কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম ও সময়

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম

কোন নারী অন্ত:সত্ত্বা হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য ব্যাবহার করা হয় প্রেগন্যান্সি কিট। এই যন্ত্রটি খুব সহজেই ব্যাবহার করা যায়।

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই সঠিক তথ্য জানে না।

গর্ভবতী মায়েদের শরীরে বিটা এইচসিজি নামে একটি হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনের উপস্থিতি প্রস্রাবেও থাকে।

প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নিজে নিজে জেনে নেওয়া যায়।

কিন্তু সঠিক উপায়ে যন্ত্রটির ব্যাবহার আমরা অনেকেই জানি না। এ যন্ত্রের ফলাফল নিয়ে অনেকের মনে নানা রকম সংশয় কাজ করে থাকে।  

আজকের আর্টিকেলে কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম ও এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আশা করছি সবাই উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুনঃ হরমোনের সমস্যা বোঝার উপায় ও রোগের লক্ষণসমুহ

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার সময়সূচি 

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম

যাদের নিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে প্রতি মাসে তাদের কোন মাসে যদি মাসিক না হয় তবে মাসিক শেষ হবার তারিখ থেকে অন্তত এক সপ্তাহ পর এই পরীক্ষাটি করতে পারেন।

যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা যদি কোন গর্ভাবস্থার লক্ষণ বুঝতে পারে তাহলে তারাও এই পরীক্ষাটি করতে পারে।

যেভাবে করবেন  

ঘুম থেকে উঠে ভোর বেলার প্রসাব নিয়ে পরক্ষা করা ভালো। তবে যদি কেউ দিনের অন্য কোন সময় পরীক্ষা করতে চায় তাহলে তাকে দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে হবে।

প্রতিটি ধাপে কি করতে হবে তা নিদের্শনায় লেখা থাকে। এই নিদের্শনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে  প্রস্রাব দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। 

রিপোর্ট কীভাবে বুঝবেন 

কাঠিতে যদি একটি রঙিন লাইন আসে তাহলে জানা যাবে ঐ মহিলা অন্ত: সত্ত্বা নন অর্থাৎ প্রেগন্যান্সি নেগেটিভ। কিন্তু কাঠিতে যদি দুটি রঙিন লাইন আসে, এমনকি হালকা রেখা হলেও মনে করতে হবে তিনি অন্ত: সত্ত্বা বা প্রেগন্যান্সি পজেটিভ।

স্ট্রিপে যদি কোন রঙিন রেখা দেখা না যায় তাহলে পরীক্ষাটি বাতিল বলে ধরে নিতে হবে এবং আরেকটি নতুন স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষাটি পুণ:রায় করতে হবে। নেগেটিভ ফলাফল যদি আধা ঘন্টা পর পজেটিভ হয় তাহলে রিপোর্টটি গ্রহণযোগ্য হবে না। 

নেগেটিভ কিন্তু মাসিক হচ্ছে না

অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের মাসিক হয় না কিন্তু প্রেগন্যান্সি টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ দেখায়। যদি এমন হয় তবে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে পুণরায় আবার পরীক্ষা করতে হবে।

এছাড়া একাধিকবার রিপোট নেগেটিভ হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে হবে। প্রেগন্যান্সি ছাড়াও অন্যান্য কারণেও মাসিকের সমস্যা হতে পারে। 

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম সত্য- মিথ্যা যাচাই

এই কিট প্রায় ৯৯ শতাংশ নির্ভুল তথ্য দেয়। তবে অনেক সময়  ফলস পজিটিভ হতে পারে। মানে গর্ভবতী না হওয়ার পরও পজেটিভ দেখোতে পারে।

যেমন: কোনো কোনো রোগের এইচসিজি হরমোন অতিমাত্রায় নি:সৃত হয় ( আইলেট সেল টিউমার, কোরিওকারসিনোমা, মোলর প্যেগন্যান্সি), এইচসিজি হরমোনযুক্ত কোন ওষুধ সেবন করলে। 

সন্তান জন্মের বা গর্ভপাতের ৪ সপ্তাহের মধ্যে টেস্ট করলে অনেক সময় পজেটিভ হয়ে থাকে। কারণ তখনও শরীরের মধ্যে এইচসিজি হরমোন থাকে। কীটের মেয়াদ পার হয়ে গেলে কীট ব্যাবহারের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তখন ঐ কিট ব্যাবহার করলে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে। 

রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ হবার কারন

অনেক সময় উল্টোটাও হতে পারে। আপনি অন্ত:সত্ত্বা কিন্তু রিপোর্ট নেগেটিভ দেখায়। এমন হওয়ার কারণ কি?  অনেক সময় মাসিক হওয়ার নির্ধারিত সময় হওয়ার আগেই যদি কেউ টেস্ট করে ফেলে তাহলে এই ধরণের সমস্যা হয়।

আবার যারা দীর্সময় ধরে প্রসাব ধরে রাখতে পারে না আবার অনেকে প্রচুর পানি পান করে টেস্টের সময় এতে প্রস্রাবে হরমোনের মাত্রা কম আসায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। 

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময় 

মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি মাসিক না হয় এবং জন্মনিরোধক পদ্ধতি ( যেমন: কনডম, পিল বা বড়ি) ইত্যাদি ব্যাবহার না করে সহবাস করলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন।

মাসিক নির্দিষ্ট সময়ে না হলে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা। সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে হরমোনের উপস্থতি দেখে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা হয়।

গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণের শুরুর দিকে হরমোনের পরিমাণ অল্প থাকে। তাই সহবাসের পর পরই অথবা গর্ভধারণের শুরুর দিকে এই টেস্ট করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।

এজন্য পরবর্তী মাসিকের সম্ভাব্য তারিখ অথবা সহবাসের পর ২১ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বর্তমানে কিছু আধুনিক প্রেগন্যোন্সি টেস্টের মাধ্যমে গর্ভধারণের ৯ দিনের মধ্যেই জানা যায়। 

শেষকথা

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম গর্ভবতী নারীর জন্য একটি সহজ পদ্ধতি। তবে তা মাসিক শেষ হওয়ার তারিখ থেকে ১ সপ্তাহ পর করতে হবে।

গর্ভবতী নারীকে সকাল বেলার প্রস্রাব দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হবে। কারণ এই সময় প্রস্রাবে হরমোনের উপস্থিতি সঠিক মাত্রায় থাকে। 

কাঠি দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

উত্তরঃ যদি আপনার পিরিয়ড চক্র নিয়মিত হয়, তাহলে আপনি আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার প্রথম দিনেও গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করতে পারেন। যদি আপনার পিরিয়ড চক্র নিয়মিত না হয় তাহলে আপনি 7-10 দিন অপেক্ষা করতে পারেন। যাইহোক, 6-7 দিন পরেও পরীক্ষা করে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।

২। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার উপায় কি?

উত্তরঃ দুটি প্রাথমিক পদ্ধতি হল গর্ভাবস্থা পরীক্ষার কিট ব্যবহার করে মহিলা গর্ভাবস্থার হরমোন ( হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (এইচসিজি)) রক্তে বা প্রস্রাবে পরীক্ষা করা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে স্ক্যান করা। এইচসিজির জন্য রক্ত ​​পরীক্ষা করলে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সনাক্ত করা যায়।

৩। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করতে হবে?

উত্তরঃ তবে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রস্রাব করার সময়েই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে ফেলা ভালো। কারণ এই সময়ে প্রস্রাবে হরমোনের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকলে সঠিক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন-

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার ঘরোয়া পদ্ধতি ও নিয়ম

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পদ্ধতি

Leave a Comment