ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় ও নিয়ন্ত্রণের থেরাপি

ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়

মাসিক নারীদের একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, এটি নারীদের প্রজননের সাথে সম্পর্কিত। মাসিক সাবালিকা নারীদের প্রতিমাসে একবার করে হয়ে থাকে। এই মাসিক একজন কিশোরী থেকে শুরু করে প্রতিটি নারীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার।

মাসিক একজন নারীর প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে প্রতিমাসে মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে হয় না, কারো কারো মাসিক এক দুই মাস পর পর হয় আবার কারো কারো মাসে দুই তিন বারও মাসিক হয়

এই ধরনের মাসিককে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়।এক দুই মাস পর পর বা মাসিকের সময় পরিবর্তন হওয়ার চেয়ে ঘন ঘন মাসিক হওয়াটা বেশি চিন্তার বিষয়।

কিন্তু কোনটাকেই খাম-খেয়ালিভাবে উড়িয়ে দেয়া যাবেনা। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়,ঘন ঘন মাসিক কেন হয়, মাসিক চক্রের হিসাব সম্পর্কিত বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে এর আগে মাসিকের চক্র সম্পর্কে এবং কেন ঘন ঘন মাসিক হয় তা জেনে নেয়া বেশি জরূরী।

আরও পড়ুনঃ দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাসিক চক্রের হিসাব

ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় ghono ghono mashik hole ki koroniyo
ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়

অনেক নারীই আছেন যারা মাসিক চক্রের হিসাবটি ঠিকমত বুঝেন না। বিশেষ করে এই সমস্যাটি কিশোরী এবং তরুণীদের মধ্যে দেখা দেয়। তারা অনেকেই মাসিক চক্রের হিসাব সমন্ধে জানেনই না।

মাসিক চক্রের হিসাবটি খুবই সহজ এবং এই চক্র সমন্ধে আপনার যদি ধারণা থাকে তবেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মাসিক কি অনিয়মিত নাকি নিয়মিত? আপনার এক মাসিকের প্রথমদিন অর্থাৎ শুরুরদিন থেকে আরেক মাসিকের প্রথমদিন পর্যন্ত এই সময়কালকে মাসিক চক্র বলা হয়।

সচরাচর ২৮ দিনের ব্যবধানে মাসিক হয়ে থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ২১ থেকে ৩৫ দিনের ব্যবধানেও মাসিক হয়ে থাকে যেটি খুবই স্বাভাবিক।কিন্তু এর কম বা বেশি দিনের ব্যবধানে মাসিক হলে সেটিকে অনিয়মিত ধরা হয়। এই জন্য আমাদের জানতে হবে ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়। 

ঘন ঘন মাসিক কেন হয়

ঘন ঘন মাসিক হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে এটি নারীদের শারীরিক অবস্থা ও বয়স ভেদে একেক রকম কারণ দেখা দিয়ে থাকে।ঘন ঘন মাসিক হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ তুলে ধরা হলঃ 

  • ঘন ঘন মাসিক হওয়ার অন্যতম কারণ হল হরমোনের তারতম্য হওয়া। 
  • ডিম্বাশয়ের অপরিপক্বতার জন্য।
  • বিবাহিত নারীরা হঠাৎ জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়া সেবন করা বন্ধ করে দিলে। 
  • অতিরিক্ত টেনশন করলে। 
  • প্যাকেটজাত বা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার বা চিনিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে। 
  • ওজন অতিরিক্ত বেড়ে বা কমে গেলে। 
  • না জেনে বুঝে পিল সেবন করলে। 
  • থাইরয়েডজনিত সমস্যার কারণে। 
  • নারীদের বয়স যখন ৪০ এর উপরে হয়ে যায় তখন মেনোপজের সূচনা হিসেবেও ঘন ঘন মাসিক হ্য়। 
  • সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে। 
  • স্ত্রীরোগ দেখা দিলে- জরায়ুর পলিপ, ফাইব্রয়েড টিউমার, জরায়ুর প্রদাহ ও এন্ডোমেট্রোসিস।

ঘন ঘন মাসিক কেন হয় সেই ব্যাপারে তো জেনে নিলেন এখন তাহলে আসল কথায় আসা যাক ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়।

ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় 

ঘন মাসিক হোক বা অনিয়মিত মাসিক হোক আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবে আপনাকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে ঘন ঘন মাসিক হওয়া কোন সাধারণ কিছু নয়। তাই ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয়? এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর হবে একটাই ডাক্তারের কাছে যাওয়া।

কেননা, ঘন ঘন মাসিক হলেও আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা, আপনি কি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত, আপনার কয়টি সন্তান রয়েছে ও শারিরীক আরো বিভিন্ন দিকের উপর নির্ভর করবে আপনার চিকিৎসা।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে আপনি ঘন ঘন মাসিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন। তাছাড়াও সবার আগে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল আপনাকে হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলতে হবে।তাছাড়া আপনাকে আরো কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে- 

  • আপনার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন সঠিক রাখতে হবে। 
  • প্রতিদিন সুষম খাবার খান। 
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে ব্যায়াম করুন অথবা প্রতিদিন হাঁটুন।
  • অবশ্যই যে কাজটি প্রতিদিন করবেন সেটি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক সময়ে ঘুমাবেন। 
  • প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খান কেননা তরল খাদ্য আপনার শরীরে রক্তপাতের মাধ্যমে পানির যে ঘাটতি হয়েছে সেটি পূর্ণ করে। 
  • সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন। 
  • আপনার খাবারের তালিকায় দারুচিনি ও আদা যোগ করুন। 

ঘন ঘন মাসিক নিয়ন্ত্রনে থেরাপি

 আপনি ঘন ঘন মাসিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশকিছু থেরাপিও গ্রহণ করতে পারেন। যেমন-

  • হরমোন থেরাপিঃ পিসিওসের লক্ষণগুলি পরিচালনা করার জন্য ডাক্তাররা সাধারণত হরমোন থেরাপি গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। 
  • মানুসিক থেরাপিঃ নারীদের মাসিক তাদের মানুসিক স্বাস্থ্যের সাথেও সম্পর্কিত। কেননা, বিষন্নতা, স্ট্রেস এসবের কারণেও নারীদের ঘন ঘন ও অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার মানুসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে থেরাপি গ্রহণ করতে পারেন। 
  • ডায়েট থেরাপি অথবা পুষ্টির থেরাপিঃ যেহেতু ঘন ঘন মাসিক হলে সঠিক ডায়েট মেনে চলতে হয় সেক্ষেত্রে আপনি একজন ডায়েটেশিয়ানের কাছে গিয়ে নিজের জন্য একটি ডায়েট চার্ট বানিয়ে নিতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী চলতে পারেন। 

এসব থেরাপির মাধ্যমে আপনি চাইলেই আপনার ঘন ঘন মাসিকের সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 

ঘন ঘন মাসিক হলে কি সমস্যা হতে পারে

ঘন ঘন মাসিক হলে একজন নারীর নানা ধরণের শারিরীক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন মাসিক হলে নারীদের হরমোনজনিত রোগ দেখা দেয়। মাসে একাধিক মাসিক হলে ওভারিতে টিউমার ও ওভারিয়ান ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়াও ভবিষ্যতে সন্তান জন্মদানেও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পরিশেষে

একজন নারীর জন্য নিয়মিত মাসিক হওয়াটা অনেক জরূরী।হোক সে নারী বিবাহিত বা অবিবাহিত, অল্প বয়সী বা বেশি বয়সী প্রত্যেকটি নারীর জন্য নিয়মিত মাসিক হওয়া জরুরী। ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় এই বিষয়ে ধারণা ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি। 

অনেক সময় দেখা যায় যে, একজন অল্প বয়সী/অবিবাহিত নারীর যদি ঘন ঘন বা অনিয়মিত মাসিক হয় তখন বড়রা বলেন যে, বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে, ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই।

কিন্তু এই ঘন ঘন বা অনিয়মিত মাসিকের সঠিক চিকিৎসা না করলে পরবর্তী জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরণের সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত গাইনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় সম্পর্কিত বিস্তরিত জানাতে পেরেছি।

ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। ঘন ঘন মাসিক হলে কোন ওষুধ খাবেন?

উত্তরঃ ঘন ঘন মাসিক হলে কোনও ওষধের সাজেশন আমরা দিব না। কিন্তু এমন প্রশ্ন প্রায় নারীরা ইন্টারনেটে খুজে থাকেন। অনিয়মিত বা ঘন ঘন মাসিক হওয়া একটি সেনসিটিভ বিষয় তাই যেকোন ওষুধ না খেয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিন।

২। ঘন ঘন মাসিক হলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা?

উত্তরঃ ঘন ঘন মাসিক হলে ক্যাফেইন জাতীয়, অতিরিক্ত চিনি জাতীয়, উচ্চ চর্বিযুক্ত, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া যাবেনা।

৩। ঘন ঘন মাসিক হলে কোন খাবারটি খেলে উপকার পাবেন? 

উত্তরঃ কাঁচা পেপে আপনার মাসিককে নিয়মিত করতে অনেক উপকারী।কাঁচা পেপে জরায়ুর মাসল কনশট্রাকশনে সাহায্য করে। কাঁচা পেপের রস নিয়মিত খেলে আপনার মাসিক নিয়মিত হবে তবে মাসিক চলাকালীন অবস্থায় কাঁচা পেপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়াও কাঁচা হলুদ আপনি এক কাপ দুধে চা চামচের একভাগ দিয়ে তাতে একটু গুড় বা মধু দিয়ে খান তবে এটি আপনার মাসিককে নিয়মিত করতে সাহায্য করবে। তার পাশাপাশি এটি শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্সও নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

৪। নিয়মিত মাসিক হওয়া কেন জরুরী? 

উত্তরঃ একজন নারীর নিয়মিত মাসিক হওয়া মানে তার প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক আছে। মাসিক ঠিকমতো না হলে একজন নারীর নানা শারিরীক জটিলতা দেখা যায়। এবং একজন নারী দীর্ঘমেয়াদী শারিরীক সমস্যায় ভুগে থাকেন। 

আরও পড়ুন-

মাসিক বন্ধ হলে কি করতে হবে ও চিকিৎসা পদ্ধতি

ব্রণ দূর করার উপায় ও রূপচর্চা করার পদ্ধতি সমুহ  

Leave a Comment