চুল ঘন করার উপায়, ঘরোয়া পদ্ধতি ও সঠিক চিকিৎসা

চুল ঘন করার উপায়

যদি চুল ঘন ও নরম হয় তা যে কোন মানুষের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ চুল নিয়ে নানা সমস্যায় ভোগেন।

খুব পরিচিত সমস্যা হলো চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, চুল মলিন ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মনের মতো করে চুল সাজানো যায় না চুল পাতলা হওয়ার কারণে।

টাক পড়ার মতো সমস্যা অস্বাভাবিক নয় যদি চুল পড়তে শুরু করে এবং নতুন চুল না গজায়।

 চুল ঘন করার উপায় ঘরোয়া পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকারী। আরও কিছু বিষয়ের প্রতি সেইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিনের কিছু যত্ন, ছোট ছোট কিছু কাজ চুলকে যন করে তুলবে।

রাতারাতি কখনো সম্ভাব হয় না পাতলা চুল ঘন করা। চুল ভালো রাখার জন্য প্রত্যেকের কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলে আমরা চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

আরও পড়ুনঃ মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম ও ব্যবহার

চুল ঘন করার বিভিন্ন পদ্ধতি 

চুল ঘন করার উপায়

১। তেল এবং সিরাম ব্যবহার

চুল নষ্ট হওয়ার অন্যতমক কারণ হলো চুলে তেল ব্যাবহার না করা। তেলের বিকল্প নেই চুল সুন্দর রাখতে চাইলে। চুল ঘন করার উপায় হলো  তেল এবং সিরাম ব্যাবহার করতে হবে প্রতিদিন নিয়ম করে।

এতে চুল রক্ষা পাবে সব ধরণের ক্ষতি থেকে। চুলে সিরাম ব্যাবহার করতে হবে গোসলের আগে ও পরে। মানানসই সিরাম ও তেল বেছে নিতে হবে চুলের জন্য। 

২। চুল পরিষ্কার রাখুন   

চুলের গোড়ায় সহজেই ময়লা জমে যায় গরমের সময়ে ঘামের কারণে। চুল পরিষ্কার করতে হবে যে কারণে নিয়মিত। চুলে শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন। চুলের স্বাভাবিক তৈলাক্ততা নষ্ট হতে পারে এর বেশি ব্যাবহার করলে। 

৩। কন্ডিশনার ব্যাবহার 

অনেকে আছে যারা কন্ডিশনার ব্যবহার এড়িয়ে যায় চুলে শুধু স্যাম্পু ব্যাবহার করে। এই অভ্যাসটি মোটেও  ঠিক নয়। প্রতিদিন কন্ডিশনার ব্যাবহার করতে হবে এটি  চুল ঘন করার উপায়।

চুল ধুয়ে নিতে হবে শ্যাম্পু করা শেষ হলে। এরপর কন্ডিশনার লাগানো শুরু করতে হবে নিচের দিকে যেতে হবে চুলের মাঝখান থেকে। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে কন্ডিশনার লাগানোর পর। 

৪। আলতো হাতে চুল আঁচড়ানো 

অনেকে ভেজা চুল আঁচড়ানো শুরু করে গোসলের পর বের হয়েই। এটি করা মোটেও উচিত নয়। কিছুটা সময় দিতে হবে চুল শুকানোর জন্য।

এরপর চুল আাঁচড়াতে হবে আলতো হাতে। সেক্ষেত্রে কাঠের চিরুনি ব্যাবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে চুল পড়ার ভয় থাকবে না চুলের গোড়া নরম হয়ে।

৫। সিল্কের বালিশ   

আর্দ্রতা শোষণ করে নেয় সুতির কাপড়। তাই চুলের আর্দ্রতা শুঁষে নেয় বালিশের কভার সুতির তৈরি হলে। তাই ব্যাবহার করতে হবে বালিশে সিল্কের কাপড়। এতে বালিশের সঙ্গে চুলের ঘর্ষণ কমবে। কম ভাঙবে চুলের ডগাও।

