মেথির উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার

মেথির উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মেথির সাথে পরিচিত। মেথি নানা সমস্যা সমাধান করে থাকে। মেথির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, বি৬,

ফোলিক এসিড, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন ইত্যাদি উপাদান। আর যে সকল খনিজ উপাদান রয়েছে তা হলো আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, জিঙ্ক ও সেলিনিয়াম ইত্যাদি।

মেথিকে খাবার, মসলা, পথ্য সবগুলোই বলা যায়। মেথি খেতে তিতা লাগে কিন্তু মেথির উপকারিতা অনেক। মেথি রক্তে চিনির মাত্রা কমায় এবং তারণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

নিয়মিত মেথি খেলে বুড়িয়ে যাওয়া ধীর গতিতে হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি খেলে শরীরে রোগ জীবাণু ,কৃমি মরে এবং রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমায়।

ডায়াবেটিস রোগী ,হৃদরোগের রোগী সহ সকলের জন্য মেথি খুবই উপকারী। আজকের আর্টিকেলে আমরা মেথির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

আরও পড়ুনঃ কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা, খাদ্যাভ্যাস ও সতর্কতা

মেথির উপকারিতা কি কি

মেথির উপকারিতা

১। ওজন কমে

মেথির মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক গুণাবলি। মেথির উপকারিতা হলো এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। মেথি চিবিয়ে দিনে ২-৩ বার খেলে পেট ভরা থাকে মনে হয়। 

২। ঠান্ডা লাগা সমস্যা দূর করে

নিয়মিত মেথি খেলে সর্দি কাশি দূর হয়। এক চামচ মেথির সাথে লেবু ও মধু মিমিয়ে খেলে তা জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

মেথির মধ্যে থাকা মিউকিল্যাগ উপাদান গলা ব্যাথা দূর করে থাকে। মেথি সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যাখা সারাতে সাহায্য করে। 

৩। চুল পড়া রোধ করে

মেথির উপকারিতা হলো মেথি চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। নারিকেলের তেলের সাথে মেথি মিশিযে চুলে দিলে চুল পড়া কমে। 

৪। হজমে সমস্যা দূর করে

নিয়মিত মেথি খেলে পেট জ্বালা ও হজমে সমস্যা দূর হয়। মেথির মধ্যে রয়েছে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্রিডেন্ট যা শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে থাকে। মেথি হজমের সমস্যা দূর করে এবং আলসারের সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

৫। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করে 

মেথি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

নিয়মিত মেথি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। মেথি খেলে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।  

৭। রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে

মেথির মধ্যে আয়রন রয়েছে যা অ্যানিমিয়া রোগ এবং রক্তস্বল্পতা দূর কর সাহায্য করে থাকে। 

৮। মেথি মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি করে

মেথি মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে সাহায্য করে। মেথি খুব উপকারী সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য। 

৯। ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে

মেথি স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। মেনোপজ হলে নারীর শরীরে যে পরিবর্তন হয় সেটির জন্য  মেথি ভালো একটি পথ্য। 

১১। টেস্টস্টোরন হরমোন বৃদ্ধি করে

মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টস্টোরন হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। 

১২। কোষ্টকাঠিন্য

আমরা অনেকেই কোষ্টকাঠিন্য সমস্যায় ভুগে থাকি। মেথি খুব ভালো কাজ করে কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে। মেথির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার জাতীয় উপাদান রয়েছে যা হজম করতে সাহায্য করে।

১৩। কালো দাগ

নিয়মিত মেথি খেলে শরীরের বিভিন্ন কালো দাগ দূর হয়। মেথি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। 

১৪। মেথি কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি খেলে তা কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এতে শিরা এবং ধবনীর চর্বি সমস্যা দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। হার্ট ভালো রাখে।

কীবাবে মেথি খাবেন

১। সকালবেলা মেথি ভেজানো পানি খাওয়া যেতে পারে। এজন্য মেথির বীজ এক থেকে দুই চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। মেথির উপকারিতা পাওয়া যায় পরদিন এই পানি পান করতে হবে। 

২। মেথি খাওয়ার পরিবর্তে মেথি চা খেতে পারেন। এক চা চামচ মেথির বীজ এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এরপর এরসাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। 

৩। মেথি ভেজে তা সালাদের সঙ্গে খেতে পারলে খুব ভালো কাজ করে। 

শেষকথা

মেথির মধ্যে রয়েছে নানা রকম ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। তাই সকালে খালি পেটে নিয়মিত মেথি খাওয়ার অভ্যাস করা স্বাস্থের জন্য খুব উপকারী। মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায় অথবা মেথি বেটে গুড়া করে খাওয়া যেতে পারে।   

মেথি সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর / FAQ  

১। মেথি ভিজিয়ে জল খেলে কি উপকার হয়?

উত্তরঃ মেথি রান্নার মশলা হিসেবে তরকারি, আচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। মেথি ভেজানো জলে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের মেথি ভেজানো জল খেলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

২। মেথি খেলে কি কি রোগ ভাল হয়?

উত্তরঃ মেথিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরির মতো উপাদান। যা হজম শক্তি বাড়ায় ও পেটের নানা সমস্যা দূর করে। ভেষজ ওষুধ হিসেবে পিরিয়ড ক্র্যাম্প, স্ট্রোক, বর্ধিত প্রোস্টেট এবং মুটিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন –

খাঁটি মধু চেনার উপায়, কৌশল ও সঠিক পদ্ধতিসমুহ

মধু খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও খাওয়ার নিয়ম

Leave a Comment