বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ, খাওয়ানোর নিয়ম ও সতর্কতা

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ

বড়দের মতো বাচ্চাদেরও পেটে গ্যাস হতে পারে। বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে সাধারণত এরা কান্নাকাটি করে, চেহারা লাল হয়ে যায়। তাছাড়া খাওয়ার পর মোচড়াতে থাকে এবং হাত মুঠো করে রাখে বা পা ভাঁজ করে পেটের কাছে এনে রাখে। 

পেটের গ্যাস কোনও মহাজাগতিক বিষয় নয়। বরং আমাদের সকলের পেটেই গ্যাস হয়। আসলে অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া, খাবার হজমের সময় গ্যাস তৈরি করে। এটা একবারেই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তাই এই নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই।

তবে গ্যাসের কারণে যদি পেট ফেঁপে থাকে, ব্যথা হয়, তাহলে একটু সচেতন হতে হবে বৈকি! বিশেষত, ছোটদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তো প্রথমেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

অবুঝ হওয়ায় শিশুরা তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে না। বাচ্চারা বায়ু ত্যাগ করতে পারে। শিশুদের পেটে গ্যাস হলে এটা আপনাকে তাদের লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হয়। নানা কারণে শিশুদের পেটে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।

আজকের আর্টিকেলে বাচ্চাদের গ্যাস কেন হয়,গ্যাস হলে করণীয়, লক্ষণ, প্রতিকার, বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ এর নামসমুহ

বাচ্চাদের-গ্যাসের-সিরাপ-baccha-der-gas-er-syrup
বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ

ফ্লাকোল ড্রপ সিরাপ

খাওয়ানোর নিয়ম

ফ্লাকোল শিশুদের গ্যাসের ড্রপ ওষুধ। যার গ্রুপ নাম সিমেথিকন। এটি সেবনে তেমন কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে শুধু পাতলা পায়খানা হতে পারে। বড়দের জন্য এটি ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।

এটি দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২০ মি.গ্রা. (০.৩ মি.লি.) করে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন চারবার খাওয়াতে হবে। আর দুই থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৪০ মি.গ্রা. (০.৬ মি.লি.) করে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন চারবার খাওয়াতে হবে। 

দাম: ১৫ মিলি ড্রপ সিরাপের দাম ৩৫.১১ টাকা।

ফ্যামোট্যাক সিরাপ

খাওয়ানোর নিয়ম

ফ্যামোট্যাক বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ ওষুধ। যার গ্রুপ নাম ফ্যামোটিডিন। এটা দীর্ঘ সময় কাজ করে থাকে একবার খেলে প্রায় ১২ ঘন্টা অব্দি। এই সিরাপ কিছুদিন খাওয়ালে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে ।

১ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৫ মি.গ্রা. করে প্রত্যেকদিন খাওয়াতে হবে। খাবার গ্রহণের আগে সেবন করাতে হবে। তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

দাম: স্কয়ার কোম্পানির এই সিরাপের মূল্য ৫০ টাকা।

এছাড়া আরো কিছু কার্যকরী এবং প্রচলিত বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ এর নামের তালিকা ও দাম নিচে দেওয়া হলো:

  • Neodrop – Beximco Company –  30 TK
  • Pedicon – Orion Company – 30 TK
  • Semecon – Drug Company – 46 TK
  • Simet – ACI Company – 30 TK
  • Flatunil – Acme Company – 35 TK
  • Gasnil – Eskayef Company – 30 TK
  • Lefoam – Incepta Company – 30 TK
  • Simethi – Zenith Company – 30 TK
  • Naunehal – Herbal Company – 75 TK

বাচ্চাদের গ্যাস কেন হয়

নিম্নে উল্লেখিত কারণে বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হয়ে থাকে। শিশু অবস্থায় বাচ্চাদের পরিপাকতন্ত্র ধীরে সংঘটিত হয়। যার ফলে হজম সমস্যা হয়ে পেটে গ্যাস হয়। এই জন্য বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ খুব জরুরী।

