দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা  

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ 

প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর নিয়মিত মাসিক হওয়া সুস্থতার লক্ষণ। প্রতি ২৮ থেকে ৩৫ দিন অন্তর একজন নারীর পিরিয়ড হয়। ১২ বছর থেকে শুরু করে ৫৫ বছরের মধ্যে পিরিয়ড চলতে থাকে প্রতি মাসে।

তবে বিভিন্ন কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। কখনো বা সময়ের আগেই আবার কখনো সময় পার হওয়ার পরে মাসিক হয়। নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড। তেমনি একটি সমস্যা হচ্ছে দুই মাস মাসিক না হওয়া। তাই অনেক নারীই

গুগলে সার্চ করেন দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে। তার শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা তা সম্পর্কে জানতে চান। স্বাভাবিক নিয়মেই অনেক সময় মাসিক দুই মাস বন্ধ থাকতে পারে। তবে বছরে প্রায় ২-৩ বারই যদি এমন হয় তবে সেটা চিন্তার বিষয়। তাই মাসিক কেন হচ্ছে না তার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করাটা জরুরী।

নইলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে, দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কে। এছাড়াও দুই মাস মাসিক না হওয়ার প্রতিকার এবং কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল। 

আরও পড়ুনঃ মাসিক বন্ধ হলে কি করতে হবে ও চিকিৎসা পদ্ধতি

অনিয়মিত পিরিয়ড দুই মাস না হওয়ার কারণ

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। যেমন : পিল এবং ইনজেকশন। 
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ( ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোন কমবেশি হওয়া) 
  • PCOS (Polycystic ovary syndrome) অর্থাৎ পুরুষ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। 
  • অনিয়মিত পিরিয়ডের অন্যতম কারণ হচ্ছে রক্তস্বল্পতা। 
  • অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপ। 
  • প্রি মেনোপজ (Pre Menopause) এর সময়ও অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। 
  • বিভিন্ন স্ত্রী রোগ হলে। যেমন : জরায়ুর পলিপ, জরায়ুর প্রদাহ, ফাইব্রয়েড টিউমার, অ্যান্ডোমেট্রোসিস ইত্যাদি। 
  • ক্যান্সার ও টিউমার ইত্যাদি রোগের কারণে হয়।
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার (চা, কফি) গ্রহণ করলে। 
  • শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি হলে। 
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে। 
  • ডায়াবেটিস থাকলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
  • অনিয়ন্ত্রিত বা অপর্যাপ্ত ঘুম। 
  • বাসস্থান অস্বাস্থ্যকর হলে। 
  • অপরিচ্ছন্নতার জন্যও হতে পারে।
  • ধূমপান বা মদ্যপান করার অভ্যাস থাকলে। 
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন বৃদ্ধি পেলে। 
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন হ্রাস পেলে। 
  • থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে। 
  • খাওয়ার ব্যাধি যেমন : অ্যানোরেক্সিয়া এবং বুলিমিয়া নার্ভোসা। 
  • প্রারম্ভিক গর্ভধারণ বা গর্ভাবস্থা অর্থাৎ Early Pregnancy Loss.  
  • অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ। 
  • টিনজাত বা প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ। 
  • সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে। 

দুই মাস মাসিক না হলে করণীয় 

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্ক তো উপরে জানা হলো। এবার চলুন জেনে নেই দুই মাস মাসিক না হলে করণীয় কি রয়েছে। 

  • মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডসহ অন্যান্য সমস্যা রোধেও সাহায্য করে। 
  • পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রাখার চেষ্টা করুন। 
  • ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত ঝাল মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। 
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন। 
  • খাবার তালিকায় অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবার রাখবেন। 
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না। এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। 
  • বিবাহিত মহিলাদের পিরিয়ড না হলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন। 
  • সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিন। 

অনিয়মিত মাসিক রোধে ঘরোয়া উপায় 

যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা খুবই চিন্তায় থাকেন কিভাবে এই সমস্যা দূর করবেন। দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ জানার পরে ঘরোয়া কিছু উপায়ের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিত করতে পারবেন। কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল। 

গরম পানি 

যাদের অনিয়মিত মাসিক অথবা মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হয় তাদের জন্য গরম পানি অনেক বেশি উপকারী। একটি হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি নিয়ে তা দিয়ে পেটে সেঁক দিতে পারেন। যা অনিয়মিত মাসিক রোধে সাহায্য করবে। মাসিকের সময় পেটে ব্যথা কমাতেও অনেক সাহায্য করে। 

