ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম

ইমার্জেন্সি পিল (Emergency Pill) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। কারন এই ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের ফলে অনেক মহিলা তার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। এই আবিস্কার দেশ তথা বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।

আমাদের নিয়মিত কিছু পাঠকের বিশেষ অনুরোধে তাই আজ জন্মনিরোধক ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম ? ইমারজেন্সি পিলের নাম ও দাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আমরা অনেকেই ইমার্জেন্সি পিল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানিনা। আবার তথ্য জানলেও ব্যবহার বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কম জানি। আজ আমরা আলোচনা করবো জন্মনিরোধক ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম, ইমার্জেন্সি পিলের নাম ও দাম সম্পর্কে। আশা করি, পুরো আলোচনায় আমাদের সাথে থাকবেন।

আধুনিক সমাজের মানুষ বিশেষ করে বিবাহিত যুগল বা নবদম্পতিদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিজেদের ক্যারিয়ার অথবা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দীর্ঘ পরিকল্পনা করে। যারা সহজে বাচ্চা নিতে চান না বা অসময়ে গর্ভধারণ করতে চান না তারা সহবাস বা সঙ্গমের সময় বিভিন্ন ধরনের প্রটেকশন যেমনঃ কনডম,জন্মনিরোধক বড়ি প্রতিরোধক ব্যবহার করেন।

জন্মনিরোধক ও ইমার্জেন্সি (Emergency Pill) পিল কি?

ইমার্জেন্সি পিল বা বড়ি হলো একটি জন্মনিরোধক ট্যাবলেট বা মুখে খাওয়ার বড়ি যা অসতর্কতাবসত যৌন মিলন বা সহবাসের ফলে গর্ভধারনের ঝুকি সৃষ্টি হয় তা কমাতে এই পিল সাহায্য করে। অনেকে ইমার্জেন্সি পিল কে মর্নিং আফটার পিল নামেও বলে বা চিনে থাকেন কিন্তু তার মানে এই না যে এটি সকালবেলা খেতে হবে।

ইমার্জেন্সি পিল অরক্ষিত যৌন মিলনের ৭২ থেকে ১২০ ঘন্টা অর্থাৎ ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই খেতে হবে তবে যতো দ্রুত সম্ভব খাওয়াই ভালো এতে কাজও দ্রুত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

ইমার্জেন্সি পিল কিভাবে কাজ করে

ইমার্জেন্সি পিল সাধারণত ডিম্বস্ফুটনে বাধা দেয় এবং নিষিক্তকরনে বাধা দেয়। এটা জরায়ু এন্ডমেট্রিয়ামের পরিবর্তন ঘটায় এবং নিষিক্ত ডিম্বানুকে জরায়ু তে বেড়ে উঠতে দেয় না।

ইমার্জেন্সি পিল বা জরুরি গর্ভনিরোধক পিল প্রধানত দুই ধরনের:

১. প্রোজেস্টিন পিল (যা “মর্নিং-আফটার পিল” নামেও পরিচিত)।

২. প্রোজেস্টিন এবং ইস্ট্রোজেনের সংমিশ্রণ (“এলা” নামেও পরিচিত)।

শুধুমাত্র প্রোজেস্টিন পিল বা বড়ি, যেমন লেভোনরজেস্ট্রেল হরমোন প্রোজেস্টিন ধারণ করে যা ডিম্বস্ফোটন প্রতিরোধ করে কাজ করে এবং অরক্ষিত সহবাসের ৭২ ঘন্টার মধ্যে নেওয়া হলে এগুলি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রোজেস্টিন এবং ইস্ট্রোজেন বড়ির সংমিশ্রণ, যেমন উলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট, ডিম্বস্ফোটন বিলম্বিত করে কাজ করে। যা অরক্ষিত মিলনের পর ১২০ ঘন্টার মধ্যে নেওয়া যেতে পারে।

উভয় ধরনের জরুরী গর্ভনিরোধক বড়ি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন করে নিলে সবচেয়ে ভালো বা নিজেও ওষুধের দোকান থেকে কিনা যায়। মনে রাখতে হবে ইমার্জেন্সি পিল বা গর্ভনিরোধক বড়িগুলি গর্ভপাতের বড়িগুলির মতো এক নয়। একে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

ইমার্জেন্সি পিল শুধুমাত্র জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত এবং ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার আগে একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে ভালো।

ইমার্জেন্সি পিল কখন ব্যবহার করবেন

ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে নিম্ন লিখিত কারনগুলোতে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় হয়ে যায়। 

