মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

মুখে ব্রণ কমানোর উপায়

বর্তমান সময়ে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য বড় একটি সমস্যার নাম হলো ব্রণ। মুখে ব্রণ কমানোর উপায় অনেকে জানেনা।  অনেক সময় খেয়াল করলে দেখা যায় রাতে ঘুমানোর আগে মুখের ত্বক একদম স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু সকাল বেলায় মুখে ব্রণ দেখা দিয়েছে।

আসলে মুখে ব্রণ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, তবে লক্ষ করা যায় গরমের সময় এটি বেশি হয়। ব্রণ এমন একটি সমস্যা যা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই কারণ ব্রণের জন্য মুখের সৌন্দর্যতায় প্রভাব পরে এবং

মুখে দীর্ঘস্থায়ী দাগের সৃষ্টি হয়। ব্রণ সমস্যা থেকে প্রতিকার লাভ করতে হলে ব্রণ কি, মুখে ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ হলে করণীয় কি এসব বিষয় নিয়ে জানা প্রয়োজন।  তাই আজকে আমরা আলোচনা করব ব্রণ কি, মুখে ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ হলে করণীয় কি এসব বিষয় নিয়ে।

ব্রণ

মূলত ব্রণ হলো মানুষের ত্বকের একটি রোগ যা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং এটি চিহ্ণিত করার উপায় হলো লালচে ত্বক, পিম্পল, কাটা দাগ, ক্ষতচিহ্ন, প্যাপ্যুল, নডিউল ইত্যাদি মুখের ত্বকে উপস্থিতি। ব্রণের বৈজ্ঞানিক নাম হলো অ্যাকনি ভালগারিস (Acne vulgaris)। এটি অ্যাকনি নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুনঃ সর্দি-কাশি রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায়

ব্রণ কত প্রকার?

ব্রণ সাধারণত পাঁচ প্রকার। যথা: প্রিমিন্সট্রুয়াল অ্যাকনি, ট্রপিক্যাল অ্যাকনি, অ্যাকনি ডিটারজিনেকস, স্টেরয়েড অ্যাকনি, অ্যাকনি কসমেটিকা।

  • প্রিমিন্সট্রুয়াল অ্যাকনি (ব্রণ): এই ধরনের অ্যাকনি শুধুমাত্র মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই ধরনের ব্রণ বা অ্যাকনি মহিলাদের মাসিকের সাত থেকে দশ দিন আগে হয়ে থাকে।
  • ট্রপিক্যাল অ্যাকনি (ব্রণ): এই ধরনের অ্যাকনি সাধারণত সিজিনাল হয়ে থাকে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গেলে বা আবহাওয়া অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে তখন এই ধরনের অ্যাকনি দেখা দেয়। এটি উরুতে এবং পিঠে দেখা দেয়।
  • অ্যাকনি ডিটারজিনেকস: মুখে বেশি পরিমাণে ফেসওয়াশ অথবা সাবান ব্যবহার করার ফলে এই অ্যাকনি বা ব্রণ দেখা দেয়।
  • স্টেরয়েড অ্যাকনি (ব্রণ): স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন অধিক হারে গ্রহণ করার ফলে যখন মুখে ব্রণ দেখা দেয় তখন সেই ধরনের ব্রণকে স্টেরয়েড অ্যাকনি বলে।
  • কসমেটিক অ্যাকনি : অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে যখন মুখে ব্রণ ওঠে তখন তাকে কসমেটিকা অ্যাকনি বলে।

ব্রণ কাদের বেশি হয়

ব্রণের সমস্যা সচরাচর ছেলে মেয়ে উভয়েরই বয়ঃসন্ধিকাল থেকে দেখা দেয়। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। বয়স ২০ বছর অতিক্রম করার পর থেকে এই সমস্যা কমে যেতে শুরু করে। তবে অনেক সময় ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত স্থায়ীও হয়ে থাকে।

ব্রণ কেন হয়

স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে মুখে ব্রণ হওয়ার পেছনে কোনো একটি কারণ দায়ী নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। ব্রণ হলে করণীয় কি? নিচে সেই কারণ গুলো দেয়া হলো:

ব্রণ হলে করণীয় কি এবং মুখে ব্রণ কেন হয়

মুখে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবির সংক্রমণ

মুখের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবির সংক্রমণ মুখে ব্রণ ওঠার অন্যতম একটি কারণ। ডেমোডেক্স (Demodex) নামক একটি পরোজীবি রয়েছে যা মুখে আক্রমণের ফলে ব্রণ হয়। এছাড়াও অবায়বীয় (Anerobic) প্রজাতির একটি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যার নাম Propionibacterium acnes। এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলেও মুখে ব্রণের দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা 

জেনেটিক কারণ

যমজ গবেষণাতে সমর্থিত রয়েছে যে কিছু ব্যাক্তির ব্রণ হওয়ার পেছনে জেনেটিক কারণও দায়ী থাকে। মূলত এই ধরনের ব্রণ হওয়ার কারণ IL-1 আলফা, TNF-আলফা ইত্যাদি ধরনের জেনেটিক উপাদান।