  • খাবার দ্রুত খেলে বা আস্তে আস্তে খেলে। 
  • অতিরিক্ত পরিমাণ দুধ খেলে।
  • বাচ্চা পানি কম খেলে।
  • কিছু খাবারের খাবারের কারণে, যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকলি জাতীয় খাবার।
  • জুস খাওয়ার কারণে।
  • শিশুরা অতিরিক্ত কান্না করে থাকে। তার ফলে শিশুদের পেটে কিছু পরিমাণ বাতাস ঢুকে থাকে। যা পরে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
  • বাচ্চা শিশুর মায়ের যদি গ্যাস হয় এমন জাতীয় খাবার খায় তাহলে শিশুরও গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাচ্চাদের গ্যাস হলে করণীয়

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ দেয়ার সাথে সাথে কিছু করণীয় রয়েছে।

  • শিশু ফিডার খেলে ফিডার বানিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পর শিশুকে খাওয়াতে হবে।
  • ফেনা কম হয় এমন খাবার খাওয়াতে হবে।
  • সমস্যা বেশিদিন হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • বাসার পেটে আলতো করে মেসেজ করতে পারেন।
  • বাচ্চা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে কান্না করতে থাকে তাহলে কান্না থামানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

লক্ষণসমূহ

  • অস্থিরতা, ক্ষুধামান্দ্য।
  • অতিরিক্ত কান্না করা।
  • অতিরিক্ত মোচড়ানো।
  • পেট ফোলা ও তলপেট শক্ত হওয়া।
  • অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ।

প্রতিকার

প্রথমেই বলতে হয় যে এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটা একটা সাময়িক সমস্যা মাত্র। বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তবে তিন-চার মাস পরে সাধারণত এ সমস্যা আর থাকে না।

  • শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ শিশু ও মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান ও সংযুক্তি সেটা ঠিকমতো হতে হবে। শিশুর মাথাটা একটু উঁচু রাখতে হবে। শিশুকে শুইয়ে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। এতে পেটে বেশি বাতাস ঢুকে এ সমস্যা করতে পারে।
  • শিশুকে সব সময় বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাজারের ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো ঠিক নয়। কারণ ফর্মুলা মিল্কে সাধারণত কিছু উপাদান সংযুক্ত থাকে, যা নবজাতকের গ্যাসের উদ্রেক করে।
  • ফিডারে দুধ না খাওয়ানোই ভালো। যেহেতু ফিডারের মাধ্যমে শিশুর পেটে সবচেয়ে বেশি বাতাস ঢোকে।
  • দুধ খাওয়ার পরে শিশুকে সোজা করে কাঁধে নিয়ে পাঁচ মিনিট হাত দিয়ে পিঠ চাপড়ে দেওয়া ভালো। অর্থাৎ ঢেকুর তোলানো, যেটাকে বলা হয় ‘বারপিং’। এতে অতিরিক্ত গ্যাসটা বের হয়ে যায়, বাচ্চা আরাম পায়।
  • শিশুর শরীর ও পেটে ম্যাসাজ করলেও কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে। যেমন—শিশুকে কিছুক্ষণ উপুড় করে শুইয়ে রাখা। শিশুর পেটে আলতো করে আঙুল দিয়ে ওপর দিক থেকে নিচের দিকে টেনে টেনে বাতাস বের করে দেওয়া যেতে পারে। এতে গ্যাস বের হয়ে যাবে অনেকটাই।
  • শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলে বা গোসল করিয়ে দিলে গ্যাস বের হওয়াটা ত্বরান্বিত হয়।
  • মায়ের যেসব খাবারে গ্যাস হয়, সেসব খাবার পরিহার বা নিয়ন্ত্রিতভাবে গ্রহণ করা উচিত। যেমন—অতিরিক্ত শর্করা বা বাদাম বা ডালজাতীয় খাবার, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, অতিরিক্ত মসলাদার খাবার পরিহার করে চলা ভালো।

