশ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট
- নিয়মিত- ১৫ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ৮০৫০ টাকা
- জরুরী- ৭ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ১০৩৫০ টাকা
- অতি জরুরী- ২ দিনের মধ্যে প্রদান, ফি- ১৩৮০০ টাকা।
পরিশেষ কথা
বাংলাদেশ সরকার দেশকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ হাতে নেওয়ার পর থেকে সকল কাজ ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কাজ হয়ে থাকছে। তাই পাসপোর্ট এর বিসয়টাও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেকেই জানিনা ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম কি, কিভাবে অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়।
তাই আজ আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি আশা করচি আপনারা বিষয়টা ভালভাবে বুঝতে পেরেছে। যদি ই-পাসপোর্ট করার নিয়মসম্পর্কে বিষয়টা বুজতে না পারেন তাহলে আমাদের জনাতে পারেন আমরা আপনাদের কে সাহায্য করবো !!ইনশাআল্লাহ!!
আরও পড়ুন-
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার সঠিক নিয়ম