বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম

শীতের সকাল খুব ঠান্ডা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ে। আবার সন্ধ্যা বা রাতে জেঁকে বসে শীত। কখনো হয়তো শুষ্ক-দমকা বাতাসে হুট করেই বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। আবহাওয়ার এমন তারতম্যের সঙ্গে যে কারও খাপ খাওয়ানো কঠিন।

শিশুদের ক্ষেত্রে তো আরও সমস্যা। এ কারণে এই সময়ে শিশুদের কমন কোল্ড বা সাধারণ ঠান্ডা লাগা খুবই স্বাভাবিক। যে ঠান্ডা থেকে হতে পারে জ্বর, গলাব্যথাসহ অন্যান্য অনেক জটিলতা।

বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম অনেক তবে প্রথমেই ঔষধ না দিয়ে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা উচিত। চলমান মৌসুমে সাধারণত শুষ্ক কাশি বেশি হয়। অনেক সময় কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি হয়, যা শিশুদের জন্য বেশি কষ্টকর।

কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার পর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে তা নিউমোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়। তবে, সব শিশুর ক্ষেত্রে এটা হয় না। অনেকেই নিজের মতানুসারে বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম বলবে। তবে প্রথমেই ঔষধ না দিয়ে কিছু লক্ষন দেখা দিলে, তবেই চিকিৎসক এর নিকট নেয়া দরকার। যদি শিশুর জ্বর ১০২°F (৩৮.৯°C) এর বেশি হয়। যদি শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়।

যদি শিশুর নাক দিয়ে সবুজ বা হলুদ পানি পড়ে। যদি শিশুর কান ব্যথা হয়। যদি শিশুর খাওয়া-দাওয়া কমে যায়। যদি শিশু খুব অল্প বয়সী হয়। শিশুদের সর্দি-কাশির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই সেরে যায়। তাই উপরিউক্ত লক্ষন গুলো দেখা দিলেই,বাচ্চাকে চিকিৎসক এর নিকট নেয়া জরুরি।

আরও পড়ুনঃ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম ও ব্যবহার বিধি

বাচ্চাদের সর্দি কাশি সারাতে ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম এর অভাব নেই,তবে আমাদের প্রাথমিক ভাবে ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে,তারপর ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাচ্চাদের সর্দি, কাশি সারাতে যেসব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।

১.হাত পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত হাত ধোয়া বাচ্চাদের সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

২.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: বাচ্চার খেলনা, ঘর এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।

৩.স্তন্যপান: ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত স্তন্যপান করান। স্তন্যপান বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৪.পুষ্টিকর খাবার: বাচ্চাদের সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান।

ঘরোয়া প্রতিকার

১.হালকা গরম পানি: বাচ্চাদের নিয়মিত হালকা গরম পানি পান করান।

২.বুকের ভাপ: গরম পানির ভাপ বাচ্চাদের বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে।

৩.মধু: ১ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

৪.আদা: আদা রস বা আদা চা বাচ্চাদের সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে।

৫.লবণ জল: লবণ জল দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা কমে।

৬.স্যুপ: মুরগির স্যুপ বা সবজির স্যুপ বাচ্চাদের জন্য খুব উপকারী।

৭.বিশ্রাম: বাচ্চাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন।

তাই প্রথমে উপরিউক্ত কাজ গুলো করে দেখতে হবে বাচ্চার সর্দি কাশি কম হয় কিনা? যদি না কমে,সেক্ষেত্রে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

বাচ্চাদের সর্দি-কাশির জন্য ডাক্তারের কাছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনো কখনো জটিল হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ঘরেই সহজ চিকিৎসার মাধ্যমে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়। আবার, কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বাচ্চাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান:

১.শ্বাসকষ্ট

২.কাশি

৩.জ্বর

শ্বাসকষ্ট

১.দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (প্রতি মিনিটে 60 বারের বেশি)

২.শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের নিচের অংশ ভিতরে ঢুকে যাওয়া

