গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ ও সতর্কতা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ গর্ভ থাকাকালীন অবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীর মায়ের হাড় থেকে গর্ভের শিশুর শরীরেও ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে।

ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ সম্পর্কে এবং গর্ভকালীন আরো বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য।

তো চলুন আর দেরি না করে জেনে আসি, গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ কি এবং গর্ভকালীন অবস্থায় কোন খাবার খাওয়া ভালো এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। 

আরও পড়ুনঃ ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ প্রয়োজনীয়তা

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ

গর্ভকালীন সময় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রথম তিন মাসে বিশেষ কোনো ঔষধের প্রয়োজন পড়ে না। তবে গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম তিন মাস ফলিক অ্যাসিড নিয়মিত খাওয়া ভালো। গর্ভের সন্তান যাতে কোন সমস্যায় না ভুগে, সেজন্য গর্ভকালীন সময় প্রথম থেকেই ফলিক এসিড খাওয়া প্রয়োজন। 

এবং তার পাশাপাশি প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। সবুজ শাকসবজি, দুধ, ডিম, কলা, অন্যান্য ফলমূল গর্ভবতী মায়ের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় খাবার। এতে গর্ভবতী মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকেন। গর্ভকালীন সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শরীর গড়ে তুলতে সাহায্য করে। 

এই সময় মায়ের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- দই, দুধ,পনীর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, কাঁটাযুক্ত মাছ, টফু, ঢেঁড়স, পালং শাক, ডুমুর, চিয়াসিড, ডিম, তিল, তিশি, আমন্ড ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য ভিটামিন “ডি”র প্রয়োজন রয়েছে। 

তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ১ হাজার মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। এটি অনেক কার্যকরী।

গর্ভকালীন অবস্থায় প্রথম তিন মাস যে খাবারগুলো খাওয়া ভালো 

১) ফলিক অ্যাসিড

প্রথম ১৩ সপ্তাহ ফলিক এসিড জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের বি ভিটামিন। প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সঠিক পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ এই আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়৷ তাই এই সময় অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে।

২) আয়রন

 আমাদের দেশের মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের। আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয় এবং সময়ের আগেই শিশু জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।

তাই এই সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, প্রাণিজ উৎসের তুলনায় উদ্ভিজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন গ্রহণ করা বেশি ভালো। ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে।

৩) জিংক

শরীরে কুষ গঠনের জন্য জিংক অত্যন্ত জরুরী। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন। তাই এই সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ডাক্তার আপনাকে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন।

এছাড়া আপনার খাদ্য তালিকায় জিংকসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু,  মুরগির মাংস, গরুর মাংস,দুধ, সিমের বিচি এবং চিনা বাদাম ইত্যাদি রাখতে হবে।

৪) ক্যালসিয়াম

গল্প অবস্থায় শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীর মায়ের হাড় থেকে গর্ভের শিশুর শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যা দেখা দেবে। এজন্য ক্যালসিয়াম পরিমাণমতো খাওয়া প্রয়োজন। 

তাই এই সময় মায়ের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন- দুধ, দই, পনীর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, কাঁটাযুক্ত মাছ, শাকসবজি, চিয়াসিড, ডিম, তিল, তিশি, আমন্ড ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। 

তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০-১২ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগান।গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ১,০০০ মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।

৫) প্রোটিন ও আশ জাতীয় খাবার

এই সময়ে একজন মায়ের ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে থাকে। এবং পরিমাণমতো আঁশ জাতীয় খাবারও খেতে হয়। যদি আজ জাতীয় খাবারের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে। তাই প্রথম তিন মাস প্রোটিন ও আর জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ কি খাবেন না

গর্ব অবস্থায় সুস্থ থাকতে কি খাবেন সেটা জানার পাশাপাশি কি হওয়া উচিত না বা কি খাবেন না তা জানাও জরুরী।

১) গর্ব অবস্থায় এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা বা কফি কম খেতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

