লো প্রেসার এর লক্ষণ, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি

লো প্রেসার এর লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সকলেই চিন্তায় থাকে কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে কেও কোন প্রশ্ন করে না। কিন্তু ডাক্তারদের মতে লো প্রেসার নিয়েও দুশ্চিন্তার কারন রয়েছে। গরমে অনেকের প্রেসার লো বা কমে যায় এবং তা হঠাৎ করেই হয়। 

হাই ও লো প্রেসার উভয়ই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। প্রেসার কম থাকা ভাল তবে লো প্রেসার ক্ষতিকর। এতেও স্বাস্থ্য ঝুকি রয়েছে। এই লো প্রেসার মোটা বা পাতলা কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে না। লো প্রেসার অনেক সময় শরীরকে অনেক দুর্বল করে দেয়। রক্তচাপ মাপার দুটো পরিমাপ উপরে সিস্টোলিক রক্তচাপ

আর নিচেরটা ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার পারদের কম হলে আর ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার পারদের কম থাকা প্রয়োজন। যা রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা। কিন্তু কত কম চাপ পর্যন্ত স্বাভাবিক?

আসলে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটার পারদের কম, আর ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৬০ মিলিমিটার পারদের কম না হলে সাধারণত নিম্ন রক্তচাপ বা ‘লো প্রেশার’ বলা হয়ে থাকে না। 

৯০/৬০ মিলিমিটার পারদ থেকে ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ পর্যন্ত মাত্রা হলো স্বাভাবিক রক্তচাপ। কিন্তু অনেকেই সামান্য কমের দিকে রক্তচাপ গেলেই তাকে কম রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ বা ‘লো প্রেশার’ ভাবেন, যা মোটেও ঠিক নয়।

আজকের আর্টিকেলে লো প্রেসার এর লক্ষণ, কারণ, লো প্রেসারের প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যথার ওষুধের নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

লো প্রেসার এর লক্ষণ

যেসব কারণ দেখা দিলে বুঝতে হবে লো প্রেসার এর লক্ষণ।

  • মাথা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা মনে হওয়া।
  • বসা বা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে হঠাৎ ভারসাম্যহীন হওয়া।
  • দুর্বল লাগা।
  • চোখে ঘোলা বা অন্ধকার দেখা।
  • খুব তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া।
  • হঠাৎ পড়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারানো।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতির হৃৎস্পন্দন।
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা।
  • প্রস্রাব কম হওয়া।

লো প্রেসার হলে করণীয়

লো প্রেসার এর লক্ষণ হল রক্তচাপ অবশ্যই স্বাভাবিকের তুলনায় কমের দিকে থাকে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এতে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন, অনেক সময় স্বাভাবিক বা একটু কম রক্তচাপ হলে ভয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। যেটা মোটেও ঠিক না। 

প্রয়োজন হলে ওষুধ এর মাত্রা পরিবর্তন করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে নরুনযদি রক্তচাপ কম হওয়ার ফলে কারও সমস্যা হয়, তবে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। 

রক্তচাপ খুব বেশি কম হলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃৎপিণ্ড রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে। যা থেকে এসব নানা অঙ্গের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।

হঠাৎ প্রেসার লো হলে

কম রক্তচাপ কোনো অসুখের লক্ষণ হলে, হঠাৎ তা দেখা দিতে পারে। এ সময় নাড়ির গতি বা পালস স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতির হয়। যার ফলে রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে।

যেটা শকের লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। অনেক কারণে রোগী শকে চলে যেতে পারে। ডায়রিয়া, বমি, রক্তক্ষরণ, রক্তশূন্যতা, পানিশূন্যতা, ইনফেকশন, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে হঠাৎ নিম্ন রক্তচাপ হলে শকের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

লো প্রেসার প্রতিরোধ

লো প্রেসার এর লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার পর দ্রুত প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • দীর্ঘ সময় ধরে কোন স্থানে বসে থাকলে বা শুয়ে থাকলে ধীরে ধীরে উঠতে হবে। কখনো তাড়াহুড়া করা যাবে না। বয়স যদি  ৬০ বছরের বেশি হয় তবে এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই তা মানতে হবে।
  • লম্বা সময় খালি পেটে থাকা ভালো নয়। দীর্ঘ কাজের ফাঁকে হালকা নাশ করা অভ্যাস করতে পারলে ভালো।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। গরমের দিনে অতিরিক্ত ঘামে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • অনেকে ভুল ধারণাবশত খাবারের তালিকা থেকে লবণ একেবারে বাদ রাখেন। এটা ঠিক নয়। সব মিলিয়ে দৈনিক এক চামচের মতো লবণ খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।
  • ডায়রিয়া, বমি হলে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, তরল খাবার, ডাবের পানি পান, স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।

লো প্রেসারে ঘরোয়া সমাধান

লো প্রেসার এর লক্ষণ পরিলক্ষিত হওয়ার ফলে প্রেসার যদি অতিরিক্ত নেমে যায় তাহলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিন্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় না। 

ফলে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যায়। তাই প্রেসার লো হলে বাড়িতেই প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পদক্ষেপ গুলি-

লবণ পানি

লবণে রয়েছে সোডিয়াম যা দ্রুত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণ পানিতে বেশি লবণ না দেওয়াই ভালো। সবচেয়ে ভালো এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ চিনির সাথে ১-২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেলে। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে চিনি বর্জন করা আব্যশক।

কফি

স্ট্রং কফি, হট চকলেট, কোলাসহ যেকোন ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। হঠাৎ করে লো প্রেসার দেখতে পেলে এক কাপ কফি খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে। 

অনেকদিন যাবত লো প্রেসার এর সমস্যা থাকলে সকালে ভারি নাশতার পর এক কাপ স্ট্রং কফি খেলে এর থেকে মুক্তি পাবেন। 

কিশমিশ

হাইপোটেনশনের ওষুধ হিসেবে অতি আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে কিছমিস। এক-দুই কাপ কিছমিছ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। 

সকালে খালিপেটে সেগুলো খেতে হবে। সাথে কিছমিছ ভেজানো সম্পূর্ণ পানিও খেয়ে নিতে হবে। এছাড়াও ৫টি কাঠবাদাম অথবা ১৫ থেকে ২০টি চীনাবাদাম খেতে পারেন।

পুদিনা

পুদিনাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্যান্টোথেনিক উপাদান যা দ্রুত ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর সাথে মানসিক অবসাদ দূর করে থাকে। পুদিনা পাতা বেঁটে তার সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।

যষ্টিমধু

যষ্টিমধু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক কাপ পানির সাথে ১ টেবিল চামচ যষ্টিমধু দিয়ে পান করতে হবে। তাছাড়া দুধের সাথে মধু দিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

বিটের রস

বিটের রস হাই প্রসার, লো প্রেসার দুইয়ের জন্যই সমান ভাবে কার্যকর একটি উপাদান। এটি রক্তচাপ দ্রুত স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। হাইপোটেনশনের রোগীরা প্রতিদিন ২ কাপ বিটের রস খেতে পারেন। ১ সপ্তাহ খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

পরিশেষে

হাই প্রেসারের সমস্যা যেমন চিন্তার ঠিক তেমনি লো প্রেসার চিন্তার কারণ। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে দ্রুত লো প্রেসার থেকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে। 

এমন কিছু খাওয়া যাবে যার মাধ্যমে প্রেসার অনেক হাই হয়ে যায়। লো প্রেসার এর লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে চিন্তিত না হয়ে দ্রুত ঘরোয়া পদ্ধতি আবলম্বন করতে হবে। এতে করে রক্তচাপ স্বাভাবিক হবে। যদি একদম পরিস্থিতি গুরুত্বর হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের সরনাপন্ন হতে হবে।

আশা করছি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর / FAQ

১। প্রেসার কমে গেলে কি স্ট্রোক হয়?

উত্তরঃ উপকারিতার মধ্যে রয়েছে লো ব্লাড প্রেসারের রোগীদের স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, হূদরোগ সমস্যা হবার ঝুঁকি কম থাকে। তবে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কমে গেলে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, এমনকি অজ্ঞান পর্যন্ত হবার ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে শকে যায় রোগী, বিপদ হবার ঝুঁকি পর্যন্ত থাকে।

২। প্রেসার কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়?

উত্তরঃ ‘হু’-র মতে, রক্তচাপ যদি ১১০/৬০-এর নীচে নেমে যায়, তা হলে লো ব্লাড প্রেসার বলে তাকে ধরে নিতে হবে। রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃৎপিণ্ডে ঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না। ফলে বুক ধড়ফড় করে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসা, বমি ভাব, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

৩। কলা খেলে কি ব্লাড প্রেসার বাড়ে?

উত্তরঃ কলা আমাদের স্বাস্থ্যকে নানাভাবে উপকৃত করে। শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা-ই নয়, শরীরের অনেক সমস্যাও দূর করতে পারে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম পাওয়া যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

আরও পড়ুন-

টাইফয়েড জ্বরের এন্টিবায়োটিক, সতর্কতা ও চিকিৎসা

প্রেসার হাই হলে করণীয়, বিধিনিষেধ ও প্রতিকার

Leave a Comment