পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি
পাইলস রোগটির সাথে মানুষ আদিমকাল থেকে পরিচিত। পাইলসকে বলা হয় ধাতুগত পীড়া। মলদ্বারের বাইরে বা ভেতরে চারপাশের শিরাগুলো ফুলে ছাগলের বাঁটের মতো কিংবা আঙ্গুরের মত কিংবা মটরদানার মতো ছোট ছোট টিউমার হলে তাকে অর্শ বা হেমোরয়েড বলে।
অশ্ব সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে যথা: অন্তর্বলি ও বহির্বলি। আজকের আর্টিকেলে পাইলস কি, পাইলসের লক্ষণ, পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
পাইলস হবার কারণ
১। দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
২। শরীরের ওজন বৃদ্ধি
৩। মহিলাদের জরায়ুর ওপর গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চাপ পড়লে
৪। লিভার সিরোসিস
৫। মল ত্যাগে যারা অধিক চাপ দেয়
৬। শাকসবজি ও অন্যান্ন খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
৭। বংশগত কারণে পাইলস হতে পারে।
৮। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ভার উত্তোলন ইত্রাদির কারণে পাইলস হতে পারে।
পাইলস এর লক্ষণ
পাইলস হলে অনেক সময় মলদ্বার চুলকায়। জ্বালাপোড়া এবং ব্যাথা করে। মলদ্বারে এবং কোমরে অসহ্য ব্যাথা হয়। মলত্যাগের সময় মলদ্বার থেকে রক্ত বের হয়। অনেক সময় রক্তস্রাব বাধাপ্রাপ্ত হয়।
লক্ষণসমূহ-
১। পাইখানা করার সময় রক্ত যেতে পারে।
২। যন্ত্রণা ও টাটানি
৩। কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি
৪। মাথা ধরা এবং মাথা ভার রোধ
৫। উরুদেশ, নাভির চারপাশে ব্যাথা, বক্ষ ও মলদ্বারে ভার রোধ।
৬। কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা
পাইলসের ওষুধ
রক্তপাত
১। হ্যামেলিস এই ওষুধটি মলদ্বারের প্রচুর ব্যাথা, রক্ত গাঢ়, রক্তপাতের পর প্রচন্ড দুর্ববলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাবহৃত হয়। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি হিসেবে এটি অনেক কার্যকর।
ডোজ: ১-২ ফোঁটা সামন্য জলে মিশিয়ে খেতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ৪ টি ডোজ লাগে।
২। ক্যালকেরিয়া র্ফলুর: কোষ্টখাঠিন্য, পিঠে ব্যাথা, মলদ্বারে চুলকানী সহ রক্তপাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: রক্তক্ষরণের হেমোরয়েডস ৫ ড্রপ ডোজ নিন দিনে ৩ বার।
ব্যাথা ও চুলকানি
১। Apis mel.(tds): অশ্বরোগে মৌমাছির কামড় থেকে দংশনের মত ব্যাথা অনুভাব করলে এই ওষুধ দেওয়া হয়।
২। আর্সেসেনিকাম অ্যালব: হেমোরহেডস আগুনের মতো পোড়া রোগে এই ওষুধ ব্যাবহৃত হয়।
৩। Paeonia: এটি পাইলস এবং মলদ্বারের ফাটলের জন্য দেওয়া হয়। এটি মলদ্বারের জ্বালাপোড়া রোধ করে। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথিতে এই ওষুধ দেয়া হয়।
গর্ভভাবস্থায়
কলিনসোনিয়া পারো: এই ওষুধটি রক্তক্ষরণ পাইলস, বেদনাদায়ক, রক্তক্ষরণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগে ব্যাবহৃত হয়।
বাহ্যিকঃ
মিমোসা পি.: এই ওষুধটি একক ডোজ ব্যাহিক পাইলস নিরাময় করে। এর পাতায় তেল দিয়ে মলদ্বারে বেঁধে রাখলে পাইলস কমে যায়।
ফিসার:
১। সেডম,নাইট্রিক অ্যাসিডাম একর: হেমোরয়েড এবং ফিসার নিরাময়ে ব্যাবহৃত হয়।
২। Aesculus Hip 30: ব্যাথার সীমা অতিক্রম করলে এই ওষুধটি প্রতিকার হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জ্বিহ্বায় ৩ বার দিন।
৩। অ্যালো সোক ৩০: এই ওষুধটি মলদ্বারের ব্যাথার চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জিহ্বায় ৩ বার দিন।
৪। অ্যাসিড নাইট্রিকাম ৩০: এই ওষুধটি মলদ্বারে ফাটলের চিকিৎসা এবং মল ত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যাথার প্রতিষেধক হিসাবে দেওয়া হয়। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এটি দেয়া হয়।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জ্বিহ্বায় ৩ বার দিতে হবে।
৪। Causticum 30 : এ ধরণের পাইলস মলদ্বার থেকে মল যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বড় বা ফোলা পাইলসের চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জিহ্বায় ৩ বার দিন।
