নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ আমরা জানব নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম গুলো কি? বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের জন্য যে পরিচয়পত্র ইস্যু করে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড বা সংক্ষেপে NID বলে।

এটি বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি সরকারী বা বেসরকারী যেকোন দাপ্তরিক কাজের জন্য প্রয়োজন। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়।

আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন দেশের নাগরিক। আমাদের নাগরিকত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র। অনেকেই মনে করেন জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভোটার আইডি কার্ড আলাদা । কিন্তু এই দুটি একই জিনিস। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী 18 বছর বয়স হলে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় । কিন্তু অনেকেই অবগত নন কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র পত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। চলুন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম জেনে নেয়।

ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে প্রতি তিন বছর পর পর নতুন ভোটার নিবন্ধন করা হয়। সেই সময় নির্বাচন কমিশনের লোকজন বাড়ী বাড়ী গিয়ে নতুন ভোটারের তালিকা করে থাকেন। যারা বাদ পড়েন তারা অনলাইনে আবেদন করে নতুন ভোটার হতে পারে। নির্বাচন কমিশন প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ভোটারের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ভোটার নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আঠার বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভোটার নিবন্ধন করে ফেলা জরুরী।

সাধারণত দুই ভাবেই ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য আবেদন করা যায়।

  • অফলাইন বা সশরীরে আবেদন
  • অনলাইনে আবেদন

অফলাইন বা সশরীরে আবেদন

বাংলাদেশ এখনো বেশিরভাগ মানুষ নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে সরাসরি ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে থাকেন । প্রতি বছর নতুন যেসব নাগরিক প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকেন তাদের ভোটার আইডি কার্ড করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর। নির্বাচন কমিশন এই কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন মোট 6 টি ধাপে ।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা পৌরসভা উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন এই প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত। নির্বাচন কমিশন এই কাজটি সম্পন্ন করতে একটি নির্দিষ্ট তারিখ বা ডেট দিয়ে থাকে । ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সশরীরে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড করার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়।

প্রাথমিক তথ্যাবলী প্রদান

নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে সশরীরে ভোটার আইডি কার্ড করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয় । সেখানে নাগরিকের নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে ফরমটি নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হয় । নাগরিকের নাম ঠিকানা ব্যক্তিগত সকল ধরনের তথ্য এই প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত । প্রাথমিকভাবে আবেদন করার পর জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করার আরো কতগুলো ধাপ রয়েছে যা আমরা নিচে আলোচনা করব।

আরও জানুনঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

অনলাইনে আবেদন

বর্তমানে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও করা যাবে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল সেবার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি আলাদা ওয়েবসাইট তৈরি করেছে ।

আপনি যদি নতুন বা বহিষ্কৃত ভোটার হন তবে আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারেন। আপনি যদি নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে আগে নিবন্ধন করে থাকেন তবে এটি করার দরকার নেই। নীচে বিস্তারিত ধাপে ধাপে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো।

অনলাইন আবেদনের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলা

আপনাকে অনলাইন আবেদনের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। নতুন রেজিস্ট্রেশন ট্যাবে ক্লিক করে নিচে স্ক্রোল করলে, আপনি I do নামে একটি ব্যানার দেখতে পাবেন এবং রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পূরণ করতে চান। ডান বাটনে ক্লিক করুন।

এই পৃষ্ঠায় মোট তিনটি বিভাগ আছে। যেহেতু আপনি একটি নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন করবেন, ‘

  • নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন’ বিভাগে আবেদন বোতামে ক্লিক করুন।
  • ফর্মে আপনার পুরো নাম (ইংরেজিতে) এবং আপনার জন্ম তারিখ সঠিকভাবে লিখুন। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে অবশ্যই জন্মনিবন্ধন অনুসারে জন্ম তারিখ লিখতে হবে।
  • তারপর ক্যাপচা কোড লিখে Run এ ক্লিক করুন।
  • আপনাকে অবশ্যই একটি মোবাইল নম্বর লিখতে হবে। এমন একটি মোবাইল নম্বর লিখুন যেটি সর্বদা সক্রিয় থাকবে এবং আপনার কাছে থাকবে। কোড পাঠান বোতামে ক্লিক করার পরে, নম্বরটি একটি কোড পাবে যা সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
  • মোবাইল নম্বর যাচাই করার পরে আপনাকে একটি ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড ঠিক করতে হবে। ব্যবহারকারীর নাম অনন্য তথ্য হতে হবে। ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ড ঠিক করার পরেই আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হবে।

অ্যাকাউন্টে লগইন

আপনি অ্যাকাউন্ট খোলার পরে সরাসরি লগইন করতে পারেন। এরপরে, লাইন আপ করতে, সাইটের লগইন ট্যাবে ক্লিক করুন এবং লগইন বোতামে ক্লিক করুন। বাটনে ক্লিক করার পর আপনি আগের মত একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। কিন্তু এখন পৃষ্ঠার ডান পাশে তিনটি বক্সে যথাক্রমে আপনার ব্যবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা কোড লিখুন এবং লগইন বোতামে ক্লিক করুন। প্রয়োজনে সাইটের ভাষা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সেট করা যেতে পারে ।

এই পেজটির প্রোফাইল অংশে ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইলের যাবতীয় তথ্য পূরণ করতে বলবে । এবং আপনি আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত সকল তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করে । ডানদিকে এডিট বাটনে ক্লিক করলেই আপনার প্রোফাইল আবেদন হিসেবে সম্পাদনা পর্যায়ে চলে যাবে । আবেদন করার পর আবেদনটির একটি প্রিন্ট কপি তৈরি করুন এবং সেই প্রিন্ট কপি ও যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিয়ে আসেন।

জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • জন্ম নিবন্ধনঃ এটি সমগ্র প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি বলা হয়। মূলত জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুযায়ী আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হবে।
  • এসএসসি সার্টিফিকেট: আবেদনকারী শিক্ষিত হলে বয়স প্রমাণের জন্য।
  • পিতা/স্বামী ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টিআইএন (করদাতা সনাক্তকরণ নম্বর), প্রমাণের জন্য।
  • নাগরিকত্বের সনদ।

সাধারন এই সব কাগজ গুলার বাহিরে তেমন কিছুই প্রয়োজন হইনা। অনলাইন বা অফলাইন যেভাবেই আবেদন করেন আই কাজগ গুলোই প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ সিম রেজিস্ট্রেশন চেক করার নিয়ম

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য ছবি তোলা

অফলাইন এবং অনলাইন উভয় ধরনের আবেদনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক তথ্য প্রদানের পর কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। অঞ্চলভেদে অপেক্ষার সময় ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এই সময়ে আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হবে। যাচাইকরণ সম্পন্ন হলে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি তোলার তারিখ SMS এর মাধ্যমে আপনার মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে। তাই অবশ্যই নম্বরটি খোলা রাখুন। ছবি তোলার তারিখ পেলে নির্ধারিত তারিখে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অফিসে যান।

ছবি তোলা নতুন ভোটার আইডি কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা আছে। তিন দিক থেকে ছবি তোলা হবে। সামনের দিক থেকে এবং মুখের বাম ও ডান দিক থেকে। এই ছবিটি সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। তাই ফটোগ্রাফির দিনটি হতে হবে পরিপাটি।

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য স্বাক্ষর করা

স্বাক্ষর করার সময় বেশিরভাগ লোকই অপ্রস্তুত হন। কারণ স্বাক্ষর নেওয়ার সময় আপনাকে আপনার নাম লিখতে বলা হয়েছে। “স্বাক্ষর” শব্দটি সরাসরি উচ্চারিত না হওয়ার কারণে অনেকেই তা অবিলম্বে বুঝতে পারেন না। কিন্তু এটা স্বাক্ষর নেওয়া। এই সেলফ টেকিং ইলেকট্রনিক প্যাডে ইলেকট্রনিক পেন দিয়ে করা হয়। আপনাকে বসার জন্য একটি টুল দেওয়া হতে পারে বা নাও হতে পারে।

সুতরাং আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে একটি ভাল স্বাক্ষর দেখতে চান তবে আগে থেকে দাঁড়িয়ে এবং বসে স্বাক্ষর করার অভ্যাস করুন। আপনি চাইলে শুধু আপনার নাম লিখে স্বাক্ষর করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন যে ইলেকট্রনিক প্যাডে আপনার নাম লিখতে বলা হবে। সেই সময় আপনার পছন্দের স্বাক্ষর করুন। আপনার নাম লিখতে বলার কারণে স্বাভাবিকভাবে আপনার নাম লিখলে পরে আর স্বাক্ষর করার সুযোগ পাবেন না।

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য চোখের স্ক্যান

আই স্ক্যানও জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অংশ। ছবি তোলা এবং স্বাক্ষর নেওয়ার পরে, আপনার চোখ একটি মেশিন দিয়ে ক্যান করা হবে। এ সময় চোখ মেলে রাখুন। স্ক্যান সম্পূর্ণ হলে আপনার চোখের ডেটা সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। চখ আইরিশ মানুষের সবচেয়ে বড় সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি। তাই এই ধাপটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চক্ষু স্ক্যান সহ তিনটি ধাপ সম্পন্ন করার পর, জাতীয় পরিচয়পত্রের সমস্ত তথ্য সম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। তারপর নির্বাচন অফিস থেকে আপনাকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে। এই শহর ছাড়া জাতীয় পরিচয়ের পরবর্তী ডেলিভারি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এই স্লিপ একটি নিরাপদ জায়গায় রাখুন এবং একাধিক ফটোকপি রাখুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ

আপনি যদি ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সহজেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে পরিচয়পত্রের সফট কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। এর পরে, আপনি এটি মুদ্রণ করতে পারেন এবং এটি প্রায় সমস্ত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারেন, ঠিক সিট পেপারের মতো। যাইহোক, এই ধরনের প্রিন্ট কপির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করার সময় আপনার দেওয়া মোবাইল নম্বরে কোনো মেসেজ আসে কি না তা নিশ্চিত করুন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন অফিসে যেতে পারেন। জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিন এবং সংগ্রহ করুন।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে শেষকথা

জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিটা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রতিটা মানুষের এই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা জরুরী। জাতীয় পরিচয় পত্রে আবেদন করার সময় খুব সাবধানে কাজ করেত হবে যেন ভুল না হয়। কারন আমাদের দেশে জাতীয় পরিচয় এর ভুল সংশোধন করা একটু জটিল বিষয়। তার পরেও ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করা যায় কিন্তু অনেক কঠিন।

মনে রাখবেন জাতীয় পরিচয় পত্র একজন নাগরিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির সময় সাবধানে উপরোক্ত নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম তথ্য দিন এবং সযত্নে রাখুন।

আরও পড়ুন-

জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই

পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

 

Leave a Comment