দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম, ব্যবহার ও সতর্কতা

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ চুলকানি বাংলায় একটি সাধারণ চর্মরোগ বা ত্বকের সমস্যা বোঝায়। দাদ (Ringworm): এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এই রোগে ছত্রাকের আক্রমণের ফলে ত্বকের উপর ছোট ছোট গুড়ি বা চামড়ার বৃদ্ধির রূপে দাদ প্রকাশিত হয়।

এটি একটি চর্মরোগ, যা খুব সাধারণভাবে আক্রান্ত এলাকার চারপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। দাদ চুলকানি হলে ত্বকে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয় এবং এটি চুলে সংক্রমিত হলে মাথার চুল পড়ে যেতে পারে।

তাই এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


আরও পড়ুনঃ সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা ও সিরাপ খাওয়ার নিয়ম


দাদ কি

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ একটি ছত্রাকজনিত ত্বকের রোগ। দাদ সাধারণত চুলকানিযুক্ত লালচে দাগ আকারে দেখা দেয়। এটি যেকোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে, তবে শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। দাদের বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম কেনার আগে অবশ্যই আপনার দাদ কোন প্রকারভেদের মধ্যে পড়ে সেটি জানা দরকার। কারণ জায়গা অনুযায়ী দাদ এর ক্রিম ও আলাদা হয়ে থাকে। যেমন:-

  • টর্নাকিউলার দাদ: টর্নাকিউলার দাদ সাধারণত হাত, পায়ের আঙ্গুল, বাহু বা পায়ে ঘন ঘন দেখা দেয়।
  • স্ক্যাল্প দাদ: এটি মাথার ত্বকে দেখা দেয়। এই দাদ স্ক্যাল্পের ত্বককে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত ও রুক্ষ করে তুলতে পারে।
  • লিঙ্গ দাদ: এটি যৌনাঙ্গে দেখা দেয়। এই দাদ লিঙ্গে চুলকানি, লালচেভাব ও ত্বকের ফাটল সৃষ্টি করতে পারে।
  • নখের দাদ: এটি নখের গোড়ায় দেখা দেয়। এই দাদের ফলে নখের বিকৃতি, হলুদ হওয়া বা পচন সৃষ্টি করতে পারে।

দাদ থেকে রক্ষা পেতে সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই ওষুধ গুলো ত্বকের উপর প্রয়োগ করা হয়, যা দাদ সৃষ্টিকারী ছত্রাককে মেরে ফেলে এবং দাদ নিরাময় করে।

দাদ চুলকানি কেন হয়

দাদ চুলকানি হতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ইফেক্ট, ত্বক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে অবহেলা, ভালোমানের প্রসাধনী ব্যবহার না করা, এবং সম্পৃক্ত জীবাণুগুলির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরী করা।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নামসমুহ

দাদ কি এবং দাদ এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার পরে অবশ্যই আপনি বুঝতে পেরেছেন শরীরের কোন অংশে দাদ হলে সেটি কোন প্রকারভেদের ভিতরে পড়ে। চলুন এখন দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

দাদ চুলকানি দূর করার জন্য বাজারে বেশ কয়েক ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। এই ক্রিমগুলোর পাশাপাশি এই ক্রিমগুলো কি উপাদান দিয়ে তৈরি সেই সম্পর্কেও জানব। চলুন জেনে নিই দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর নাম এবং এই ক্রিম গুলিতে কি ধরনের উপাদান থাকে:-

  • ক্লোট্রিমাজোল: এটি একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ যা দাদের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।
  • মিকোনাজোল: এটি আরেকটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ যা দাদ নিরাময়ে কার্যকর।
  • টারবিনাফিন: এটি একটি নতুন ধরনের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ যা দাদের চিকিৎসায় কার্যকর।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম গুলো সাধারণত দিনে এক বা দুইবার ত্বকের আক্রান্ত অংশে প্রয়োগ করতে হয়। দাদ সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এই ক্রিম গুলো ব্যবহার করতে হবে।

দাদ একটু কমতে শুরু করার পর আপনি যদি দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা বাদ দিয়ে দেন তাহলে দাদ আরও বাড়তে পারে। এজন্য দাদ সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর প্রধান উপাদান

  • টি ট্রি তেল (Tea Tree Oil): এটি এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে পরিপূর্ণ, তাই এটি ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।
  • কোকোনাট তেল (Coconut Oil): নারিকেল তেলের এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণগুলি দাদ চুলকানি থেকে মুক্তি প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে।
  • এলোভেরা জেল (Aloe Vera Gel): এলোভেরা জেলের এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া দূর করে শান্তি প্রদান করতে পারে।
  • পাইরিথিওন জিংক (জেল) (Pyrithione Zinc): এটি খুশকি এবং চুলের বা মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

দাদ এর ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম জেনে ক্রিমগুলো ব্যবহার করতে হবে। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের সময় নিম্নলিখিত নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে হবে:- 