৩.নাকের ডগায় ফোলাভাব দেখা দেওয়া

৪.শ্বাস নেওয়ার সময় শিস করার শব্দ হওয়া

কাশি

১.3 সপ্তাহের বেশি স্থায়ী কাশি

২.কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট

৩.কাশির সাথে বমি

৪.কাশির সাথে রক্ত আসা

৫.কাশির সাথে খাওয়ায় অসুবিধা

জ্বর

১.3 মাসের কম বয়সী শিশুদের 100.4°F (38°C) বা তার বেশি জ্বর

২.3 মাসের বেশি বয়সী শিশুদের 102.2°F (39°C) বা তার বেশি জ্বর

৩.3 দিনের বেশি স্থায়ী জ্বর

৪.জ্বরের সাথে খিঁচুনি

৫.জ্বরের সাথে ঠান্ডা লাগা

৬.জ্বরের সাথে অল্প খাওয়া বা পানি খাওয়া

এছাড়া খাওয়ায় অসুবিধা,অল্প খাওয়া বা পানি খাওয়া, ঘুমের সমস্যা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি মুখ, ফ্যাকাশে দেখানো, প্রস্রাবে পরিবর্তন (কম প্রস্রাব করা) এসব লক্ষন দেখলেও বাচ্চাকে চিকিৎসক এর নিকট নেয়া দরকার।

তবে শুনেই একটা কিনে এনে,বাচ্চাকে দিবেন না। বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম জেনে তবেই ব্যবহার করা উচিত। অবশ্যই চিকিৎসক এর কথা মতো ঔষধ আনতে হবে।

বাচ্চাদের সর্দি-কাশির ঔষধের নামসমুহ

বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম অনেক এবং বিভিন্ন ধরণের আছে। আপনার বাচ্চাদের বয়স, লক্ষণ এবং ঔষধের প্রতি সংবেদনশীলতার উপর নির্ভর করে ডাক্তার ঔষধ দেবেন।

কাশির জন্য

১.ডেক্সট্রোমেথোরফান (Robitussin DM): শুষ্ক কাশি কমাতে সাহায্য করে।

২.Guaifenesin (Mucinex): কফ পাতলা করে বের করতে সাহায্য করে।

৩.Pseudoephedrine (Sudafed): নাক বন্ধ হওয়া কমাতে সাহায্য করে।

সর্দির জন্য

• Saline nasal drops or spray: নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা পাতলা করে বের করতে সাহায্য করে।

• Acetaminophen (Tylenol) or ibuprofen (Advil): জ্বর এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

অন্যান্য ঔষধের নাম

• Robitussin Pediatric: 2 বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

• Mucinex DM for Kids: 6 বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

• Sudafed PE Pediatric: 6 বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

• Little Remedies Saline Nasal Spray: 2 বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

• Tylenol Infants’ Drops: 2 মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

• Advil Children’s Liquid: 6 মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য।

মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাদের ঔষধ দেবেন না। ঔষধের লেবেলের নির্দেশাবলী সাবধানে পড়ুন এবং মেনে চলুন। সঠিক ডোজ দেওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঔষধের সমাপ্তি তারিখের দিকে খেয়াল রাখুন।

বাচ্চাদের সর্দি কাশি এড়াতে করনীয় 

সুষম খাবার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই আপনার বাচ্চাকে সুষম খাবার খাওয়াবেন বেশি করে। এবং আমরা সবাই জানি, তরল পান শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শ্লেষ্মা পাতলা করতে সাহায্য করে।

তাই বাচ্চাকে বেশি করে তরল খাবার দিতে হবে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি বেশি দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ব্যায়াম

ব্যায়াম শিশুদের সুস্থ রাখে।

মাথায় তেল মালিশ

মাথায় তেল মালিশ ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করতে পারে।

গরম পানিতে গোসল

গরম পানিতে গোসল ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করতে পারে।

পরিশেষে

মনে রাখতে হবে, শিশুদের ঠান্ডা-কাশি হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে এবং আমরা যারা বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম জানি না। তারা অবশ্যই পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাকে ঔষধ খাওয়ানো ঠিক হবে না।

আর মাথায় রাখতে হবে যে, শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়াই ভালো। সমস্যা বেশি হলে,ঘরোয়া উপায় ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

১. বাচ্চাদের সর্দির জন্য কোন ঔষধ ভালো?

উত্তরঃ স্যালাইন অনুনাসিক ড্রপ প্রয়োগ করুন

২. ৩ মাসের বাচ্চার বুকে কাশি দূর করার উপায়?

উত্তরঃ একটি কার্যকর পদ্ধতি যা আপনার শিশুকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ দেবে তা হল স্টিমিং।

৩. প্রতি মাসে বাচ্চা অসুস্থ হওয়া কি স্বাভাবিক?

উত্তরঃ অল্পবয়সী বাচ্চাদের এক বছরে বেশ কয়েকটি সর্দি, কানের সংক্রমণ বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিপর্যয় হওয়া স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন-

নাপা এক্সট্রা এর কাজ কি ও এর কার্যকারিতা

কাশির সিরাপ এর নাম, সঠিক চিকিৎসা ও কার্যকারিতা

Leave a Comment