২) এই সময় সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ খাবেন৷ কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৩) অর্ধেক সেদ্ধ ডিম বা  মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। 

ডিমের পোচ, হাফ বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ, মাংস একদমই খাবেন না। আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা 

একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সুষম ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী নারী প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত। গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১২তম সপ্তাহকে বলা হয় ফার্স্ট ট্রাইমিস্টার। কারণ গর্ভধারনের অধিকাংশই গর্ভপাত প্রথম এই তিন মাসেই হয়ে থাকে।

তাই গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ সম্পর্কে প্রত্যেক নারীর সঠিকভাবে জানা উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া সঠিক নয়। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।

এজন্য প্রথম দিকের এই তিন মাসের সময়টা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রথমের এই সময় গুলো একটু সতর্কতার সহিত চলতে হবে এবং দূরদূরান্তে কোন জার্নি করা যাবে না। এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গর্ভকালীন সময় সচেতন ভাবে চলুন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের ঔষধ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: গর্ভাবস্থায় কতটুকু প্রোটিন খাওয়া উচিত? 

উত্তর:- গর্ভাবস্থায় প্রোটিন মস্তিষ্ক সহ ভ্রুনের টিস্যুর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। গর্ভকালীন সময় প্রতিদিন ৭৫ থেকে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। প্রোটিন গর্ভাবস্থায় আপনার স্তন এবং জরায়ুর টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনার ক্রমবর্ধমান রক্ত সরবরাহে ভূমিকা পালন করে। 

প্রশ্ন ২: কত মাসে গর্ভের বাচ্চা নড়াচড়া করে? 

উত্তর:- গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত ১৬ সপ্তাহ থেকে ২৪ তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতী নারীরা প্রথমবারের মতো তাদের গর্ভের শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করেন। অর্থাৎ গর্ভধারণের ৪-৫  মাসের পরে। তার মধ্যে আবার বেশিরভাগ নারীই গর্ভধারণের ১৮ সপ্তাহ থেকে ২০তম সপ্তাহে প্রথমবারের মতো এই নড়াচড়া অনুভব করেন।

প্রশ্ন ৩: ডিম্বস্ফোটন না হলে কি গর্ভবতী হওয়া যায়?

উত্তর:- আপনার মাসিকের পরপরই আপনি গর্ভবতী হতে পারেন। এমনকি আপনি যদি ডিম্বস্ফোটন না করেন তাও। কারণ শুক্রাণু যদি উর্বর সার্ভেকাল শ্লেষ্মায় আটকে থাকে তাহলে পাঁচ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই ডিম্বস্ফোটনের আগের দিনগুলোতে শুক্রাণু প্রবর্তন করা গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

প্রশ্ন ৪: জরায়ুর শ্লেষ্মা ছাড়া কি গর্ভবতী হওয়া যায়? 

উত্তর:- ডিম্বাশয় থেকে প্রতিমাসে একটি ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার ফলেও, শ্লেষ্মার ভুল অর্থ শুক্রাণু আপনার যোনি থেকে জরায়ুতে ভ্রমণ করতে আরও কঠিন সময় পাবে। এর এই নয় যে,আপনি গর্ভবতী হতে পারবেন না। কোন সার্ভিকাল বা সামান্য শ্লেষ্মা দিয়েও গর্ভধারণ করা সম্ভব, তবে এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। 

প্রশ্ন ৫: ৩ মাসের বাচ্চার সাইজ কত?

উত্তর:- ৩ মাসের বাচ্চার সমস্ত শরীরের অঙ্গ পরিপক্ব হতে থাকবে, এবং তার সাথে সাথে শিশুর ওজনও বৃদ্ধি পাবে। আপনার গর্ভের শিশুটি প্রায় ২.৫-৩ ইঞ্চি লম্বা হবে এবং তৃতীয় মাসের শেষে শিশুর ওজন প্রায় ১ আউন্স হবে। 

আরও পড়ুন-

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় ও সঠিক প্রস্তুতি

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Leave a Comment