  • সহবাসের সময় উভয়ে যদি কোনো জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করে থাকেন
  • সহবাসের সময় যদি হঠাৎ কনডম ফেটে যায় বা খুলে যায়।
  • যদি টানা ৫ দিন ইমার্জেন্সি পিল খেতে ভুলে যান।
  • জরায়ুতে অবস্থিত যে জন্মনিরোধক IUD রয়েছে তা স্থানচূত হয়েছে বলে মনে করেন।
  • যদি আজল পদ্ধতি ব্যর্থ হয়ে যায় অর্থাৎ যোনির ভিতরে বীর্যপাত হয়ে যায়।
  • যদি নিরাপদকাল বা সময় গণনায় ভুল হয়।
  • যদি গর্ভনিরোধক ইনজেকশন নেয়ার পরে পরবর্তী ডোজ নিতে ২৮ দিন বেশি দেরি হয়ে যায়।
  • যদি ভুলবশত কোনো পদ্ধতি ছাড়া বা অনিচ্ছায় বা জোরপূর্বক সহবাস হয়ে যায়।  

আরও পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা

জন্মনিরোধক ও ইমার্জেন্সি (Emergency Pill) কিভাবে খাবেন

মূলত অরক্ষিত সহবাস বা সঙ্গমের ফলে গর্ভধারনের যে ঝুঁকি বাড়ে এবং সেই ঝুঁকি এড়াতে বেশিরভাগ সময়ে নারীরা ইমার্জেন্সি পিল খেয়ে থাকেন। তবে ইমার্জেন্সি পিল কখন খেতে হয়, কিভাবে খেতে হয় এবং পিল খাওয়ার নিয়ম কি এসব আমরা অনেকেই জানি না। বর্তমানে অনেক ধরনের ইমার্জেন্সি (Emergency Pill) জন্মনিরোধক পিল বাজারে পাওয়া যায়। তবে একেক পিল খাওয়ার নিয়ম একেক রকম হয়ে থাকে। তাই পিল খাওয়ার আগে আমাদের সঠিক নিয়ম জানা জরুরি।

আমরা আগেই আলোচনা করেছি বাজারে অনেক ধরনের ইমার্জেন্সি জন্মনিরোধক পিল পাওয়া যায়। যেমন-

তিন দিনের ইমার্জেন্সি পিল

 ৩ দিনের ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে সহবাসের বা সঙ্গমের ৭২ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ ৩ দিনের মধ্যে পিল খাওয়া উওম তবে ৪ অথবা ৫ দিনের মধ্যে খেলেও অসুবিধা হয় না। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই পিলের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী পড়ে নিবেন।

পাঁচ দিনের ইমার্জেন্সি পিল

৫ দিনের ইমার্জেন্সি পিলের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই আপনাকে উলিপ্রিষ্টাল এসিটেট বা পিউলি নামক ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেতে হবে এবং বর্তমানে বাজারে এটি বেশি প্রচলিত কারণ এতে রয়েছে লিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট আই এন এন(INN) ৩০ মিলিগ্রাম যা ৫ দিন বা ১২০ ঘন্টার মধ্যে সেবন করতে হয়। এটি সেবনের ফলে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মধ্যেকার নিষিক্তকরণ প্রতিরোধ করে যা প্রটেকশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই পিলটি অরক্ষিত সহবাসের পরে সর্বোচ্চ ১ বার সেবন করতে হয় এবং যত দ্রুত সম্ভব সেবন করতে হয় এবং কোনক্রমেই যেন সময় ১২০ ঘন্টা বা ৫ দিন পার না হয়। তবে মাসিক চক্রের যে কোন সময়ে এই পিল সেবন করলে কোন ক্ষতি হবে না।

একুশ দিনের ইমার্জেন্সি পিল

২১ দিনের ইমার্জেন্সি পিলের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই চোখ বন্ধ করে বাজারে বহুল প্রচলিত ফেমিকন পিল খেতে পারেন তবে এ পিল খাওয়ার নিয়ম একটু আলাদা কারণ ফেমিকন পিলের ১ পাতায় ২৮ টি ট্যাবলেট থাকে এবং এর মধ্যে ২১ টি সাদা ট্যাবলেট ও ৭ টি লাল বা বাদমী ট্যাবলেট থাকে।

এই পিল খাওয়ার নিয়ম হলো আপনার মাসিক শুরুর ১ম দিন থেকেই ১ টি করে সাদা ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার কারন নিয়ম মেনে খেলে জন্মবিরতিকরণ নিশ্চিত ভাবে সফল হবে। সাদা ট্যাবলেট খাওয়া শেষ হলে যখন আপনার মাসিক চক্র শুরু হবে সেই সময় আপনাকে বাদামি বা লাল ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করতে হবে। এই পিল নিয়মমত খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।

কারন ফেমিকন পিলের ২১ টি সাদা পিলে রয়েছে ০.৩০ মিলিগ্রাম নরজেষ্টেল, ০.০৩ মিলিগ্রাম ইথিনিল ইস্ট্রাডিওল এবং বাদামি ৭ টি পিলে রয়েছে ৭৫.০০ মিলিগ্রাম ফেরাস ফিউমারেট যা জন্মবিরতিকরণ নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুনঃ হরমোন কি? হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায়

জন্মনিরোধক পিল বেশি খেলে কি হয়? 

