ব্রণ দূর করার উপায়, ব্রনের চিকিৎসা ও কার্যকারিতা

ব্রণ দূর করার উপায়

ব্রণ কতটা গুরুতর তার উপর ব্রণের চিকিৎসা নির্ভর করে। ব্রণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এর লক্ষণ উন্নতির দিকে যেতে কয়েক মাস সময় লাগবে।

যদি আপনার ব্রণের এবং দাগের পরিমাণ কম হয় তবে একজন ফার্মাসিস্টই আপনাকে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ওভার দ্য কাউন্টার ( বেনজয়েল পারক্সাইড যুক্ত) জেল বা ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারবে। তবে এটা সাময়িক চিকিৎসা মাত্র।

আরও পড়ুনঃ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম ও ব্যবহার বিধি

ব্রণ দূর করার চিকিৎসা

ব্রণ দূর করার উপায়

যদি প্রাথমিক অবস্থায় ফার্মেসী থেকে নেয়া ঔষধ কাজ না করে এবং যদি আপনার ব্রণ মাঝারি বা গুরুতর হয়, তাহলে আপনি একজন সাধারন চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। তিনি আপনাকে প্রেসক্রিপশনে কিছু ঔষধ লিখে দিবেন যা ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন-

  1. Topical Retinoids
  2. Topical Antibiotics
  3. Antibiotics Tablets
  4. The combined oral contraceptive pill for women etc.

ঔষধগুলি কাজ শুরু করতে ২ থেকে ৩ মাস সময় নিতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রণের চিকিৎসা

চিকিৎসার অভাবে দাগ হয়ে যায় তাহলে তার মুখটা দেখতে খুবই বাজে লাগে। অন্যকেউ তার দিকে ব্রণ ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই এক আতঙ্কের নাম।

কেননা ব্রণ যদি কারো মুখে ওঠে এবং সঠিক তাকানো তো দূর নিজের নিজের চেহারা আয়নাতে দেখার ইচ্ছেটাই চলা যায়। তাই ব্রণের চিকিৎসা বা ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে কি কি ব্যবহার করা যেতে পারে, আসুন জেনে নেই।

১। বেনজয়েল পারক্সাইড এর কাজ

Benzoyl Peroxide ত্বকের উপরিভাগে এন্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের উপরিভাগে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমাতে কাজ করে। এটি ব্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস এর সংখ্যা কমাতেও সাহায্য করে। 

বৈশিষ্ট্য

Benzoyl Peroxide এর বৈশিষ্ট্য হল- এর প্রদাহ বিরোধী প্রভাব রয়েছে। এটি সাধারণত ক্রিম বা জেল হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়।

ব্যবহার

ব্রণ দ্বারা প্রভাবিত সকল অংশ ভালোভাবে ধুয়ে তারপর Benzoyl Peroxide প্রয়োগ করা উচিৎ। এটি দিনে একবার থেকে দুবার ব্যবহার করতে হয়।

সতর্কতা

Benzoyl Peroxide  বেশি পরিমাণে ব্যবহারে ত্বকে জ্বালাপোড়া করতে পারে। এটি সূর্যের আলোর প্রতি ত্বককে সংবেদনশীল করে তোলে। তাই সূর্যের বেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস ক্রিম ব্যবহার করা উচিৎ।

এতে ব্লিচিং এর প্রভাব আছে। তাই আপনার চুল ও কাপড় থেকে বেনজয়েল পারক্সাইড দূরে রাখুন।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

১. শুষ্ক এবং টান ত্বক

২. লালভাব, চুলকানি, জ্বলা ভাব, খোসা ওঠা ইত্যাদি।

সাধারণত একজন লোকের সমস্ত বা বেশির ভাগ ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে এটির ৬ সপ্তাহের কোর্স প্রয়োজন। এছাড়া ব্রণ ফিরে আসা আটকাতে কিছুদিন ঘন ঘন চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

২। টপিকাল রেটিনয়েড এর কাজ

Topical Retionids ত্বকের ভেতর থেকে মৃত কোষকে সড়িয়ে কাজ করে। এবং পুনরায় হতে বাধা দেয়। 

বৈশিষ্ট্য

Topical Retionoid এর Tretinoin এবং Adapalene এই ২টা ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিও বাজারে ক্রিম বা জেল হিসেবে পাওয়া যায়।

ব্যবহার

ব্রণে আক্রান্ত জায়গাগুলো ভালোভাবে ধোয়ার ২০ মিনিট পর ব্রণ প্রভাবিত সব অংশে Topical Retionid লাগাতে হবে। এটি অল্প মাত্রায় এবং রাতে শোয়ার আগে দিন একবার ব্যবহার করতে হবে।

সতর্কতা

সূর্যালোক ও সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ সময় ব্যবহারে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। টপিকাল রেটিনয়েড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল- ত্বকে জ্বালা ও দংশন।

চিকিৎসা

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে সাধারণ চিকিৎসায় Topical Retionতসায়ের ৬ সপ্তাহের কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এবং ঘন ঘন এই ক্রিম বা মলমটি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

Topical Antibiotics ত্বকের ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে প্লাগ করা চুলের ফলিকল গুলোকে সংক্রমিত হওয়া থেকে আটকায়।

  • Topical Antibiotics বাজারে লোশন বা জেল আকারে পাওয়া যায়।
  • Topical Antibiotics দিনে একবার কিংবা দুবার ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাধারণত Topical Antibiotics কে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ব্যবহারের জন্য ৬-৮ সপ্তাহের কোর্স করার পরামর্শ দেয়া হয়।

সতর্কতা

৬-৮ সপ্তাহের অধিক ব্যবহারের ফলে ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিকস প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলস্বরূপ ব্রণের অতিরিক্ত সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

যদিও Topical Antibiotics এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সাধারণত নেই। তবে ত্বকে সামান্য জ্বালা, লাল্ভাব এবং খোসা ছাড়ানো দেখা দিলেও দিতে পারে।

৩। অ্যাজেলাইক এসিডের কাজ

Azelaic Acid সাধারণত ব্রণ দূর করার উপায় এ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদি Benzoyl Peroxaid এবং Topical Retionoid এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তখন এটি ব্যবহার করা হয়।

Azelaic Acid ত্বককে মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত করে কাজ করে।

অ্যাজেলাইক এসিডের বিশেষত্ব

Azelaic Acid ক্রিম বা জেল হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। এটি ত্বককে সূর্যের আলোতে সংবেদনশীল করে তোলে না। তাই নিশ্চিন্তায় সূর্যের আলোতে যাওয়া যায়।

ব্যবহারের নিয়ম

Azelaic Acid দিনে দুবার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ত্বক যদি খুবই সংবেদনশীল হয় তবে দিনে একবার ব্যবহার করবেন।

চিকিৎসা পদ্ধতি

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে Azelaic Acid চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আপনার ব্রণ উন্নতির দিকে যাওয়ার আগে আপনাকে প্রায় ১ মাস এই Azelaic Acid ব্যবহার করতে হবে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

Azelaic Acid এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই হালকা হয়। এর মধ্যে চুলকানি, শুষ্ক ত্বক, লাল্ভাব উল্লেখ্য।

এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট

যা শুধু সাধারণ চিকিৎসায় নয়, ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ব্রণের গুরুতর অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মূলত টেট্রাসাইক্লিন নামক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার জন্য দেয়া হয়। তবে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এটা দেয়া হয় না।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদেরকে এরিথ্রোমাইসিন নামক ট্যাবলেট দেয়া হয় যা নিরাপদ। এটি ব্রণের উন্নতির জন্য ৬ সপ্তাহ সময় নেয়। এটি সেবনের সময়কাল ৪-৬ মাস হতে পারে।

ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। কারণ এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এই পদ্ধতির আওতায় রয়েছে মুলতানি মাটি, মধু, শশার রস, চালের গুঁড়া, কাঁচা হলুদ, চন্দন কাঠের গুঁড়ো, তুলসি পাতার রস, লাবুর রস, গোলাপ জল, ডিমের সাদা অংশ,নিম পাতা, পুদিনা পাতাসহ আরও কত কী। এক কথায় এগুলো সহজলভ্যও বটে।

শেষ কথা

ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে যেটাই আমরা ব্যবহার করি না কেন এর পাশাপাশি কিছু কাজ অবশ্য করণীয়।যেমন- প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা, বাইরে থেকে বা চুলার গরম এসে ঠাণ্ডা পানি ও ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা, ্মেক আপ ব্যবহার না করা ইত্যাদি।

তবে ব্রণকে কখনোই অবহেলা করা উচিৎ নয়। ত্বককে পুনরায় ব্রণমুক্ত সুন্দর ত্বক করতে দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১. ব্রণ কী এবং কেন হয়?

উত্তরঃ ত্বকের তেল গ্রন্থি বন্ধ হয়ে যে প্রদাহজনীত অবস্থার সৃষ্টি করে তাই ব্রণ। বয়সন্ধিঃকালে হরমোনের তারতম্যের কারণে এটি হয়।

২. সব ধরণের ত্বকেই কি ব্রণ হয়?

উত্তরঃ ব্রণ সব ত্বকেই হতে পারে, তবে তৈলাক্ত ত্বকে বেশি হয়।

৩. ব্রণ চেনার উপায় কী?

উত্তরঃ সাধারণত মুখে গলা ও কাঁধে ফুসকুড়ি, কালো আঁচিল দেখা দেয়।

৪. ব্রণ হলে খাওয়া দাওয়ায় কোন বাছ বিচার আছে কি না?

উত্তরঃ না,খাবারের সাথে ব্রণ সম্পৃক্ত না।

আরও পড়ুন-

পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ক্রিম ও ব্যবহারবিধি

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়সমুহ ও চিকিৎসা

Leave a Comment