৬। নিয়মিত ট্রিম করুন 

 নিয়মিত ট্রিম করতে হবে এটি চুল ঘন করার উপায়। কারণ খুব সাধারণ সমস্যা চুলের আগা ভেঙ্গে যাওয়া। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত ট্রিম করলে। ফলে সুন্দর ও মজবুত হয় চুল। একবার করে ট্রিম করে নিতে হবে দেড় মাস পরপর। 

৭। ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যাবহার  

চুলের যত্নে ঘরে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যাবহার করা উত্তম বাইরে থেকে কেনা হেয়ার প্যাক ব্যাবহারের বদলে। এতে ভয় থাকে না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার। সেইসাথে খরচও বেঁচে যায়। এই হেয়ার প্যাক খুব সহজেই তৈরি করা যেতে পারে ঘরোয়া নানা উপকারী উপাদান দিয়ে।

৮। প্রোটিনে ভরপুর খাবার খেতে হবে

অনেকের চুল পড়ে যায় যদি খাবারদাবারে পুষ্টি যথেষ্ট না থাকলে। এ জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে মাছ, দুধ, ডিম, দই, ছানা ইত্যাদি। চুলের কেরাটিন মজবুদ করে চুল ঘন করে তুলে পালং, ব্রোকোলি, বাাঁধাকপির মতো সবুজ শাকসবজি। নিয়মিত খেতে হবে পেয়ারা, কমলালেবু এবং স্ট্রবেরির মত ফল।

৯। আস্থা রাখতে হবে যোগসনে

জোগসনের ভূমিকা খুব জরুরি পাতলা চুল মজবুদ করতে। যোগসন করলে শরীরে নতুন কোষ তৈরি হয় এবং শরীরে  রক্ত সংবহন বাড়ে। চুল স্বাভাবিকভাবে ঘন আর মজবুদ করে তুলতে পারে বজ্রাসন, উত্থানাসনের মতো আসন।

১০। নিয়মিত চুল মাসাজ করাতে হবে 

গরম তেল দিয়ে চুলে আর স্ক্যাল্পে মাসাজ করতে হবে সপ্তাহে একদিন শ্যাম্পু করার আগে। চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলের শুকনোভাব কমাতে সাহায্য করে নারিকেলের তেল, আমন্ড অয়েল, অ্যাভোকোডা বা অলিভ অয়েলের মতো প্রাকৃতিক তেল। রক্ত সংবহন বাড়ে এবং চুলের ঘনভাব ফিরে আসে নিয়মিত স্ক্যাল্প মাসাজ করলে। 

১১। ড্রাই মাসাজেও উপকাার পাবেন 

চুলের জন্য উপকারী শুধু অয়েল মাসাজই নয়, ড্রাই মাসাজও। আঙুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পটা মাসাজ করতে হবে প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার আগে। এতে চুলের গোছাও ভালো হবে এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সংবহন বাড়বে।

১২। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হেয়ার মাস্ক

পাতলা চুল ঘন করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে পেঁয়াজের রস, অ্যালো ভেরা জল, কাস্টার অয়েল, নারিকেলের তেলের মতো সাধারণ উপাদানে অজস্র ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে যা খুব উপকারী হয়ে থাকে। নিজেস্ব হেয়ার মাস্ক এসব উপাদান দিয়ে তৈরি করতে হবে।

দারুণ কার্যকর হেয়ার মাস্ক তৈরি করা যায় অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টার অয়েলের সাথে অ্যালোপ ভেরা বা পেঁয়াজের রস মিশাতে হবে। আধা ঘন্টা  চুলে আর স্কালে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। চুল ধীরে ধীরে ঘন হতে শুরু করবে প্রতি সপ্তাহে একবার ব্যাবহার করলে। 

১৩। কাঠবাদাম তেল  

অনেক সময় বাড়িতে কাঠবাদামের তেল তৈরি করা যায়। কাঠবাদামের তেল দোকান থেকে কিনতেও পাওয়া যায়। এই তেল গরম করে ব্যাবহার করলে বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। কাঠবাদামের তেল মাথায় দেওয়ার পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর। চুল রম্বা হবে সপ্তাহে তিন দিন ব্যাবহার করলে। 

১৪। আমলকি 

আমলকির ভূমিকা অনবদ্য কেশচর্চায় এটি চুল ঘন করার উপায়  হিসাবে পরিচিত। প্রথমে ১ চা চামচ ক্যাস্টার ওয়েল আধা কাপ আমলকির গুঁড়ার মধ্যে মিশিয়ে নেন। এরপর ডিমের সাদা অংশ এই মিশ্রণে মিশিয়ে নেন।

তারপর চুলে মেখে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ মিনিটের মতো।এরপর ধুয়ে নিতে হবে শুকিয়ে আসলে। সুফল মিলবে সপ্তাহে ২-৩ ব্যাবহার করলে। 

১৭। ডিম 

ডিম চুল ঘন করার জন্য খুব কার্যকারী হয়ে থাকে। চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে আধ কাপের মতো ডিমের সাদা অংশ। ঠান্ডা জলে দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করার পর। 

১৮। লেবু 

 লেবুর রস চুল ঘন করার উপায় হলো চুলের গোড়ায় ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে শ্যাম্পু করার পর এক চামচের মতো পাতি লেবুর রস।

আধা ঘন্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে ভিজে চুলে শুকনো তোয়ালে জড়িয়ে। তারপর আর ভেজানো যাবে না চুল। একবার শ্যাম্পু করে নেওয়া যায় পরের দিনে চাইলে।

১৯। নিম   

নিমপাতার রস চুুল লম্বা করতে সাহায্য করে থাকে। চুলে ভালো করে মেখে নিতে হবে নিমপাতা বেটে। নিমপাপতার জুড়ি মেলে না জমে থাকা ময়লা দূর করতে। নিমপাতা যথেষ্ট উপকারী চুল বগ করতেও। 

পরিশেষে

চুল সৈন্দর্য বৃদ্ধি করে বহুগুণ। চুল ঘন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিতে হবে। নানা কারণে চুল উঠে পাতলা হয়ে যেতে পারে যেমন: বাড়তে থাকা বয়স, পরিবেশ দূষণ, মানসিক চাপ এবং অসুস্থতার মতো নানা কারণে।

অনেক সময় হেয়ার স্টাইলিং করতে চুলে তাপপ্রয়োগ এবং ক্যামিকেল ব্যাবহার চুলের ক্ষতি করে। তাই আমাদেরকে সর্তক হওয়া উচিত এই ব্যাপারে।

চুল ঘন করার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য কি খাবার খেতে হবে?

উত্তরঃ

১। বাদাম ও বীজ: কাঠ বাদাম, সূর্যমূখির বীজ চুলের বৃদ্ধিতে চমৎকার কাজ করে। এগুলো বায়োটিন ও ভিটামিন বি’র ভালো উৎস।

২। শস্য: বাদামি চাল এবং ওটস ভিটামিন বি’র ভালো উৎস। যা চুলের গোড়া শক্ত করতে সহায়তা করে।

৩। সিট্রাস ফল: কমলা ও লেবু ফোলেইট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। .

 ২। চুল কত দিনে লম্বা হয়?

উত্তরঃ রিপোর্ট অনুযায়ী, মাসে গড়ে আধ ইঞ্চি করে প্রত্যেকের চুল লম্বা হয়। বছরে গড়ে ৬ ইঞ্চি চুল লম্বা হয়। তবে এই পরিমাপে সামান্য হেরফের হতে পারে।

৩। কিভাবে চুল ঘন করা যায়?

উত্তরঃ অয়েল ম্যাসাজ: মাথার ত্বকে রক্ত রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে স্কাল্পে হালকা হট অয়েল ম্যাসেজ করতে পারেন। নিয়মিত এই ধরনের ম্যাসাজ চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন মেথি ও কালোজিরা সমৃদ্ধ তেল। চুল ঘন করার পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং চুল পড়া কমাতেও সাহায্য করবে এটি।

আরও পরুন-

চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

৭ দিনে চুল লম্বা করার উপায়

Leave a Comment