দাবা খেলার নিয়ম ও শর্তাবলি

দাবা খেলার নিয়ম

বিশ্বব্যাপি খেলা হয় এমন ইনডোর গেমসগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় এক নাম হলো দাবা বা Chess। কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ যে কোনো বয়সের ও শ্রেণিপেশার মানুষ এই খেলায় নিজের মুন্সিয়ানা দেখাতে পারে। প্রাচীন যুগের রাজা-মহারাজাদের থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের সকলের কাছেই অন্যতম পছন্দের এক খেলা হলো দাবা।

দাবা খেলার নিয়ম জানলে একটি চালই প্রতিপক্ষের শনির দশা ডেকে আনতে পারে। এই খেলায় বয়সের কোনো বাঁধ নেই। ১০ বছর বয়সি শিশুর কাছে ৭০ বছর বয়সি ঠুনকো বৃদ্ধও হেরে যাতে পারে দাবার আসরে।

তবে দাবা (chess) খেলায় যথেষ্ট পারদর্শী হতে হলে অবশ্যই এই খেলার নিয়মগুলো সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে হবে। রাজা, মন্ত্রী, হাতি, ঘোড়াসহ ১৬ ঘুঁটির সমন্বয়ে গঠিত সৈন্যদল নিয়ে সঠিক নিয়মে খেলতে হবে। সেইসাথে প্রতিপক্ষের রণকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটাও জরুরি। দাবা খেলা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানের পাশাপাশি লাগাতার প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে আপনিও এই খেলায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

দাবা খেলার নিয়ম –  ঘুঁটি

দাবা খেলার নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিকট ১৬ টি ঘুঁটি থাকে। ১টি রাজা, ১টি মন্ত্রী, ২টি হাতি, ২টি নৌকা, ২টি ঘোড়া ও ৮টি সৈন্য বা বোড়ে নিয়ে এই ১৬ টি ঘুঁটি গঠিত হয়। মুলত আলাদা আলাদা ছয় ধরণবিশিষ্ট ঘুঁটি নিয়েই দাবার বোর্ড সাজানো হয়। বোর্ডে এই ঘুঁটিগুলো খেয়ালখুশি মতো চালা যায় না। এর জন্য বেশ কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। দাবা (chess) খেলায় ছয় ধরণের ঘুঁটি চালার নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক :

রাজা

প্রধান ঘুঁটি হলো রাজা বা King । বিবেচনায় রাজাকে সবচেয়ে দূর্বল ঘুঁটি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।  রাজা উপরে, নিচে, কোণাকুণি ও পাশাপাশি অর্থাৎ যেকোনো দিকে শুধুমাত্র একঘর যেতে পারবে। তবে রাজা কখনও নিজের চেক  এর মধ্যে দিয়ে যেতে পারবে না। রাজার মূল্য বা পয়েন্ট হলো অসীম।

মন্ত্রী

সবচেয়ে শক্তিশালী ঘুঁটি হলো মন্ত্রী। যদিও ইংরেজিতে এই  ঘুঁটিকে Queen বলা হয়। মন্ত্রী সামনে, পিছনে, পাশাপাশি, কোণাকুণি যেকোনো দিকে চালা যায় যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের ঘুঁটির ওপর দিয়ে না যাচ্ছে। মন্ত্রীর মূল্য বা পয়েন্ট হলো ৯।

হাতি

হাতি বা Bishop শুধুমাত্র কোণাকুণি চলতে পারে। হাতিকে নিজের ইচ্ছেমতো যতদূর মন চায় কোণাকুণি চালতে পারবেন। হাতির মূল্য বা পয়েন্ট হলো ৩।

নৌকা

নৌকা বা Rook উপরে, নিচে এবং পাশাপাশি চালা যায়। হাতির মতো নৌকাও নিজের ইচ্ছেমতো যতদূর মন চায় চালতে পারবেন। নৌকার মূল্য বা পয়েন্ট হলো ৫।

ঘোড়া

দাবা খেলায় ঘোড়া বা Knight এর চাল অন্যান্য ঘুঁটির তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রম। ঘোড়ার চাল অনেকটা ইংরেজি “L” অক্ষরের মতো। ঘোড়া সবসময় আড়াই ঘর চলে। অর্থাৎ উপরে-নিচে অথবা ডানে-বামে ২ ঘর গিয়ে ঐ ঘর থেকে আবার ডানে-বামে অথবা উপরে-নিচে ১ ঘর যেতে হয়। ঘোড়ার মূল্য বা পয়েন্ট হলো ৩।

