মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়?

মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়

নারীরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় নারীরা তাদের সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যে রেখে দেয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সাদাস্রাব হওয়া। যে সব নারীরা সাদা স্রাবের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যই বলছি এই সমস্যাটি নিজেদের মধ্যে গোপন রাখবেন না।

গোপন এই সমস্যাটি আপনার জন্য ডেকে আনতে অনেক বড় ভয়াবহ বিপদ। সাদা স্রাব প্রতিটি মেয়ের জীবনে একটি কমন ঘটনা। সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া হওয়া মেয়েদের শরীরের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অন্য কোনো রোগের আশঙ্কা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই নারীদের যোনি থেকে এটি নির্গত হয়ে থাকে।

যা এক ধরনের স্বচ্ছ,  পিচ্ছিল তরল জাতীয় পদার্থ। এজন্য আমাদেরকে অবশ্যই  জানতে হবে, মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়? সাদা স্রাব বন্ধ করার কার্যকারী উপায়। সাদা স্রাব বন্ধ করার কার্যকারী উপায় থাকলেও এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যাদের অতিরিক্ত মাত্রায় সাদা স্রাব এর সমস্যা হয় শুধু মাত্র তাদের ক্ষেত্রেই সাদা স্রাব কমানোর জন্য বিভিন্ন কার্যকরী উপায় অবলম্বন করা যায়। 

আরও পড়ুনঃ থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়

মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়

সাদা স্রাব

মেয়েদের মাসিকের সমস্যা বা মাসিকের সাথে সাদা স্রাব হওয়ার অনেক কারন থাকতে পারে নিচে কিছু কারন উল্লেখ করা হলঃ

মানসিক অশান্তি কারনেঃ শরীরের সঙ্গে মনের একটি ভালো যোগাযোগ রয়েছে। মনের ভালো মন্দের প্রভাব অবশ্যই শরীরের ওপর পরে।তাই মানসিক চাপ হতে পারে সাদা স্রাবের অন্যতম কারণ।

পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবেঃ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টির অভাব হতে পারে সাদা স্রাবের সমস্যা।তাই বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, সবুজ সবজি ও ফলমূল খেতে হবে।

কৃমির সংক্রমণের জন্যেঃ নারীদের শরীরে পুষ্টিহীনতার জন্য কৃমির কৃমির সংক্রমণ হতে পারে।আর কৃমির সংক্রমণ হলে আপনি যা-ই খান, তার একটি বড় অংশ কৃমির পেটে চলে যাবে। কৃমির সমস্যা থেকে হতে পারে সাদাস্রাব।

অপরিচ্ছন্নতা কাপড় পরিধান করলেঃ অপরিচ্ছন্নতা কাপড় সঠিকভাবে না শুকিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রেখে ব্যবহার করা মোটেই ঠিক নয়।এত করে হতে পারে সাদাস্রাবের সমস্যা।পরনের কাপড় রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা ভালো।

জন্ম বিরতিকরণ পিল গ্রহনের ফলে সাদা স্রাব

মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়, জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়ার কারণেও সাদা স্রাবের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্ক্ষা থাকে।আর যদি পিল খেতেই হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি যে মেয়েদের জীবনে সাদা স্রাব একটি সাধারণ ঘটনা। মেয়েদের যোনিপথ বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে নিয়মিত স্রাব যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যেই পরে। বেশিরভাগ মেয়ের ক্ষেত্রেই সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার ১ থেকে ২ বছর আগেই সাদা স্রাব যাওয়া শুরু হয়। এটি মূলত নির্দিষ্ট বয়সের পর মেনোপজ বা মাসিক চিরতরে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে।

তবে সাদা স্রাবের স্বাভাবিক পরিমাণ, রঙ ও গন্ধে যদি কোনোরকম পরিবর্তন আসে তাহলে সেটি আশঙ্কার কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে নারীদের কিছুটা সংকোচ থাকার কারণে অনেকেই সাদা স্রাবের সমস্যায় ভুগলেও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। আবার অনেকে সাদা স্রাব সম্পর্কে সঠিক ধারনার অভাবে  সুস্থ থাকার পরেও সাদা স্রাব নিয়ে অযথাই দুশ্চিন্তা করে থাকেন।   

মূলত সাদা স্রাব শরীরের কোনোরকম ক্ষতি করে না। বরং নারীদেহে সাদা স্রাব তৈরি হওয়ার ফলে শরীরের ২ টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। 