ইমার্জেন্সি জন্মনিরোধক পিল খাওয়া স্থায়ী কোন সমাধান নয় এবং ডাক্তারাই বলেন এটি দীর্ঘদিন না খেতে কারণ নিয়মিত ইমার্জেন্সি পিল খেলে জরায়ু দূর্বল হয়ে যায়,ভবিষ্যতে গর্ভধারনের কার্যকরিতা কমে যায়।সুতরাং এই পিল বেশি মাত্রায় না খাওয়া বা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। 

জন্মনিরোধক ইমার্জেন্সি পিলের উপকারিতা

ইমার্জেন্সি পিলের কিছু উপকারিতা আছে তারপরেও এটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই উত্তম। তারপরও চলুন জেনে আসা যাক এর উপকারিতা সম্পর্কে —

  • ইমার্জেন্সি পিল গর্ভনিরোধক ওষুধ তাই এটা গর্ভপাত করায় না বরং ডিম্বস্ফোটনের সময় পিছিয়ে দিয়ে গর্ভধারনের ঝুঁকি কমায়।
  • গর্ভনিরোধক ওষুধ খেলে মহিলাদের ওজন বেড়ে যায় ভেবে অনেকেই ভয় পায় কিন্তু এটা সত্য নয় কারন এই পিলের সাথে ওজন বাড়ার কোন সম্পর্ক নাই।
  • স্বল্প মাত্রায় ব্যবহারে এই পিলের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাই।
  • এই পিল অনাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সি থেকে মুক্তি দেয়।
  • যৌনাঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জন্মনিরোধক ইমার্জেন্সি পিলের অপকারিতা

ইমার্জেন্সি পিলের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বা সাইড ইফেক্ট বেশি।চলুন জেনে নেওয়া যাক পিলের অপকারিতা সম্পর্কে —

  • ইমার্জেন্সি পিল খেলে অস্বস্তি ও বমি বমি ভাব হতে পারে। 
  • মাসিক অনিয়মিত হয়।
  • মাঝে মাঝে জরায়ু দিয়ে রক্ত যেতে পারে।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। 
  • উচ্চ রক্তচাপ বা প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা বেরে যায়।
  • মাঝে মাঝে ব্রেস্টে ব্যাথা হয়।
  • হতাশাগ্রস্ত হওয়ার পিছনে দায়ী পিল খাওয়া। 

ইমার্জেন্সি(Emergency Pill) নাম ও দাম

আমরা অনেকেই ইমার্জেন্সি পিলের নাম ও দাম সম্পর্কে কম জানি তাই চলুন আজ আমরা ইমার্জেন্সি পিলের নাম ও দাম সম্পর্কে জেনে নেই —

  •  নোরিস্ক (Norix) ১ পিলের দাম ৬০ টাকা।
  • 5X ইমার্জেন্সি পিলের দাম ১৯৫ টাকা।
  • নরপিল (Norpill) ১ ইমার্জেন্সি পিলের দাম ৭৫ টাকা।
  • পিউলি (Peuli) ইমার্জেন্সি পিলের দাম ১৯৫ টাকা।
  • আই পিল (i-pill) ইমার্জেন্সি পিলের দাম ১৯০ টাকা।
  • ইমকন (emcon) ১ ইমার্জেন্সি পিলের দাম ৭০ টাকা।
  • নভেনল (novelon) ২১ পিলের দাম ৪০০ টাকা।
  • রোজেন (ROSEN) ২৮ পিলের দাম ৩৯৯ টাকা।

আরও পড়ুনঃ ফেমিকন পিল খাওয়ার নিয়ম

জন্মনিরোধক পিল কারা খাবেন না

  • কোন নারী যদি পূর্বে গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে তাদের ইমার্জেন্সি পিল না খাওয়াই উত্তম কারণে এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। 
  • যারা প্রায় সময়ই অরক্ষিত বা অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় বা যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয় তাদের ইমার্জেন্সি পিল না খাওয়াই উত্তম কারণ এতে জরায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

শেষ কথা

ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম সর্বশেষে আমরা বলতে পারি ইমার্জেন্সি (Emergency Pill) জন্মনিরোধক পিলের অনেক কার্যকরিতা থাকলেও এই পিল নিয়মিত গ্রহণ না করাই ভালো কারন এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং অনেক ঝুঁকি বহন করে। তা-ই এই ওষুধ সেবনের পূর্বে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

আরও পড়ুন-

ডায়াবেটিস কমানোর উপায়

ডায়রিয়া হলে করণীয় কি ও প্রতিকার

Leave a Comment