হরমোনজনিত কারণ

মূলত বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন রকম ব্যাহিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এই ব্যাহিক পরিবর্তনের পাশাপাশি শরীরের অভ্যন্তরেও হরমোনাল পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় লিঙ্গভেদে শরীরে অ্যান্ড্রেজন ও টেস্টোটেরণ হরমোন এর বৃদ্ধি ঘটে যে কারণে মুখে ব্রণ হয়।

পিরিয়ড সার্কেল

মহিলাদের পিরিয়ড সার্কেল ব্রণের অন্যতম একটি কারণ। সাধারণত পিরিয়ডের সময় মহিলাদের শরীরে হরমোনাল ইমব্যালেন্স ঘটে। আর এই জন্য পিরিয়ডের সাতদিন আগে থেকে পিরিয়ড সার্কেলের সময় পর্যন্ত মুখে ব্রণ হয়।

ঘুম কম হওয়া

একজন মানুষের প্রতিদিনের রুটিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিমাণে ঘুম শরীরে হরমোনাল ব্যালান্স বজায় রাখতে সাহায্য করে কিন্তু এটির হেরফের ঘটলে অর্থাৎ টেনশনের জন্য নিয়মের তুলনায় ঘুম যদি কম হয় তখন হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয় এবং এই কারণে মুখে ব্রণ হয়।

অতিরিক্ত ঘাম

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে অনেকে ব্রণ সমস্যা দেখা দেয়। আবহওিয়া অতিরিক্ত গরম হওয়ার জন্য অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে ওর্য়াক আউট করার ফলে শরীর থেকে অনেক ঘাম নিঃসরিত হয়। ঘামের সাথে বাইরের ধুলো ময়লা শরীরে লেগে গিয়ে শরীরের জমে যায় । এই কারণেও মুখে ব্রণ ওঠে।

বেশি পরিমানে হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার 

যারা বেশি পরিমাণে হেয়ার প্রোডাক্ট যেমন: হেয়ার স্প্রে বা সিলিকন আছে এমন কোনো জিনিস ব্যবহার করেন তাদের এই সমস্যাটি হতে পারে। কারণ এই ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে হেয়ার স্ক্যাল্পে এই সামগ্রীর উপাদান গুলো জমে যায় । এর ফলে মাথা থেকে দূষিত পর্দাথ গুলো ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে না এবং শরীরেই থেকে যায়। ফলাফলস্বরূপ ব্রণ দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা

কসমেটিকসের বেশি ব্যবহার করা

মুখে ব্রণ ওঠার অন্যতম কারনের মধ্যে এটি একটি। অনেকেই আছেন যারা মুখে রেগুলার বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস প্রোডাক্ট যেমন: ফাউন্ডেশন, কনসিলার, কম্প্যাক্ট পাউডার, কনটোর ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের প্রসাধন সামগ্রী মুখে রেগুলার লাগানোর ফলে মুখের ছোট ছোট লোমকূপ যেগুলোকে ”পোরস্” বলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুখের  বিদ্যমান দূষিত পর্দাথগুলো বের হতে পারে না এবং এই কারণে ব্রণের সৃষ্টি হয়।

জাংক ফুড গ্রহন

হেলদি ডায়েটের পরিবর্তে যখন কেউ জাংক ফুড অর্থ্যাৎ মিট বার্গার, চিজি পিজ্জা, সফট/ কোল্ড ড্রিংকস্, পাকোড়া, সিঙারা, চকোলেট ইত্যাদি গ্রহণ করে তখন তা থেকে ওবেসিটি হয় যা ব্রণ হওয়ার একটি কারণ।

ত্বকের যত্ন না করা

মানুষের ত্বক প্রতিদিন বিভিন্ন রকম রোগ জীবাণু, দূষিত পদার্থ এবং টক্সিন এর সংস্পর্শে আসে। এগুলো থেকে মুক্ত রাখার জন্য মুখের ত্বককে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয় এবং যত্ন নিতে হয়। কিন্তু যখনই মানুষ এটি নিয়মিত করতে ব্যর্থ হয় তখনই মুখে ব্রণ হয়।

মুখের নির্দিষ্ট অংশে ব্রণ হওয়ার কারণ

মুখের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন কারণে ব্রণ হয়ে থাকে । নিচে সে কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • গালে ব্রণ হওয়ার কারণ: ডাইজেশন প্রবলেম, মুখে ময়লা মে আপ ব্রাশ ব্যবহার করা, ধূমপান করা এবং ময়লা যুক্ত বালিশ ব্যবহার করার কারণে গালে ব্রণ হয়।
  • আই ব্রো এর মাঝে ব্রণ হওয়ার কারণ: বেশি পরিমাণে প্রসেসড ফুড গ্রহণ করা, আই ব্রো ওয়াক্স করা, এলকোহল গ্রহণের অভ্যাস, খাবারে  অ্যালার্জি ইত্যাদি কারণে আই ব্রো এর মাঝে ব্রণ হয়।
  • নাক ও নাকের চারপাশে ব্রণ হওয়ার কারণ: হাই ব্লাড প্রেসার, খাবার গ্রহণে অনিয়ম, তৈলাক্ত স্কিন, অতিরিক্ত স্ট্রেস এবং দুশচিন্তার কারনে নাক ও নাকের চারপাশে ব্রণ হয়।
  • কানে ও কানের আশেপাশে ব্রণ: মেক আপ প্রেডাক্টের রিয়েকশন, পানি স্বল্পতা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স এবং ব্যক্টেরিয়াল ইনফেকশন থেকে কানে ও কানের আশেপাশে ব্রণ হয়।
  • কপালে ব্রণ হওয়ার কারণ: নিয়মের তুলনায় ঘুম কম হওয়া, ইন ডাইজেশন ইত্যাদি কারণে কপালে ব্রণ হয়। এছাড়াও বেশি পরিমাণে হেয়ার প্রোডাক্ট যেমন: হেয়ার স্ট্রেইটনার, হাইলি ইফেক্টিভ হেয়ার ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্প্রে প্রতিদিন ইউজ করলে  অনেক সময়  হেয়ার লাইনের লোমকূপে ঐ প্রেডাক্টগুলো জমে গিয়ে পোরস্ ক্লগ হয়। আর এটি কপালে ব্রণ সৃষ্টির অন্যতম একাট কারণ।

আরও পড়ুনঃ তিসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা

দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়

মুখে ব্রণ হওয়ার কারণগুলো জানার পরে এখন জানবো মুখে ব্রণ কমানোর উপায় কি কি

  • মুখে ব্রণ হলে সর্বপ্রথম যে অভ্যাসটি করতে হবে তা ব্রণে স্পর্শ না করা। ব্রণ হলে কখনোই  সেটিতে  হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না কারণ অনেক সময় ব্রণে হাত লাগারে সেটি চুলকায়। আর এমনটা হলে মানুষ যখন সেটিতে নখ দিয়ে চুলকায় তখন ব্রণ পপ-আপ হয়ে যায়। এটি কখনো করা উচিত নয়। কারণ যখন কেউ ব্রণ টাকে পপ আপ করার চেষ্টা করে তখন ব্রণের ভিতরে যে সিবাম ফ্লয়েড থাকে সেটি এক্সপ্লোশন হয়। পাশাপাশি সেগুলো  চারপাশে ছড়িয়ে পরে এবং আরো বেশি পরিমাণে ব্রণের সৃষ্টি করে।
  • প্রতিদিন অন্তত পক্ষে চার থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করতে হবে।
  • সুষম খাবারের পাশাপাশি মৌসুমি ফল, শাক সবজি এবং অ্যামিনো এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং জাংক ফুড জাতীয় খাবার, কোল্ড ড্রিংকস্, চকোলেট ইত্যাদি গ্রহণ করা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে।
  •   অয়েলি ময়শ্চরাইজার বা ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না।
  •  অয়েল ফ্রি ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে দু থেকে  তিনবার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে যেন মুখে ময়লা জমতে না পারে এবং মুখ ক্লিন থাকে এবং এরপর অবশ্যই মুখে অয়েল ফ্রি ময়শ্চরাইজার লাগাতে হবে।
  •   মুখে মেক আপ ব্যবহার করার সময় অয়েল ফ্রি এবং ওয়াটার বেসড্ মেক আপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে।
  • মানসিক চাপ ও দুশচিন্তা মুক্ত থাকতে হবে।
  • রাত জাগা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে, এবং চা কফি জাতীয় পানীয় কম গ্রহণ করতে হবে। এর পাশাপাশি রাতে অবশ্যই সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  • আবহাওয়া গরম হলে অথবা ঘাম বেশি হলে সে ক্ষেত্রে পানির ঝাপটা দিয়ে স্কিন পরিষ্কার করে ফেলতে হবে যেন স্কিন পরিষ্কার থাকে।
  •  বাহিরে বের হরে অবশ্যই রোদ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অন্য ব্যাক্তির ব্যবহারকৃত তোয়ালা বা মেক আপ ব্রাশ ব্যবহার করা যাবে না।
  • নিয়মিত মুখের ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস পরিষ্কার করতে হবে।
  • সপ্তাহে দু বার থেকে সর্বোচ্চ তিনবার মুখে স্ক্রাব করতে হবে তবে অতি সাবধানে যাতে ব্রণ পপ আপ না হয়ে যায়।

শেষ কথা

আজকের আলোচনা থেকে যা যা জানা গেলো তা হলো ব্রণ কি, ব্রণ কত প্রকার, ব্রণ কাদের বেশি হয়। ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ হলে করণীয় কি? মুখে ব্রণ কমানোর উপায় বিষয়গুলো। পরিশেষে বলা যায় ওপরের আলোচনা থেকে ব্রণ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় নিয়ে জানা গেছে যে তথ্যগুলো পরবর্তি সময়ে ব্রণ সমস্যা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন-

স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা

ঘরে বসে মেকআপ করার নিয়ম

Leave a Comment