দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট, করনীয় ও সঠিক চিকিৎসা

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট

দাঁত আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। বিভিন্ন কারণে আমাদের দাঁতে ব্যাথা হয়।প্রথমে হালকা ব্যাথা অনুভূত হয় বিধায় আমরা অনেকেই এ ব্যাথা আমলে নেই না।

কিন্তু ধীরে ধীরে যখন ব্যাথা বেড়ে সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন আমরা দাঁতে ব্যাথার ট্যাবলেট খেতে বাধ্য হই। দাঁতে ব্যাথার জন্য ট্যাবলেট খাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

কোন কারণে ব্যাথা হচ্ছে তা না জেনে ট্যাবলেট খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির মাত্রাই বেশি। এছাড়া দাঁতে ব্যাথার জন্য রয়েছে নানা রকম ঔষধ।আবার ব্যাথার ঔষধ মানেই দাঁতের ব্যাথার ঔষধ নয়।

আসুন জেনে নেয়া যাক- দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট কি কি, এর উপকারিতা, অপকারিতা এবং এই ট্যাবলেটই কি দাঁতের ব্যাথার সমাধান কিনা?


আরও পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম


দাঁতের ব্যাথার কারণ

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট

দাঁতের ব্যাথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন- দাঁতে ক্ষয়,দাঁতের মাড়ি ফুলা,নতুন দাঁত ওঠা,দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

দাঁতে ক্ষয়- গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় পোকায় খাওয়া। সাধারণত অতিরিক্ত চকলেট,চিপস ও নানা ধরণের পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খেলে দাঁতে ক্যাভিটি (বাংলায় যাকে ক্ষয় বলে) তৈরি হয়।

দাঁতের মাড়ি ফুলা- বিভিন্ন সময় মাছের কাটা মাড়িতে ঢুকে বা খাবার দাঁতের ফাকে আটকে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় ও ব্যাথার সৃষ্টি হয়।

নতুন দাঁত ওঠা- সাধারণত বাচ্চাদের দাঁত পরে দাঁত উঠলে সেখানে ব্যাথা হয় না। কিন্তু যখন একটু বড় হলে মাড়িতে দাঁত (আক্কেল দাঁত) ওঠে তখন মাড়িতে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়া- অতিরিক্ত ঠান্ডা কিংবা অতিরিক্ত গরম খাবার অধিক মাত্রায় খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া আরও অনেক কারণেই দাঁতে ব্যাথা হতে পারে। কিন্তু দাঁতের সব সমস্যার মূলে আছে অপরিষ্কার দাঁত।সময় মতো দাঁত পরিষ্কার না করলে ও সঠিক যত্ন না নিলেই দাঁতে বিভিন্ন সমস্যারা বাসা বাঁধে।

দাঁতের ব্যাথার চিকিৎসা

দাঁতের ব্যাথার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত ট্যাবলেট কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই।কিন্তু আমাদের জানা দরকার দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট ছাড়াও ব্যাথা কমানোর আরও কিছু উপায় রয়েছে।যেমন-

দাঁতের ব্যাথার জন্য ট্যাবলেট 

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট কোম্পানী অনুসারে এবং ব্যাথার ধরণ অনুসারে অনেক ধরণের ট্যাবলেট রয়েছে।এ গুলোর মধ্যে রয়েছে-

১। এসিক্লোফেনাক- সাধারণ দাঁতের ব্যাথার জন্য Tab. Acceclofanac 100 mg এবং সাথে Ceevit 250 mg দেয়া হয়।

সাধারণত এই ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন নেই।

সতর্কতাঃ গর্ভবতী মায়েরা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা এসিক্লোফেনাক ট্যাবলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।একটানা এই ট্যাবলেট সেবনে কিডনী ও লিভারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ এই ট্যাবলেটটির সঠিক ব্যবহার করা না হলে পেটে ব্যাথা,কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, বমি বমি ভাব,চামড়াতে ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

২। ক্লিনডামাইসিন- দাঁতের গোড়া ফোলা,দাঁতে পুঁজ হওয়া সহ প্রচন্ড দাঁতে ব্যাথা হয় তাহলে Tab. Clindamycin 300 mg দেয়া হয়।

সতর্কতাঃ যাদের কিডনীতে ও লিভারে সমস্যা আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারকে জানাবেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করবেন।কোন ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাকে এ ঔষধ দিবেননা।

এছাড়া দাঁতের ব্যাথায় Tab. Tory 120 mg, Napa One ও দেয়া হয়।

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সকল রোগের ঔষধ বিদ্যমান। দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট গুলোর মতো হোমিওপ্যাথিতেও রয়েছে এর বেশ কয়েকটি ঔষধ।যেমন-

১.সিলিসিয়া- দাঁতের গোঁড়ার প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।

২.প্লান্টাগো- দাঁতের ব্যাথায় ব্যবহৃত সব থেকে কার্যকর ঔষধ প্লান্টাগো।

৩.ক্যামোমিলা- দাঁতের ব্যাথা ও শিরশিরানির জন্য বহুলভাবে ব্যবহার করা হয় ক্যামোমিলা।

৪.হেক্লা লাভা- দাঁতের ব্যাথা যদি এতোই তীব্র হয় যে ব্যাথায় চোয়াল ফুলে গিয়েছে তবে এক্ষেত্রে হেক্লা লাভা খুবই উপকারী।

৫.আর্নিকা- দাঁত তোলা বা দাঁতে ফিলিং করানোর ফলে যে ব্যাথা হয় তার জন্য আর্নিকা খুব ভালো কাজ করে।

