ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তা ও নিয়মকানুন

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা 

আমরা সকলেই ভুট্টা চিনি। ভুট্টা হলো আঁশে ভরা। এতে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। ভুট্টায় রয়েছে বায়োফ্লাভোনয়েডস ও ক্যারোটিনয়েডের মতো প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সুস্থ রাখে। এছাড়া প্রতিদিন ভুট্টা খেলেও ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই।

তাই বিশেষ করে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে।

আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনোএসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” থাকে। ভুট্টায় এত এত উপাদান থাকার ফলে ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী ভুট্টায় রয়েছে- ১৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট, ২ গ্রাম আঁশ, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ১.৫ এর কম চর্বি এবং ৮৬ ক্যালরি থাকে। অন্যদিকে ১০০ গ্রাম পপকর্ণে ৯২% ক্যালরি থাকে,২.৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে,এবং ১৮.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১ গ্রাম চর্বি থাকে।


আরও পড়ুনঃ লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম


ভুট্টা খেলে স্বাস্থ্যের কি উন্নতি হয়

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।যা আমরা অনেকেই জানি না।ভুট্টা একটি পুষ্টিকর শস্য যা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। ভুট্টা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

১. হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে

ভুট্টায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে, যা হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে এবং খাবারের পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে।

২.হৃদ স্বাস্থ্য ভালো রাখে

ভুট্টায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৩.শক্তি বাড়ায়

ভুট্টায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা দেহের প্রধান শক্তির উৎস। ভুট্টা খেলে দীর্ঘক্ষণ শক্তি পাওয়া যায়।

৪.ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে

ভুট্টা ভিটামিনএ, সি, ই, কে, বি1, বি2, বি3, বি6, এবং ফোলেট সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে। এটি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, এবং জিঙ্কেরও একটি ভালো উৎস।

৫.দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

 ভুট্টায় বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য।

৬.ত্বককে সুস্থ রাখে

 ভুট্টায় ভিটামিন সি এবং ই রয়েছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি ত্বককে সূর্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।

৭.হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

ভুট্টায় ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

 ভুট্টায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ভুট্টার অপকারিতা

ভুট্টা খাওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি এড়াতে, ভুট্টা অ্যালার্জি বা খাদ্য সংবেদনশীলতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ভুট্টা এড়ানো উচিত। এছাড়াও, ভুট্টা খাওয়ার সময়, এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং ফ্যাট গ্রহণ এড়াতে ভুট্টা ভাজা বা পপকর্ন এড়ানো উচিত। ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক সেটা তো সবাই জানি।

কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। 

•যাদের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে অথবা যাদের বমির সমস্যা আছে,তাদেরকে ভুট্টা খাওয়া হতে বিরত থাকা উচিত

• ভুট্টা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের মাত্রা বাড়তে সাহায্য করে। সুতরাং, তাদের ভুট্টা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

• বাচ্চাদের কাঁচা ভুট্টা খেলে,এটি তাদের ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

• ভুট্টাতে ফাইবার বেশি থাকে। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে।

ভুট্টা খেলে যদি কোনও অপ্রীতিকর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ভুট্টা যেভাবে খাওয়া যেতে পারে

ভুট্টা একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার যা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে।এবং ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তাই ভুট্টা খাওয়ার জন্য আপনার পছন্দের উপায়টি খুঁজে বের করুন এবং উপভোগ করুন! ভুট্টা খাওয়ার কিছু জনপ্রিয় উপায় হল

১.ভুট্টা ভাজা

ভুট্টা ভাজা হল ভুট্টা খাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায়। এটি একটি সহজ এবং দ্রুত উপায় যাতে ভুট্টা খাওয়া যায়। ভুট্টা ভাজার জন্য, ভুট্টা ধুয়ে, তারপর একটি কড়াইতে বা ওভেনে ভাজা হয়। ভুট্টা ভাজার সময়, এতে লবণ, মরিচ, বা অন্যান্য মশলা যোগ করা যেতে পারে।

২.পপকর্ন

পপকর্ন হল ভুট্টা থেকে তৈরি একটি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় স্ন্যাক। পপকর্ন তৈরির জন্য, ভুট্টা ধুয়ে, তারপর একটি মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা কড়াইতে পাওয়ার জন্য রাখা হয়। পপকর্ন তৈরির সময়, এতে লবণ, মরিচ, বা অন্যান্য মশলা যোগ করা যেতে পারে।

৩.ভুট্টা স্যুপ

 ভুট্টা স্যুপ হল একটি উষ্ণ এবং সুস্বাদু স্যুপ যা ভুট্টা দিয়ে তৈরি। ভুট্টা স্যুপ তৈরির জন্য, ভুট্টা ধুয়ে, তারপর একটি কড়াইতে বা ওভেনে রান্না করা হয়। এরপর এতে অন্যান্য উপাদান, যেমন মাংস, সবজি, বা মশলা যোগ করা হয়।

৪.ভুট্টা সালাদ

ভুট্টা সালাদ হল একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু সালাদ যা ভুট্টা দিয়ে তৈরি। ভুট্টা সালাদ তৈরির জন্য, ভুট্টা ধুয়ে, তারপর অন্যান্য সবজি, যেমন টমেটো, শসা, বা লেটুস দিয়ে একসাথে মিশানো হয়। এরপর এতে সালাদ ড্রেসিং যোগ করা হয়।

৫. ভুট্টা তেল

ভুট্টা তেল হল একটি স্বাস্থ্যকর তেল যা ভুট্টা থেকে তৈরি। ভুট্টা তেল রান্না, সস, বা সালাদ ড্রেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়াও, ভুট্টা বিভিন্ন অন্যান্য খাবারের মধ্যেও ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, ভুট্টা মাংস, সবজি, বা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে রান্না করা যেতে পারে। ভুট্টা থেকে বিভিন্ন মিষ্টি খাবার, যেমন ভুট্টা চিপস, ভুট্টা কেক, বা ভুট্টা আইসক্রিমও তৈরি করা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ভুট্টার উপকারিতা 

গর্ভাবস্থায় খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গ্রহণকে খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। কারণ ভুট্টায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রণ, এবং ফলিক অ্যাসিড সহ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদি। আর এইসব পৌষ্টিক উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী।

একইসাথে গর্ভস্থ শিশুর জন্য ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এগুলি শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড গঠনের ক্ষেত্রে যাবতীয় ত্রুটির সম্ভবনা খর্ব করে দেয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মধুমেহ আক্রান্ত মহিলাদের জন্যও চিকিৎসকেরা খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ভুট্টা রান্নার রেসিপি

শীতের বিকেলে কিমবা সন্ধ্যায় গরম গরম চিকেন কর্ণ স‍্যুপ বাচ্চারা  ভীষণ পছন্দ করবে।স‍্যুপ‌ উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো সময় শীতকাল।তাই চিকেন কর্ন স্যুপের একটি রেসিপি দেয়া হলো

• ১/২ কাপ কর্ণ/ভূট্টা।

• ১/২ কাপ বোনলেস চিকেন।

• ১/২ কাপ চিকেনের হাড়(স্টকের জন্যে)

• স্বাদমতো-লবণ।

• ২ টি ডিম।

• ১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুড়া।

• ২/৩ টি কাচামরিচ কুচি।

• ১ টেবিল চামচ কর্ণ ফ্লাওয়ার।

রান্নার নির্দেশ

• ধাপ 1

প্রথমে ২ লিটার পানিতে মুরগির হাড়গুলো ২ ঘন্টা সিদ্ধ করে নিতে হবে।স্টক ছেঁকে ১ লিটার নিতে হবে স‍্যুপ‌ রান্নার জন্যে।

• ধাপ 2

বোনলেস মাংস ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।এরপর একটি হাড়িতে স্টক চুলায় বসিয়ে এতে মাংসের টুকরো, স্বাদমতো লবণ,গোলমরিচ গুড়া, কাচামরিচ কুচি ও বেবিকর্ণ দিয়ে জ্বাল দিতে হবে ২০ মিনিট।

• ধাপ 3

একটি কাপে আধা কাপ পানি নিয়ে তাতে কর্ণ ফ্লাওয়ার গুলে নিতে হবে।

• ধাপ 4

এরপর পানিতে গুলিয়ে নেয়া কর্ণফ্লাওয়ার চুলায় বসানো স্টকে ঢেকে ভালো করে নাড়তে হবে।

• ধাপ 5

একটি বাটিতে দুটো ডিম পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে‌।এরপর তা চুলায় বসানো স্টকে আস্তে আস্তে ঢেলে ভালো করে নেড়ে নিতে হবে।এরপর চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার ক্লাসিক চিকেন কর্ণ স‍্যুপ‌‌।

পরিশেষে

ভুট্টার উপকারিতা অনেক বেশি হলেও তা অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া ঠিক নয়। কারন শরীরে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। মাত্রা অতিক্রান্ত হলে তা বিপরীত হতে পারে।

তাই সঠিক পরিমান খাওয়া স্বাস্থ্য ও শরীর দুই ভাল রাখে। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল থেকে ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ 

১.কত বছরের বাচ্চা ভুট্টা খেতে পারবে?

উত্তর:শিশুর বয়স ৬ মাস পেরোলে অর্থাৎ সে ধীরে ধীরে শক্ত খাবার খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠলে তাকে ভুট্টা খাওয়ানো যেতে পারে।

২.ভুট্টা কি ভেজে খাওয়া যাবে?

উত্তর:ভাজা ভুট্টা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে কোনো পুষ্টিমান অবশিষ্ট থাকে না।

৩.দিনে কতটুকু ভুট্টা খাওয়া উচিত??

উত্তর:ওজন কমানোর জন্য আপনার ভুট্টা খাওয়া এক কাপ বা প্রতিদিন 160 থেকে 170 গ্রাম পর্যন্ত সীমিত করুন। 

আরও পড়ুন-

পেয়ারা পাতার উপকারিতাসমুহ ও ব্যবহার করার নিয়ম

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা ও সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment