আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
আক্কেল দাঁত উঠার সময় কমবেশি সবারই ব্যথা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকমের ব্যথা হয়। তাই জানবো আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় আক্কেল দাঁত উঠার সময় সচরাচর আমাদের মাড়িতে খুব বেশি জায়গা পায় না।
তাই মাড়ি ছেদ করে এ দাঁত উঠতে বেশ যন্ত্রণাদায়ক কষ্ট সহ্য করতে হয় অনেকেরই । আক্কেল দাঁত উঠার সময় প্রচন্ড ব্যাথার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মাড়ি ও গাল ফুলে যায় এমনকি জ্বরও হতে পারে।
আসলে আক্কেল দাঁত কি
আমাদের প্রথমেই জানতে হবে আক্কেল দাঁত আসলে কি? আমাদের মুখে, মাড়ির শেষ সীমানায় উপরে- নিচে এবং বামে-ডানে সব মিলিয়ে মোট ৪ টি পেষন দাঁত রয়েছে। এগুলোই হলো আক্কেল দাঁত। কারো ৪ টি দাঁতই উঠতে পারে। আবার কারো নাও উঠতে পারে এই আক্কেল দাঁত। সাধারণত ১৭-২৫ বছর বয়সের মধ্যেই এই দাঁত উঠে থাকে। কারো হয়তো এই দাঁত আংশিক ভাবে উঠে। আবার কারো মাড়ির নিচেই থেকে যায়।
আরও পড়ুনঃ কমলা খাওয়ার উপকারিতা
আক্কেল দাঁত কেন হয়
সত্য কথা বলতে আমাদের কারো আক্কেল দাঁত প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ্ তালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন একেক জন কে একেক রকম করে। সারা বিশ্বে অল্প কিছু মানুষের আক্কেল দাঁত ওঠে।।
এটা সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন কেন আক্কেল দাঁত ওঠে, তবে পশ্চিমা দেশগুলো মানুষ আক্কেল দাঁত অপারেশনের মাধ্যমে তুলে ফেলে।
আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ
অনেক ক্ষেত্রে বিবর্তনের কারণে সাধারণত আক্কেল দাঁত বেরোনোর জায়গা থাকে না। কিন্তু নীচের দাঁত পুরোপুরি না গজালেও, উপরের দাঁত বেরিয়ে যায়। ১৭-২৫ বছর বয়সের মধ্যেই এই দাঁত উঠে থাকে। আক্কেল দাঁত বেঁকা ভাবে গজায় এবং পাশের মোলার দাঁত নষ্ট করে দেয়। মুখ হাঁ করতে সমস্যা, মুখ ফুলে যাওয়া, খাবার খেতে-গিলতে সমস্যা। এ গুলো হলো আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর চিকিৎসা
- আপনার যদি অতিরিক্ত মাত্রায় দাঁতে ব্যথা হয় যা আপনার সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করে ফেলে তাহলে অবশ্যই অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার দাঁতের চিকিৎসা কন্টিনিউ করতে হবে।
- এক্ষেত্রে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দাঁতের এক্সরে করে দাঁতের অবস্থা ও অবস্থান জানতে হবে।অনেক সময় ব্যথানাশক ঔষধ সেবনের ফলে ব্যথা কমে যায় কিন্তু যদি আপনার দাঁতে ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।
- অনেক ক্ষেত্রে তীব্র সমস্যা হলে সার্জারির মাধ্যমে দাঁতটি ফেলেও দিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই কেননা, আক্কেল দাঁত সাধারণত খাবার চিবোতে তেমন কাজে আসে না কারণ খাবার চিবোনোর জন্য আক্কেল দাঁতের সামনে আরো ২ টি পেষণ দাঁত রয়েছে।
- সার্জারি করে দাঁত ফেলে দেয়ার পর কিছুদিন ব্যথা, মুখ ফুলে যাওয়া, হা করতে না পারা, শক্ত খাবার খেতে অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
মূলকথা,আপনার ব্যথার সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করলেই আপনাকে অতি দ্রুত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার সেবা গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মুখে ব্রণ কমানোর উপায়
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর বেশ কিছু কার্যকর উপায়
লবঙ্গ
লবঙ্গ দাঁতের ব্যথার জন্য খুবই কার্যকর। তাই দাঁতের ব্যথার স্থানে একটি লবঙ্গ কামড় দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে ব্যথা উপশম হয়। লবঙ্গে থাকা উপাদান দাঁতে ব্যথা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথাযুক্ত দাঁতে লবঙ্গের তেল লাগিয়ে রাখলেও ব্যথা কমে যায়।
লবণ পানি
কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল বা কুলকুচি করলে অনেক সময় দাঁতের ব্যথা ভালো হয়ে যায়। লবন পানি দিয়ে কুলকুচি করলে আক্কেল দাঁত যেখানে উঠছে, সেই জায়গায় কোন সংক্রমণ থাকলে তা কমে যায়।
ঠান্ডা-গরম সেঁক
গালে ব্যাথার স্থানে সহণীয় মাত্রায় গরম পানির সেঁক দেয়া যেতে পারে। আবার বরফ দিয়েও সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এতে করে দাঁতের ব্যথা কমবে।
ভিনেগার
এক চা চামচ ভিনেগারের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে নিয়ে এর মধ্যে একটি তুলো ভিজিয়ে আক্কেল দাঁতের মাড়ির স্থানে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দাঁতের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজের রস দিয়েও ভিনেগারের মত দাঁতের ব্যথা কমানো যায়। এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রসে একটি তুলো ভিজিয়ে আক্কেল দাঁতের মাড়ির স্থানে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দাঁতের ব্যথা কমে যায়। আপনি চাইলে পেঁয়াজের টুকরো দাঁতে কামড় দিয়ে ধরে রাখতে পারেন।
পেয়ারা গাছের কচিপাতা
পেয়ারা গাছের কচি পাতা পানিতে সেদ্ধ করে, সেই পাতা ব্যথার স্থানে রেখে দিলে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে।
বেকিং সোডা
বেকিং সোডা দাঁতের ব্যথা কমাতে দুর্দান্ত কাজ করে। এজন্য একটি তুলা বেকিং সোডার পানিতে ভিজিয়ে সে তুলা আক্কেল দাঁতের উপরে রাখলে ব্যথা কমতে সাহায্য করে।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতার রস দাঁতের ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকরী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর জন্য পুদিনা পাতার রসে এক টুকরো তুলো ভিজিয়ে মাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এছাড়াও পুদিনা পাতার গরম গরম চা সেবন করলে দাঁতের ব্যথায় শান্তি মিলবে।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে হাজারো ভেষজ উপকারিতা। আঙ্কেল দাঁতের ব্যথা কমাতে অ্যালোভেরা জেল খুব ভালো কাজ করে। এটি দাঁতের ফোলা ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও দাঁতের ব্যাথার স্থানে এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে মুহূর্তেই ওই অংশটি ঠান্ডা হয়ে ব্যথা কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আদা/রসুন বাটা
আদা বা রসুন বাটা দাঁতের গোড়ায় ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়। আদা বা রসুন বাটায় থাকা বিভিন্ন সংক্রমণবিরোধী উপাদান প্রদাহ কমায় এবং জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়াও দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য আদা চা খাওয়া যেতে পারে।
কাঁচা হলুদ
কাঁচা হলুদ এ থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁত ব্যথা মুহূর্তেই কমাতে খুব উপকারি। কাঁচা হলুদের টুকরো গরম পানিতে ফুটিয়ে ওই পানি দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যথা কমে যায়।
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর ওষুধের নাম
মূলকথা,আপনার ব্যথার সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করলেই আপনাকে অতি দ্রুত একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার সেবা গ্রহণ করতে হবে।
সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। Ketorolac, Toradol, Ketorol dt.
শেষকথা
সবশেষে আমরা বলতে পারি, আক্কেল দাঁত প্রতিরোধের কিছু নেই এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। উপরোক্তে, আমরা আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনাদের প্রয়োজনে ব্যথা কমানোর এইসব উপায় থেকে অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি। তবে এ ধরণের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত সকালে ও রাতে খাবার পর সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হবে এবং অবশ্যই সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা