গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ ও সতর্কতা

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ কিছুটা প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ঋতুস্রাব মিস হলে, তখন অনেকেই টের পান তিনি গর্ভবতী।

তবে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে একাধিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার আগেই কিছু লক্ষণ দেখে আপনি গর্ভধারণের ইঙ্গিত পেতে পারেন।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিরিয়ড মিস না হওয়া সত্তেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক নারী।

আজকের আর্টিকেলে আমরা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ গুলো জানবো।

তো চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুনঃ চিকেন পক্স এর চিকিৎসা, রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাস

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ

ঋতুচক্র মিস ছাড়াও নানা শারীরিক ঘটনা রয়েছে, যা গর্ভধারনের ইঙ্গিত দেয়। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • মেজাজে চরম পরিবর্তন হওয়া।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
  • ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া
  • চরম ক্লান্তি বোধ হওয়া
  • বুকজ্বালা করা।
  • পায়ে খিল ধরা।
  • পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হওয়া।
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া।
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবারে নতুন করে অপছন্দ তৈরি হওয়া।
  • কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হওয়া ইত্যাদি।
  • প্রখর ঘ্রাণশক্তি।
  • মুখে অদ্ভুদ ঘ্রানশক্তি।

বাসায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট যেভাবে করবেন

বাসায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য আপনার কাছের ফার্মেসী বা সুপারশপ থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট/বক্স কিনে নিতে পারেন। দিনের যেকোনো সময়ের প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়।

তবে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরের টেস্টের রেজাল্ট টি ভালো আসে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটটি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহারের পর সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফলাফল দেখায়।

একেকটি টেস্ট কিটের ধরণ একেকরকম। তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই বক্সের গায়ে লেখা নির্দেশাবলি ভালোভাবে পড়ে নিবেন।

স্বাস্থ্যসেবীর সাথে কখন দেখা করবেন

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরই যতদ্রুত সম্ভব আপনার স্বাস্থ্যসেবীর সাথে দেখা করা উচিৎ।তবে গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যে একবার হলেও আপনার স্বাস্থ্যসেবীর সাথে দেখা করতে হবে।

এতে করে আপনার সন্তানের ভ্রুনের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারবেন।গর্বধারণের পর এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

যেহেতু প্রত্যেক নারীর গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হয়ে থাকে।একারণে নিচের উপসর্গ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই সবাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর শরণাপন্ন হতে হবে।

মারাত্মক খিল ধরা।

  • ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর উপরে জ্বর আসা।
  • দূর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব।
  • প্র্রস্রাবে ইনফেকশন।
  • যোনিপথ হতে রক্তক্ষরণ।
  • মারাত্মক বমি বমি ভাব।

গর্ভবতী হলে করণীয় কি

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়ার পর আপনার প্রাথমিক করনীয় হচ্ছে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চেকআপ করিয়ে সুনিশ্চিত হওয়া এবং ডাক্তার যা পরামর্শ দিবে সেগুলো মেনে চলা।

  • গর্ভবস্থায় ডাক্তার সাধারণত নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 
  • গর্ভবতী হওয়ার ১২ তম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ফলিক এসিড ৪০০ মাইক্রোগ্রাম খেতে হবে।ফলিক এসিড ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।
  • দৈনিক ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় নানান রকম ইনজেকশনের ঝুঁকি থাকে।এজন্য ভালোভাবে সিদ্ধ হযনি এমন সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ধুমপান,অতিরিক্ত চা কফি পান ও মদপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যেভাবে গর্ভকাল আপনি নিজে হিসেব করতে পারবেন

ধরা যাক, আপনার পিরিয়ড শুরু হয়েছে মাসের দশ তারিখে। পনেরো তারিখে সেটা শেষ হলো৷ পরবর্তী মাসের দশ তারিখের কাছাকাছি সময়েই আপনার আবার পিরিয়ড হওয়ার কথা৷

কিন্তু সেটা যদি না হয়ে থাকে এবং টেস্টের মাধ্যমে যদি নিশ্চিত হন যে আপনি গর্ভবতী তবে আগের মাসের দশ তারিখ থেকে আপনার গর্ভধারণের সময় গণনা করা হবে৷