ধনিয়া গুঁড়া 

ধনিয়া গুঁড়া একটি অতি উপকারী ঔষধি উপাদান। দুই কাপ পানিতে এক চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি ফুটিয়ে পান করুন। এতে অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত উপকার সাধন করবে। 

অ্যালোভেরার শরবত 

মাসিকের সমস্যা দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে অ্যালোভেরা শরবত পান করা। ১ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণমতো অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করুন। এই মিশ্রণটি পান করলে আপনার মাসিকের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। 

অনিয়মিত পিরিয়ডের ক্ষেত্রে সুষম খাদ্য 

অনিয়মিত পিরিয়ড রোধ করতে আপনার একটি সুষম খাদ্য মেনে চলতে হবে। একটি আদর্শ খাবার রুটিন আপনার পিরিয়ড নিয়মিত করতে পারে। দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ তো জানলেন। এবার সুষম খাদ্যের তালিকাটা জেনে নিন। 

  • মাসিক শুরু হওয়ার ১০ দিন পূর্বে থেকেই শাকসবজি, সালাদ, ফল, টকদই খেতে পারেন। 
  • মাসিক হওয়ার তারিখের এক বা দুই সপ্তাহ আগে থেকে কলা, গাজর, পেয়ারা, আপেল, শসা খেলে উপকার পাবেন। 
  • পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দুধ খেতে পারেন। 
  • এই সময় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করুন। 
  • তেল চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড এবং ডিমের কুসুম পরিহার করুন। 
  • তবে কোন কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। সকল খাবার স্বাভাবিক মাত্রায় খাবেন। 

শেষ কথা 

নিয়মিত পিরিয়ড হওয়া যেরকম একটি মেয়ের সুস্থতার লক্ষণ। তেমনি অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়াও একটি মেয়ের অসুস্থতার লক্ষণ। তাই যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড হয় অর্থাৎ সময়ের অনেক আগে বা পরে হয়, তারা মোটেও হেলাফেলা করবেন না। বিভিন্ন কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। অল্প দিন পিরিয়ডের এদিক সেদিক হলে কোন সমস্যা নয়। তবে অনেক বেশি দিনের ব্যবধানে পিরিয়ড হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের নিকট পরামর্শ নিবেন। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

ডাক্তার আপনাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা করবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের জানাতেও সাহায্য করুন। সকলের সুস্থতা কামনায় আজকে বিদায় নিচ্ছি। 

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ

১. মাসিক কতটা দেরি হলে তাকে ‘লেট’ বলা যায়? 

উত্তর : মাসিকের চক্র (Period cycle) বেশিরভাগ নারীর একই থাকে। মাসিক হতে এক সপ্তাহ দেরি হলেও একে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। যেমন ধরুন একজন নারীর মাসিক ২৫ দিন অন্তর হয়। তার কোন এক মাসে ৩০ বা ৩১ দিন পর মাসিক হতেই পারে। তবে যদি ৮ দিন বা তার বেশি দিন দেরি হয় সেক্ষেত্রে তাকে ‘লেট’ বলে গণ্য করা হয়। 

২. একই মাসে ২ বার পিরিয়ড হওয়ার কারণ কি? 

উত্তর : বিভিন্ন কারণে একই মাসে ২ বার পিরিয়ড হতে পারে। যেমন : 

  • ওভারিতে সিস্ট থাকলে। 
  • থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে। 
  • বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তন। 
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ। 
  • পেরি মেনোপজ ইত্যাদি। 

৩. ঋতুস্রাব কতদিন হয়? 

উত্তর : একটি নারীর মাসিক চক্র সাধারণত ২৮-২৯ দিন। তবে মাসিক চক্র (Period cycle) একেক নারীর একেক রকম হতে পারে। যেমন : কিশোরীদের ক্ষেত্রে এই চক্র ৪৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আবার ২০-৩০ বছর বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে ২৮-৩৮ দিন পর্যন্ত এই চক্র স্থায়ী হতে পারে। 

৪. পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম কি ক্ষতিকর? 

উত্তর : না, পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম একদমই ক্ষতিকর নয়। নিয়মিত ব্যায়াম একজন মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী। যদি আপনার শরীরে গুরুতর কোন সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করবেন কিনা তা অবশ্যই ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নেবেন। 

আরও পড়ুন-

হাত পা ঘামা থেকে মুক্তির উপায় ও সঠিক চিকিৎসা

ব্রণ দূর করার উপায় ও রূপচর্চা করার পদ্ধতি সমুহ  

Leave a Comment