৫। লাইকোপোডিয়াম ২০০: এই ওষুধটি পাইলস এবং মলদ্বারের ফিসারের চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জ্বিবহায় ৩ বার দিন।
৬। Aesculus pentarkan drops : এই ওষুধটি ভেরিকোজ শিরা, মলদ্বারে জ্বালাপোড়া ব্যাথা, পাইলসের রক্তপাত এবং কোষ্টকাঠিন্য চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২০ ফোঁটা করে জলের সাথে দিনে ৩ বার দিন।
৭। FP-TABS: এই ওষুধটি কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলসের ফাটল, ফিসার, মলদ্বার ফুলে যাওয়া ইত্যাদি রোগে ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২ টি ট্যাবলেট দিনে ৩ বার করে ব্যাবহার করতে হবে।
৮। NuX vomica: এই ওষুধটি অতিরিক্ত খাওয়া এবং মদ্যপান, মশলাদার সম্বৃদ্ধ খাবার ফলে হেমোরাইড নিরাময়ে ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: প্রতি রাতে জিহ্বায় ২ ফোঁটা।
৯। সালফার ২০০: এই ওষুধটি পাইলসের জন্য খুব কার্যকর। এটি পাইলসের রক্তপাত বন্ধ করে এবং ব্যাথা , চুলকানী, জ্বাালাপোড়া, মলদ্বার লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপশম করে। এটি পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কার্যকর।
ডোজ: প্রতিদিন সকালে জ্বিহবায় ২ ফোঁটা করে।
১০। Calemdula officinalis Q : এই ওষুধটি এন্টিসেপটিক হিসাবে ক্ষত নিরাময়ে ব্যাবহৃত হয়। এটি ব্যাথা উপশমকারী এবং হেমোরয়েডের রক্তপাত বন্দ করতে সাহায্য করে।
ডোজ: এই ওষুধটি গরম জলযুক্ত টবে মেশানো উচিত এবং রোগীকে ১০-১৫ মিনিট বসতে হয়।
১১। পাইলস ক্রিম: এই ওষুধিটি পাইলসের চিকিৎসার জন্য ব্যাবহৃত হয়। এই ওষুধটি হেমোরয়েডের ফোলাভাব কমায় এবং রক্তপাত কমায়।
ডোজ: দিনে ২ বার করে ক্রিমটি প্রয়োগ করতে হবে।
আনুষঙ্গিক চিকিৎসা
তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হবে, ১। ভ্রমণ ও আহার সমন্ধে নিয়ম পালন ২। নিয়মিত পাইখানা পরিষ্কার করা ৩। অর্শের স্থানটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখা।
এলোপ্যাথিক চিকিৎসা
অশ্ব রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা হয় না। এ রোগে একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। কিন্তু তাতেও পরিপূর্ণ সুস্থ হয় না রোগী। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো প্রথম থেকেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা। যে পুরাতন রোগ এই বর্তমান রোগ সৃষ্টি করেছে সেই ধাতুগত দোষ দূরিকরণে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়াতে হবে। শুধু এলোপ্যাথি ওষুধ বা অস্ত্রোপচার করলে কোন ফল আসবেনা।
পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি -হোমিও প্রতিবিধান
হোমিও চিকিৎসায় বলা হয়ে থাকে রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। ডাক্তারেরা ইনজেকশন অথবা মলম বা ক্রিমের মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকে। এগুলো সাময়িক নিরাময় হলেও পরে কঠিন আকার ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকরা পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথিতে যেসকল ওষুধ দিয়ে থাকে তারমধ্যে হলো
আর্সেনিক এল, এমন কার্ব, এন্টিম ক্রোড, এলুমিনা, এলো, সালফার, নার্কস ভোম, সোনিয়া, কলিন, ইস্কিউর্লাস হিপ, নাইট্রেকাম ইত্যাদিসহ আরো অনেক ওষুধ লক্ষণ অনুযায়ী দেওয়া হয়। তবে এসব ওষুধ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে খেলে রোগ জটিল আকার ধারণ করবে।
পাইলস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
একজন মানুষ জন্মায় বিভিন্ন রোগের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে। শরীরে যতদিন রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেশি থাকে ততদিন এগুলো শরীরে নিস্তেজ অবস্থায় থাকে। কিন্তু পরিবেশগত কারণে বা অভ্যাসগত কারণে যখন এ কোষগুলো দুর্বল হয়ে যায় তখন বিভিন্ন রোগের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালসগুলো জটিল উপসর্গ বা লক্ষণ সৃষ্টি করে আমাদের শরীরে।
এই লক্ষণ বা উপসর্গ গুলোকে বিভিন্ন রোগ নামে আমাদের কাছে পরিচিত। অর্শ্ব বা পাইলস হলো একটি জটিল রোগ। এই রোগটিকে সারানোর জন্য ধাপে ধাপে ওষুধ দিয়ে ভেতরের রোগটিকে আগে নিস্তেজ করা হয় এবং পাইলস নামক রোগগুলো বিদূরিত করে রোগী সুস্থ হয়ে উঠে। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথিতে নিচের ওষুধগুলো দেয়া হয়-
১। নাক্স ভমঃ নাক্স ভম কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। অস্বাস্থকর খাদ্যভাস বা ক্রটিযুক্ত জীবনযাত্রার কারণে কোষ্টকাটিন্য বা পাইলসের একটি অন্যতম কার্যকারী ওষুধ।
২। ব্রায়োনিয়াঃ এই ওষুধটি খাওয়ার পরমর্শশ দেওয়া হয় যদি মল খুব শক্ত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দেখা দেয়। মল যদি কালো রঙ এবং শক্ত হয় তবে এই ওষুধটি ব্যাবহৃত হয়।
৩। লাইকোপোডিয়ামঃ এই ওষুধটি অতিরিক্ত পেট ফাঁপা সমস্যায় ব্যাবহৃত হয়। পেটের কাঁপুনি দিয়ে শব্দে পেট ফুঁলে উঠা এবং গুড়গুড় করলে এই ওষুধটি ব্যাবহৃত হয।
৪। অ্যালো সোক 30ঃ এই ওষুধটি পাইলস এবং মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যথার চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২ ফোঁটা করে জ্বিহ্বায় ৩ বার দিতে হবে।
৫। অ্যাসিড নাইট্রিকাম ৩০ঃ এই ওষুধটি পাইলস এবং মলদ্বার ফাটলের চিকিৎসায় ব্যাবহৃত হয়।
ডোজ: ২ ফোাঁটা করে সরাসরি জ্বিহ্বায় ৩ বার দিন।
৬। সালফারঃ এই ওষুধটি মলদ্বরে জ্বলন, মলদ্বারে চুলকানী ইত্যাদি রোগে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।
৭। এস্কুলরসঃ সেলাইয়ের মতো ব্যাথা, মলদ্বারে জ্বলন, চুলকানী, কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা ইত্যাদি সমস্যার কারণে এই ওষুদটি ব্যাবহৃত হয়।
পাইলস সারানোর স্থায়ী উপায়
পাইলস সারানোর জন্য অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যে কারণে পাইলস তৈরি হয়ে থাকে রোগীর DNA তে পাইলস সৃষ্টিকারী রোগটিকে আগে নিরাময় করতে হয়। তখন মলদ্বারের মাংসপিন্ড ফুলে যাওয়া, পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া এবং মলদ্বারের ব্যাথা এবং জ্বালাপোড়ার মতো উপসর্গগুলো স্থাযীভাবে দূর হয়ে যায়।
পাইলস রোগীদের করণীয়
১। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় এই বিষয়ে সর্তক থাকা।
২। বেশি পরিমাণ শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
৩। অধিক পরিশ্রম করা।
৪। প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমান
৫। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
৬। টয়লেট অধিক সময় বসে না থাকা।
৭। সহজে হজম হয় এবং খাবার গ্রহণ করা।
৮। মল ত্যাগে বেশি চাপ দিবেন না।
৯। নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া
১০। হজম হয় না এধরণের খাদ্য না খাওয়া।
শেষকথা
পাইলস রোগ এলোপ্যাথিক ওষুধ বা অপারেশনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সারানো যায় না। তবে পেটের সমস্যার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতে হবে পাইলস স্থায়ীভাবে সারানোর জন্য। পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এই রোগের জেনেটিক চিকিৎসা করার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব হয়।
পাইলস সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ
১। পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়?
উত্তরঃ সঠিক সার্জারির প্রয়োজন হলে আপনার গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট, কোলোরেক্টাল সার্জন বা জেনারেল সার্জনের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২। পাইলস অপারেশন করলে সুস্থ হতে কতদিন লাগে?
উত্তরঃ হেমোরয়েডেক্টমি থেকে পুনরুদ্ধার করতে চার থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগতে পারে, যদিও এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজে ফিরে যেতে পারবেন।
৩। পাইলস এর জন্য কোন ক্রিম ভালো?
উত্তরঃ পাইলস এবং নিচের চুলকানির জন্য হাইড্রোকর্টিসোন ব্র্যান্ডের নাম: অ্যানুসোল, অ্যানুজেসিক, জার্মালয়েডস, পেরিনাল, প্রোক্টোসেডিল, ইউনিরয়েড, জাইলোপ্রোক্ট।