তবে যে কোন ঔষধই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া বাঞ্চনীয়।

দাঁতের ব্যাথার ঘরোয়া সমাধান

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ছাড়াও দাঁতের ব্যাথার জন্য রয়েছে কিছু ঘরোয়া সমাধান। যেমন-

লবণ ও কুসুম গরম পানিঃ লবণ ও কুসুম গরম পানি দিয়ে কুল্কুচি করলে দাঁতের ব্যাথায় আরাম অনুভব হয়।

গরম সেকঃ গরম সেক দিলে দাঁতের ব্যাথার উপসম হয়।

এছাড়া লবঙ্গ ও রসুন দাঁতের ব্যাথা কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে কিছু ডাক্তার দাঁত ব্যাথা ও শিরশিরানি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সেনসোডাইন,কোলগেট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে বলেন।

ব্যাথার ট্যাবলেট কি সমাধান

দাঁতের সমস্যা হল পঁচা আলুর মতো।আলু যেমন একটা নষ্ট হলে ধীরে ধীরে পাশের আলুগুলোকে নষ্ট করে দেয়, ঠিক তেমনি একটা দাঁতে যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তা পাশের দাঁতেও ছড়িয়ে পরে।

যখন প্রথমে অল্প ব্যাথা দিয়ে এই সমস্যা যাত্রা শুরু তখন আমরা দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট খাই।কিন্তু আস্তে আস্তে সমস্যা বাড়তে থাকে।কারণ দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট খেলে ব্যাথা তো কমে কিন্তু জীবাণু বা ভাইরাসটা থেকে যায়।সেই জীবাণু বা ভাইরাস টা এরপর দাঁতে ক্ষত তৈরী করে।

ক্ষত থেকে কিছুদিন পর দাঁতের কোণা ভাঙতে শুরু করে আর কোণা ভেঙে দাঁত ধারালো হয়ে যায় এবং চয়োলের মাংস ছুলে যায়।তখন দাঁতে ব্যাথার পাশাপাশি গালেও ব্যাথা শুরু হয়।এক পর্যায়ে দাঁত তুলে ফেলতে হয়।

অতএব, বলা যায়, দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেটই  দাঁতের ব্যাথার সমাধান নয়।দাঁতে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের সরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

ব্যাথার ট্যাবলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা- দাঁতের ব্যাথার তীব্রতা এতোই বেশি হয় যা সহ্য করা বেশ কঠিন।ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে ব্যাথা থেকে কিছুটা উপসম মিলে কিছু সময়ের জন্য।কাজেই যখনই ব্যাথা তীব্রতর হয় তখন ট্যাবলেট খেলে ব্যাথা সহনীয় হয়।

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট খাওয়ার অপকারিতা- যে কোন ব্যাথানাশক ট্যাবলেটই দীর্ঘদিন খাওয়া বেশি মাত্রায় খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর।দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট খাওয়ার পর কিছু সময়ের জন্য ব্যাথা কমে ঠিকই কিন্তু ট্যাবলেটের কার্যকাল শেষ হতেই আবার ব্যাথা শুরু হয়।

ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ভুল ট্যাবলেট বার বার খেলে হিতে বিপরীত হবে এবং নতুন শারীরিক সমস্যা তৈরি হবে।

তবে এক্ষত্রে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

দাঁতের ব্যাথা প্রতিরোধে করণীয়

একটু চেষ্টা করলে দাঁতের ব্যাথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।যেমন-

১.সকালে ও রাতে ২ বার দাঁতে ব্রাশ করা।

২.যেকোন খাবার অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা না খাওয়া।

৩.আইসক্রিম, চকোলেট মাত্রাতিরিক্ত না খাওয়া।

৪.দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া।

৫.৩ মাস পর পর ১বার ডাক্তারি চেক আপে যাওয়া।

পরিশেষে

দাঁত আমাদের মুখের সৌন্দর্য বৃ্দ্ধি করে,হাসি প্রষ্ফুটিত করে। তাই বুঝি বলা হয়- সুস্থ্য দাঁত, সুন্দর হাসি।সেই হাসি অমলিন রাখতে আমাদের সচেষ্ট থাকা উচিৎ।

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট যদি খাওয়া আবশ্যকিয় হয় তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।

দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ

১. হঠাৎ দাঁতের ব্যাথায় করণীয় কী?

উত্তরঃ প্রথমে কুসুম গরম পানির সাথে লবণ নিয়ে কুলকুচি বা কিছুক্ষণ মুখে রেখে গিলে খেতে পারেন।আর ব্যাথা যদি তীব্র হয় তবে দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট সাধারণ প্যারাসিটেমল খেতে পারেন।

২. দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট কী কী?

উত্তরঃ Etorix 120 mg,

Aceclofenac 100 mg,

Tory 120 mg,

Napa One etc.

৩. কিছু দিন পর পর দাঁতে ব্যাথা হলে কী করবো?

উত্তরঃ দ্রুত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

৪. দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট একটানা খেলে কি সমস্যা হবে?

উত্তরঃ যে কোনো ব্যাথানাশক ট্যাবলেট ই বেশিদিন খাওয়া কিডনীর জন্য ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন-

বেটনোভেট এন ক্রিম এর উপকারিতা ও ক্রিম এর ব্যবহার

পেয়ারা পাতার উপকারিতাসমুহ ও ব্যবহার করার নিয়ম

Leave a Comment