দাউদ কিভাবে ভালো হয় ও নিরাময়ের কার্যকরী চিকিৎসা

দাউদ কিভাবে ভালো হয়

দাউদ/দাদ হচ্ছে একটি ছত্রাক সংক্রমণ। যা আপনার ত্বক,নখ, মাথার ত্বককে প্রভাবিত করতে পারে। দাদ রোগ শুরু থেকেই বা খুব অল্প সংক্রমণ থাকতে দ্রুত এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি এটি তুলনামূলকভাবে নিরাময় করতে পারবেন।

দাদ রোগের জন্য প্রথমেই আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সংক্রমণের তীব্রতা এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন। 

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, দাউদ কিভাবে ভালো হয় এবং দাদ রোগের লক্ষণ, দাদ প্রতিরোধ, দাদ রোগের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার সহ দাদ নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

দাদ রোগের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তো চলুন জেনে আসি, দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেই সম্পর্কে। 

আরও পড়ুনঃ এলার্জি চুলকানি দূর করার উপায় ও ঘরোয়া পদ্ধতি

দাউদ কিভাবে ভালো হয় – কারন 

দাউদ কিভাবে ভালো হয়

দাউদ রোগের জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ। দাদ রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে এবং সংক্রমণের অবস্থান বুঝে আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রেসক্রিপশন করে দিবেন।

দাদ রোগ মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে, দ্রুত এর চিকিৎসা নিলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। দাদ রোগের ঔষধ হচ্ছে – অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ। যা হচ্ছে দুই ধরনের-

টপিক্যাল অ্যান্টিফাঙ্গাল

এগুলি হচ্ছে মলম, ক্রিম বা স্প্রে যা সরাসরি আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত স্থানের ফুসকুড়ি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করবেন। সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য। 

ওরাল অ্যান্টিফাঙ্গাল

বিশেষ গুরুতর বা ব্যাপক  সংক্রমণের জন্য, আপনার চিকিৎসক মৌখিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ লিখে দিবেন। চিকিৎসকের নির্দেশিত ডোজ ও সময় সাবধানে অনুসরণ করবেন।

আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন

শরীরের দাদ আক্রান্ত স্থান থেকে যাতে অন্য স্থানে রোগ তারাতাড়ি ছড়িয়ে না পড়তে পারে। তার জন্য আপনাকে অবশ্যই আক্রান্ত স্থান সহ পুরো শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং শুষ্ক রাখবেন। ভিজা জায়গায় সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। 

স্ক্র্যাচিং এড়িয়ে চলুন

স্ক্র্যাচ করার সময় আপনার শরীরের যেকোনো অংশের ত্বক ভাঙ্গার ঝুঁকি কমাতে, হাতের নখ সবসময় ছাঁটাই করবেন। চুলকানি ত্বক দাদের সাধারণ একটি উপসর্গ। কিন্তু এই অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে ঘামাচি। এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মতো সম্ভাব্য জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। 

ভালো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করবেন

দাউদ/দাদ রোগটি যেহেতু সংক্রামক। তাই কিছু স্বাস্থ্যবিধির সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় ভালো করে হাত ধুবেন, হাত পরিষ্কার রাখবেন। আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করার আগে ও পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন।

ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন

দাদ রোগ সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে অন্যদের সাথে আপনার বিছানা, তোয়ালে, চিরুনি, পোশাক শেয়ার করবেন না। সংক্রমিত স্থান সংস্পর্শে আসা পোশাক, তোয়ালে ও বিছানা ভালো করে গরম পানিতে ধুয়ে নিবেন। 

আপনার দাউদ রোগের চিকিৎসার যদি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি দেখতে না পান, তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। আপনার আক্রান্ত স্থান উন্নতি হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত ভাবে আক্রান্ত স্থানটি মূল্যায়ন করুন।

নিয়ম অনুসারে ঔষধ ব্যবহার করুন, স্থানটি সবসময় পরিষ্কার রাখুন। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস না করে কখনো ঔষধের পরিমান বাড়াবেন বা কমাবেন না। 

দাদ রোগের লক্ষণ

দাউদ কিভাবে ভালো হয় তা জানার আগে জানতে হবে রোগের কিছু লক্ষণ, যা দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে দাদ/দাউদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। সাধারণ দাদ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছু লক্ষণ হচ্ছে- 

  • শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি এবং অস্তিত্ব। 
  • স্কেলিং অথবা স্ক্র্যাকিং ত্বক।
  • লাল,বৃত্তাকার ফুসকুড়ি একটি রিং জাতীয় অনুরুপ। 
  • ভঙ্গুর নখ।
  • চুল পড়া (দাদ যখন মাথার ত্বককে প্রভাবিত করে)।

দাউদ কিভাবে ভালো হয় – রোগ যেভাবে ছড়ায়

যেহেতু দাউদ রোগ একটি সংক্রামক রোগ। সাধারণত এটি মাইক্রোস্পোরাম, ট্রাইকোফাইটন এবং এপিডার্মোফাইটন প্রকারের ফাঙ্গাস জাতীয় জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়। এই রোগটি মূলত তিনভাবে ছড়িয়ে থাকে –

  • দাউদ বা দাদ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে। যেমন, (বিড়াল, গরু, ছাগল, ঘোড়া, কুকুর)। 
  • ভিজা, স্যাঁতস্যাঁতে স্থান থেকে, দাউদ রোগের জীবাণু আছে এমন পরিবেশ থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। 
  • দাদ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বা তার ব্যবহারের জিনিসের সংস্পর্শ থেকে, যেমন- (চিরুনি, তোয়ালে, বিছানা চাদর, পরনের কাপড়)।

শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ হয় 

দাদ এমন একটি সংক্রামক রোগ যা শরীরের যেকোনো অংশে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তারপর শরীরের কিছু অংশ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই দাদ রোগ ছড়ায় – যেমন- হাত-পা, মাথার ত্বক, কুঁচকি, পায়ের পাতা ও হাত পায়ের নখ।

শরীরের বিভিন্ন স্থান ভেদে রোগের ভিন্নতার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আস্তে আস্তে বড় আকার ধারণ করেও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো একাধিক র‍্যাশ ও দেখা দিতে পারে। দাউদ কিভাবে ভালো হয় তা জানার পরে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।

হাত-পা

হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে ফুলে উঠে এবং সেখান থেকে চামড়া উঠে যেতে থাকে। তাছাড়া পায়ের ক্ষেত্রে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকেও চুলকানি হতে পারে। সাধারণত পায়ের ছোট আঙ্গুল দুটির মধ্যখানের অংশের চুলকানি হয়। পায়ে দাদ হলে পায়ের পাতা ও পায়ের গোড়ালিও দাদ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

মাথার ত্বক

সাধারণত মাথার ত্বকে দাদ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত স্থানের  চুল পড়ে সেই অংশ টাক হয়ে যায়। টাক হওয়া অংশে গোলাকার, লালচে ও ছোট ছোট আঁইশযুক্ত র‍্যাশ তৈরি হয়। সেই জায়গায় চুলকানিও হয়। তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা না নিলে আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়, এই মাথার ত্বকের দাদ রোগ। 

কুঁচকি

সাধারণত শরীরের কুঁচকিতে দাদ হলে উরুর ভিতরের দিকের ভাজে লাল লাল র‍্যাশ দেখা যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে চুলকানি হয়। তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে। 

দাদ রোগ প্রতিরোধ 

দাউদ/দাদ রোগ প্রতিরোধের সহজ কিছু স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা-

