কাশি দূর করার উপায় ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি

কাশি দূর করার উপায়

কাশির ব্যাপারে আমরা সবসময় হেলাফেলা করি। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন দীর্ঘ ও জোরালো কাশি হলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ হ্রাসের কারণে ব্যাক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যা পরবর্তীতে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাসের বড় গমনপথগুলিতে তরল, উত্তেজক পদার্থ, বিদেশী কণা এবং জীবাণু আটকে থাকলেই কাশি দেখা দেয়। ফুসফুস থেকে বাতাসের সজোরে আঘাতের কারণে অনেক সময় কাশির সাথে সাথে বুকে ব্যাথাও করে। ব্যাক্তির দেহে যদি কোনো ধরণের ভাইরাস এবং ব্যাকটিরিয়া বা অন্য কোনো বড়সড় রোগ বাসা বাঁধে সেক্ষেত্রে

এই কাশির সমস্যা মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে৷ তীব্র কাশিতে অল্প পরিমাণে রক্ত দেখা দেওয়াসহ বিভিন্ন লক্ষ্মণের উপর ভিত্তি করেই সাধারণত চিকিৎসকেরা কাশির রোগ নির্ণয় করে থাকেন। পরবর্তীতে রোগ অনুযায়ী রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ই কাশি দূর করার উপায় মেনে এই সমস্যা দূর করে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড কমানোর উপায়

কাশি হবার কারণগুলি কি 

কাশি দূর করার উপায়

মনে রাখবেন যেকোনো ব্যাক্তিই সময়ে সময়ে তাদের গলা পরিষ্কার করার জন্য কাশির মতো সমস্যায় পড়তে পারে। অনেক সময়ই ২ সপ্তাহের মধেই কাশির সমস্যা চলে যায়। তবে যাদের ২ সপ্তাহ চলে যারার পরও এই সমস্যা থেকে যাবে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। চলুন তবে এবারে কাশি হবার কারণগুলি সম্পর্কে জানি। কাশি হবার কারণগুলি হলো: 

ভাইরাস

কাশির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বিশেষ করে সর্দি বা ফ্লুজনিত সমস্যাকে। শ্বাসযন্ত্রের এই বিশেষ সংক্রমণ সাধারণত একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। যা সৃষ্টি হওয়ার ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর কাশির সমস্যা অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যেতে থাকে। 

ধুমপান

যেকোনো ক্যাটাগরির ধূমপানই কাশির আরেকটি সাধারণ কারণ হিসাবে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে কাশি দূর করার উপায় মেনে চললেও লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করার কারণে কোনো ফল পাওয়া যায় না। এই ধরণের অভ্যাসের কারণে কাশি দেখা দিলে সবসময়ই একটি স্বতন্ত্র শব্দ সৃষ্টি হয় এবং এই ধরণের কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।

হাঁপানি

ছোট বাচ্চাদের কাশির সমস্যা দেখা দিলে মনে রাখবেন তা হাঁপানি কারণে হয়েছে। হাঁপানির কাশিতে সাধারণত শ্বাসকষ্ট হয়। আর এটি সনাক্ত করার সহজ উপায় হলো কাশির সময় মাত্রাতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট কাজ করা। এক্ষেত্রে ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করে শ্বাসকষ্টের মাত্রা পরীক্ষা করা যেতে পারে। 

ঔষধ

বেশ কিছু ঔষধ সেবনও কাশির মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দিতে পারে। আবার এসব ঔষধ ব্যবহার করা ছেড়ে দিলে আপনার কাশিও বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও দেহের একটি বিশেষ অবস্থা অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (ACE) ইনহিবিটরস পরিস্থিতির কারণেও মাত্রাতিরিক্তভাবে কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

এছাড়াও যেসব কারণে আপনার মাঝে কাশির সমস্যা বাড়তি হারে লক্ষ্য করা যাবে সেসব কারণগুলি হলো: 

  • কোনো কারণে ভোকাল কর্ডের ক্ষতি হলে
  • দেহে ড্রিপ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখা দিলে
  • নিউমোনিয়া, হুপিং কাশি এবং ক্রুপ বেড়ে গেলে
  • ব্যাক্তির পালমোনারি এমবোলিজম এবং হার্ট ফেইলিউর হলে
  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) দেখা দিলে
  • পেটের খাবার খাদ্যনালীতে চলে আসলে