সৈন্য

সৈন্য বা Pawn এর দুই ধরনের চাল রয়েছে। সৈন্য চলে এক নিয়মে তবে প্রতিপক্ষের ঘুঁটি খায় আরেক নিয়মে। সৈন্য শুধুমাত্র সামনে একঘর করে চালা যায়(তবে সৈন্যের প্রথম চাল এর ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে ২ ঘরও চালা যায়)। সৈন্য কখনোই পেছনের দিকে চলতে পারেনা। সৈন্যের সামনে নিজ দল অথবা প্রতিপক্ষ দলের ঘুঁটি থাকলে সৈন্য টপকে যেতে পারেনা। তবে কোণাকুণি প্রতিপক্ষ দলের ঘুঁটি থাকলে সৈন্য তা খেয়ে ফেলতে পারে। সৈন্যের মূল্য বা পয়েন্ট হলো ১।

আরও পড়ুনঃ মজাদার খিচুড়ি রান্নার রেসিপি ও নিয়ম প্রণালি

দাবার বোর্ড সাজানোর নিয়ম

দাবার বর্গাকার বোর্ডটিতে দৈর্ঘ্য বারবার ৮টি এবং প্রস্থ বরাবর ৮টি করে সর্বমোট (৮×৮)= ৬৪ টি  ঘর থাকে। এর মধ্যে ৩২টি ঘর এক রঙের এবং বাকি ৩২ টি ঘর অন্য রঙের হয়। বোর্ডে পাশাপাশি থাকা দুটি ঘরের রং কখনোই একরকম হয় না। দুই রঙের চেকবিশিষ্ট এই বোর্ড সাধারণত সাদা-কালো চেকযুক্ত হয়ে থাকে। সেই অনুসারে ঘুঁটির রং-ও কালো-সাদা হয়ে থাকে। বোর্ডে প্রত্যেক পক্ষের ১৬টি ঘুঁটি সঠিক নিয়মে সাজাতে হয়।

নিম্নে দাবার (chess) বোর্ডে ঘুঁটি সাজানোর নিয়ম দেখানো হলো:

  • প্রথমেই বোর্ডের একবারে নিচের সারিতে চলে আসুন এবং ডান কর্নারে একটি নৌকা বসিয়ে দিন। একইসাথে বাম পাশের কর্নারে একটি নৌকা বসিয়ে দিন
  • এরপর ডানদিকে থাকা নৌকার পাশে একটি ঘোড়া বসিয়ে দিন। এরপর বামদিকে থাকা নৌকার পাশে একটি ঘোড়া বসিয়ে দিন
  • এরপর ডানদিকে থাকা ঘোড়ার পাশে একটি হাতি বসিয়ে দিন। একইভাবে বামদিকে থাকা ঘোড়ার পাশে একটি হাতি বসিয়ে দিন 
  • পরিশেষে মাঝবরাবর একটি সাদা ঘর এবং একটি কালো ঘর অবশিষ্ট থাকবে। আপনার ঘুঁটির রং কালো হলে রাজা বসবে সাদা ঘরে এবং মন্ত্রী বসবে কালো ঘরে। আর আপনার ঘুঁটির রং সাদা হলে রাজা বসবে কালো ঘরে এবং মন্ত্রী বসবে সাদা ঘরে 
  • এরপর ঠিক উপরের সারিতে চলে আসুন এবং সারিতে থাকা ৮টি ঘরে ৮টি সৈন্য বসিয়ে দিন 

দাবা খেলার নিয়ম – প্রথম চাল 

দাবা খেলার নিয়ম এ সবসময় সাদা ঘুঁটি দিয়েই প্রথম চাল দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে খেলোয়াড় সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলতে নামে সেই খেলোয়াড়ই প্রথম চাল দেয়। এখন প্রশ্ন হলো সাদা ঘুঁটি নিয়ে কে খেলবে তা কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?

সাদা ঘুঁটি নিয়ে কে খেলবে তা নির্ধারণ করা হয় টস অথবা ভাগ্যপরীক্ষার মাধ্যমে। সাদা ঘুঁটির খেলোয়াড় নির্ধারণে অন্যতম কার্যকরী উপায় হলো কয়েন টস। এছাড়াও আরেকটি উপায়ের নাম হলো ভাগ্যপরীক্ষা, যেখানে একজন খেলোয়াড় নিজের হাতের মুঠোয় একটি ঘুঁটি লুকিয়ে রাখে এবং আপর খেলোয়াড়কে বলতে হয় ঘুঁটিটি কোন রঙের। যে খেলোয়াড় এই ভাগ্যপরীক্ষায় জিতে যায় সে প্রথম চাল দেওয়ার সুযোগ পায়।

আরও পড়ুনঃ Quora মার্কেটিং কি? কিভাবে কোরা (Quora) মার্কেটিং করবেন

দাবা খেলার নিয়ম – বিশেষ চাল

দাবা খেলার নিয়ম অনুযায়ী ৬ ধরণের ঘুঁটির চাল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। দাবার (chess) আনুষঙ্গিক কিছু নিয়মও রয়েছে যা খেলার সময় কাজে লাগতে পারে।

ক্যাসলিং

ক্যাসলিং হলো দাবা (chess) খেলার একটি বিশেষ চাল যে চালে রাজা নৌকার দিকে দুই ঘর যাবে এবং নৌকা রাজাকে টপকে তার বিপরীত পাশের ঘরে বসবে। তবে ক্যাসলিং এর জন্য কিছু শর্ত মানা জরুরি। রাজা ও নৌকা উভয়ের প্রথম চাল হলেই ক্যাসলিং করা সম্ভব। রাজা ও নৌকার মধ্যবর্তী ঘরগুলোতে কোনো ঘুঁটি থাকলে ক্যাসলিং করা যাবেনা। রাজা চেক থাকা অবস্থায় ক্যাসলিং করা যায়না। 

এন প্যাসান্ট

এন প্যাসান্ট হলো সৈন্যের এক ধরনের চাল। দেশীয় দাবাড়ুরা এন প্যাসান্ট ব্যবহারে অতটা তৎপর না হলেও আন্তর্জাতিক দাবায় এই চাল ব্যবহার করা হয়। যখন কোনো সৈন্য পঞ্চম সারিতে থাকা অবস্থায় তার সাথে কোণাকুণি অবস্থানে থাকা প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় সারির কোনো সৈন্য যদি তাকে পাশ কাটিয়ে দুই ঘর অতিক্রম করে তবে পঞ্চম সারিতে থাকা সৈন্যটি এর পরবর্তী চালে এক ঘর পিছিয়ে গিয়ে ঐ সৈন্যকে কেটে দেয়।

সৈন্যের পদোন্নতি

আপাতদৃষ্টিতে সৈন্যকে সবচেয়ে দূর্বল ঘুঁটি হিসেবে মনে হলেও সৈন্যের এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে যা তার মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিজ দলের কোনো সৈন্য যদি একঘর-একঘর করে আগ্রসর হতে হতে প্রতিপক্ষের শেষ সারিতে গিয়ে উপস্থিত হয় তখন সেটিকে বলা হয় সৈন্যের পদোন্নতি। সেক্ষেত্রে সেই সৈন্যের পরিবর্তে রাজা ব্যতিত অন্য যেকোনো ঘুঁটি উঠানো যাবে। আর সৈন্যের এই বিশেষ ক্ষমতাই হলো সৈন্যের পদোন্নতি। 

দাবায় ঘুঁটি কাটে কিভাবে

দাবা (chess) খেলায় ঘুঁটি কাটা তেমন কঠিন কোনো ব্যাপার না। দাবা খেলার নিয়ম এ কেনো ঘুঁটির গতিপথে কোনো ঘরে যদি নিজ দলের অন্য কোনো ঘুঁটি থাকে তবে ঘুঁটিটি ঐ ঘর অতিক্রম করে যেতে পারবে না। তবে ঐ ঘরে যদি বিপক্ষ দলের ঘুঁটি থাকে তবে ঐ ঘুঁটিকে সরিয়ে তার স্থানে বসা যাবে এবং প্রতিপক্ষের ঐ ঘুঁটিকে বোর্ড থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। আর এভাবেই আপনি প্রতিপক্ষের যেকোনো ঘুঁটিকে কাটতে পারবেন।

তবে সৈন্যর ক্ষেত্রে ঘুঁটি কাটার নিয়ম একটু আলাদা। আমার জানি সৈন্য শুধুমাত্র সামনে একঘর চলতে পারে। সেই অনুযায়ী সৈন্যের ঠিক সামনের ঘরে প্রতিপক্ষের কোনো ঘুঁটি থাকলেও সৈন্য তাকে কেটে ফেলতে পারেনা। কারণ সৈন্যে চাল দেয় সোজাসুজি তবে ঘুঁটি কাটে কোণাকুণি। যদি সৈন্যের ঠিক একঘর পরে কোণাকুণি কোনো ঘুঁটি থাকে তবেই সৈন্য ঐ ঘুঁটি কাটতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস

দাবায় ফলাফল নির্ধারণের নিয়ম-কানুন 

ইতোমধ্যে দাবার (chess) চাল, বিশেষ চাল, নিয়ম ইত্যাদি নানা বিষয় জেনে গিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো দাবা খেলায় ফলাফল কিভাবে নির্ধারিত হয়? কেমনে এই খেলায় জয়লাভ করতে হয়?

