ই নামজারি চেক করার নিয়ম ও যাচাই করার পদ্ধতি

ই নামজারি চেক করার নিয়ম

যে কোনো প্রপার্টি কেনা-বেচা বা হস্তান্তর করতে চাইলে বেশ কিছু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। বিশেষত জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে, রেজিস্ট্রেশনের পরেই যে গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা জরুরি তা হচ্ছে নামজারি বা মিউটেশন।

কারণ, ই নামজারি চেক করার নিয়ম জানা না থাকলে,আইনের ফাঁক-ফোকরে নানাভাবে প্রপার্টি বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আইনি বিষয়টি এখনো পর্যন্ত আমাদের অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য।

ভূমি অফিসগুলোতে গ্রাহকদের নানা ধরণের সেবা নিতে যেন ভূমি অফিস বা সংশ্লিষ্ট দফতরে ছুটোছুটি করতে না হয় সে লক্ষ্যে এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি সেবার অনলাইন আবেদনের সুযোগ চালু করা হয়েছে। এ অনুযায়ী আজ থেকেই (পয়লা অক্টোবর ২০২২) ভূমির নামজারির সব কাজ সম্পন্ন হবে অনলাইনে, যেটাকে বলা হচ্ছে ই-নামজারি।

নামজারি করা জমির মালিকানার সরকারি স্বীকৃতি। নামজারি না করা জমি বেদখলের ঝুঁকিতে থাকে। নামজারি করা জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান সহজ হয়। নামজারি করা জমি বন্ধক রাখা সহজ। নামজারি করা জমি উত্তরাধিকারীদের কাছে সহজে হস্তান্তর করা যায়।

আজকের আর্টিকেলে আমরা ই নামজারি চেক করার নিয়ম, আবেদন কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আরও পড়ুনঃ নামজারি আবেদন চেক করার নিয়ম, শর্তাবলী ও ধাপসমুহ

ই-নামজারি কি

ই নামজারি চেক করার নিয়ম

মুলত, নামজারি বলতে কোন জমির মালিকানা হস্তান্তরের পর সরকারি রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম সংযুক্ত করার প্রক্রিয়াটিকে বোঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে, যখন আপনি কোন জমি ক্রয়, উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ, দান, বিনিময়, অথবা অন্য কোন বৈধ উপায়ে অর্জন করেন, তখন সেই জমির মালিকানা আপনার নামে নিবন্ধন করার জন্য নামজারি করতে হয়।

ই নামজারি চেক করার নিয়ম যদি না জানেন অথবা চেক না করে থাকেন,তাহলে পরবর্তীতে জমি আপনার নামে নিবন্ধিত হবে না।তাই ই নামজারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ই নামজারি চেক করার নিয়মনীতি

ই নামজারি চেক করার নিয়ম,না জানা থাকলে,আপনি নিম্নোক্ত উপায় অনুসরণ করতে পারেন।ই-নামজারি চেক করার জন্য আপনি দুটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন:

. ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে:

১. প্রথমে এই লিঙ্কে যান: https://mutation.land.gov.bd/

৩. মেনু থেকে “আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা” অপশনে ক্লিক করতে হবে।

• নিম্নলিখিত তথ্যগুলি প্রদান করুন:

• বিভাগ

• আবেদন আইডি

• জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর

• ক্যাপচা পূরণ করুন এবং “খুঁজুন” বাটনে ক্লিক করুন।

• আপনার ই-নামজারির সর্বশেষ অবস্থা প্রদর্শিত হবে।

মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে

• “ভূমি অ্যাপ” নামক মোবাইল অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।

• অ্যাপটি খুলুন এবং “ই-নামজারি” অপশনে ক্লিক করুন।

• আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং পাসওয়ার্ড প্রদান করে লগইন করুন।

• “আবেদনের অবস্থা” ট্যাবে ক্লিক করুন।

• আপনার ই-নামজারির সর্বশেষ অবস্থা প্রদর্শিত হবে।

এছাড়াও, আপনি নিম্নলিখিত উপায়ে ই-নামজারির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন:

এসএমএসের মাধ্যমে

• “LM <আবেদন আইডি>” টাইপ করে 16121 নম্বরে এসএমএস পাঠান।

• আপনার আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে একটি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন।

• ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে:

• আপনার স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে আপনার ই-নামজারির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ই-নামজারি চেক করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• আপনার আবেদন আইডি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সঠিকভাবে প্রদান করুন।

• ক্যাপচা পূরণ করার সময় সতর্ক থাকুন।

• আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা আপডেট রাখুন।

• আপনার আবেদনের অবস্থা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে, ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।আশা করি এই তথ্য আপনার ই-নামজারি চেক করতে সাহায্য করবে।

জমির নামজারি করা কেন জরুরি

মুলত আমরা ধারণা করি যে, দলিল এর কাজ, সম্পাদন হলেই সব কাজ শেষ। নামজারির দরকার কী? এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে শুধু মালিকানা হস্তান্তর হয়, সরকারের খাতায় মালিক হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।তাই ই নামজারি চেক করার নিয়ম না জানা থাকলে, অবশ্যই তা নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন।

শুধু কোনো দলিলের মাধ্যমে অর্জিত জমির মালিকানার ভিত্তিতে অথবা ওয়ারিশ হিসেবে পিতা-মাতার জমিতে দখলসূত্রে থাকলেই সরকারি রেকর্ডে উক্ত ভূমিতে তার মালিকানা নিশ্চিত হয় না।

কোনো ভূমিতে বৈধ ওয়ারিশ বা ক্রয়সূত্রে মালিক হওয়ার পর পূর্বের মালিকের নাম থেকে নাম কেটে বর্তমান মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তাহলেই তার মালিকানা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত হয়। এভাবে রেকর্ড বা জরিপের খাতায় জমির মালিকের নাম সংশোধন করার পদ্ধতিই হলো নামজারি।

আপনি যদি ওয়ারিশ হিসেবে বা ক্রয়সূত্রে কোনো জমির মালিক হন কিন্তু নামজারি না করান, তবে আপনার অজান্তে কোনোভাবে এক/একাধিক দলিল সম্পাদন করে কোনো স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি আপনার আগে নামজারি করে ফেলতে পারে। তাতে আপনি পরবর্তী সময়ে নামজারি করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যায় পড়বেন।

বাস্তবক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়তে দেখা গেছে যখন উক্ত স্বার্থানেষী ব্যক্তি অপর এক বা একাধিক ব্যক্তির নিকট ওই জমি ইতিমধ্যে বিক্রয় করে ফেলেছে। বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে নানারকম মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়ে থাকে যা দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ, সময় ও মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।

নামজারি তে ভুল থাকলে করণীয়

ই নামজারি চেক করার নিয়ম জানা না থাকলে,ভুল হতেই পারে।তাই নামজারিতে ভুল থাকলে সংশোধনের জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে পারেন:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

• ভুল সংশোধনের আবেদনপত্র (নির্ধারিত ফর্মে)

• নামজারির সনদ

• খতিয়ানের সনদ

• দাগ নম্বর ও খানার নকশা

• ভুল তথ্যের প্রমাণ (যদি থাকে)

• আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি

• দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

প্রক্রিয়া:

• আবেদনপত্র পূরণ: প্রথমে, নির্ধারিত ফর্মে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদনপত্র পূরণ করুন। আবেদনপত্রে ভুল তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন এবং সঠিক তথ্য প্রদান করুন।

• প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ: উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করুন।

• আবেদন জমা: আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা ভূমি অফিসে আবেদন জমা দিন।

• শুনানি: ভূমি অফিস কর্তৃক আবেদনটি পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনে শুনানির আয়োজন করা হবে।

• আদেশ: শুনানি ও প্রমাণ পর্যালোচনার পর ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ একটি আদেশ জারি করবে।

• সংশোধন: আদেশ অনুযায়ী, ভুল তথ্য সংশোধন করা হবে এবং নতুন নামজারি সনদ প্রদান করা হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

• ভুল সংশোধনের আবেদন দ্রুততম সময়ে জমা দেওয়া উচিত।

• আবেদনপত্রে সব কিছুর সঠিক তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

• প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঠিক ফটোকপি জমা দিতে হবে।

• ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে।

সহায়তা

ভুল সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য আপনি সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (https://land.gov.bd/) থেকেও তথ্য ও নির্দেশিকা সংগ্রহ করতে পারেন।

আরও কিছু টিপস

• আবেদন করার আগে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করুন।

• ভূমি অফিসে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।

• ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।

অনলাইন আবেদন

বর্তমানে, বাংলাদেশ সরকারের “আমার জমি” (<ভুল URL সরানো হয়েছে>) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে নামজারি সংশোধনের জন্য আবেদন করা সম্ভব।

আশা করি এই তথ্যগুলি আপনার নামজারিতে ভুল সংশোধনে সহায়ক হবে।

পরিশেষে

ই নামজারি চেক করার নিয়ম সম্পর্কে আজ আমরা সম্পূর্ণ জানলাম। মুলত জমিজমার কাজে এই নামজারি বিষয়টি জড়িয়ে আছে। পূর্বে ভুমি অফিসে সব কিছু হাতে কলমে করা হত। তাই মানুষকে অনেক ভোগান্তি ও হয়রানি সহ্য করতে হত।

কিন্তু বর্তমানে অনলাইনে নামজারি পদ্ধতি চালু হওয়ায় এখন কষ্ট অনেক কম। ই নামজারি চেক করা তাই অনেক সহজ হয়েছে।

ই নামজারি চেক করার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১.নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে?? 

উত্তরঃ ভূমির নামজারি প্রক্রিয়া সাধারণত ২৮ দিনে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। 

২.নামজারি না করলে কি কি সমস্যা হতে পারে? 

উত্তরঃ নামজারি না করলে আপনার অর্জিত সম্পত্তি অন্য যে কেউ দখল করতে পারবে। 

৩.নামজারি করতে কত টাকা লাগে?

উত্তর:আবেদন দাখিলের সময় আবেদন ফি ২০ টাকা ও নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা- মোট ৭০ টাকা শুধুমাত্র অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। 

আরও পড়ুন-

অনলাইনে শিক্ষক বদলির নিয়ম ও আবেদনের প্রক্রিয়া

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার উপায় ও সংরক্ষন

Leave a Comment