সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা ও সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা

হামদর্দ গ্রুপের একটি পণ্য সিনকারা সিরাপ। সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ গাছ গাছড়ার নির্যাস। হাজারো বছর ধরে স্নায়ু ও পেশির বলবর্ধক হিসেবে প্রচুর ব্যবহৃত হয়, শক্তির যোগান দান করে ও উদ্দীপনা এবং এর ব্যবহার বর্তমানেও হয়ে আসছে।

সিনকারা সিরাপ টি গাছ গাছড়া থেকে তৈরি হওয়ায় দ্রুত রক্তের সাথে মিশে যায় এবং বিভিন্ন অঙ্গের কোষে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিক্ষা করে

প্রমাণিত করে, তারপর বাজারজাত করা হয়। এটি পরিবারের সকলের জন্য সব ধরনের ঋতুতে একটি আদর্শক শক্তিবর্ধক ঔষধ হিসেবে সেবন করা যায়। সিনকারা সিরাপ শিশুর মেধা বিকাশে অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে এবং এটি শিশুর শিক্ষণ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছে সেটা।

\মানবদেহের যে কোষগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় বা কোষগুলো শুকিয়ে যায়, সে কোষগুলোকে সজীব ও প্রাণবন্ত করতে সিনকারা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আজ আমরা সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

আরও পড়ুনঃ গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, চিকিৎসা ও ব্যাবহারবিধি 

সিনকারা সিরাপ খেলে কি মোটা হয়

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা

সিনকারা সিরাপ টি মূলত শরীর মোটা করার জন্য কার্যকরী নয়। প্রকৃতির গাছ গাছরার নির্যাস থেকে এই সিরাপটি তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন উপকারী গাছ থেকে তৈরি করা হয়েছে সিরাপটি। বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ এই সিরাপটি খেলে শরীরের অনেক পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করবে।

আমরা বিভিন্ন সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। সেসব অসুখ থেকে সুস্থ হওয়ার পর শরীরে দুর্বলতা ও পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ অসুস্থ থাকাকালীন অবস্থায় আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে পারি না ও নিজের যত্ন নিতে পারি না।

এই অবস্থায় আমাদের মুখের রুচি কমে যায়। মুখের রুচি বৃদ্ধির জন্য সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা অনেক। মুখের রুচি বৃদ্ধির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই সিরাপটি খেতে পারেন। এটা খাওয়ার পর মুখের রুচি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে শুরু করবেন।

সিনকারা সিরাপটি খাওয়ার পর মুখের রুচি বাড়তে থাকে। যার কারণে ক্যালোরি যুক্ত খাবার যখন বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় এবং এর পাশাপাশি শরীরের যত্ন নিলে, অনায়াসেই রোগা শরীর মোটা হতে থাকে।

সিনকারা সিরাপ খাওয়ার নিয়ম 

অপ্রাপ্তবয়ষ্ক: প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাওয়ার পর ২ চামচ করে সিনকারা সিরাপ খাবে।

প্রাপ্তবয়ষ্ক: প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাওয়ার পর ৫ থেকে ৬ চামচ করে সিনকারা সিরাপ খাবে। অর্থাৎ প্রতিদিন ২ বার ৩০ মিলি সেবন করা যাবে। সিনকারা সিরাপ খাওয়ার সঠিক নিয়ম রেজিস্টার্ড প্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সিনকারা সিরাপের উপাদান

প্রতি ৫ মিলি সিরাপে জলীয় নির্যাস আকারে রয়েছে-

উপকরণ মি.গ্রাম
Eugenia caryophyllus(লবঙ্গ)৫০ মিগ্রা
Nardostachys jatamansi(জটামাংসী)৫০ মিগ্রা
Zingiber zerumbet(একাঙ্গি)৫০ মিগ্রা
Cinnamomum zeylanicum(দারুচিনি)৫০ মিগ্রা
Rosa damascena(গোলাপ)৫০ মিগ্রা
Santalum album(শ্বেত চন্দন)৫০ মিগ্রা
Ocimum sanctum(তুলসী)৫০ মিগ্রা
Usnea longissima(শৈলজ)৫০ মিগ্রা
Daucus carota(গাজর)২০০ মিগ্রা
Emblica officinalis(আমলকী)১০০ মিগ্রা
Aquilaria agallocha(আগর)৫০ মিগ্রা
Amomum subulatum(বড় এলাচ)৫০ মিগ্রা
ndrum sativum(ধনিয়া)৫০ মিগ্রা
Cyperus rotundus(নাগরমুথা)৫০ মিগ্রা
Elettaria cardamomum(ছোট এলাচ)৫০ মিগ্রা

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:-

  • ভিটামিন ঘাটতি: যাদের খাবারের প্রতি অনীহা, রুচি পান না, খাবারের স্বাদ পান না সিনকারা তাদের জন্য বিশেষ ভাবে উপকার করে থাকে। এটা পরিক্ষিত যে, নিয়ম করে প্রতিদিন সিনকারা খেতে থাকলে আপনি নিজেই খাবারের পিছনে লেগে থাকবেন। 
  • অবসাদ: কারো কারো কাজে মন বসে না, ভালো লাগে না, বেশি বেশি ঘুম পায়, ক্লান্তি বোধ, অসার লাগা, ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয় ইত্যাদি। এই ধরনের সাধারণ দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে সিনকারা কার্যকরী।
  • স্নায়ুচাপ: যাদের শরীরে রক্ত প্রবাহ কম বা রক্ত চাপ কম, তাদের জন্য সিনকারা অনেক উপকারী। 
  • গর্ভকালীন: গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের জন্য এটা খুব উপকারী, কারণ এটাতে বড় এলাচ, দারুচিনি, ধনিয়া, লবঙ্গ, গোলাপ, জটামাংসী ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। 
  • দুর্বল অবস্থা: মেয়েদের মাসিকের সময় যে রক্ত ক্ষরণ হয় সেজন্য শরীর দুর্বল হয়। শরীরের স্বাভাবিক বল শক্তি ফিরিয়ে আনতে সিনকারা অত্যন্ত উপকারী। 
  • পুষ্টিহীনতা: যেসব মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, বেশিরভাগ শিশুদের দেখা যায় বুকের দুধ ঠিক মতো পায় না। সেজন্য মায়েদের সেসময় সিনকারা খাওয়া উচিত। 
  • মেধা বিকাশ: সিনকারা এমন একটা ঔষধ যেটা শিশুর মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। সাধারণ বাচ্চাদের তুলনায় সিনকারা সেবনকারী বাচ্চাদের মেধা বিকাশ ৪৭ শতাংশ বেশি হয়।
  • আদর্শ ঔষধ: সিনকারাতে রয়েছে প্রচুর জিংক। যা গর্ভবতী মা ও শিশুদের আদর্শ একটা ঔষধ। সব গর্ভবতী মায়েদের এটা সেবন করা উচিত। 
  • মানসিক দুর্বলতা: যারা অনিদ্রায় ভুগেন। অনিদ্রার কারণে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মেধা শক্তি লোপ পাওয়া, মানসিক দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে সিনকারার ভূমিকা অনেক। 
  • রক্ত স্বল্পতা: যাদের শরীরে রক্ত স্বল্পতা, হিমোগ্লোবিন ও আয়রনের মাত্রা কম থাকা সমস্যা রয়েছে, এই সমস্যার সমাধান পেতে সিনকারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • ধূমপান রোধে: ভারতের একটা গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের বিরুদ্ধে কাজ করে সিনকারা। অতিরিক্ত যারা ধূমপান করে,  তারা নিয়মিত সিনকারা সেবন করলে ধূপমান আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা সম্ভব। 
  • ব্যথায় কার্যকরী: বয়ষ্কদের হাতের কব্জিতে ব্যথা, পায়ের পাতা ফুলে ওঠলে সিনকারা নিয়ম করে খেলে এটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
  • বার্ধক্যরোধ: ভারতে প্রচুর পরিমাণে বার্ধক্য রোধে সিনকারা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সিনকারা সিরাপের অপকারিতা

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতার তুলনায়  অপকারিতা নেই বললেই চলে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি আপনি নিয়ম মাফিক সিরাপটি খেতে থাকেন তেমন কোনো সমস্যা দেখা দিবে না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, ত্বকে ফুসকুড়ি, মাথা ঘোরার সমস্যা ও পানির পিপাসার মতো সমস্যা হতে পারে। তবে প্রায় সব ধরনের ভিটামিনে একটা টক্সিক মাত্রা রয়েছে।

এই মাত্রার ওপর এত বেশি মাত্রার ভিটামিন গ্রহণ করা ঠিক না। তারপরও শিশুরা দুর্ঘটনা বশত বেশি পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করে ফেলে। তাই সব ধরনের ঔষধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত। তাছাড়া অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে সিনকারা খাওয়া বন্ধ করবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সিনকারা সিরাপ কতদিন খেতে হবে

ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর সিনকারা সিরাপটি সেবন করবেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন এই সিরাপটি সেবন করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ডোজ খেতে পারেন। এই সিরাপ ২০ থেকে ৩০ দিন খেতে পারেন। অনেকে ৩০ দিন সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আবার অনেকে ২২ দিন সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ৩০ দিনের বেশি কখনোই এই সিরাপ সেবন করা ঠিক নয়। আমাদের সবারই সতর্ক থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

ভিটামিন সিরাপ খেলে কি হয়

ভিটামিন B12, B6 ও জিংক ভিটামিন সিরাপে বিদ্যমান থাকে। যেটা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষুধা বোধ বাড়ায়। আমাদের রুচি বাড়ায়। অন্য পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া হয় ও পাশাপাশি ভিটামিন সিরাপ না খাওয়া হয়, তাহলে মিনারেল ও ভিটামিনের অভাবে আবারো ক্ষুধা কমে যায়। এবং রুচিও কমে যায়। এর পাশাপাশি “প্লাসিবো” ইফেক্টও কাজ করে থাকে।

শেষ কথা

সিনকারা সিরাপ হচ্ছে একটি আদর্শ হারবাল শক্তিবর্ধক ঔষধ। বৈজ্ঞানিকভাবে পরিক্ষিত, এটা শরীরের সকল কোষ-কলায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সব ঋতুতে সবার জন্য এটা সেবন যোগ্য। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেস উপাদান, প্রাকৃতিক খনিজ ও প্রাকৃতিক ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে সিনকারা থেকে পাওয়া যায়।

ছোট থেকে বড় সবাই সিনকারা সিরাপটি নিরাপদে খেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেলে ভালো হয়। প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে এক মাস এই সিরাপ খেতে পারেন। দীর্ঘদিন একভাবে খাওয়া ঠিক নয়।

আজকের আর্টিকেলে সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতার অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, দাম ও আরো বিস্তারিত সব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনাদের মনের মধ্যে যেসব প্রশ্ন আছে সব উত্তর পেয়ে যাবেন।

সিনকারা সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। সিনকারা সিরাপ কত মিলি?

উত্তর: সিনকারা সিরাপ ৪৫০ মিলি,  ২২৫ মিলি ও ১০০ মিলি হয়ে থাকে।

২। সিনকারা সিরাপ খেলে কি ক্ষতি হয়?

উত্তর: সব ধরনের ভিটামিনেই টক্সিক মাত্রা রয়েছে। এই মাত্রার ওপর অতিরিক্ত ভিটামিন সেবন অবশ্যই ক্ষতিকর।

৩। সিনকারা সিরাপ কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: সিনকারা সিরাপটি যেকোনো দোকান অথবা ফার্মেসীতে পেয়ে যাবেন।

৪। সিনকারা সিরাপের দাম কত?

উত্তর: বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১০০ মিলি প্যাকেজের দাম ৬০ টাকা,

২২৫ মিলি প্যাকেজের দাম ১২০ টাকা,

৪৫০ মিলি প্যাকেজের দাম ২০০ টাকা

৫। সিনকারা সিরাপ খাওয়ার আগে না পরে খেতে হয়?

উত্তর: অনেকেই এই সিরাপ খাওয়ার আগেই খেয়ে ফেলে। মোটেও এটা ঠিক নয়। এই সিরাপ খাওয়ার পরে (ভরা পেটে) খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম ও খাওয়ার নিয়ম

মুখের ব্রণ দূর করার উপায়, চিকিৎসা পদ্ধতি

Leave a Comment