দাবা খেলা জেতার করার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। এগুলো হলো চালমাত, আত্মসমর্পণ ও টাইমআউট।

চালমাত বা চেকমেট

দাবা (chess) খেলায় চালমাত বা চেকমেট হলো একটি বিশেষ পর্যায় যখন প্রতিপক্ষের রাজার চাল দেওয়ার কোনো জায়গা থাকেনা। বাংলায় এটিকে কিস্তিমাৎ-ও বলা হয়। কোনো রাজা যখন চেকে পড়ে যায় তখন তাকে চেকমুক্ত করার জন্য তিনটি উপায় অবলম্বন করা হয়:

  • রাজাকে যেই ঘরে চেক করা হয়েছে সেই ঘরটি থেকে সরিয়ে রাজাকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া
  • রাজাকে যে ঘুঁটি দ্বারা চেক করা হয়েছে সেই ঘুঁটি কেটে দেওয়া
  • অন্য কোনো ঘুঁটি দিয়ে রাজার চেক ঠেকিয়ে দেওয়া

তবে যদি এই তিনটি উপায় থেকে কোনো উপায়ই পূরণযোগ্য না হয় অর্থাৎ কোনোভাবেই রাজাকে চেক থেকে মুক্ত করার কোনো রাস্তা না থাকে তবে সেটি চালমাত বা চেকমেট হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রতিপক্ষ দল খেলাটি জিতে যাবে।

আত্মসমর্পণ

যখন কোনো খেলোয়াড় বুঝে যায় যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোনোভাবেই জয়লাভ করা সম্ভব নয় অর্থাৎ পরাজয় নিশ্চিত তখন সে পুরো খেলা শেষ হওয়ার আগেই আত্নসমর্পণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে জিতিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিপক্ষের আত্মসমর্পণও হলো দাবায় জয়লাভ করার একটি উপায়। 

টাইম আউট

পেশাদার প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পাশে একটি স্টপওয়াচ রাখা থাকে এবং সেই স্টপওয়াচের মাধ্যমে খেলোয়াড়ের প্রত্যক চালের জন্য সময়ের হিসাব রাখা হয়। প্রত্যক খেলোয়াড়কে চাল দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। যদি খেলা শেষ হওয়ার আগেই চাল দেওয়ার সময় শেষ হয়ে যায় তবে সেটি টাইম আউট হিসেবে গণ্য হয় এবং প্রতিপক্ষ জিতে যায়।

দাবা খেলায় ড্র কখন হয়

অনেকক্ষেত্রে দাবা (chess) খেলায় জয়-পরাজয় বের করে আনা যায়না। সেক্ষেত্রে খেলা ড্র ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন কারণেই দাবা খেলা ড্র হয়ে থাকে। নিম্নে দাবা খেলার নিয়ম ড্র হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো :

  • প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা সম্মত হয়ে যেকোনো মুহূর্তেই খেলা ড্র ঘোষণা করতে পারে
  • চালমাত বা চেকমেটের জন্য বোর্ডে যথেষ্ট ঘুঁটি না থাকলে খেলা ড্র হয়
  • স্টেইলমেটের কারনেও দাবা খেলা ড্র হতে পারে। খেলায় যখন এমন এক বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন চেক না হওয়া সত্বেও রাজার কোনো বৈধ চাল থাকেনা তখন তাকে স্টেইলমেট বলে। যদিও অনেকেই স্টেইলমেটকে চালমাত(চেকমেট) এর সাথে গুলিয়ে ফেলে
  • এছাড়াও টানা ৫০ চাল হওয়ার পরেও যদি কারো কোনো গুটি কাটা না পড়ে অথবা কোনো সৈন্যের অবস্থান পরিবর্তন না হয় তবে সেই খেলাও ড্র ঘোষণা করা হয়। আর এই নিয়মটিকে বলা হয় ফিফটি মুভ রুল

আরও পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা 

দাবা খেলায় পারদর্শী হওয়ার টিপস

শুধুমাত্র চাল ও দাবা খেলার নিয়ম জানলেই হবে না, দাবায় জিততে হলে পারদর্শী হয়ে ওঠা প্রয়োজন। তবে প্রশ্ন হলো কিভাবে দাবায় পারদর্শী হয়ে ওঠা যায়। কিছু টিপস ফলো করলেই দাবায় নিজের মুন্সিয়ানা দেখানো যায়। দাবায় (chess) পারদর্শী হয়ে নিম্নে দেওয়া টিপসগুলো মানা জরুরি :

১। নিয়মিত অনুশীলন করা

দাবায় পারদর্শী হয়ে উঠার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো প্রচুর অনুশীলন করা। দাবা (chess) খেলায় পারদর্শী হওয়ার জন্যও এই মোটিভটি মনে গেঁথে রাখতে হবে। যত বেশি অনুশীলন করবেন আপনার চাল তত বেশি নির্ভুল হয়ে উঠবে। 

২। অহেতুক চাল না দেয়া

আপনার প্রত্যেকটি চালই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অহেতুক চাল দেওয়া আপনার পরাজয়ের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই কোনো বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া হুট করে চাল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।  

৩। ঘুঁটির সঠিক ব্যবহার করা

দাবা খেলায় প্রত্যেকটি ঘুঁটির সঠিক ব্যবহার সমন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। খেলার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ঘুঁটির শক্তিমত্তা হ্রাস-বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ঘুঁটিগুলোকে সঠিকমসময়ে এবং সঠিক নিয়মে চালতে হবে।

যেমন খেলার শেষ দিকে সৈন্য একেবারে দূর্বল হয়ে পরে তবে খেলার মধ্যম পর্যায়ে সৈন্যের ব্যপক ক্ষমতা থাকে। তেমনই প্রত্যেকটি ঘুঁটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে ভুমিকা রাখে। 

৪। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করা

কেউই অল্পতেই সবকিছু আয়ত্ত করতে পারেনা। নতুন কিছু শিখতে গেলে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। দাবার ক্ষেত্রেও শুরুতে বিভিন্ন ভুল হবে। আর এসব ভুলের কারণেই হাত থেকে ম্যাচ ফসকে যাবে। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে আবার একই ভুল করা যাবেনা। 

শেষকথা

দাবাকে (chess) বলা হয় মস্তিষ্কের খেলা। দাবা খেলা মানুষের বুদ্ধিভিত্তিক দক্ষতা অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়। যারা দাবা খেলে তাদের চিন্তার গভীরতা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়। দাবা খেললে দৈনন্দিন যেকোনো কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। তাই অবসর সময়ের সঠিক প্রয়োগ হিসেবে দাবা খেলা উচিত। 

এছাড়াও বর্তমানে নামমাত্র মূল্যে দাবার (chess) বোর্ড কিনতে পাওয়া যায়। যত্ন করে রাখতে পারলে এই একটি বোর্ড দিয়েই আপনি সারাজীবন চালিয়ে দিতে পারবেন। অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের শৈশব থেকে দাবা খেলার নিয়ম ও খেলার প্রতি আগ্রহী করে তোলা। কারণ অবসর যাপনের অন্যতম এক উৎসের পাশাপাশি বুদ্ধি বাড়ানোর সহজ এক মাধ্যমের নাম হলো দাবা।

দাবা খেলার নিয়ম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s

প্রশ্ন-১: দাবা কোন দেশ আবিষ্কার করেছে? 

উত্তর: দাবা খেলার আবিষ্কার হয়েছিল ভারতবর্ষে। কিছু সুত্র অনুযায়ী ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা “চতুরঙ্গ” থেকে দাবা খেলার উদ্ভব হয়েছিল। 

প্রশ্ন-২: দাবা খেলায় কয় ধরনের খেতাব রয়েছে? 

উত্তর: দাবা খেলায় প্রধানত চার ধরণের খেতাব রয়েছে। এগুলো হলো: ক্যান্ডিডেট মাস্টার (CM), ফিদে মাস্টার (FM), আন্তর্জাতিক মাস্টার (IM), গ্র্যান্ডমাস্টার (GM)।

প্রশ্ন-৩: দাবা খেলায় কোন রঙের ঘুঁটি দিয়ে চাল আরম্ভ হয়?

উত্তর: দাবা খেলায় সবসময় সাদা রঙের ঘুঁটি দিয়ে চাল আরম্ভ হয়।

আরও পড়ুন –

ডাটা এন্ট্রি কি ? ডাটা এন্ট্রি করে কত টাকা আয় করা যায়

টিন সার্টিফিকেট কি? ই-টিন (E-TIN)কী, কেন ও কীভাবে করতে হয়?

Leave a Comment