১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি ও এর চিকিৎসা

১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি

অনিয়মিত পিরিয়ড নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এক মাসিকের প্রথম দিন থেকে আর এক মাসিকের প্রথম দিন পর্যন্ত যে সময় সেটাই হলো এক মাসিক চক্র। সাধারণত ২৮ দিন পরপর মাসিক হয়। যদিও ২১ থেকে ৩৫ দিন অন্তর পর্যন্ত স্বাভাবিকতার তারতম্য হতে পারে।

পিরিয়ডের তারিখ এগিয়ে আসলেই শুরু হয় আতঙ্ক। শুরু হয় পেটে ব্যথা, পা ব্যথা, কোমড় ব্যথা। মনমেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আবার নির্দিষ্ট সময়ে ঋতুস্রাব না হলেও শুরু হয় আতঙ্ক। প্রথমেই মাথায় আসে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়ার ভয়।মাসে একবার পিরিয়ডের সমস্যা তো কোনওভাবে কাটিয়ে দেওয়া যায়।

আজকালকার বেহিসেবি লাইফস্টাইলের জন্য অনেক মহিলারই মাসে দু’বার ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি এই বিষয়ে আপনি সঠিকভাবে জানতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ ঘন ঘন মাসিক হলে কি করণীয় ও নিয়ন্ত্রণের থেরাপি

অনিয়মিত মাসিক কি

১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি

পিরিয়ড ঋতুচক্র যখন এক মাস হওয়ার আগেই হয়, প্রতি মাসে হয় না বা দুই মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। একবার মাসিক হলে সাধারণত ২-৮ দিন থাকে এবং এক মাসিকে মোট ৫-৮০ মিলি পর্যন্ত রক্ত যেতে পারে। এই তিনটার যেকোনো একটার অনিয়ম মানেই অনিয়মিত মাসিক। 

মাসিক সাবালিকা নারীদের প্রতিমাসে একবার করে হয়ে থাকে। এই মাসিক একজন কিশোরী থেকে শুরু করে প্রতিটি নারীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। মাসিক একজন নারীর প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে প্রতিমাসে মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে হয় না।

কারো কারো মাসিক এক দুই মাস পর পর হয়। আবার কারো কারো মাসে দুই তিন বারও মাসিক হয়,১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি এ, এই সমস্যাকেই অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। এক দুই মাস পর পর বা মাসিকের সময় পরিবর্তন হওয়ার চেয়ে ঘন ঘন মাসিক হওয়াটা বেশি চিন্তার বিষয়।

ঘন ঘন মাসিক হওয়ার কারন

সাধারণত প্রতি ২৮ থেকে ৩৫ দিন পর পর পিরিয়ড হয়ে থাকে। ১২ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এমনটিই হয়ে থাকে। কিন্তু কখনও কখনও এই সময়টাতে হেরফের হতে পারে। কখনও এক সপ্তাহ পরে হতে পারে পিরিয়ড। আবার মাঝে মাঝে এক মাস কিংবা আরও বেশি সময় পরও হতে পারে। ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি গুলো দেয়া হলো।

১। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

মতে, যে নারীরা খুব কঠিন ডায়েট করেন অথবা কোনও কারণে হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক ওজন কমে গেছে ঠিক তখনই পিরিয়ডে অনিয়ম হয়। অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণেও পিরিয়ডে অনিয়ম হতে পারে।

২। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

আমাদের গলার নিচে যেই থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে সেটি শরীরের সব কার্যপ্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি অথবা কম থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় তাহলে শরীরের পুরো কার্যকলাপে তার প্রভাব পড়ে। এসময় পিরিয়ডে অনিয়ম হতে পারে।

৩। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি হরমোনাল সমস্যা। শরীরের জরুরি তিনটি হরমোন এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেসটোস্টেরন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায় পলিসিস্টিকওভারি সিন্ড্রোম হলে।

ফলে পিরিয়ডে দেরি হয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে নারীদের মুখে এবং স্তনের চারিদিকে লোমের আধিক্য বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্যায় যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

৪। অতিরিক্ত মানসিক চাপ

হঠাৎ অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি হলে পিরিয়ডে বিলম্ব হতে পারে। হঠাৎ করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে হাইপোথ্যালামিক অ্যামেনোরিয়া হতে পারে।

ফলে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পিরিয়ডে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রিয়জনের বিয়োগ, ব্রেকআপ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কিংবা অন্য কোনও বড় ধরনের মানসিক আঘাতের ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

৫। জরায়ুর টিউমার

জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ এর মত টিউমার ঘন ঘন মাসিকের কারণ হতে পারে।

৬। ইনফেকশন

জরায়ু বা জোনিপথের ইনফেকশন ঘন ঘন মাসিকের কারণ হতে পারে।

১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি – ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘন ঘন মাসিক হওয়া হল এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মহিলার মাসিক চক্র ২১দিনের কম হয়। এটি বিভিন্ন কারণের কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, থাইরয়েড সমস্যা এবং গর্ভপাত।

১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি এ মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে।তবে ঘন ঘন মাসিকের জন্য কোন নির্দিষ্ট ঘরোয়া প্রতিকার নেই, তবে কিছু জিনিস উপসর্গগুলি উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

• উষ্ণ স্নান বা ব্যাগ ব্যবহার করা পেটে ব্যথা কমাতে।

• ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা, যেমন আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন।

• প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য।

• আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, যেমন লাল মাংস, শাকসবজি এবং শুকনো ফল।

• স্ট্রেস কমানো, যা লক্ষণগুলি আরও খারাপ করতে পারে।

আপনি যদি ঘন ঘন মাসিকের সাথে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন তবে আপনার একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত:

• ভারী রক্তপাত

• তীব্র ব্যথা

• জ্বর

• ক্লান্তি

• মাথা ঘোরা

• বমি বমি ভাব

এই উপসর্গগুলি একটি গুরুতর চিকিৎসা অবস্থার লক্ষণ হতে পারে যা মনোযোগের প্রয়োজন।

ঘন ঘন মাসিক হলে কি খাবার খাওয়া জরুরি

১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি এতে, কিছু খাবার আপনার জন্য জরুরি হতে পারে:

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:

• লাল মাংস

• লিভার

• শুঁটকি

• ডিম

• সবুজ শাকসবজি

• বাদাম

• খেজুর

ফল:

• পেঁপে

• আঙ্গুর

• আনার

• জাম্বুরা

• কলা

সবজি:

• পালং শাক

• লাউ শাক

• লাল শাক

• মিষ্টি আলু

• ব্রকলি

অন্যান্য:

• বাদাম

• বীজ

• দই

• ডাল

• ওটমিল

• বাদামী চাল

• মধু

পানি:

• প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও:

• ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।

• নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

• পর্যাপ্ত ঘুম নিন।

• মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন

• এই খাবারগুলি আপনার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এটি কোনও চিকিৎসা নয়।

• যদি আপনার ঘন ঘন মাসিকের সাথে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত, বা অন্যান্য কোনও উপসর্গ থাকে, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

পরিশেষে

তাই পরিশেষে এটাই বলা যেতে পারে যে,ঘনঘন মাসিকের সমস্যা হলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং সেই সাথে, ঘরোয়া চিকিৎসা এবং সুষম খাবার মেনে চলতে হবে।

তবে অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, যেকোনো ধরনের ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। তাই এই ধরনের সমস্যায়, ভালো চিকিৎসকের নিকট থেকে,নিজের সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আশা করছি ১৫ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি তা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।

মাসিক হওয়ার কারণ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১.মানসিক চাপ হলে কি মাসিকে সমস্যা হবে? 

উত্তর: যদি মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আরো অনিয়মিত বা অনুপস্থিত মাসিক হতে পারে।

২। ১৫ দিনে কি পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক?

উত্তরঃ যদি আপনার চক্র ঘন ঘন 21 দিনের কম হয় – যা আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে আগে রক্তপাতের দিকে পরিচালিত করে – এটি অন্তর্নিহিত কিছুর লক্ষণ হতে পারে।

৩। মাসিকের ২ সপ্তাহ পর রক্তপাত কেন হয়?

উত্তরঃ আপনার হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন, হরমোনের গর্ভনিরোধক বা গর্ভনিরোধক ডিভাইস ব্যবহার, সংক্রমণ বা আঘাত

আরও পড়ুন-

দুই মাস মাসিক না হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মাসিক না হলে কি সমস্যা হয়, এর প্রতিকার ও চিকিৎসা

Leave a Comment