ছেলে ও মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

আকিকা দেওয়ার নিয়ম

আসসালামুয়ালাইকুম আজ আমরা জানব আকিকা দেওয়ার নিয়ম ইসলামী শরিয়তে আকিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক শিশুর কল্যাণের উদ্দেশে করা হয়। আকিকা আরবি শব্দ। অর্থঃকর্তন করা। আকিকা করা সুন্নত।

আকিকা হলো শিশুর অধিকার। নবজাতক শিশুর জন্য আকিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আকিকার ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আকিকার কারনে নবজাতক শিশুর বালা-মুসিবত দূর হয়।

নবজাতক সন্তানের শুকরিয়া আদায়ের জন্য আকিকা করতে হয়। ছেলে বা মেয়ে যা হোক না কেন উভয়ের জন্য আকিকা করা সুন্নত। জাফর আল অন্য একটি হাদিস অনুসারে, প্রত্যেক জন্মগ্রহণকারী নবজাতকের জন্য আকিকা বাধ্যতা মুলক। যদি তারা সন্তানের জন্য আকিকা না করে তবে বিভিন্ন বিপর্যয়ের সম্মুখিন হবে।

আরও পড়ুনঃ সেহরি, ইফতার, তারাবি এবং রোজার বাংলা নিয়ত

আকিকার ইতিহাসের

আকিকা দেওয়ার নিয়ম, আকিকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই প্রচলিত আছে। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই পশুকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত। এতে ছিল ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন।
আকিকার ইতিহাসের প্রমাণ আমরা দেখতে পাই, আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণিত হাদীসে।

আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমার বাবা বুরাইদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«كنا في الجاهلية إذا ولد لأحدنا غلام ذبح شاة ولطخ رأسه بدمها ، فلما جاء الله بالإسلام كنا تذبح شاة ، وتخلق رأسه وتلطخه بزعفران»

‘জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিল, যখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতো, সে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম।

আকিকার নিয়ম

আকিকা সপ্তম দিনে করা উত্তম। যদি সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪তম বা ২১তম দিনে করা ভালো। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে । (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিসঃ ৭৬৬৯ )যদি এই সময়ে কারো আকিকা করার সামর্থ্য না থাকে তাহলে যে কোন দিন আকিকা করতে পারে। সন্তান বড় হলেও আকিকা করা যায়।আকিকা সুন্নত ও মুস্তাহাব। আকিকা করা ওয়াজিব না। সুতরাং কোন পাপ নেই ।

হযরত আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পর নিজের আকিকা নিজে করেছিলেন। ( বায়হাকি )

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: বলেছেন,‘সকল শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। অতএব সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করবে এবং মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে’ (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)।

আকিকার দেওয়ার সঠিক নিয়ম আকিকার সঠিক নিয়ম

ছেলেদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

ছেলেদের আকিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী একই বয়সী গরু ছাগল কিংবা মহিষ ভেড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে ছেলে সন্তান দের জন্য দুটি সমবয়সী পশু আকিকা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  ফিতরা দেওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম

মেয়েদের আকিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সামর্থ্য অনুযায়ী একটি ্গাভি, ছাগি কিংবা মহিষ অথবা ভেড়ি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে মেয়ে সন্তান দের জন্য একটি পশু আকিকা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন।

আকিকার গোশত কারা খেতে পারবে?

আকিকার গোশত সন্তানের পিতামাতা, দাদা দাদি, নানা নানি, আত্মীয়স্বজন সবাই খেতে পারবে। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ৭৬৬৯)

আকিকার গোশত বিতরণ

কুরবানির গোস্তের মতই আকিকার গোশত বণ্টন কর হয়। এছারা রান্না করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে খাওয়ানো যায়। আকিকার পশুর গোশত তিন ভাগ ভাগ করতে হবে। তিন ভাগের এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের জন্য সাদকা করে দিয়ে বাকি এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ভাগ করে দেয়া সুন্নত।

আকিকার পশুর চামড়া

কোরবানির পশুর চামড়ার মতই আকিকার পশুর চামরা বাজারে বিক্রি করে বিক্রয়ক্রীত টাকা গরিব মিসকিনের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।

কুরবানির পশুর সঙ্গে আকিকা
কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করা জায়েয। এক পশুতে যদি তিন ভাগ কুরবানির জন্য দেয়া হয় বাকি দুই বা এক ভাগ আকিকার জন্য দেয়া যাবে। কুরবানির মত একই পশুতে একাধিক ব্যাক্তি শরিক হয়ে আকিকা দিতে পারবে। ( দুরারুল আহকাম ১\২৬৬ )

সন্তানের নাম রাখা

প্রত্যেক বাবা মায়ের দায়িক্ত সন্তানের সুন্দর একটি নাম রাখা। নাম রাখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নাম শুনলেই বুঝা যায় নামটি মুসলিম সন্তানের। সন্তানের সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব পূর্ণ কারন হলো, হাশরের ময়দানে প্রত্যেক ব্যাক্তিকে তার নাম ও তার বাবার নামসহ ডাকা হবে। তাই সুন্দর ও অর্থবহ নাম খুবই গুরুত্তপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ তওবা করার নিয়ম ও দোয়া

আকিকার উপকারিতা

আকিকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জন করা যায়।
আকিকা মাদ্ধমে সন্তান বিপদ থেকে রুক্ষা পায়।
আকিকার মাদ্ধমের আত্মীয় ও গরিবের হক আদায় হয়।
আকিকায় আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধব দের দাওয়াত দেয়া হয় যার ফলে সকলের সাথে আত্তরিকতা পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।

আকিকার কুসংকার

অনেকেই মনে করেন, আকিকার পশু নানা বাড়ি থেকে দিতে হয়। এবং আকিকার গোশত বাবা মা, নানা নানি, দাদা দাদি খেতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা আকিকার গোশত বাবা মা সহ আত্মীয় স্বজন সকলেই খেতে পারবে। এছারা সন্তানের চুল মুণ্ডানোর সময় মাথার তালুর ওপর ক্ষুর রেখে আকিকার পশু জবাই করতে হয়। এই ধরনের ভুল ধারনা থেকে দূরে থাকতে হবে। আকিকা করা হয় নবজাতকের কল্যাণের জন্য। তাই এই অনুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে অশ্লিল নাচ গান থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, আকিকার সাথে শিশুর সুরক্ষা, বিপদ আপদ দূর হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, আকিকা দেওয়ার নিয়ম তাই সামর্থ্য থাকলে দ্রুত আকিকা সম্পন্ন করা অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্রুত আকিকা সম্পন্ন করার তৌফিক দান করুক। ( আমিন )

আরও পড়ুন-

বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফযিলত

Leave a Comment