টনসিল এর ঔষধ এর নাম, চিকিৎসা পদ্ধতি ও করনীয়

টনসিল এর ঔষধ 

টনসিল শব্দটা জানেনা এমন মানুষ খুব কমই আছে। গলায় একটু  ব্যথা বলেই আমরা মনে করি টনসিল এর সমস্যা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে টনসিল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ। টনসিল আমাদের শরীরে ছাকনির মতো কাজ করে।

খাবারের সাথে আমরা অনেক জীবানু গ্রহন করি। টনসিলের কাজ হলো এসব জীবাণুকে আটকে দেয়। এগুলো শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। এছাড়া টনসিল অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

কিন্তু কখনো কখনো অতিরিক্ত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে টনসিল নিজেই ইনফেকশনের শিকার হয়। যাকে বলা হয় টনসিলাইটিস। টনসিল মূলত  লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড এই চারটি অংশে বিভক্ত। আর এই চারটি অংশের যেকোনো একটিতে প্রদাহ হলে তাকে টনসিলাইটিস বলে।

প্যালাটাইন টনসিলে অধিক পরিমাণ প্রদাহের ফলে আমাদের গলা ফুলে যায় ও ব্যাথা সৃষ্টি হয়।তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টনসিল এর ওষুধ সেবন করলে প্রদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


আরও পড়ুনঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ, কার্যকারিতা ও নিয়ম


টনসিল এর কারণ 

ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে টনসিলাইটিস বা টনসিলের সমস্যা হয়ে।এক কথায় টনসিলের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া হলো  স্ট্রেপটোকক্কাস  ব্যাকটেরিয়া।  এছাড়াও টনসিলের জন্য আরও কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দায়ী তা নিম্নরূপ:

১ অ্যাডেনো ভাইরাস

২ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

৩.এপস্টেইন-বার ভাইরাস

৪.প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

৫.এনটারো ভাইরাস

৬.হার্পস সিম্পলেক্স ভাইরাস

কি করে বুঝবেন আপনি টনসিল এর সমস্যায় ভুগছেন

টনসিলাইটিসের সাধারণ লক্ষণ হলো প্রচণ্ড গলা ব্যথা,খাবার গিলতে গেলে টনসিলে গলায় ব্যাথা অনুভব হওয়া,টনসিল লাল হওয়া,এ ছাড়াও গলার মধ্যে তীব্র ব্যথাযুক্ত ফোস্কা বা ক্ষত সৃষ্টি হওয়া,মাথাব্যথা হওয়া,শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া,

মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া,বমিবমি ভাব হওয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষ্মণ দেখা দিলে অবশ্যই টনসিল এর ঔষধ সেবন করতে হবে।নয়তো বড় কোন সমস্যা হতে পারে।

টনসিল এর ঔষধ এর নাম ও খাওয়ার সময়

টনসিল হলে নিম্নলিখিত ঔষধ খেতে হবে

1.Lebac 500 mg /Cepahradine. 500 mg

সকালে এবং রাতে খাবার পর ৭ দিন খেতে হবে

2.Reservix 100 mg 

টনসিলে অসহনীয় ব্যাথা থাকলে সকালে ও রাতে খাবার পর খেতে হবে।

3.E Fix 100 mg

বর্তমানে চিকিৎসকরা গলাব্যাথায় এই অ্যান্টিবায়োটিকটি বেশি ব্যাবহার করেন।কারন এটি ব্যাকটেরিয়া নিরাময়ে বেশ কার্যকরী।তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টনসিল এর ঔষধ সেবন করতে হবে।তবে বড়দের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টনসিলের ঔষধের ভিন্নতা রয়েছে। 

বড়দের টনসিল এর ঔষধ

বড়দের টনসিলের হলে সাধারনত  “আজিথ্রমাইসিন” নামক টনসিল এর ঔষধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। যা একটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তবে অনান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটি ব্যাবহৃত হতে পারে। 

শিশুদের টনসিল এর ঔষধ

শিশুদের টনসিল এর ঔষধ  হিসেবে অ্যামক্সিসিলিন নামক একটি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় এটি টনসিলিটিসের জন্য প্রচুরভাবে ব্যবহৃত হয়। শিশুর বয়স, অসুস্থতার ধরণ এবং আগে কোনও ঔষধ সেবন করেছে কিনা তা বিবেচনায় রেখে রেখে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় টনসিল এর ঔষধ দিয়ে থাকেন।

টনসিল এর চিকিৎসা

টনসিল এর চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথানাশক টনসিল এর ঔষধ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারনে টনসিল এর সমস্যা হলে  চিকিৎসকরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

মাথায় রাখতে হবে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর ডোজ ঠিকভাবে পূর্ণ করতে হবে। কেননা অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর কোর্স শেষ না করলে পরবর্তীতে আবারো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিডনির সমস্যাও হতে পারে।

পূর্বে টনসিল এর সমস্যায় অস্ত্রোপচার করা নিয়মিত ঘটনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসকরা পরিস্থিতি বুঝে টনসিলের অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। সাধারনত একজন মানুষ যদি বছরে ৭ বার অথবা বছরে ৩ বার করে টানা ৩ বছর টনসিলের সমস্যায় আক্রান্ত হন তাহলে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন৷

কিন্তু টনসিল যেহেতু আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে অস্ত্রোপচার না করাই উত্তম। বর্তমানে টনসিলের অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

তার মধ্যে থেকে সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভালো৷ টনসিল এর সমস্যায় অস্ত্রোপচার শেষ চিকিৎসা। সাধারণত এই সমস্যায় অস্ত্রোপচার করার হার খুবই কম। তাই টনসিল হলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

টনসিল এর  ঘরোয়া চিকিৎসায় করনীয়

প্রাথমিকভাবে টনসিল হলে  প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে।তাছাড়া টনসিল নিরাময়ের জন্য  বেশ কিছু  ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।যেমন:লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করা,,যষ্টিমধু খাওয়া, মধু দিয়ে চা,অতিরিক্ত গরম খাবার পরিহার করা ইত্যাদি।

শেষ কথা

টনসিল আমাদের শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র। তাই আমাদের নিয়মিত শরীরের পুষ্টি বিষয়ে নজর দিতে হবে। এর সাথে আমাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। বাহির থেকে এসে হাত ধোওয়া, নিয়মিত গোসল করা, পরিস্কার কাপড় পড়া ও জীবাণুমুক্ত থাকা।

আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলে টনসিল এর ঔষধ বিষয়ে জেনে উপকৃত হবেন। টনসিল হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাবেন।

টনসিল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর /FAQ

১। টনসিল এর ইংরেজি নাম কি?

উত্তরঃ টনসিল এর ইংরেজি নাম  pharynx( ফ্যারিংক্স)। এটি মুখ ও অনুনাসিক গহ্বরের ঠিক পেছনে ও অন্ননালী এবং শ্বাসনালির উপরে অবস্থিত। 

২। টনসিল কত প্রকার?

উত্তরঃ টনসিল ৪ প্রকার। এগুলো হলো : ফ্যারিঞ্জিয়াল টনসিল, দুটি টিউবাল টনসিল, দুটি প্যালাটাইন টনসিল এবং লিঙ্গুয়াল টনসিল।

৩। টনসিল এর সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ টনসিলাইটিসের সমস্যা দূর করার জন্য সুপ, চা, কফি খেতে হবে। এসব গরম পানীয় দ্রুত টনসিলের ব্যথা কমাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হার্বাল টি হতে পারে আপনার কাছে থাকা অন্যতম অস্ত্র। তুলসী, মধু, এলাচ, আদার সংমিশ্রণে তৈরি ভেষজ চা খেলে শরীর সুস্থ থাকে।

৪। টনসিল স্থায়ীভাবে সারানোর উপায়?

উত্তরঃ টনসিলে বার বার আক্রান্ত হলে বা ফোলা টনসিলের কারনে শ্বাস নিতে বা খেতে কষ্ট হলে আপনার টনসিল বের করে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই অস্ত্রোপচারকে টনসিলেক্টমি বলা হয়। 

আরও পড়ুন-

মানসিক রোগের ঔষধের নাম, খাওয়ার নিয়ম ও চিকিৎসা

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, চিকিৎসা ও ব্যাবহারবিধি 

Leave a Comment