ফরজ গোসল না করার শাস্তি, শরীয়তের বিধান ও নিয়ম

ফরজ গোসল না করার শাস্তি

ফরয গোসল হলো এমন গোসল যা প্রয়োজন হলে অবশ্যই করতে হবে। না করলে নামাজ, রোজা, তাওয়াফ ইত্যাদি ইবাদত আদায় করা যাবে না। ফরয গোসল করার কারণ হলো শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করা।

ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের জন্য শারীরিক পবিত্রতা অপরিহার্য। ফরয গোসল শুধুমাত্র শারীরিক পবিত্রতার জন্যই নয়, বরং আধ্যাত্মিক পবিত্রতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ফরয গোসলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা প্রকাশ করি।

ফরয গোসল আমাদের মনে ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে। ফরয গোসলের ফলে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করা হয়। পবিত্রতা ছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যেমন, নামাজ, কোরআন স্পর্শ করা, তাওয়াফ করা ইত্যাদি পালন করা যায় না।

তাই ফরয গোসল করার বিষয়ে সচেতন থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য কারন ফরজ গোসল না করার শাস্তি অনেক। কিছু  কিছু কারনে আমাদের গোসল ফরয হয়। যেমন নারীদের মাসিক ও প্রসবোত্তর রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করা ফরজ। স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা ফরজ। স্ত্রী-সহবাসের পর গোসল করা ফরজ, জানাজার গোসল ফরজ।ফর‍য

গোসল করার জন্য আমাদেরকে অনেক সতকর্তা অবলম্বন করে গোসল সম্পন্ন করা উচিত কারন, ফরয গোসল এ সামান্য পরিমাণ ক্রুটি হলে,সেক্ষেত্রে আমাদের নামায,কালাম,অথবা কোনো ইবাদত ই কবুল হবে না।

তাই ফর‍য গোসল অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ গোসল না করার শাস্তি অনেক। যদি কেও অবহেলা করে ফরয গোসল না করে, তবে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।

আরও পড়ুনঃ ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া, আমল ও নাজাতের পদ্ধতি

গোসল ফরয হওয়ার কারন

ফরজ গোসল না করার শাস্তি

প্রাকৃতিক বেশ কিছু কারণে মানুষ অপবিত্র হয়ে যায়। তখন পবিত্র হতে হয় অজু অথবা গোসলের মাধ্যমে। যেসব কারণে একজন মানুষের ওপর গোসল ফরজ হয় এবং গোসল ছাড়া পবিত্রতা অর্জন হয় না এমন কারণ চারটি কারন এখানে তুলে ধরা হলো-

১.জানাবাত থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য

স্ত্রীর সাথে সহবাস, স্বপ্নদোষ, বা যেকোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে জানাবাত অবস্থা তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য ফরয গোসল করা জরুরি।

২.মাসিক বন্ধ হওয়ার পর

 মাসিক শেষ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য ফরয গোসল করা ফরজ।

৩.সন্তান প্রসবের পর

 নেফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য ফরয গোসল করা ফরজ।

৪.মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া

জীবিতদের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ। তাই ফরজ গোসল কে অবহেলা বা ফরজ গোসল না করার শাস্তি অনেক ভয়ংকর। ফরজ গোসল করা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য। এছাড়াও, গোসলের অনেক শারীরিক ও মানসিক ফায়দা রয়েছে। তাই নিয়মিত গোসল করা উচিত।

ফরজ গোসলের নিয়ম

ধাপ – ১

আমরা সকলেই জানি যে ফরজ গোসল না করার শাস্তি কতোটা ভয়ংকর। তাই ফরয গোসল করার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নিয়ম মেনে গোসলের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।তাই ফরজ গোসল করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে

১.নিজেকে প্রস্তুত করা: পোশাক খুলে ফেলুন, লজ্জাস্থান পরিষ্কার করে নিন এবং প্রস্রাব-পায়খানা সেরে ফেলুন।

২.উদ্দেশ্য করা: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ফরজ গোসল করছি” এই উদ্দেশ্য মনে মনে করুন।

৩.বিসমিল্লাহ বলা: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে গোসল শুরু করুন।

ধাপ – ২

১.হাত ধোয়া: কবজি পর্যন্ত তিনবার হাত ধুয়ে নিন।

২.লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা: ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করুন।

৩.বাঁ হাত ধোয়া: বাঁ হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

৪.অজু করা: পা ধোয়া ছাড়া পুরোপুরি অজু করে নিন।

ধাপ – ৩

গোসলের মূল অংশ

১.মাথায় পানি ঢেলা: তিনবার মাথায় পানি ঢেলে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন।

২.ডান পা ধোয়া: তিনবার ডান পা ধুয়ে নিন, হাঁটু পর্যন্ত।

৩.বাঁ পা ধোয়া: তিনবার বাঁ পা ধুয়ে নিন, হাঁটু পর্যন্ত।

৪.পুরো শরীর ধোয়া: পুরো শরীর ধুয়ে নিন, যাতে কোনো অংশ শুকনো না থাকে।

• বিশেষ দিক খেয়াল রাখা:

কানের ভেতর, নাভি, বগল, হাঁটু-ঘুঁট, পায়ের আঙ্গুলের ফাঁক ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

পুরুষদের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে।

নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছাতে হবে।

চতুর্থত:

১.গোসল শেষ করা

২.পানি ঝরিয়ে ফেলা: পানি ঝরিয়ে ফেলুন এবং শরীর মুছুন।

৩.মিশক ব্যবহার: ইচ্ছা হলে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• গোসলের সময় পানির অপচয় করা যাবে না।

• উঁচু স্থানে বসে গোসল করা উত্তম, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে।

• লোকসমাগম যেখানে হয়, সেখানে গোসল করা উচিত নয়।

• ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা উত্তম।

• বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও যদি শুকনা থাকে তবে, ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না।

• নেল পালিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরের ভেতর  পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি।

ফরজ গোসল এ অবহেলা করলে শাস্তি সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

ফরয গোসল অবহেলার শাস্তি

ফরজ গোসল না করার শাস্তি আমরা কম বেশি সবাই জানি।তাই প্রত্যেকের ভাষ্যমতে,সেই শাস্তি কেমন হতে পারে,সেটা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

মতামত -১

ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তি কবীরা গুনাহগার হবে। কবীরা গুনাহের শাস্তি আল্লাহ্‌ জানেন। তবে কিছু হাদিসে কবীরা গুনাহের শাস্তির মধ্যে জাহান্নামের আযাবের কথা বলা হয়েছে।

ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তির ঈমানের ক্ষতি হবে। ঈমানের ক্ষতি হলে ঈমানের পরিপূর্ণতা অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হবে। ফরজ গোসল না করার শাস্তি সম্পর্কে তাই সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।

মতামত – ২

ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তির নামাজ কবুল হবে না। তবে কিছু আলেম মনে করেন, নামাজ কবুল না হওয়ার অর্থ হলো নামাজের পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে না।

মতামত –

ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তি থেকে ফেরেশতাগণ তার থেকে দূরে সরে যাবে।

মতামত – ৪

ফরজ গোসল ফরজ হওয়ার পর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গোসল না করে, তাহলে সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হবে না।

উপরে উল্লেখিত মতামতগুলো বিভিন্ন আলেমের।কোন মতামতটি সঠিক তা আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন।তবে সকল মতামতই এক ব্যাপারে একমত যে, ফরজ গোসল এ অবহেলা করা উচিত নয়।

ফরজ গোসলে দেরী করার কারন

ফরজ গোসলে দেরী হলে গুনাহ হতে পারে। ফরজ গোসল না করার শাস্তি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত।অনেকেই ফরজ গোসল করতে দেরী করেএবংদেরি করার কারণ যদি বৈধ হয়, তাহলে গুনাহ হবে না।ফরজ গোসলে দেরী করার কারণে গুনাহ হতে পারে কারণ:

 ফরজ গোসল ফরজ ইবাদত, এবং ফরজ ইবাদতের সময় নষ্ট করা গুনাহ।ফরজ গোসল না করে নামাজ, রোজা, তাওয়াফ ইত্যাদি ইবাদত করা যায় না।ফরজ গোসল না করে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করা যায় না। ফরজ গোসল না করে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যায় না।

ফরজ গোসলে দেরী করার বৈধ কারণ:

• অসুস্থতা

• অজ্ঞতা

• ভুলে যাওয়া

• পানি না পাওয়া

• অন্য কোনো বৈধ বাধ্যবাধকতা

ফরজ গোসলে দেরী হলে করণীয়:

• যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করা

• দেরি করার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া

• ভবিষ্যতে দেরি না করার চেষ্টা করা

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

• ফরজ গোসল সঙ্গে সঙ্গে করা উত্তম।

• কোনো কারণ না থাকলে ফরজ গোসলে দেরি করা উচিত নয়।

• জানাশোনা, মাসিক, স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ ইত্যাদির কারণে অপবিত্র হলে দ্রুত গোসল করে পবিত্র হয়ে নেওয়া উচিত।

তাই সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য,আমাদের অবশ্যই ফরজ গোসলের প্রতি সচেতনতা অবলম্বন করা আবশ্যক।এবং সমস্ত প্রকার কবীরা গুনাহ থেকে বাচয়ে,নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

পরিশেষে

প্রত্যেক মুমিন দের জন্য ফরয গোসলের এই বিধান একই। তবে ফরজ গোসল করতে অপারগ হলে বা পানি না পেলে সেক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে তায়াম্মুমের বিধানও রয়েছে। তবে বিনা ওজরে ফরজ গোসল না করলে তার জন্য রয়েছে শাস্তি।

তাই মনে রাখতে হবে, গোসল ফরজ হওয়া সত্তেও অপবিত্র অবস্থায় নামাজের সময় অতিবাহিত করা গুনাহের কাজ। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলে ফরজ গোসল না করার শাস্তি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা আপনার উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।

ফরজ গোসল না করার শাস্তি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১.ফরজ গোসল না করে কিছু খাওয়া যাবে??

উত্তর:খাওয়া যাবে গুনাহ নেই,তবে উত্তম হয়, গোসল টা সেরেই খাওয়া দাওয়া করা।

২.ফরজ গোসল না করে কি,হাদিসের বই স্পর্শ করা যাবে?

উত্তরঃ না।

৩.ফরজ গোসলে কি নিয়ত আছে?

উত্তর :হ্যা, গোসলের নিয়ত আছে।

আরও পড়ুন-

নতুন বছরের ইসলামিক স্ট্যাটাস সম্পর্কিত তথ্য

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে, পরিমান ও আদায়ের নিয়ম

Leave a Comment