দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া, ইবাদত ও জীবনধারণ

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া

দুনিয়াটা মানবজাতির জন্য একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের সুখ, দুঃখ, হতাশা, দুশ্চিন্তা সবকিছু দিয়ে পরীক্ষা করেন। তাইতো জীবনে চলার পথে কখনো সুখ অথবা কখনো দুঃখের সম্মুখীন হতে হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন – “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে ; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও – যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে

‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ – নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)।

সুখের সময় যেমন আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে, তেমনি দুঃখের সময়ও একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই দুশ্চিন্তা এবং হতাশা থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ আমরা আমল করতে পারি। 

দুশ্চিন্তা এবং হতাশা থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য চাওয়া। আমরা সবাই জানি, পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে যা কিছু ঘটে তার সবকিছুই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ পাকের ইশারাতেই ঘটে।

হতাশা বা দুশ্চিন্তা থেকে আমরা খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারি যদি ঠিক মত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। হযরত সালমান ফারসী (রা:) হতে বর্ণিত – “রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন – তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল ও পরম দাতা ; যখন তাঁর বান্দা তাঁর নিকট দু’হাত উঠায় তখন তা খালি ফেরত দিতে তিনি লজ্জাবোধ করেন।” (তিরমিজি, আবু দাউদ, বায়হাকীর বরাতে মিশকাত, হাদিস :২১৪৮)।

তাই আমরা চেষ্টা করব দৈনন্দিন জীবনে অর্থাৎ সুখে দুঃখে সব সময় আল্লাহ তায়ালাকে ডাকতে। তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবো সকল পরিস্থিতিতেই। আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া। সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার অনুরোধ রইল। 

আরও পড়ুনঃ ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে, পরিমান ও আদায়ের নিয়ম

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া ও আমল 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া

কুরআন তেলাওয়াত 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া এর মধ্যে কার্যকরী পন্থা হচ্ছে কুরআন তেলাওয়াত করা। এক্ষেত্রে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করলে অধিক ফল পাওয়া যাবে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফে দুশ্চিন্তা বা হতাশা থেকে বিরত থাকতেই শুধু বলা হয় নাই, এগুলো থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সেই পথও বলে দেওয়া আছে।

পবিত্র কুরআন শরীফে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার মধুর বাণী, যা তেলাওয়াত করলে মানুষের মন প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। তা দুশ্চিন্তা বা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে দারুণ কার্যকরী। 

নামাজে মনোযোগী হওয়া 

নামাজের মাধ্যমে বান্দা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ পাকের সাহায্য লাভ করে থাকেন। হতাশা, দুশ্চিন্তা, বিপদ-আপদ বা পেরেশানির সময় নামাজ আপনাকে প্রশান্তি দিবে। তাই চেষ্টা করবেন নামাজে অধিক মনোযোগী হওয়ার।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : “তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন । কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।” (সূরা বাকারা : আয়াত – ৪৫)  

হাদিসে বর্ণিত আছে : “রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতেন তখন নামাজ আদায় করতেন।” (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামগণও এই আমল করতেন। তাঁরা অতি ছোট ছোট বিষয়ের জন্যও নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি যদি জুতার ফিতাও ছিড়ে যেতো তাও নামাজের মাধ্যমে তার সমাধান করতেন। 

আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা 

হতাশা বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : “যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” (সুরা তালাক : আয়াত – ৩) 

যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সকল পরিস্থিতিতেই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ পাকের প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করতে জানে তার কোন চিন্তা নেই। হাদিসে বর্ণিত আছে : রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন – “আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন – আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।” (বুখারী) 

হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা 

হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার দুশ্চিন্তা বা হতাশা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। যে কাজ করার মাধ্যমে আপনি হাসি-খুশি থাকতে পারবেন অর্থাৎ মনে শান্তি পাবেন সে কাজে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। তবে সেই কাজটি যেন অবশ্যই হালাল হয়।

হাসি-খুশি থাকার উদ্দেশ্যে কোনোভাবেই হারাম কাজের সঙ্গে জড়িত হবেন না। হতাশা মুক্ত থাকার জন্য বিনোদন প্রয়োজন। তবে বিনোদনের মাধ্যম যেন হারাম না হয় এদিকে খেয়াল রাখবেন। 

তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা 

তাওবাহ এবং ইস্তেগফার করলে হতাশা এবং মানসিক চাপ কমে যায়। ইস্তেগফার করলে আপনার জীবিকার অভাব কমে যাবে, সন্তান-সন্ততির অভাব কমে যাবে। এছাড়া গুনাহ মাফ হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ইস্তেগফার ও তাওবাহ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : “তারপর বলছি – তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।

তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।” ( সূরা নুহ : আয়াত : ১০-১২) 

রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন : “যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট দূর করে দিবেন। সমাধানের পথ বের করে দিবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।” (আবু দাউদ)। 

সুতরাং কোন অবস্থাতেই হতাশ হবেন না। আল্লাহ তাআলার উপর আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন। প্রচুর পরিমাণ তাওবাহ এবং ইস্তেগফার করুন। আশা করি নিরাশ হবেন না। 

দোয়া ও জিকির করা 

আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেছেন দোয়া এবং জিকিরের মাধ্যমে মনে প্রশান্তি আসে। তাই দুশ্চিন্তা বা হতাশা কাটাতে এবং মনে প্রশান্তি আনতে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির এবং দোয়া করুন। আল্লাহ পাক বলেছেন :

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

অর্থ : যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে ; ‘জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সূরা রাদ : আয়াত – ২৮) 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া – ১ 

রাসুলুল্লাহ (সা:) চিন্তা এবং পেরেশানির সময় নিম্নোক্ত  দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন। দোয়াটি হল :

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।”  (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) 

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই। 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া – ২ 

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেছেন : কেউ কখনো দুশ্চিন্তায় পড়লে বা দুঃখ পেলে বলবে – 

اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي

উচ্চারণ : “আল্লাহুম্মা ইন্নী আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, নাসিয়াতী বিয়াদিকা, মাদ্বিন ফিয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিয়্যা কাদ্বায়ুকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন্ হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতাবিকা, আও আল্লামতাহু আহাদাম্মিন খালক্বিকা, আও ইস্তাসারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইনদাকা, আন্ তাজআলাল কোরআনা রবীআ কালবী, ওয়া নূরা সাদরী, ওয়া জালাআ হুযনী, ওয়া যাহাবা হাম্মী।” 

অর্থ : “হে আল্লাহ, আমি আপনার দাস, আপনার দাসের ছেলে, আপনার দাসীর ছেলে। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে, আমার ওপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায্য।

আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসিলায় ; যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজেই রেখেছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্ট জীবের কাউকে শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবি জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

আপনি কুরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, বুকের আলো, দুঃখ অপসরণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী বানিয়ে দিন।” (আহমাদ : ৩৭১২) 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : নারীরা এই দোয়াটি পাঠ করার শুরুতে বলবেন – “আল্লাহুম্মা ইন্নী আমাতুকা, ওয়া বিনতু আবদিকা ওয়া বিনতু আমাতিকা……” অর্থাৎ, “হে আল্লাহ, আমি আপনার বান্দী, আপনার (একজন) বান্দার কন্যা, আপনার এক বান্দীর কন্যা……”। 

(আহমাদ ১/৩৯১, নম্বর ৩৭১২ এবং শাইখ আলবানী তার সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহাহ গ্রন্থে ১/৩৩৭ একে সহিহ্ বলেছেন) 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া – ৩ 

একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন – আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, যা কোন বিপদগ্রস্ত লোক পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। দোয়াটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ:) এর দোয়া। নিচে দোয়াটি দেওয়া হল : 

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন”। 

অর্থ : “হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই ; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫) 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া – ৪ 

হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কোন দুঃখ কষ্ট বা চিন্তা, অস্থিরতা তথা হতাশাগ্রস্থ হতেন তখন বলতেন – 

 يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِك أَسْتَغِيْث

উচ্চারণ : “ইয়া-হাইয়ু ইয়া-ক্বাইয়ু-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।”

অর্থ : “হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই। (তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত) 

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া – আদব এবং নিয়মাবলী 

  • “আজিযী ইনকেসারী” অর্থাৎ চরম অনুনয়-বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করতে হবে। 
  • অজু অবস্থায় দোয়া করতে হবে। অজু ছাড়া দোয়া করা অনুচিত বা বেয়াদবী। 
  • দোয়া করার মধ্যে নিজের অতীতে করা পাপের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করবেন। ভবিষ্যতে কোনো প্রকার পাপ না করার জন্য তওবা করবেন। 
  • নিজের করা অন্যায়ের জন্য নেক কাজের উসিলা দিয়ে দোয়া করবেন। 
  • দুই রাকাত নফল নামাজ শেষে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন। 
  • দোয়া করার শুরুতে এবং শেষে দরুদ শরীফ পাঠ করবেন। 
  • দোয়া করার সময় উভয় হাত দুই কাঁধ বরাবর উঠাবেন এবং দুই হাতের তালু চেহারা বরাবর থাকবে। 
  • দোয়া করার শেষে “আমিন” বলতে বলতে দুই হাতের মাধ্যমে চেহারা মুছবেন। 
  • দোয়ার সাথে কোন রকম শর্ত লাগাবেন না। 
  • কোন গুনাহের কাজে সফলতা লাভের জন্য দোয়া করা যাবে না। অন্যায় ভাবে অন্যের অনিষ্ট কামনা করার জন্য দোয়া করা যাবে না। 
  • ছোট বড় সকলেই একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার নিকটই দোয়া করবেন। 
  • ঈমান এবং একীনের সহিত অন্তরকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দিকে রেখে দোয়া করবেন। 
  • নিজের জন্য এবং সকলের জন্যই সমানভাবে দোয়া করবেন।  

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া পাঠের উপকারিতা 

  • আল্লাহর রহমত লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে দোয়া পাঠ করা।  
  • দোয়া পাঠ করলে আপনার দুশ্চিন্তার কারণসমূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। 
  • হাদিসে বর্ণিত আছে : দোয়া করার মাধ্যমে কখনো কখনো নিয়তি বা ভাগ্য বদলে যায়। 
  • সকল অনিশ্চয়তা দূর হয় এবং নির্দিষ্ট কাজে সফলতা আসে দোয়া করার মাধ্যমে। 
  • দোয়া করার মাধ্যমে সহজেই বিনয়ী হওয়া যায় এবং অহংকার দূর হয়।  

শেষকথা 

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা শারীরিক সুস্থতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই।  তবে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই মনের যত্ন নিতে হবে। জীবনে চলার পথে ভালো সময় যেমন আসবে ঠিক তেমনি খারাপ সময়ও আসবে। কখনো দুশ্চিন্তা এবং হতাশা আপনাকে গ্রাস করে ফেলবে। তবে ভেঙ্গে পড়বেন না।

কারণ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা করুন, দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া আজকের আলোচনায় বিস্তারিত বলা হয়েছে।

মানসিক চাপ বা কোন বিপদাপদে হতাশ না হয়ে সব সময় মহান আল্লাহর উপর আস্থা রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন : আল্লাহ তাআলা বলেন – “আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি ঠিক তেমন ধারণা করি।

সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও আমার মনের মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে কোন সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে এর চাইতে উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি। আর সে যদি আমার দিকে অর্ধহাত এগিয়ে আসে আমি এগিয়ে আসি তার দিকে এক হাত।

আর সে এক হাত এগিয়ে এলে, আমি তার দিকে দু’হাত এগিয়ে আসি। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” (বুখারী ৮/১৭১ ; মুসলিম ৪/২০৬১)

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর / FAQ

১. কোন সূরা পড়লে মনে শান্তি আসে? 

উত্তর : সূরা আর-রহমান এর অডিও শুনতে পারেন। ইনশাল্লাহ মনে এক ধরনের শান্তি আসবে। এছাড়াও পবিত্র কুরআনে দুটি মোটিভেশনাল সূরা আছে, সূরা আল-ইনশিরাহ এবং সূরা আদ-দ্বোহা। চেষ্টা করবেন অবশ্যই অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করার। 

২. কঠিন বিপদে কোন নামাজ পড়বো? 

উত্তর : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কঠিন বিপদের সময় “সালাতুল হাজত” নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

৩. হতাশার কারণ কি? 

উত্তর : হতাশার কারণ –

  • শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতন। 
  • প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো বা আর্থিক ক্ষতি। 
  • দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি। 

আরও পড়ুন-

নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম

রমজান মাসে ওজন কমানো ৫টি উপায়

Leave a Comment