শিশুর গ্যাসের অন্যান্য কারণ

নবজাতক শিশুদের মধ্যে গ্যাসের সমস্যার অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অসহিষ্ণুতা বা কোনও সংক্রমণ।

গ্যাসটি কোনও সমস্যা কিনা তা খুঁজে বের করতে এবং কীভাবে এটির চিকিত্সা করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিতে ডাক্তার সহায়তা করতে পারেন। উপরের পরামর্শগুলি যদি কাজ না করে তবে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করা ভাল।

কখন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন

শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিন্তার কারন দূর করার জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলা সর্বদা একটি ভাল ধারণা। পাচনতন্ত্রের সমস্যা বা খাওয়ানোর সময় তারা বাতাস গিলে নিচ্ছে এমন বিভিন্ন কারণে নবজাতকদের গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

অতএব, বাবা-মায়েদের চিন্তা করা উচিত নয় যদি তাদের শিশুর গ্যাস থাকে। যাইহোক, যদি শিশুটি অত্যধিক কান্নাকাটি করে এবং ব্যথা অনুভব করে বলে মনে হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সর্বদা ভাল।

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ অন্য ওষুধকে প্রভাবিত করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় উপাদান এবং খাওয়ার পর কোন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই মাত্রাধিক খাওয়ানো যাবে না। এতে করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

সতর্কতা

ঔষুধ অব্যশই শিশুদের নাগালের বাহিরে রাখতে হবে।

পরিশেষে

গ্যাসের সিরাপ বাচ্চাদের জন্য খুবই কার্যকর। তবে অব্যশই ডাক্তারের পরামর্শনুযায়ী খাওয়াতে হবে। বাচ্চাদের পরিপাকতন্ত্র খুব ধীর গতি, যার জন্য এমন খাবার খাওয়ানো যাবে না যাতে গ্যাস সৃষ্টি হয়।

এসব অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে। তবে চিন্তার কিছু নেই কিছু নিয়ম মেনে চললেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ সম্পর্কিত বিষয় জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

বাচ্চাদের গ্যাসের সিরাপ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। বাচ্চাদের গ্যাসের জন্য কোন সিরাপ ভালো?

উত্তরঃ Colicaid Syrup 100 ml সাধারণত শিশুদের কোলিক ব্যথার চিকিত্সার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়, গ্রিপিং ব্যথা পেটে গ্যাস এবং পেট ফাঁপা কমায়।

২। শিশুর পেট ব্যাথার ঔষধ কোনটি?

উত্তরঃ শিশুদের পেটে ব্যথা প্রায়শই বাড়ির যত্নে চিকিত্সা করা যেতে পারে। নিশ্চিত করুন যে শিশুটি পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছে, ডিহাইড্রেশন এড়াতে তরল দিন, শক্ত খাবার, অ্যাসপিরিন, অ্যান্টিবায়োটিক (ডাক্তারের পরামর্শ না থাকলে) এবং ভেষজ পরিপূরকগুলি এড়িয়ে চলুন। শিশুর হালকা জ্বর হলে অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল) দেওয়া যেতে পারে ।

৩। গ্যাসের ড্রপ কি কাজ করে?

উত্তরঃ গ্যাস ড্রপের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে। এগুলি সমস্ত শিশু এবং সমস্ত গ্যাসের জন্য কাজ নাও করতে পারে, তবে সেগুলি একটি নিরাপদ বিকল্প যা চেষ্টা করার মতো হতে পারে৷ ডাঃ স্নাইডারম্যান বলেছেন যে তিনি অতিরিক্ত গ্যাসযুক্ত কিছু শিশুর জন্য ড্রপগুলি সুপারিশ করেন।

আরও পড়ুন-

বেটনোভেট এন ক্রিম এর উপকারিতা ও ক্রিম এর ব্যবহার

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা ও সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment