রমজান মাসে ওজন কমানো
অতিরিক্ত ওজন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। একইসঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।শুধুমাত্র ডায়েটের চেয়ে রোজা রেখে ওজন কমানো সবচেয়ে বেশী কার্যকরী| অনেকে মনে করেন, রোজার মাসে আলাদা ডায়েট প্ল্যান দরকার নেই। সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে এমনিতেই ওজন কমে যাবে।
কিন্তু এটি ভুল ধারণা। আমরা সাধারণত ৩ বেলা খাই। রোজার সময়ও ইফতার, রাত আর সেহেরি মিলিয়ে ৩ বেলাই কিন্তু খাচ্ছি। সারাদিন না খেয়ে থেকে আমরা সেহেরি ও ইফতারে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি।
যার ফলে হিসেব করলে অন্য সময়ের চেয়ে খাওয়া আরও বেশি হয়ে যায়। ফলে আমাদের ওজন কমার বদলে বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাকরমজান মাসে ওজন কমানো ৫টিওজন কমানোর সহজ উপায়।
ওজন কমাতে সেহরি খাওয়ার নিয়ম
রমজান মাসে আমরা সাধারণত সারাদিন উপোস করে থাকি এবং ইফতারের সময় ইফতার করে থাকি এবং রোজা সম্পূর্ণ করি তারপর মধ্যরাতে সেহরি খেয়ে থাকি। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আলসেমের কারণে সেহরি খাওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু এটি অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
রমজানের সময় সেহেরী হচ্ছে প্রধান খাবার। সেহরি না খেলে শরীরের মেটাবলিজম রেট কমে যাবে এতে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়ে কম এবং ওজনও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই সেহরি খাওয়া কখনোই বাদ দেওয়া যাবে না।
আপনি সেহেরিতে কম খাবেন কিন্তু নিয়ম মেনে খাবেন। যেমন –
- আধা কাপ ভাত অথবা একটি রুটি
- ১ টুকরো মুরগীর মাংস
- সবজি ১ কাপ
- টক দই ১ কাপ
আরও পড়ুনঃ মহানবী (সা:)কী দিয়ে ইফতার করতেন
ওজন কমাতে ইফতার খাওয়ার নিয়ম
সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে ইফতারের সময় আমরা অনেকেই সারাদিনের খাবার খেয়ে ফেলার চেষ্টা করি। তবে তা কখনোই করা উচিত নয় এতে শরীরে উপকারের চেয়ে সাধারণত অপকার বেশি হয়ে থাকে। শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি দেওয়া হলে শরীর তা জমা করে রাখে এবং যা পরবর্তীতে চর্বি আকারে জমা হয় এবং এতে দ্রুত আমাদের ওজন বেড়ে যায়।
তাই পরিমিত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এবং পরিবারের চেয়ে বেশি খাবার খেয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি কিছু নিয়ম মেনে আপনার প্রতিদিনের ইফতার কি সম্পন্ন করেন। ইফতারের প্রত্যেকের বাসাতেই নানা ধরনের খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে যেমন পিয়াজু, বেগুনি, কাবাব, হালিম, ছোলা মুড়ি, শরবত আরো নানা ধরনের খাবার।
আপনি প্রতিদিন ইফতারে দুটি পিয়াজু বা দুটি বেগুনি অথবা দুটি কাবাব খেতে পারেন এছাড়াও আপনি একটি পিয়াজু একটি বেগুনি এবং একটি কাবাব মিলিয়ে খেতে পারেন তবে চেষ্টা করবেন দুটির বেশি না খাওয়ার।
হালিম সাধারণত নানা ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি হয় যেমন মাংস ডাল আরো নানা ধরনের মসলা তাই চেষ্টা করবেন হালিম অল্প খাওয়ার। কারণ হালিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। সবচেয়ে উত্তম হয় বাসায় নিজেরা হালিম তৈরি করে খেলে। এতে আপনি আপনার ক্যালরি বিবেচনা করে রান্না করতে পারেন। অতিরিক্ত চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন। ইফতারের ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সাথে এক টুকরো শশা অবশ্যই খাবেন।
রাতের খাবার
রমজান মাসে ওজন কমানো জন্য সেহেরী এবং ইফতারের পাশাপাশি রমজান মাসে রাতের খাবার খাওয়াটাও জরুরী। অনেকেই ইফতারের ভরপুর খেয়ে ফেলার পর রাতের খাবার খেতে চায় না। তবে এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে রাতের খাবার থেকে আমরা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পেয়ে থাকি এবং এটি আমাদের শরীরের পুষ্টি মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ইফতারে ভারী খাবার খেয়ে থাকলে আপনি রাতের জন্য হালকা খাবার নির্বাচন করতে পারেন। এমনিতেও আমরা অনেকেই রাতে খুব স্বল্প পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকি। রমজান মাসে রাতের খাবারে সবচেয়ে উপযুক্ত হলো একটি রুটি বাধা থাকা ভাত খাওয়া এবং সাথে দুই টুকরো মাছ অথবা মাংস খাওয়া। এছাড়া আপনি যে কোন শাক সবজি খেতে পারেন এবং সাথে দুই বা তিন চা চামচ টক দই ও খেতে পারেন। এতে আপনার ওজন বাড়বে না বরং আপনার শরীরে ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে।
পরিমান মত পানি পান করা
রমজান মাসে ওজন কমানো জন্য গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে দ্রুত ওজন কমে।এবারের রমজান পালিত হচ্ছে গরমের মধ্যে। আর গরমে দীর্ঘক্ষণ পানি না খাওয়ার ফলে সহজেই পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। তাই সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করার বিকল্প নেই।এতে দেহের চিনির লেভেলেও নিয়ন্ত্রনে থাকে।রমজানে ওজন কমাতে চাইলে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি ও চা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। কারণ এগুলো মূত্রবর্ধক, ফলে শরীর আরও বেশি পানি হারায়।
রোজা রেখে শুয়ে-বসে না থাকা
রোজা রাখলে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাই হালকা ব্যায়াম করুন এই সময়। যেমন: হাঁটা, সিট-আপস, স্কুয়াটস ইত্যাদি করতে পারেন। রোজা রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম করলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি শরীর কাজের মধ্য থাকবে ক্লান্তি ভর করবে না। শরীর রোগ মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুনঃ ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি
চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
রমজান মাসে ওজন কমানো জন্য আপনি যখন চিনিযুক্ত খাবার খান, তখন শরীর সেগুলোকে ভেঙে ফেলে ও দ্রুত বিপাক করে। ফলে আপনি তাড়াতাড়ি ক্ষুধার্ত বোধ করবেন। মিষ্টি খাবারের চাহিদা মেটাতে ফল, শুকনো ফল ও মধুর মতো প্রাকৃতিক শর্করাযুক্ত খাবার বেছে নিন।খাদ্যতালিকায় লবণ সীমিত করলে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। নোনতা খাবার যেমন- টিনজাত খাবার, লবণযুক্ত স্ন্যাকস ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।
এটি দিনের বেলায় আপনার তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দেবে। রমজান মাসে ওযুর নিয়ন্ত্রণে আরো যে সকল জিনিস আপনার মাথায় রাখা প্রয়োজন তা হল যে কোন ফাস্টফুড খেতে ইচ্ছে হলে তা অবশ্যই অল্প পরিমাণে খান। অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
চেষ্টা করুন প্রতিদিনই গ্রিন টি পান করার এবং যে কোন পানীয় পান করার ক্ষেত্রে তিনি যুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ আমরা সকলেই জানি চিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যেহেতু আমরা ইফতারের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি তাই চিনি যুক্ত খাবার কম খাওয়াই ভালো।
পরিশেষ
উপরোক্ত আলোচনায় জানলাম এই রমজান মাসে ওজন কমানোর সহজ উপায় । তাই নিয়ম করে আমাদের সবকিছু পরিমিতভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং আমরা যদি সমস্ত উপদেশ মেনে চলি তবে রমজানেও আমরা ওজন কমাতে পারি কারণ অতিরিক্ত ওজন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং আমাদের ওজনের কারণে অনেক কিছু করা কঠিন করে তোলে, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ তৈরী করে। তাই আমরা রমজান মাসে স্বাস্থ্যকর খাবার খাব এবং সুস্থ থাকব।
আরও পড়ুন-
হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলামিক
নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম