অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার উপায় ও সংরক্ষন

জন্ম নিবন্ধন যাচাই

জন্ম নিবন্ধন প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি বিশেষ পরিচয় পত্র হিসেবে ভূমিকা রাখে। তাই আপনার জন্ম নিবন্ধন এর তথ্য সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে জন্ম নিবন্ধন চেক বা ভেরিফাই করার কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদটি অনলাইন বা ডিজিটাল রয়েছে কিনা? বা জন্ম নিবন্ধন সনদটি অরিজিনাল কিনা, এটা দেখার জন্য জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয়। বর্তমানে আর হাতের লেখা জন্ম সনদ ব্যাবহার হয় না। জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হয়েছে। 

আপনার হাতে থাকা মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে আপনি এই কাজটি খুব সহজেই করতে পারেন। বর্তমানে রেজিস্টার জেনারেল কার্যালয়ের ওয়েবসাইট আপডেট হয়েছে। একারণে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট নিয়ে অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, নিচে দেখানো নিয়ম অনুযায়ী আপনি খুব সহজেই নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।

এটি ২০২৩ সালের নিবন্ধন যাচাই করার জন্য একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী আপনি চাইলে জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করার পর ডাউনলোড করে সংরক্ষণও করতে পারবেন।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন যাচাই

সাধারণ কিছু তথ্য জানা থাকলেই অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই নিবন্ধন যাচাই (Birth registration verification) করা যায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্ম নিবন্ধন তারিখ। এগুলো আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডে পেয়ে যাবেন। তো চলুন দেরি না করে জেনে নেই অনলাইনে নিবন্ধন যাচাই (Birth registration verification) করার নিয়ম। 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই প্রক্রিয়া

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হলে প্রথমে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। ওয়েবসাইটের লিংক https://everify.bdris.gov.bd/ 

ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর আপনি এমন একটি ইন্টারফেস/ভিউ পেয়ে যাবেন। এখানে (Birth Registration Number) ইনপুট বক্সে আপনার জন্ম নিবন্ধন কার্ডে থাকা ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি বসান। তারপর (Date of Birth (yyyy-mm-dd) ) ইনপুট বক্সে জন্ম নিবন্ধন কার্ডে থাকা জন্ম তারিখ এবং (the answer is) ইনপুট বক্সে উপরে দেয়া অংকের উত্তরটি। এই ছবির ক্ষেতে উত্তর হবে 61, কারন   67-6 = 61, তবে আপনার ক্ষেত্রে অংকটা ভিন্ন থাকবে। আপনাকে অংটি করে উত্তরটি (the answer is) ইনপুট বক্সে বসাতে হবে। 

সকল তথ্য ইনপুট দেয়া হয়ে গেলে একবার ভালোভাবে তা মিলিয়ে নিন। কেননা ফর্মে ভূল ইনপুট দিলে আপনার কংখিন ফলাফরটি দেখাবে না। তথ্য মিলিয়ে নেয়া হয়ে গেলে সার্চ (search) বাটনে ক্লিক করুন।

যদি আপনার ইনপুট দেয়া তথ্যগুলো সঠিক হয় তাহলে  সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে জন্ম নিবন্ধন এর কপি চলে আসবে। তখন আবার অনলাইনে থাকা তথ্যগুলোর সাথে আপনার হাতে থাকা জন্ম নিবন্ধনের সাথে মিলিয়ে নিন।

আর যদি সার্চ দেওয়ার পর Record not found লেখা আসে তাহলে পুনরায় ইনপুট দেয়া তথ্যগুলো চেক করে আবার (search) বাটনে ক্লিক করুন। যদি সঠিক তথ্য ইনপুট দেয়ার পরও Record not found লেখা আসে তাহলে বুঝে নিবেন সেই জন্ম নিবন্ধন সনদটি ডিজিটাল নয় অথবা এটি নকল।

বি:দ্র: জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য কোন ধরনের কোন ফি প্রদান করতে হয় না।

জন্ম নিবন্ধন কপি ডাউনলোড  

আপনার জন্ম নিবন্ধন যাচাই (Birth registration verification) করার পর সেই কপি সংরক্ষন করা অনেক সহজ। এজন্য প্রথমেই জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করে ফলাফলে চলে আসুন। ফলাফলে চলে আসার পর ctrl+p একসাথে চাপ দিলেই সাথে সাথে আপনার সামনে একটি পপ-আপ চলে আসবে। 

আপনি চাইলে পপ-আপ থেকে জন্ম নিবন্ধনের কপিটি  PDF আকারে সেভ করে নিতে পারবেন আবার চাইলে প্রিন্টও করতে পারবেন।

PDF সেভ করে রাখার জন্য Destination থেকে Save as PDF নির্বাচন করে সেভ করতে পারন। এভাবে খুব সহজেই যাচাই কপিটি সংরক্ষন করা যায়। 

কোন কোন ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন

ভোটার আইডি কার্ড প্রাপ্তির আগে যে কোনো অফিসিয়াল কাজেই জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।  যেমন:

  • স্কুলে ভর্তি
  • শিক্ষা বৃত্তির জন্য আবেদন
  • বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও বিবাহ নিবন্ধন
  • শিশু শ্রম প্রতিরোধ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি
  • পাসপোর্ট ইস্যু 
  • গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
  • জমি, গাড়িহস যে কোনো কিছু রেজিষ্ট্রেশন
  • ব্যাংক হিসাব খোলা
  • সরকাদরি-বেসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান ইত্যাদি

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা কেনো প্রয়োজন

যেহেতু ভোটার আইডি কার্ড প্রাপ্তির আগে জন্ম নিবন্ধনিই একমাত্রে অফিসিয়াল ডকুমেন্ট, আর প্রায় প্রতিটি অফিসিয়াল কাজেই এই জন্ম নিবন্ধন সনদটি প্রয়োজন হয়। 

তাই যদি জন্ম নিবন্ধনটি নকল হয় তাহলে প্রতিটি অফিসিয়াল কাজেই হয়রানির স্বীকার হতে হয়। এছাড়াও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে খুব সহজেই সব কিছু কপি করে এর অপব্যাবহারও হর হামেশা হচ্ছে। তাই নিজেকে এই সব সমস্যা থেকে বাচাতে জন্ম নিবন্ধন সনদটি আসল কিনা নকল তা যাচাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ ডিজিটাল কিনা তা জানার জন্য – যে সকল জন্ম নিবন্ধন সনদ ১৭ ডিজিটের এবং যার তথ্যগুলো অনলাইনে রয়েছে সেগুলো ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ বলা হয়। বর্তমান সময়ে সতকল ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের ডিজিটাল কপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল কিনা তা জানার জন্যও জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা প্রয়োজন। 

শেষ কথা

জন্ম নিবন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। বিশেষ করে ১৮ বছরের নিচে সাবার ক্ষেত্রে এটি বেশিই প্রয়োজন। আজকের আরটিকেলে আমার এর সত্ততা যাচায়ের বিষয়টি তুলে ধরার চেস্টা করেছি।তাছাড়াও নিবন্ধন যাচাই এর ক্ষেত্রে আপনার কোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। 

জন্ম নিবন্ধন যাচাই এর নিয়মটি অন্যদেরকে জানাতে আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কিভাবে দেখব? 

উত্তর :- https://everify.bdris.gov.bd/ সাইটে ভিজিট করে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্ম তারিখ লিখে দিয়ে সাবমিট করলে নিবন্ধন যাচাই কপি দেখতে পারবেন। বিস্তারিত উপরে বর্ননা করা হয়েছে।

২. জন্ম নিবন্ধন করার জন্য কি কি প্রয়োজন? 

উত্তর :- একটি শিশুর বয়স ০ থেকে ৪৫ দিন হলেই জন্ম নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত। এই শিশুটির জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা প্রয়োজন, 

  • শিশুটি টিকা কার্ড / হাসপাতালে ছাড়পত্র 
  • কর পরিশোধের রশিদ / বাসা বাড়ির টেক্স টোকেন 
  • অভিভাবকের বর্তমান ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার 
  • পিতা-মাতার ডিজিটাল অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (অপশনাল)
  • পিতা মাতার আইডি কার্ড (অপশনাল)

Leave a Comment