আরও পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

কাশি দূর করার উপায়

কাশি দূর করার উপায় হিসাবে এখন বেশকিছু টিপসের ব্যাপারে জানাবো। যা আপনি চাইলে ঘরে বসেই ফলো করতে পারেন। এগুলি হলো: 

বাষ্প নিন

যাদের ভেজা কাশি রয়েছে এবং কফ জমে যায় তারা বাষ্প নিতে পারেন। এক্ষেত্রে গরম পানি দিয়ে একটি বড় গামলা ভর্তি করে নিন। এরপর সেই গামলার কাছে মুখ নিয়ে এর বাষ্প গ্রহণ করুন। টানা ১০/১৫ মিনিটের মতো এভাবে বাষ্প নিতে থাকুন। আশা করি দ্রুত ভেজা কাশির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

গবেষণা বলছে দ্রুত সুস্থ হতে এই টিপস দিনে অন্তত ২ বার ফলো করতে হবে। তবে ৪/৫ বারের বেশি এই টিপস ফলো না করাটাই উচিত। আর এই টিপস ফলো করার সময় অবশ্যই মাথার উপর একটি তোয়ালে রাখার চেষ্টা করবেন। 

গার্গেল করুন 

কাশি দূর করার উপায়ের মাঝে সহজ একটি টিপস হলো ঘনঘন লবণ পানিতে গার্গেল করা। এমনটা করতে ১ কাপ পানি নিয়ে তাতে ১/২ চা চামচ লবণ দিন। পানি হালকা গরম করে নিতে পারলে কিন্তু আরো ভালো হয়! এবার এই লবণ মেশানোর কুসুম গরম পানির সাহায্যে গার্গেল করে নিন। কাশি ভালো না হওয়া পর্যন্ত এই টিপস ফলো করতে পারেন। যদিও অল্পবয়সী শিশু এবং উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি লবণ পানি ব্যবহার না করে কেবল কুসুম পানি ব্যবহারের পরামর্শ রইলো। 

গরম পানীয়

কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং হাঁচির মতো সমস্যা দূর করতে প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় পরপর গরম পানীয় পান করা। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ফ্লুর উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরা এই টিপস ফলো করে ভালোই উপকৃত হতে পারেন। এক্ষেত্রে চা, গ্রিন টি, বিভিন্ন গরম ডেজার্ট (তরল জাতীয়) খাবার বা পানীয়কে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

লাইফস্টাইলের পরিবর্তন 

কাশি দূর করার উপায় নয়! বরং আবশ্যক নিয়ম হিসাবে আপনাকে সঠিক এবং সুস্থ লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হতে হবে। অ্যাসিড রিফ্লাক্সকে ট্রিগার করতে পারে এমন খাবার অর্থ্যাৎ অ্যালকোহল, ক্যাফিন, চকোলেট, ভাজাপোড়া খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ কাশির সাথে যদি আপনার অ্যাসিডের সমস্যা দেখা যায় সেক্ষেত্রে তা সরাসরি গলায় এবং বুকে মারাত্মক জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করবে।

কাশি দূর করার উপায় – কাশি দূর করতে কি খাবেন

ফ্লু, সাধারণ সর্দি, হাঁপানি, সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদির সংস্পর্শে এলেই এই শুকনা কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা দূর করতে ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করতে পারেন ঠিক এভাবে: 

মধু

যারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং যাদের বয়স ১ বছরের বেশি তারা কাশি দূর করার উপায় হিসেবে মধু ব্যবহার করতে পারেন। মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য কারণে এটি শুকনোর কাশির গলার জ্বালাপোড়া দূর করতে সাহায্য করে। শুকনা কাশির এই সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন কয়েকবার মধু খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়াও গরম পানি বা চায়ের সাথে মিশিয়েও মধু খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন ইনফ্যান্ট বোটুলিজম এড়াতে কখনোই ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু পান করতে দেওয়া যাবে না।

হলুদ

বিজ্ঞানীদের মতে হলুদে কারকিউমিন রয়েছে। এটি দেহে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসাবে কাজ করে থাকে। হলুদের মেডিসিন পান করার জন্য ১ চামচ হলুদের সাথে খানিকটা লাল মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। মনে রাখবেন মরিচ যেনো সরাসরি গুড়া মরিচ না হয়। লাল মরিচ ভেজে তা হাতে গুঁড়ো করে তবেই এই পানীয় পান করতে হবে। শুকনো কাশি ছাড়াও শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা, ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির চিকিৎসার জন্যেও হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

আদা

আদা হলো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দারুণ উপকারী একটি খাবার। শুকনো কাশির সমস্যা রোধ করতে সামান্য কুসুম গরম পানিতে আদার খোসা বা কাটা শিকড় ভিজিয়ে আপনি আদার মূল থেকে আদা চা তৈরি করতে পারেন। চেষ্টা করবেন এই চায়ের সাথে খানিকটা মধুও যোগ করতে। এতে করে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা আরো বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

পুদিনা 

পেপারমিন্টে বা পুদিনাতে মেন্থল উপাদানের রয়েছে। শুকনো কাশির সময় গলার স্নায়ু দূর্বল হয়ে পড়লে বা অসাড় হয়ে পড়লে এই পুদিনা খেতে পারেন। এছাড়াও পুদিনাকে বলা হয় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণাবলীর শ্রেষ্ঠ উৎস। এই পুদিনার চা রাতের কাশি উপশম করতে ঘুমানোর ঠিক আগে পান করতে পারেন।

পুদিনা চা বানাতে সামান্য পানিতে পুদিনা দিয়ে গরম করে নিন। বুটবুট করলে হালকা চা পাতা, দারুচিনি, আদা, মধু এবং লবঙ্গের সাহায্যে সিদ্ধ করে নামিয়ে নিন। স্বাদ বাড়াতে এই চায়ে সামন্য লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। 

লবণ পানি

যদিও লবণ পানি পান করা যাবে না। তবে ব্যবহার করা যাবে। শুকনো কাশির সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করতে পারেন। এই বিশেষ পানি মুখ ও গলার ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্যে করবে। দিনে কয়েকবার এই পানির সাহায্যে গার্গল করলে শুকনা কাশির সমস্যা দ্রুত সেরে উঠবে। 

কাশির সিরাপ

যারা শুকনো কাশির সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন বা যারা আর পারছেন না তারা সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাশির সিরাপ খেতে পারেন। কাশির সিরাপ হিসাবে অ্যান্টিটিউসিভ সিরাপ বেশ ভালো কাজ করে। শুষ্ক কাশির জন্য বিশেষভাবে উপকারী এই কাশির ঔষধ। এই ঔষধে থাকা ডেক্সট্রোমেথরফান, কর্পূর বা মেন্থল উপাদান দ্রুত আপনার কাশির সমস্যা সারিয়ে তুলবে। কাশি দূর করার উপায় হিসেবে এটি বেশি কার্যকর। 

শেষ কথা

কাশি দূর করার উপায় মেনে চলার পরও যারা সুস্থবোধ করবেন না, তারা দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সেই সাথে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন প্রোবায়োটিকস মেডিসিন গ্রহণ করতে পারেন। মনে রাখবেন রোগ প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ করতে পারাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আর এই বুদ্ধির জোর কাজে লাগাতে প্রয়োজন নিয়মিত হাত ধোয়া, দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলা এবং হাইড্রেটেড থাকার অভ্যাস। সেই সাথে সর্দি বা অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত এমন ব্যাক্তিদের এড়িয়ে চলার বিষয়টিও আপনার দেহে কাশির সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। 

কাশি দূর করার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

১. খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় কি? 

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় হলো মুখে যতক্ষণ সম্ভব এলাচ চিবানোর অভ্যাস করা। 

২. এলার্জিজনিত কাশি দূর করার উপায় কি? 

এলার্জিজনিত কাশি দূর করার উপায় হলো ফেক্সোফেনাডিন ঔষধ ব্যবহার করা।

৩. রাতের কাশি কিভাবে দূর করবো? 

রাতের কাশি দূর করতে মধুর সাথে গরম চা পান করুন এবং ঘুমানোর আগে কুসুম গরম লবণ পানিতে গার্গল করুন।

৪. কাশির সমস্যা কখন জটিল হতে পারে? 

কাশির সমস্যা পানিশূন্যতা, ঠান্ডা, জ্বর ইত্যাদি দেখা দিলে জটিল হতে পারে। 

আরও পড়ুন-

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জানা জরুরী

হালাল ব্যবসার আইডিয়া

Leave a Comment