  • ক্রিমটি ত্বকের আক্রান্ত অংশে পাতলা করে প্রয়োগ করুন।
  • ক্রিমটি প্রয়োগ করার আগে এবং পরে আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন।
  • ক্রিমটি প্রয়োগ করার সময় আপনার চোখ, মুখ বা নাক স্পর্শ করবেন না।
  • ক্রিমটি প্রয়োগ করার পরে আপনার পোশাক পরুন।

দাদ এর ক্রিম ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম গুলো সাধারণত নিরাপদ। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই ক্রিমগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন:-

  • ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
  • ত্বক ফুলে যাওয়া
  • ত্বকে জ্বালাপোড়া
  • ত্বকে চুলকানি
  • ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া

যদি দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের পরে আপনার ত্বকে এই ধরনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে সেই ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আর শীঘ্রই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম এর উপকারিতা

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা ত্বক এবং চুলের সুস্থতা রক্ষা করতে সহায়ক। এই ক্রিমগুলি ত্বকে সুস্থতার পাশাপাশি কোমলতা ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম বিশেষভাবে তৈরি করা হয় প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে, যা ত্বকের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং সুস্থ ত্বকের সৌন্দর্য নিশ্চিত করে।

এই ক্রিমগুলি একইসাথে দাদ চুলকানি সমস্যা দূর করে এবং ত্বকে উপযুক্ত কোমলতা প্রদান করে, যা চুলের ও ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করে।

দাদ চুলকানি প্রতিরোধ

আপনি কি দাদ চুলকানি প্রতিরোধ করতে চান? দাদ চুলকানি প্রতিরোধ করতে চাইলে নিচের নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে। যেমন:-

  • আপনার ত্বক পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন।
  • আপনার পোশাক পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন।
  • অন্যান্যদের সাথে আপনার তোয়ালে, কাপড়, বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র শেয়ার করবেন না। নিজের কাপড়-চোপড় বা ব্যবহৃত জিনিস অন্যের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করুন।
  • যদি আপনি দাদ হয়েছে এমন করো সংস্পর্শে আসেন তবে আপনার ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

দাদ এর ক্রিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তার উপাদানের তালিকা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ক্রিমের কিছু উপাদান সম্পর্কে আপনি যদি সংবেদনশীল হোন, তাহলে সেটা ব্যবহার করা উচিত নয়।

যদি আপনার ত্বকে কোনো সংবেদনশীলতাজনিত সমস্যা থাকে,আপনি কোনও চিকিৎসা বা চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন, এবং সবসময় সেই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ অনুসরণ করুন।

উপসংহার

দাদ একটি বিরক্তিকর রোগ। তবে, সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে দাদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্য অবশ্যই আমাদের দাদ চুলকানি প্রতিরোধ করার জন্য নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর যদি দাদ হয়েও যায় তাহলে শীঘ্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ নিতে হবে।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। দাদ কি?

উত্তর: দাদ একটি ছত্রাকজনিত ত্বকের রোগ যা সাধারণত চুলকানিযুক্ত লালচে দাগ আকারে দেখা দেয়। এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

২। দাদ কয় প্রকারের হয়?

উত্তর: দাদ বেশ কয়েকটি প্রকারের হতে পারে যেমন:-

  • টর্নািকিউলার দাদ: এটি হাত, পায়ের আঙ্গুল, বাহু বা পায়ে ঘন ঘন দেখা দেয়।
  • স্ক্যাল্প দাদ: এটি মাথার ত্বকে দেখা দেয় এবং স্ক্যাল্পের ত্বককে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত ও রুক্ষ করে তুলতে পারে।
  • লিঙ্গ দাদ: এটি যৌনাঙ্গে দেখা দেয় এবং চুলকানি, লালচেভাব ও ত্বকের ফাটল সৃষ্টি করতে পারে।
  • নখের দাদ: এটি নখের গোড়ায় দেখা দেয় এবং নখের বিকৃতি, হলুদ হওয়া বা পচন সৃষ্টি করতে পারে।

৩। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম কিভাবে কাজ করে?

উত্তর: দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলিতে সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ থাকে। এই ওষুধগুলি ছত্রাককে মেরে ফেলে এবং দাদ নিরাময় করে।

৪। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি কতটা কার্যকর?

উত্তর: দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি সাধারণত কার্যকর। তবে, দাদের ধরন ও তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে।

৫। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি কতক্ষণ ব্যবহার করতে হয়?

উত্তর: দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি সাধারণত দাদ সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়। এটি সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ সময় নেয়।

৬। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি কি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের ব্যবহার করা নিরাপদ?

উত্তর: গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

৭। দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমগুলি কি শিশুদের ব্যবহার করা নিরাপদ?

উত্তর: শিশুদের ক্ষেত্রে দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আরও পড়ুন-

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ, কার্যকারিতা ও নিয়ম

টাফনিল এর কাজ কি, টাফনিল খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

Leave a Comment