বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া
সন্তান সকলের কাছে অমূল্য। আদম আঃ থেকে মানুষের বংশধারা সন্তানদের মাধ্যমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন নিঃসন্তান স্বামী স্ত্রীর সাথে আলোচনা করলে সন্তানহীনের বেদনা উপলব্ধি করা যায়। বাবা মায়ের স্বপ্ন এই সন্তানকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।
মানুষ নিজের জন্য আর কতটুকু করে? মানুষের বেশির ভাগ আশা আকাঙ্ক্ষা সন্তানদের ঘিরেই। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক – বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু।
সন্তান অসুস্থ হলে পিতা মাতার চিন্তার শেষ থাকে না। অনেক সময় আমাদের সন্তান বদ নজরের স্বীকার হয়। আজকে আমরা জানব বদ নজর কি? শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া। সন্তানের অসুস্থতায় মায়ের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়। সন্তানের সেবা কোনটারই ঘাটতি হতে কোন ভাবেই মা বাবা দিতে চায় না।
সন্তানের ভালোর জন্য নিজের সব আরাম আনন্দ ভুলে যান। নিজের সকল কাজ, চিন্তা, সুখ-দুখ সব সন্তানকে ঘিরেই। আপনার ছেলের সুন্দর চেহারা দেখে সকলে কি খুশি হয়,মহান রবের কাছে ধন্যবাদ দেয়? আপনার সন্তানের ভাল রেজাল্টে সবায় কি আনন্দ পায়? আপনার ছেলের ভাল রেজাল্টে আরো বরকত ও কল্যাণ কামনা করে? আপনার ছেলের ভালো কিছু দেখে বা শুনে কি সকলে আলহামদুলিল্লাহ বলে?
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া আপনার সন্তানের ভালো কোন গুনাগুন শোনে কি সবার মন হিংসা মুক্ত থাকে?কারো মনে কি আফসোস জাগে না, এমন কি কেউ আছে? এই সব গুলো প্রশ্নের উত্তর যদি “না” হয়, বলুন, আপনার সন্তান কি নিরাপদ?
আরও পড়ুনঃ জাজাকাল্লাহ খাইরান অর্থ কি?
বদ নজর কি?
বদ নজর হলো নিরাপত্তাহীনতা, ঝুঁকি ও ক্ষতির নাম বদনজর বা কুদৃষ্টি বা চোখ লাগা। সহজ কথায় যখন কোন ব্যক্তি চোখের মাধ্যমে কারো উপর হিংসার করে ক্ষতি কামনা করে বা তার প্রাপ্ত বস্তুটি ছিনিয়ে নেওয়া কামনা করে তাকে বদনজর বলে। হিংসার বহিঃপ্রকাশ হল বদ নজর।
বদ নজর দেয়া মুনাফিকের কাজ, মানুষের মাঝে হিংসার জন্ম নিলে মানুষ অন্যকে বদ নজর দেয়। বা অন্নের ক্ষতি কামনা করে, যা মানুষের মৃত্যুর কারন হয়ে যায়। বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া, যুগে যুগে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের মাঝে বদ নজর লাগার কারণ পদ্ধতি নিয়ে মতবিবেধ রয়েছে। তবে কেউ অস্বীকার করেনি আল্লাহ মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
বদনজর মূলত আত্মিক, কোনো কিছুর প্রতি ভাল লাগা বা হিংসা থেকে অন্তরে এটা সৃষ্টি হয়ে চোখের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে এখানে চোখের ক্ষমতা নেই। অন্ধ ব্যাক্তির বদনজরও লাগতে পারে। বদনজর কখনো সরাসরি দৃষ্টিপাতে, কখনো বদদোয়া বা তাবিজের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। কখনো কখনো মানুষের নিজের নজর নিজেরই লাগে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যেকোনোভাবে নজর লাগতে পারে।
- মহান আল্লাহ বলেন, আর কাফেররা যখন কোরআন শোনে, তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা আপনাকে আছড়ে ফেলবে এবং বলে, এ তো এক পাগল। (সুরা কলম: ৫১) ।
- মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত বিষয় ও ফয়সালার পর আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকজন মারা যায় বদনজরের কারণে। (সহিহুল জামে : ৪০২২, সিলসিলাতুল আহাদিসিস ৭৪৭)
- হজরত জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের বদনজর একজন মানুষকে অসুস্থ করে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর উটকে নিয়ে যায় রান্নার পাত্র পর্যন্ত। (সহিহুল জামি : ১২৪৯)
- হাফেজ ইবনুল কাইয়ুম রাহঃ বলেন, বদনজরের সুচনা হয় কাউকে পছন্দ করার মাধ্যমে। অতঃপর খারাপ আত্মা তাকে অনুসরন করে এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করে,সবশেষে বস্তুর দিকে তাকিয়ে এরা চোখের হিংসার বিষ প্রয়োগ করে।
- হযরত আবু যার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, বদনজর আল্লাহর হুকুমেই মানুষকে আকৃষ্ট করে। এমন সুউচ্চ পর্বত পযর্ন্ত উঠিয়ে আবার ফেলে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ)।
একজন সাহাবির বদনজর সম্পর্কিত বিখ্যাত ঘটনা
বদনজর থেকে বাঁচার উপায়, বদনজর বিষয়ে সাহাবি আবু সহল ইবনে হুনাইফের একটি ঘটনা রয়েছে। তিনি একবার গোসল করার জন্য কাপড়-চোপড় খোলেন। তাঁর গৌরবর্ণ ও সুঠাম দেহের ওপর আমের ইবনে রবিআর দৃষ্টি পড়ে। সাথে সাথে তার মুখ থেকে বের হয়ে পড়ে, আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কখন দেখিনি।
তৎক্ষণাৎ সহল ইবনে হুনাইফের শরিরে ভীষণ জ্বর আসে। মহাম্মাদ (সাঃ) এ সংবাদ পেয়ে আমের ইবনে রবিআকে আদেশ দেন, তিনি যেন অজু করে অজুর পানির কিছু অংশ পাত্রে রাখে। তারপর সেই অযুর পানি যেন সহল ইবনে হুনাইফের দেহে ঢেলে দেয়। মহানবি (সাঃ) এর আদেশ মোতাবেক কাজ করা হলে সহল ইবনে হুনাইফ সুস্থতা পেলেন।
তাঁর জ্বর চলে গেল, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। উক্ত ঘটনায় মহানবী (সাঃ) আমের ইবনে রবিআকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমার দৃষ্টিতে তার দেহ যখন সুন্দর মনে হয়েছিল তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখো, বদনজর লেগে যাওয়া সত্য।(মুআত্তা মালেক: ১৭১৪)
আরও পড়ুনঃ নামাজ ফরজ কেন? নামাজ পড়ার নিয়ম
বদনজর দূর করার উপায়
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত কোন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে যদি জানা যায়, সে বদ নজরের কবলে পরেছে তবে তখুনি তাকে ওযু করতে হবে। অতঃপর সেই উক্ত ওযুর পানি দ্বারা যে ব্যাক্তি বদ নজরে পরেছে তাকে গোসল করতে হবে। হাদিসে বর্ণিত আছে যে কোন ব্যাক্তি যদি কারো খারাপ কু নজরে পরে তাহলে তখুনি তাকে হাদিস কোরআন থেকে দোয়া কালেমা পরে ঝাড়-ফুঁক করতে হবে। যেমন দোয়াগুলি হল-
সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, ও সুরা নাস এই দোয়াগুলি তিন তিনবার পরে আত্রান্ত ব্যাক্তি নিজে অথবা অন্যকে দিয়ে পড়িয়ে এক গ্লাস পানিতে ফু দিয়ে পান করতে হবে। এবং সেখান থেকে অল্প কিছু পানি নিয়ে আরও পানির সাথে মিস করে গোসল দিতে হবে। এবং তার সাথে সাথে বদ নজজে পড়া ব্যাক্তিকে দোয়াগুলি পড়ে বার বার ফু দিতে হবে। তাহলে ইনশা-আল্লাহ, আল্লাহর অশেষ ইচ্ছায় ধিরে ধিরে বদ নজর কেটে যাবে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার নাতিগন হাসান ও হুসাইন কে এই বাক্যগুলি বা দোয়াগুলি পরে ঝাড়-ফুঁক করতেন।
মানুষের নজর থেকে বাঁচার দোয়া
আরবি : أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ
উচ্চারণ : উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ : আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)
শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন। আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হল শিশু সন্তান।
মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন। (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৭২)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘ধন, ঐশ্বর্য ও সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের অলংকার। (সুরা কাহাফ : ৪৬)
শিশু জন্মের পর থেকে প্রায় প্রতিটি মুহুর্তে রোগ ব্যাধি বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়। কখনো মন্দ মানুষের দৃষ্টি লেগে বদনজরের শিকার হয় শিশু। এতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বিঘ্ন হয়।
অনেক সময় শিশুর ওপর এসবের প্রভাব এমনভাবে পড়ে যে শিশুকে আর সুস্থ করা যায় না। আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় বদনজরের মন্দ ক্রিয়া।
আরও পড়ুনঃ হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলামিক
কারো বদ নজর লেগে গেলে বদ নজর থেকে রক্ষায় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। বদ নজর বিষয়ে হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেন,তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা বদ নজরের প্রভাব সত্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৮) ।
বদনজর থেকে রক্ষায় আল্লাহর রাসুল দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। মহানবি (সাঃ) নিজের প্রাণপ্রিয় নাতি হজরত হাসান-হুসাইনের জন্য নিরাপত্তার দোয়া করেছেন। এছাড়া বদনজর থেকে বাঁচাতে মহাম্মাদ (সা.) শিশুদের কোলে নিয়ে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন।
বদনজর বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত এমন একটি দোয়া হলো-
শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া আরবি –
أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ
উচ্চারণ: উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ: আমি তোমাদের সকলকে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া
বদনজর থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিকে ঝাঁড়-ফুক দেয়া। বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এ দোয়া পড়া উচিত-
بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিং কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা ওয়া মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।
বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া আরবি –
بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ
অর্থ : আল্লাহর নামে কষ্ট দানকারীর সব অনিষ্টতা থেকে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি।হিংসুক ব্যক্তির কুদৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। আল্লাহ তোমাকের আরোগ্য দান করতে তারই নামে ঝাঁড়-ফুক করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লিআম্মাতিন।’
অর্থ : আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারি)
আরও পড়ুনঃ তওবা করার নিয়ম ও দোয়া
বদ নজর থেকে মুক্তির দোয়া
আরবিঃ أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ وَّمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ: উয়িযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ: সকল শয়তান, কীটপতঙ্গ ও বদনজর হতে তোমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে দিচ্ছি। -কানজুল উম্মাল।
আরবিঃ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।
অর্থঃ আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫১২)
বদ নজরের আমল
বদ নজর থেকে নিয়মিত কিছু আমলগুলো করা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে কুরআনি আমল করার মাদ্ধমে আল্লাহ তাআলা বদনজর থেকে মুক্ত করবেন।
- সুরা ফাতিহা পড়া
- আয়াতুল কুরসি পড়া (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৫)
- সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (২৮৫ , ২৮৬)
- সুরা ইখলাস পড়া
- সুরা ফালাক্ব পড়া।
- সুরা নাস পড়া।
এছারা বদ নজর থেকে বাচার উপায় আর জন্য অনেক মানুষ কপালে কালো টিপ দেয়ার কথা বলে। কিন্তু কালো টিপ কখনও বদ নজর থেকে রক্ষা করতে পারে না ।রক্ষা করার মালিক আল্লাহ তায়ালা।
শিশুর কল্যাণের জন্য দোয়া করুন। মানুষের সমাগমে তাকে নিয়ে গর্ব না করে একটু কৌশলে এড়িয়ে চলুন।। আল্লাহর তায়ালার শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহর কাছে সকল অনিষ্ট থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য আল্লাহর আশ্রয় কামনা করুন। সুরাত ফালাক, সুরা নাস পড়ে শিশুর জন্য মাওলার আশ্রয় চান।
বাচ্চাদের বদনজর থেকে বাঁচার উপায় ও দোয়া
আরবি : أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ
উচ্চারণ : উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ : আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)
শেষ কথা
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া মানুষের উচিত হাদিসে শেখানো দোয়ার মাধ্যমে নিজেদের শিশু বাচ্চাদের বদনজর ও যাবতীয় ক্ষতি থেকে সুস্থ ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা।বর্তমান সময়ে ইলম ওয়ালা অনেক লোক রয়েছে। দিন দিন তা বেড়েই চলছে। কিন্তু আমলওয়ালা লোকের অভাব সাথে সাথে বেড়েই চলছে।
মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে হাদিস অনুযায়ি আমল করার তাওফিক দান করুন। রাসুল সাঃ এর শেখানো দোয়ার মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুক। (আমিন) আজ আমরা বদ নজর থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে জানলাম।
আপনি যদি এই সম্পর্কের না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভাল হবে জেনে নিন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।
বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ’s
১. বাচ্চাদের নজর না লাগার দোয়া?
উত্তরঃ উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
২. বদ নজরের দোয়া?
উত্তরঃ বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।
৩. নজর না লাগার দোয়া আরবি?
উত্তরঃ عِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ وَّمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
৪. শিশুদের বদ নজর থেকে রক্ষার দোয়া?
উত্তরঃ أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ
উচ্চারণ : উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
৫. বদ নজর না লাগার দোয়া?
উত্তরঃ ওঁ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।
আরও পড়ুন-
গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম
সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত