চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধে ঘরোয়া উপায়

চুল পড়ার কারণ

চুল, একজন ব্যাক্তির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বর্তমানে কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনে মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটির যত্ন নিতে ভুলে যায়।

এই সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো “ চুল পড়া ”। মেয়েদের মাঝে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যেত। আজকের আর্টিকেলে জানবো চুল পড়ার কারণ ও এর প্রতিকার। 

মেয়েদের মাঝে এই সমস্যা নিয়ে অভিযোগ অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে চুল পড়ার কারণ ও চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ

প্রকৃতিতে এমন ভেষজ ওষুধ রয়েছে যা চুল পড়া ঠেকাতে কাজ করে। এগুলো আমাদের আশেপাশেই রয়েছে কিন্তু আমরা এগুলোর গুণাবলী সম্পর্কে অবগত নই। আর এই জন্যই আমরা এগুলোকে ঠিক ভাবে চিনে ব্যবহার করতে পারি না।

তাই আসুন এই উপকারী জিনিসগুলো সম্পর্কে একটু জনে নিই :-

মেথি

চুল পড়া বন্ধ করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর মেথি। মেথি এক ধরনের ভেষজ যা নিয়মতি কিছুদিন চুলের গোড়ায় ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

পেঁয়াজ

পেঁয়াজে রয়েছে সালফার যা চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজানোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এটিকেও চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

আদা

আদা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ যার কান্ড মূলত ব্যবহার করা হয়। চুলের যত্নে মূলত আদার কান্ড থেকে নিঃসৃত রস ব্যবহার করা হয় যেটি চুলের খুশকি সমস্যা দূর করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায়্য করে।

চুল পড়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ

একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে একজন মানুষের দিনে ১০০ টি থেকে ১৫০ টি চুল ঝরে পরে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। এরকম হলে তাতে চিন্তার কিছু নেই তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ চুল ঝরে পরে তাহলে সেটি অবশ্যই “ চুল পড়া ” সমস্যার জানান দেয়। তাই যারা এই সমস্যায় ভুগেতে শুরু করেন তারা এটির সমাধান হিসেবে অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান।

তাই আমরা প্রথমে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণগুলো সম্পর্কে জেনে নিই :

 ১. কাজের চাপ

কর্ম ব্যস্ত জীবনে মানুষ যখন অতিরিক্ত কাজ করে তখন সে এক প্রকার মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় যার জন্য অনেক সময় চুল পড়তে শুরু করে। রিসার্চে দেখা গিয়েছে, যারা স্ট্রেস ফ্রী জীবন যাপন করে তারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয় না। কিন্তু যারা স্ট্রেসফুল জীবন যাপন করে তারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়।

 ২. হরমোনাল ইমব্যালেন্স

চুল পড়ার কারণ এর মধ্যে হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণের তুলনায় কমতি বা বাড়তি থাকে তাদের এই রকম হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।

 ৩. শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি

মানুষের চুল কেরাটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন দিয়ে তৈরী। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন এবং ৩ ভাগ পানি রয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে চুলের জন্য প্রোটিন অনেক গুরুত্বপূর্ন উপাদান। আর মানুষের শরীরে যখন এই উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয় তখন চুল পড়তে শুরু করে।

 ৪. সালফেটযুক্ত শ্যাম্পুর ব্যবহার

অধিক পরিমাণে সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু দীর্ঘদিন ব্যবহার করার ফলে মাথার ত্বক রুক্ষ হয়ে যায় ও চুলের কোষ অর্থাৎ কেরাটিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা অতিরিক্ত হারে চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ।

৫. চুল পড়ার কারণ – চুলে তাপ প্রয়োগ

বর্তমানে ভিন্ন রকমের হেয়ার স্টাইল করার জন্য এখন অনেকেই চুল স্ট্রেট, কার্ল ও ব্লো ডাই করে থাকে। এই প্রতিটি স্টাইলিং ট্রিটমেন্টে হিট বা তাপ ব্যবহার করা হয় এবং এবং এর কারণে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়।

 ৬. স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অভাব

একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্যকর ডায়েট তার শরীর যেমন সুস্থ রাখে তেমনি তার ত্বক ও চুল -কে অনেক সুন্দর এবং দিপ্তীময় রাখতে সাহায্য করে। তাই চুল ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর ডায়েটের ভূমিকা অপরিসীম। আর পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেওয়ার ফলে চুল পড়তে শুরু করে।

 ৭.মাথায় গরম পানির ব্যবহার

মাথার ত্বক বেশ সংবেদনশীল একটি অংশ। গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার করলে মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাশাপাশি চুলের গোড়া নরম করে দেয়। আর এই জন্যও চুল পড়তে শুরু করে।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

টক দই ও ভিনেগার

টক দই এ রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যেটি খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও টক দই চুলের রুক্ষতা দূরীকরণে সাহায্য করে।

ভিনেগার চুলকে গভীর ভাবে পরিস্কার করে এবং এর পাশাপাশি চুলকে সিল্কি ও স্মুথ করে। আবার এটি চুলে কন্ডিশনারেরও কাজ করে।

টক দই ও ভিনেগারে এর এই প্যাকটি বানানোর জন্য প্রথমে একটি পাত্রে ৩ টেবিল চামচ টক দই নিতে হবে। এর পর তাতে ১ টেবিল চামচ পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার অথবা নরমাল ভিনেগার নিয়ে সেটি মিশিয়ে নিতে হবে।

তারপর এই প্যাকটি চুলে এবং চুলের স্ক্যাল্পে ভালো ভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর প্যাকটি ৩০ মিনিট চুলে রেখে নরমাল যে কোনো শ্যাম্পু দিয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ২ বার এটি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

এই প্যাকটি প্রথমবার ব্যবহারের পর থেকেই ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ করতে পারবেন।

তিশি বা ফ্লেক্স সিড মাস্ক

তিশি বা ফ্লেক্স সিড –এ আছে ওমেগা থ্রী এবং ফ্যাটি এসিড যা ড্যামেজ চুল রিপেয়ার করতে সক্ষম।

তিশি বা ফ্লেক্স সিড মাস্ক তৈরীর জন্য প্রথমে ২০০ গ্রাম পানি একটি পাত্রে নিয়ে গরম করতে দিতে হবে। পানি গরম হয়ে গেলে তাতে ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ তিশি বা ফ্লেক্স সিড সেইটাতে দিয়ে ভলো ভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত সেইটা থেকে  জেল না বেরিয়ে আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত ফোটাতে হবে। জেল বেরিয়ে আসার পর তা চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে নিতে হবে।

এরপর ৪ টেবিল চামচ তিশি বা ফ্লেক্স সিড জেল, ২ চামচ এক্সট্রা নারিকের তেল এবং ৩ টেবিল চামচ এ্যালোভেরা জেল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণটি পুরো চুলে লাগিয়ে ২৫ মিনিট রেখে তারপর যে কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু  দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

প্রোটিন প্যাক

চুলে প্রোটিন এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য এই প্যাক চুলে ব্যবহার করা হয়। প্রোটিনের মূল উৎস হচ্ছে ডিম। ডিমের শতকরা ৯০ ভাগই প্রোটিন।

প্রোটিন প্যাক তৈরীর জন্য প্রথমে ১ টি ডিম ফাটিয়ে একটি পাত্রে নিতে হবে (কুসুম সহ)। এইবার তাতে ২ চামচ পরিমান টক দই, ২ চামচ পরিমাণ অলিভ অয়েল একসাথে ফেটিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

তারপর এটি পুরো চুলে ভালো ভাবে লাগিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট রাখতে হবে। এরপর যে কোনো শ্যাম্পু  দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে চুল ভেজানোর পরে অব্যশই আলতো হাতে চুলে ম্যাসাজ করতে হবে

কলা ও ডিমের প্যাক

চুল পড়া বন্ধের ঘরোয়া উপায় য়ে কলা ও ডিমের প্যাকটি বানানোর জন্য প্রথমে একটি মাঝারি আকারের কলা খোসা ছাড়িয়ে তা চটকে নিতে হবে। এর পর একটি আলাদা পাত্রে ডিম ভেঙে সেখান থেকে ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম আলাদা করে নিতে হবে।

এরপর ডিমের সাদা অংশ এবং আগে থেকে চটকে রাখা কলা এক জায়গায় করে নিতে হবে। এখন এই দুটি জিনিসের সাথে ২ চা চামচ পরিমাণ মধু যোগ করে সবগুলো জিনিস  একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

তারপর এটি সম্পূর্ণ চুলে ভালো ভাবে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই প্যাক টি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুলের শুষ্ক ভাব দূর হয়ে যায় পাশাপাশি চুল শাইনি, গ্লোসি ও ম্যানেজেবল হয়। চুলের গোড়া অনেক হেলদি হয় যে জন্য চুল পড়া সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

শেষকথা

উল্লিখিত এই প্যাকগুলো নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে চুল পড়া, চুলের রুক্ষতা, খুশকি ইত্যাদি সমস্যা থেকে নিমিষেই মুক্তি পাওয়া যাবে। টানা দুই সপ্তাহ এই নিয়মগুলো মানলেই আপনার চুল পড়ার সমস্যা খানিকটা হলেও সমাধান হবে। তারপরও যদি না কমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আজ আমরা চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে জানলাম। আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি  ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন-

মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম ও ব্যবহার

Leave a Comment