  • আপনার বসবাসের পরিবেশ সবসময় পরিষ্কার রাখুন। 
  • আপনার পোষা প্রাণী থাকলে, তাকে নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। নিয়মিত পশু চিকিৎসা, যত্ন ও প্রয়োজনে নিয়ম অনুসারে দাদ রোগেরও চিকিৎসা করাবেন।
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে তোয়ালে, চিরুনি, বিছানা, পোশাক শেয়ার করবেন না। 
  • নিয়মিত হাত ধোয়া ও নিয়মিত পরিষ্কার থাকবেন। বিশেষ করে প্রাণী বা সম্ভাব্য দূষিত পৃষ্ঠ করার পরে
  • সাম্প্রদায়িক ঝর্ণার মত পাবলিক জায়গা বা সুইমিং পুল, দূষিত পৃষ্ঠের সাথে যোগাযোগ কমাতে ফ্লিপ-ফল্প করুন।

শেষ কথা 

শরীরের যে কোন অংশে দাদ রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের মলম বা ক্রিম ব্যবহার করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ না ছাড়া কোন মলম বা ক্রিম ব্যবহার করলে এতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

বাজারের কিছু মলম বা ক্রিম ত্বকের চুলকানি ও লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করলেও দাদ রোগের জীবাণুকে মূল থেকে মারতে পারে না। বিপরীত ক্রমে শরীরের অন্যান্য অংশে এই দাদরোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। 

তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়ম অনুসারে ওষুধ, ক্রিম বা মলম ব্যবহার করবেন। দাউদ কিভাবে ভালো হয় আমাদের এই পুরো পোস্টটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আশা করি কিছুটা হলেও দাউদ সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন। দাদ সংক্রমণ থেকে দূরে থাকুন। ধন্যবাদ। 

দাউদ কিভাবে ভালো হয় সেই সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: দাউদের ভালো মলম কি? 

উত্তর:- একটি ছত্রাক বিরোধী ঔষধ, মিকোনাজোল। এই ওষুধটি দাউদ, টিনিয়া ভার্সিকালার, ত্বক বা যোনির খামির সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ২: দাদ এর কার্যকরী ঔষধ কি? 

উত্তর:- শরীরের ত্বকে দাউদ/দাদ রোগ হলে সাধারণত মুখ দিয়ে খাবার ঔষধ না দিয়ে লোশন, ক্রিম, জেল, স্প্রে অথবা পাউডার হিসেবে সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসক। দাউদের জন্য এমন কিছু ঔষধ হচ্ছে – মাইকোনাজোল, টার্বিনাফিন, ক্লট্রিমাজোল এবং কিটোকোনাজল ঔষধ।

প্রশ্ন ৩: তাৎক্ষণিক দাদ দূর করার উপায়? 

উত্তর:- একটি টপিকাল অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রয়োগ করতে পারেন। ওভার দা কাউন্টার অ্যান্টিফাঙ্গালগুলো ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। এবং আপনার শরীরের রোগ নিরাময়কে উন্নীত করতে পারে। দাউদের জন্য কার্যকরী ঔষধের মধ্যে রয়েছে, মাইকোনাজোল, ক্লোট্রিমাজোল ও টেরবিনাফাইন।

প্রশ্ন ৪: একজিমার জন্য ক্রিম নাকি লোশন ভালো?

উত্তর:- ময়েশ্চারাইজারে যত বেশি তেল থাকে, একজিমার চিকিৎসায় এটি সাধারনত ততই ভালো হয়। ব্যবহার করার জন্য সেরা মশ্চারাইজারগুলি হলো যেগুলো চর্বিযুক্ত (মলম,ক্রিম) অনুভব করে। কারণ এতে তেল বেশি থাকে।

প্রশ্ন ৫: দাদের ক্রিম কতদিন ব্যবহার করতে হয়?

উত্তর:- দাদ রোগ চিকিৎসা করার জন্য অনেক নন প্রেসক্রিপশন পণ্য উপলব্ধ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্লোট্রিমাজোল। অ্যাথলিটের পায়ে এবং জক ইচ এর মতো ত্বকে দাউদ/দাদ সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য ত্বকে প্রয়োগ না করা অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম, লোশন অথবা পাউডার দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment