ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখাতে সাহায্য করবে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিবে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলাই জীবন। এজন্য একটি সঠিক খাবার তালিকা প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগীকে মেনে চলতে হবে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মোট ক্যালরির ২০% আসবে আমিষ থেকে, ৩০% আসবে ফ্যাট থেকে এবং ৫০% আসবে শর্করা থেকে।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার যা শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের সমস্যা তৈরি করে । এক্ষেত্রে শরীর অগ্নাশয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে রুপান্তরিত করে।
অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে। শরীরে যখন ইনসুলিন ঠিকভাবে উৎপন্ন হয় না তখন ডায়াবেটিস রোগটি হয়।
কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না
১। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা
কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ। যা হল কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বিত রূপ। এটি একটি জৈব যৌগ। যাতে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ২:১। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের প্রধান কাজ হল শরীরে শক্তির যোগান দেওয়া। কার্বোহাইড্রেট শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।
কার্বোহাইড্রেট শরীরে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। ভাত, রুটি, পাউরুটি, মিস্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট এর উৎস। ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যথা সম্ভব কমিয়ে দিতে হবে।
২। প্রোটিন বা আমিষ
খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন সুস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন মূলত কোষ গঠনে সাহায্য করে। অঙ্গের গঠন, কার্যকারীতা ও নিয়ন্ত্রনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীভিত্তিক উভয় খাবারেই প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। ভাল প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো ডিম, অল্প চর্বি জাতীয় দুধ, টক দই দেশজ মাছ ও মুরগি ইত্যাদি। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিন জাতীয় খাবারে কোন বাধা নেই। কিন্তু তাদের কিডনিজনিত সমস্যা থাকলে তা খাওয়া যাবে না।
৩। ফ্যাট বা চর্বি
চর্বি প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ। এটি প্রাণীজ শরীরে ত্বকের নিচে অর্গানের চারপাশে জমা হয়।
উপকারী চর্বি যেমন, বাদাম, অলিভ ওয়েল, মাছের তেল ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারে। তবে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস কি? ডায়বেটিস কমানোর উপায়?
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
বৈচিত্রময় খাবার খাওয়া
প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে, নানান রকমের ফলমূল, শাকসবজি ও কিছু শ্বেতসার-জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন: লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু।
এসব খাবার কমিয়ে দিন
চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবেন।
সময়মত খাবার খান
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়মত সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রত্যেক বেলার খাবার সময়মত খাবেন।
আপনার যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। এভাবে পরিবর্তন আনা আপনার জন্য সহজ হবে। একেবারে সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেলার চেষ্টা না করাই ভালো।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর ও সুষম ডায়েটের জন্য পাচঁটি প্রধান গ্রুপ বা পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে—
- ফলমূল ও শাকসবজি
- শ্বেতসার জাতীয় খাবার। যেমন: লাল বা বাদামী চালের ভাত, লাল আটার রুটি এগুলো খাওয়ার অভ্যাস করবেন
- প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও অন্যান্য বীন, ডাল, বাদাম এগুলো পরিমানমত খাবেন
- দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন: দই, ছানা ও পনির
- বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখন, ঘি
চাহিদা অনুযায়ী আপনার দৈনিক খাবার ও পানীয় কততুকু প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক পরিশ্রম এসব বিষয়ের উপর। আপনার ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
সুষম খাদ্যাভ্যাসের অর্থ হল নির্দিষ্ট কিছু খাবার চাহিদা মোতাবেক এবং অন্যান্য খাবারগুলো কম পরিমাণে খাওয়া। শুধু এক ধরনের খাবার দেহের সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মূল হল বৈচিত্র্য।
ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট চার্ট
সকাল
সকাল ৭/৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে সকালের নাস্তা শেষ করতে হবে। সকালের নাস্তা খুব বেশি দেরিতে করা যাবেনা।
নাস্তায় আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, পরিমান মতো রুটি /চিড়া /খই /মুড়ি /ওটস্ যেটা আপনার পছন্দ সেটাই খেতে পারবেন । সাথে যেকোনো সবুজ সবজি / নিরামিষ আার একটা সেদ্ধ ডিম খেতে পারবেন।
মধ্য সকাল
১১ঃ০০ টার মধ্যে আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটা ফল খেতে পারবেন। মিষ্টি ফল হলে ১/২ কাপ পরিমাণে খাবেন।
দুপুরের খাবার
দুপুর বেলায় আপনি আপনার খাবারে পরিমান মতো ভাত, মাছ/মুরগীর মাংস, সবুজ শাকসবজি, সালাদ ও লেবু ইত্যাদি খেতে পারেন। দুপুরের খাবার হবে ১ঃ০০ টা থেকে ২.০০ টার মধ্যে।
বিকালের নাস্তা
বিকালের নাস্তায় আপনি খেতে পারেন বাদাম, মুড়ি, রং চা, সুপ, ছোলা, চিনি ছাড়া বিস্কুট, মিষ্টি ছাড়া পিঠা ইত্যাদি। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন, তবে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
রাতের খাবার
রাতে আপনি আপনার পছন্দমতো ও পরিমান মতো রুটি বা ভাত বা ওটস খেতে পারেন। সাথে দুপুরের মতো মাছ/মুরগীর মাংস, সবজি, সালাদ, লেবু ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন। তবে রাতের খাবারটা আপনাকে রাত ৮ঃ০০ টা থেকে ৮ঃ৩০ এর মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে।
ঘুমানোর আাগে
আপনি রাতে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে এক কাপ দুধ খেতে পারেন। দুধে সমস্যা থাকলে টক দই, ছানা বা পনিরও আপনি পরিমাণ মতো খেতে পারেন।
একজন ডায়াবেটিস রোগীর যেসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে-
- মিষ্টি জাতীয় খাবার।
- অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার।
- ডুবো তেলে ভাজা খাবার।
- চর্বি জাতিয় খাবার।
- গরু, খাসী, হাঁস ও পাখির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।
উপসংহার
আজ আমরা ডায়াবেটিস রোগীর আদর্শ খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আপনারা যদি এই খাবার তালিকাটি মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই উপকৃত হবেন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন সময় মত কিছুক্ষন হাঁটতে যেতে হবে। কিছু হালকা ব্যায়ামের সাথে ওষুধ এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।