অর্থাৎ আপনার সবর্শেষ মাসিকের প্রথম দিনই হলো আপনার গর্ভধারণের প্রথমদিন৷

গর্ভাবস্থায় নিজের যত্ন যেভাবে নিবেন

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের লক্ষণগুলো, অস্বস্তিকর হতে পারে। কিছু পরিমাণ স্বস্তির জন্য, প্রথমে আপনার স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যাচাই করার পরে এই অস্বস্তি দূর করতে পারেন।

মনে রাখবেন, অগ্রাধিকার এবং হাতের কাছে যে জিনিসগুলো সহজে পাওয়া যায় ,সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।আপনার সিদ্ধান্তটি সবসময় তার ভিত্তিতেই নেয়া উচিত।               

  • বমির ক্ষেত্রে আদা, কেমোমিল, ভিটামিন বি-৬ বা আকুপাংচার করার চেষ্টা করুন।
  • পায়ে অতিরিক্ত খিল ধরার সমস্যা দূর করতে হলে ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়াম নিতে পারেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ অনুসারে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেও যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে স্বস্তি পেতে গমের তুষ বা অন্যান্য ফাইবার জাতীয় সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার করা যেতে পারে।

আপনার  গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এই কাজটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার দৈনিক শারীরিক কাজ চালিয়ে যান।

গর্ভাবস্থায় আপনি যত বেশি সক্রিয় থাকবেন, আপনার পরিবর্তিত শরীরের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া ততটাই সহজ হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্রমবর্ধমান শরীরের পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

শাকসবজি, মাংস, শিম, বাদাম, দুধ এবং ফলমূল সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি যে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন।

পরিশেষে

অধিকাংশ সময়, একজন মহিলা গর্ভধারণের কয়েকদিনের মধ্যে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি লক্ষ্য করতে শুরু করে। তবে কিছু মহিলা দেরিতে এ লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন।

গর্ভাবস্থার অধিকাংশ উপসর্গগুলি পিরিয়ডের সময় বা ১-২ সপ্তাহ আগে বা পরে প্রদর্শিত হয়।

যদি কোনো মহিলা গর্ভধারণের চেষ্টা করেন এবং নিজের মধ্যে উপরের লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন তবে তাকে একজন প্রসূতি বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানলেন গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ এবং আনুষাঙ্গিক আরও কিছু বিশেষ তথ্য।আজ এ পর্যন্তই ।আবারো অন্য কোনো আর্টিকেল নিয়ে হাজির হবো।

আর্টিকেলটি অবশ্যই আপনার আত্মীয় এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেননা।

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর/FAQ

১) কত দিন পর জানা যায় গর্ভবতী?

উত্তর: সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। প্রেগন্যান্সি টেস্টে সাধারণত গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে একটি হরমোনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রস্রাবে এই হরমোনের পরিমাণ শুরুর দিকে অল্প পরিমাণে থাকে।

২) কত মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করে?

উত্তর: সাধারণত গর্ভধারণের ৪ মাসের পরে, অর্থাৎ ১৬ সপ্তাহ–২৪তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতী নারীরা প্রথমবারের মতো শিশুর নড়াচড়া টের পেতে শুরু করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ নারীই গর্ভধারণের ১৮ সপ্তাহ–২০তম সপ্তাহে প্রথমবারের মতো এই নড়াচড়া অনুভব করেন। গর্ভকাল আগানোর সাথে সাথে পেটের ভেতরে শিশুর নড়াচড়াও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।

৩) সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে?

উত্তর:বিশেষজ্ঞদের মতে, মিলনের তিন থেকে চারদিনের মধ্যে গর্ভধারণ হয়। গর্ভে একটি শুক্রাণু পাঁচদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে গর্ভবতী হন একজন মহিলা।

আরও পড়ুন-

৭ মাসের গর্ভবতী বাচ্চার নড়াচড়া ও জরুরী সতর্কতা

ছেলে সন্তান হওয়ার লক্ষণ সমূহ, ও প্রচলিত ধারনা

Leave a Comment