ড্রাগন ফলের উপকারিতা
আমাদের দেশে সমসাময়িক সময়ের তুলনামূলক নতুন ফল গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল দেখতে যতটা আকর্ষণীয় তার থেকে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। বাংলাদেশে এই ফলটি নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশে এটি পুরনো। এই ফলটি বেশ সুস্বাদু সাথে পুষ্টিগুণে ভরা।
ড্রাগন ফলে রয়েছে ক্যালরি, ফাইবার, প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবিই গুরুত্বপূন ভৃমিকা পালন করে। আজ আমরা জানব ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ড্রাগন ফল
ড্রাগন হচ্ছে ক্যাক্টাস জাতীয় গাছের একটি ফল। যা ডিম্বকৃতির উজ্জল গোলাপি-হলুদ রঙের হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মূলত লাল, সাদা, হলুদ রঙের ড্রাগন ফল বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হল- (Hylocereus Undatus)। এই গাছটি হনলুলু কুইন আবার অনেকের কাছে রাতের রানী হিসেবেও পরিচিতি। রাতের রানী বলার কারন এই ফুলগুলি শুধু মাত্র রাতেই ফোটে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রাগন ফলের অপকারিতার চেয়ে এর উপকারিতা অনেক বেশি। শুরুতেই আমরা যেনে নিবো এর উপকারিতা সম্পর্কে। ড্রাগন ফলের উপকারিতার মধ্যে থেকে কিছু উপকারিতা হলো:
১. ড্রাগন ফল হাটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
ড্রাগন ফল আমাদের হাটকে সুস্থ রাখতে সাহাজ্য করে। ড্রাগন ফলের থাকা উপাদান রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। যা হাটকে ভালো অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে।
২. ড্রাগন ফল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক
ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। সাথে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতেও বেশ সহায়ক।
৩. ওজন কমাতে ড্রাগন ফল
যেহেতু ড্রাগন ফলে ফ্যাটের পরিমান নাই বললেই চলে। তাই এটি ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যারা ওজন কমানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এই ড্রাগন ফলকে বিবেচনায় রাখতে পারেন।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলে থাকা ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ড্রাগন ফল রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে এবং চিনির মাত্রা স্থিতিশিল রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খাবারের তালিকা অল্প পরিমানে হলেও ড্রাগন ফল রাখার চেস্টা করা জরুরী ।
৫. ড্রাগন ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক
ড্রাগন ফলে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার উৎপাদনকারী কোষ গুলিকে ধবৎস করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমান প্রায় ৯০% । তাই ক্যান্সারের মত রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমাদের ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
৬. কিডনিকে সুস্থ রাখতে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম যা কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই পটাশিয়াম কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়।
৭. হাড় শক্ত করতে ড্রাগন ফল
হাড় শক্ত করতে ড্রাগন ফল বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। কারন ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমান ম্যাগনোসিয়াম থাকে। যা অন্যোন্য কোন ফলের মধ্যে থাকেনা। আর এই ম্যাগনোসিয়াম মানুষের দেহের হাড়কে মজবুত এবং সুস্থ রাখতে বিশেষ উপকারী।
এছাড়াও চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে, চুল পড়া রোধে, মুখের ব্রন ও ব্রনের দাগ দূর করতে ড্রাগন ফলে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমরা শুধু ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলিয় জানলাম কিন্তু ড্রাগন ফলের ও কিছু অপকারিতা আছে আর সেগুলি হলো।
- যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাগন ফল খেলে এলার্জি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বেশি মাত্রায় ড্রাগন ফল খেলে ডায়রিয়াও হতে পারে।
১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে যা যা উপাদান থাকে
প্রোটিন = ০.১৫-০.৫ গ্রাম
শকরা = ৯-১০ গ্রাম
ফসফরাস = ১৬-৩৫ গ্রাম
আয়রন = ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম
পানি = ৮০ গ্রাম
শক্তি = ৩৫-৫০ কিলো ক্যালোরি
ভিটামিন বি = ৩-০.২-০.৪ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম = ৬-১০ মিলিগ্রাম
ফ্যাট =০.১০-০.৬ মিলিগ্রাম
আঁশ = ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
ক্যারোটিন = অল্প
ভিটামিন এ = অল্প
থায়ামিন = অল্প
রিবোফ্লামিন = অল্প
শেষ কথা
ড্রাগন একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। যদি কোনো অসুস্থ্যতার কারনে ডাক্তার নিসেধ না করে তাহলে এই ফল যে কেউ যে কোনো সময় খেতে পারে।
ড্রাগন ফল নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s
ড্রাগন ফল কখন পাঁকে?
ড্রাগন ফল মৃলত গ্রীষ্মকালীন ফল, তাই এটি মার্চ মাস থেকে শুরু করে জুন মাসের মধ্যে পেকে থাকেন।
ড্রাগন ফল কত টাকা কেজি?
অন্যোন্য ফলের তুলনায় এই ড্রাগন ফলের দাম মূলত একটু বেশি। প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত কি অনুচিত?
ড্রাগন ফলের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যেটা গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপযুক্ত খাবার। তবে ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে, এর নিয়ম সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিন এবং তার সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়?
এটি মূলত হাটে-বাজারে ও নাসারিতেই পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফল কত প্রকার?
ড্রাগন ফল মৃলত ৩ প্রকার যথা- সাদা, লাল এবং হলুদ।
ড্রাগন ফল এর অপকারিতা কি?
অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে এলার্জি হতে পারে। এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে রিসার্চ করতে গিয়ে আমরা এই ড্রাগন ফল এলার্জি অবস্তায় অতিরিক্ত না খাওয়ার বিষয়টি পেয়েছি। এছাড়াও এমনকি ডায়ারিয়াও হতে পারে তাই এ থেকে সাবধান থাকাই ভালো।
ড্রাগন ফল কত দিনে পাঁকে?
ড্রাগন ফল পাঁকতে মূলত দেড় থেকে দুই মাস লাগে।
ড্রাগন ফলের কি কি উপকারিতা আছে?
আমরা জানি, ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। যেমন- ড্রাগন ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাই, ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পাই, হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করে, হাটকে ভালো রাখে, এছাড়াও চুলপড়া কমায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্ত পরিস্কার করে, কান্সার রোগ প্রতিরোধ করে, হাড় শক্ত করে ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-