  • সবসময় মাসিকের রাস্তা আর্দ্র ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যাতে করে মাসিকের রাস্তার পিএইচ লেভেল ঠিক থাকে।
  • এবং মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

স্রাবের পরিমাণ সম্পর্কে অনেকে সঠিক তথ্য না জানায় শঙ্কা করে থাকেন যে তাদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাচ্ছে। আবার অনেকে মনে করে থাকেন যে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কারণেই বোধহয় স্বাস্থ্য ভেঙে পড়া ও দুর্বল অনুভব করার মতো সমস্যা সৃষ্টি  হচ্ছে। আর এমন ধারণা থেকেই অনেকে সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চায়। আসলে এসব ধারণা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক 

সাদা স্রাবের পরিমাণ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতেই পারে। অন্য জনের জন্য যেটি অতিরিক্ত সাদা স্রাব সেটি আপনার জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। আবার দেখা যায়, একই ব্যক্তির মাসের একেক সময়ে একেক পরিমাণ সাদা স্রাব যেতে পারে। শরীরে হরমোনের পরিমাণে পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

সাধারণত দিনে ২-৫ মিলিলিটার সাদা স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। এই ২ টি পরিমাণের মধ্যে অনেক পার্থক্য মনে হলেও আসলে ২ টি পরিমাণই স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো এর চেয়ে কিছুটা কম বা বেশি হতেই পারে। এতে ভয়ের কিছুই নেই।

আরও পড়ুনঃ মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

সাদা স্রাবের ধরন

মাসিক চক্রের একেক সময়ে সাদা স্রাবের ধরন একেক রকম হতে পারে। তবে সাদা স্রাব সাধারণত পাতলা থাকে, মাঝে মাঝে ঘন ও আঠালো হতে পারে। আর স্বাভাবিক স্রাব মূলত ২ টি রঙের হতে পারে, স্বচ্ছ ও বর্ণহীন বা দুধের মতো সাদা। আবার স্বচ্ছ ও বর্ণহীন স্রাব বাতাসের সংস্পর্শে এসে সাদা বা হলুদ রঙ ধারণ করতে পারে। এছাড়াও স্বাভাবিক স্রাবে তেমন কোনো দুর্গন্ধ থাকে না। মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্রাবের ঘনত্ব ডিমের সাদা অংশের মতোও হতে পারে। 

অতিরিক্ত সাদা স্রাব

নিজের জন্য সাধারণত কতটুকু স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক, এই সম্পর্কে প্রায় সবার এই কম বেশি একটা ধারনা থাকে। আপনার জন্য যতটুকু স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক তার থেকে অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাওয়া শুরু করলেই এটা অতিরিক্ত সাদা স্রাবের লক্ষন।

এছাড়াও ৫ টি ক্ষেত্রে মেয়েদের স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত সাদা স্রাব যেতে পারে। যেমনঃ মাসিকের ঠিক আগের সময়ে, ২ মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে, গর্ভবতী অবস্থায়, যৌন উত্তেজনার সময়ে, এবং জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন করলে। কিন্তু হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়াই সাদা স্রাব এর মাত্রা অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে গেলে তা মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশনের লক্ষণও হতে পারে।

অস্বাভাবিক স্রাব

আপনি কখন বুঝবেন যে আপনার অস্বাভাবিক স্রাব যাচ্ছে? যখন দেখবেন আপনার  স্রাবের রঙ সাদা রঙের চাকা চাকা, ধূসর সাদা, সবুজ, হলুদ বা বাদামী এবং মরিচা রঙের হয়ে থাকে।

সাদা স্রাবের লক্ষণ

মাসের বেশিরভাগ সময় স্বাভাবিক ভাবেই সাদা স্রাব হয়ে থাকে। কিন্তু সাদা স্রাব যাওয়ার পাশাপাশি যদি কোন ব্যতিক্রমী লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে বুঝতে হবে যে এটি শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তেমন এই কিছু সাদা স্রাবের লক্ষণ নিম্নরুপঃ

  • দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব নিঃসরণ হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত সাদা স্রাব এর কারণে হাত পায়ে ব্যথা কিংবা কোমর ব্যথা শুরু হওয়া।
  • তলপেটে ভারী অনুভব হওয়া।
  • শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যাওয়া।
  • হজমের সমস্যা দেখা দেওয়া।
  • যোনিতে জ্বালা পোড়া করা এবং যোনিপথের আশেপাশে অতিরিক্ত পরিমানে চুলকানি হওয়া।
  • চোখের নিচে কালো দাগ বেড়ে যাওয়া এবং চোখ গর্তের ভেতরে ঢুকে যাওয়া। 
  • সহবাস করার সময়ে যোনিতে জ্বালা পোড়া করা। 

মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার কার্যকারী উপায়

মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়, সাদা স্রাবের সমস্যার সমাধানে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী উপায় হল এর প্রতিকার করা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন কিছু কাজ থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। সাদা স্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সবসময় কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ। এমন এই কিছু টিপস নিম্নরুপঃ

  • সব সময় যৌনাঙ্গ পরিষ্কার ও শুকনো রাখা। 
  • যোনিপথে কখনোই সুগন্ধি যুক্ত সাবান, শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যাবেনা। 
  • এমনকি যোনিপথে সুগন্ধি ওয়েট টিস্যু অথবা পারফিউম কিছুই ব্যবহার করা যাবেনা। 
  • যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং সব সময় শুকনো কাপড় চোপড় পরিধান করতে হবে।
  • আন্ডারওয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সুতি কাপড় বাছাই করতে হবে।
  • অতিরিক্ত টাইট/আঁটসাঁট আন্ডারওয়ার বা পায়জামা পরা যাবে না। 
  • পিরিয়ডের সময় কিছুতেই অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা যাবে না এবং দীর্ঘ সময় ধরে একই কাপড় অথবা প্যাড ব্যবহার করা যাবে না। প্রতি ৬-৮ ঘণ্টা পর পর প্যাড পরিবর্তন করতে হবে।
  • সহবাসের পর পানি দিয়ে যোনি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

সাদা স্রাব বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

মাসিকের সাথে সাদা স্রাব আসলে তেমন ভয়ের কিছু নাই এইটা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমাধান করা সম্ভব। এই সমস্যায় যদি পড়েন তাহলে নিচের উল্লেখিত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করুন তাহলে সহজেয় সমধান করেত পারবেন।

ভাতের মাড়ঃ সাদা স্রাবের সমস্যার জন্য ভাতের মাড় খুব এই কার্যকারী ও সহজ উপায়। সাদা স্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি চাইলেই নিয়মিত ভাবে ভাতের মাড় পান করতে পারেন।

পেয়ারা পাতাঃ  পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করা পানি খেলে সাদা স্রাবের সমস্যা দূর হয় সেই সাথে যোনির চুলকানি ও কমে যাবে। তাই সাদা স্রাবের সমস্যা থাকলে নিয়মিত পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে ওই পানি ছেঁকে খেয়ে নিলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যাবে।

তুলসীঃ তুলসী পাতা সিদ্ধ করে, ছেঁকে নেওয়া তুলসী পাতার রসের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেও সাদা স্রাবের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। 

আমলকিঃ কাঁচা আমলকি গুড়া করে অথবা মোরব্বা বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে সেইসাথে সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করতে আমলকি অত্যন্ত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।

ঢেঁড়সঃ সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি চাইলে ঢেঁড়স সিদ্ধ চিবিয়ে খেতে পারেন। অনেকে আবার সিদ্ধ ঢেঁড়সের সাথে দই মিশিয়ে খেয়ে থাকে যা অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার জন্য কার্যকারী উপায়।

মেথিঃ সিদ্ধ করা মেথি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি নিয়মিত পান করলেও সাদা স্রাবের সমস্যার জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।

ধনিয়াঃ কিছু ধনিয়া সারা রাত ধরে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, এবং পরদিন সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এতে করে সাদা স্রাবের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। 

যদিও সাদা স্রাব বন্ধ করার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। কিন্তু যদি অতিরিক্ত পরিমানে সাদা স্রাব হয় তবে আপনাকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

উপসংহার

পরিশেষে বলতে পারি, আজকে আমরা মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়? সাদা স্রাব বন্ধ করার কার্যকারী উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম। আমাদের আজকের এই আলোচনা থেকে আপনারা সাদা স্রাব সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন যা থেকে আপনারা অবশ্যই উপকৃত হবেন বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন-

মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

ওজন কমানোর উপায়

Leave a Comment