টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে, চিকিৎসা ও প্রতিকার

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে এর উত্তরে বলা যায় ৫ থেকে ৭ দিন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। এটি মূলত আপনার চিকিৎসার ওপর নির্ভর করবে যে টাইফয়েড আপনার শরীরে কতদিন থাকবে।

অর্থাৎ আপনি যদি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করেন তবে এটি আপনার জন্য সুবিধাজনক হবেনা এবং টাইফয়েড জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে সে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানাবো। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে সকলেই উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুনঃ doxicap এর কাজ কি, খাওয়ার নিয়ম ও প্রতিক্রিয়া

টাইফয়েড কি

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে

টাইফয়েড জ্বর হলো একধরণের ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত রোগ। যা Salmonella Typhi নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়। এই জ্বরের লক্ষণ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। সাধারনত জীবাণু প্রবেশের ৬ থেকে ৩০ দিন পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। তারপরে কয়েকদিনের ব্যবধানেই জ্বর এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।

টাইফয়েড কেন হয়

টাইফয়েড জ্বর সারমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। এটি সংক্রমিত ব্যক্তির (মল-মূত্র)খাদ্য বা পানি পানের মাধ্যমে ছড়ায়।

ঝুকিপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে স্যানিটেশনের অভাব এবং নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও ফুটপাতের বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর পাণীয় খাদ্যপণ্য গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর কি ছোঁয়াচে

প্রায় সবার মনে এই প্রশ্নটি আসতে পারে যে, টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে ও টাইফয়েড জ্বর ছোঁয়াচে কিনা? জ্বী টাইফয়েড জ্বর ছোঁয়াচে। টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে, এমনকি পানির মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

এটি জটিলতম মারাত্মক রোগ। এই রোগে সংক্রমিত হলে রক্তক্ষরণ, মেরুদন্ডে সংক্রমণ, অগ্নাশয়ে প্রদাহ এবং কিডনিতেও বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েড কি বাহিত রোগ

টাইফয়েড একটি পানিবাহিত রোগ। এটি Salmonella Typhi নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়ার ফলে সংক্রমিত হয়ে থাকে। কিছু ব্যক্তি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত না হয়েও এই রোগের জীবাণু বহণ করে এই রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি গোসল করা যায়

অনেকেরই ধারণা টাইফয়েড জ্বর বা সাধারণ জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। গোসল করলে ঠান্ডা বসে যাবে, এতে করে জ্বর আরও বেড়ে যাবে। এই ধারণা ভুল, গোসল করা যাবে, তবে আবশ্যকীয় নয়। আমাদের দেশে জ্বর হলে মাথায় পানি ঢালা,পানিপট্টি দেওয়া বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু জ্বরের রোগীর গোসল করা বৈজ্ঞানিকভাবে একেবারেই নিষিদ্ধ নয়।

টাইফয়েডের ঝুঁকি কাদের বেশি 

Salmonella Typhi নামক  জীবাণু  দেহে প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হয় এই ধারণা ভুল।দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময় জীবাণু দেহে প্রবেশ করতে পারেনা। কিন্তু ছোট শিশু এবং কম রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন ব্যক্তিদের, যেমন : যারা এইচ আইভি পজিটিভ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে  বেশি।

টাইফয়েড জ্বর হলে করণীয় 

  • পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।বিশুদ্ধ পানি পেতে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করতে পারেন।পানি যেন দূষিত না হয় তাই পরিশোধিত পানি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পান করতে হবে।
  • রাস্তার পাশের দোকানের খাবার অথবা পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বাজার থেকে নিয়ে আসা শাকসবজি ,ফলমূল ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে খেতে হবে।
  • রান্নার বাসন এবং অন্যান্য জিনিস ভালো করে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে – জ্বরের কারণ ও লক্ষণ

টাইফয়েড জ্বর হলো ব্যাকটেরিয়া বাহিত একধরণের রোগ। যত দ্রুত সম্ভব এই রোগ শণাক্ত করে চিকিৎসা না করালে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে ।এই রোগ হওয়ার পূর্বে কিছু লক্ষণ/ উপসর্গ দেখা দেয়, যা নিচে আলোচনা করা হলো ;

  (ক) টাইফয়েড জ্বরের কারণ

  • টাইফয়েড জ্বরের কারণের মধ্যে অন্যতম কিছু কারন হলো বিশুদ্ধ পানির অভাব।
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেকোনো ধরনের খাবার ও পাণীয় গ্রহণ করা ।
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে খাবার খেলে।
  • শাক-সবজি ভালো করে সিদ্ধ করে না খাওয়ার কারনে।

(খ) টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ

  • টানা জ্বর থাকবে।জ্বর ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
  • মাথা ব্যাথা ,শরীর ব্যাথা।
  • শারীরিক দূর্বলতা।
  • ক্ষুধামন্দা।
  • খাবারের প্রতি অরুচি।
  • ঘনঘন বমি
  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া 
  • কফ বা প্রচন্ড কাশি
  • তাপমাত্রার সাথে হৃদস্পন্দন কমতে পারে ।
  • পেটে ব্যথা এবং পিঠে ও পেটে দানা দেখা দিতে পারে। 

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা ও প্রতিকার

চিকিৎসকেরা সাধারণত এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে টাইফয়েডের চিকিৎসা করে থাকেন। পরীক্ষা করে টাইফয়েডের জীবাণু পাওয়া গেলে জ্বরের জন্য প্যারাসিট্যামল এবং ১০ থেকে ১৪ দিনের এন্টিবায়োটিক খেতে হয়।

এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করার ৫ দিনের মধ্যেই রোগী সেরে উঠেন। মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবেনা এবং তিনি যতদিন এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিবেন ততদিন অবশ্যই ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। 

এ সময় শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দেয়, ফলে রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং পানির চাহিদা পূরণ করতে প্রচুর তরল এবং ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। জ্বর যদি বেশি থাকে তাহলে বার বার শরীর মুছে দিতে হবে।

টাইফয়েড হলে কি ইনজেকশন দিবেন

 টাইফয়েড জ্বর থেকে বেঁচে থাকার মূল মন্ত্রই হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে এটিও নির্ভর করবে আপনি নিজের প্রতি কতটা যত্নশীল তার ওপর। এ ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টাইফয়েড জ্বরের জন্য টিকা বা ভ্যাক্সিন নিলে এই জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। দুই ধরনের ভ্যাক্সিন বাজারে পাওয়া যায়।

(১) মুখে খাওয়ার 

(২) ইনজেকশনের মাধ্যমে 

ভ্যাক্সিন অথবা ইনজেকশন গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সবসময় ভ্যাক্সিন বা ইনজেকশন ব্যবহার করা ১০০% কার্যকরী নাও হতে পারে। এজন্য ভ্যাকসিনের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত 

টাইফয়েড জ্বর হলে যা যা খাওয়া উচিত তা হলো ;

  • ডাবের পানি
  • পুদিনার শরবত
  • টাটকা ফলের রস(প্যাকেটজাত নয়)
  • দইয়ের ঘোল বা বাটার মিল্ক খেতে হবে নিয়মিত
  • টাইফয়েডে একদিকে জ্বর ও পেটের সমস্যায় ডিহাইড্রেশন হয়,অন্যদিকে প্রচুর ঘাম হয় বলেও শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়।তাই বেশি বেশি পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। 

টাইফয়েড জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত নয়

আপনার খাদ্যভাসের ওপর টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করবে। টাইফয়েড ভালো হয়ে গেলেও কিছুদিন খাবারে বিধিনিষেধ থাকে। হজম ক্ষমতা স্বাভাবিক হতে কিছু সময় লেগে যায়। তাই খাবারের ব্যাপারে নিয়ম মেনে চলা ভালো।

  • হাই ফাইবার ফুড খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। স্যালাড জাতীয় খাবার কিছুদিন না খাওয়াযয় উত্তম।
  • কাঁচা পেয়াজ, ব্রকলি, বাধাকপি খাওয়া চলবেনা।
  • ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, বাজরা ওটস না খাওয়ায় ভালো।
  • মুসুর ডাল,রাজমা,ব্লাক বিনস,ঘুঘনি খাবেননা।
  • ভাজাভুজি, ডিপ তেলে ভাজা খাবার খাবেননা। পটেটো চিপস, ডোনাট,সিঙ্গারা খাওয়া যাবেনা।

পরিশেষে

আজকের আর্টিকেলে আমরা টাইফয়েড জ্বর কতদিন থাকে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি।এছাড়াও এই জ্বর কেন হয়,টাইফয়েড হওয়ার কারণ, এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও বিভিন্ন তথ্য জানতে যুক্ত থাকুন আমাদের প্রয়োজন ব্লগে।আশা করা যায় আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন ধন্যবাদ।

টাইফয়েড জ্বর সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। টাইফয়েড কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর: দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে এই জ্বর হয়ে থাকে।

(১) সালমোনেলা টাইফি

(২) সালমোনেলা প্যারাটাইফি

২। টাইফয়েড এর টিকার নাম কি?

উত্তর: একটি টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) (টিসিভি) পাওয়া একটি পরিচিত কার্যকর উপায় যা রোগ প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য। টিকা (ভ্যাক্সিনেশন) ছাড়াও আপনি স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটাইজেশন অনুশীলনগুলি অনুসরণ করতে পারেন এবং নিরাপদ পানীয় জল খেতে পারেন।

৩। টাইফয়েড জ্বর হলে কি চুল পড়ে যায়?

উত্তর: টাইফয়েড, চিকেন পক্স বা কোনও বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পরে চুল ঝরে যাওয়া, চুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। তাই বিষয়টি শুধু কোভিডের কারণে হবে, সেটা নয়। কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির যখন জ্বর হয় বা আইসোলেশন পিরিয়ড চলে, তখন চুল ঝরে না। চুলের পুষ্টি অবশ্য তখন থেকেই কমতে শুরু করে।

আরও পড়ুন-

alatrol এর কাজ কি, ব্যবহার, সতর্কতা ও সেবনবিধি

মাথা ব্যথার ওষুধের নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা

Leave a Comment