২০ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ
আজ আমরা আলোচনা করবো ১৫- ২০ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ গুলো নিয়ে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আমরা কতটা নির্ভরশীল হয়ে পরছি ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের ওপর তা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই বুঝতে পারব।
বর্তমান সময়ে যদিও ল্যাপটপের দাম অনেকটাই বেশি তাই আমাদের মধ্যে আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা অর্থের সংকটে একটি ভালো মানের ল্যাপটপ কিনতে পারি না এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা।
করনা মহামারীর পর থেকেই সব ইলেকট্রনিক পণ্যের পাশাপাশি সকল পণ্যের এই দাম বেড়ে যাওয়া শুরু করেছে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ের ল্যাপটপ গুলোর দামও প্রতিনিয়তই বেড়েই চলেছে। আয়ের ওপর ভিত্তি করে অনেক পরিবারেই ডিভাইসের কম বেশি হতে পারে। এই অনুচ্ছেদে আজ আমরা জানতে পারব ১৫- ২০ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ বর্তমানে বাজারে কি কি রয়েছে।
আরও পরুনঃ হারানো সিম বন্ধ করার উপায়
ল্যাপটপের উৎপত্তি
সহজে বহনযোগ্য এবং কোলের ওপর রেখে ব্যবহার করা যায় ঠিক এই কারনেই এর নামকরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ( Laptop)। ধারনা করা হয় যে, ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ ডিজাইনার বিল মগগ্রিজ সর্বপ্রথম কিবোর্ডের ওপরে ক্ল্যামশেল ডিজাইনে ফ্ল্যাট স্ক্রিন ডিজাইন করেছিলেন এবং এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮২ সালে।
আবার অনেকের মতে অ্যালান কে ১৯৬৮ সালে সর্বপ্রথম বহনযোগ্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ধারনা দেন এবং পরবর্তীতে এডাম ওসবোর্ন ১৯৮১ সালে ল্যাপটপ আবিষ্কার করেন। সেখান থেকে শুরু করে এখন একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা পৌছেছি, এর মাঝে লাখো নতুন ডিজাইন আর ব্র্যান্ড আমাদের মাঝে এসেছে এবং প্রতি মাসেই কিছু না কিছু নতুন ফিচারের সাথে আমরা পরিচিত হচ্ছি।
আজ আমরা জেনে নেব স্বল্প মূল্যে চাহিদা অনুযায়ী কিছু ল্যাপটপ যা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ১২ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ফোন
ল্যাপটপ এর দাম
আজ আমি কম দামে ভালো ল্যাপটপ ২০২৩ নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করবো। আপনার কি বাজেট কম ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ল্যাপটপ চাচ্ছেন? অনেক চেষ্টার করেও ১৫-২০ টাকার মধ্যে ভালো ল্যাপটপ খুজে পাননি, তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন আমরা এখন কিছু কম দামের মধ্যে ভালো ল্যাপটপ নিয়ে তথ্য দিব। নিচে কিছু ল্যাপটপের নাম, দাম ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া জাক কম দামের ল্যাপটপ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল কিছু-
১. আই লাইফ জেড এয়ার লাইটঃ ( iLife Zed Air Lite)
আই লাইফ জেড এয়ার লাইট এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল কোয়াড কোর (১.৯২ গিগাহার্টজ)
- র্যাম (RAM)- ২ জিবি ডি ডি আর থ্রি
- রম / স্টোরেজ- ৩২ জিবি (রম আপগ্রেড করার সুযোগ রয়েছে)
- ডিসপ্লে-১১.৬ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি (১৯২০*১০৮০ আই পি এস)
- ব্যাটারি- ৮০০০ এম এ এইচ
- রং- সিলভার
- অপারেটিং সিস্টেম- উইন্ডোজ ১০ হোম জেনুইন
- ওয়ারেন্টি- ১ বছর
- ওজন- ১ কেজি
- বাজারমূল্য- ১৩৫০০
উপযোগিতা- যারা শিক্ষার্থী এবং যাদের নিয়মিত প্রেজেন্টেশন বানাতে হয় বা পড়ার বিভিন্ন কাজে কম্পিউটারের সাহায্য দরকার হয় তাদের জন্যে বেশ উপযোগী। ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ভালো ব্রান্ডের ল্যাপটপ কেনার সামর্থ্য সবার থাকে না। ১৩৫০০ টাকায় মোটামুটি ধরনের মোবাইল ফোন বাজারে পাওয়া যাবে তবে মোবাইলের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার কারনে যদি কারোর স্বল্প খরচে ল্যাপটপ দরকার হয় তাহলে এই ল্যাপটপটি একটি সুন্দর সমাধান হতে পারে। পড়াশোনার কাজ, বিনোদনের জন্যেও ব্যবহৃত হতে পারে।
২. স্যামসং ক্রম বুক থ্রিঃ (Samsung Chromebook 3)
স্যামসং ক্রম বুক থ্রি এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল সেলেরন (১.৬ থেকে ২.৪৮ গিগাহার্টজ)
- র্যাম (RAM)- ২ জিবি
- রম / স্টোরেজ- ১৬ জিবি
- ডিসপ্লে-১১.৬ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি ১৩৬৬*৭৬৮ পিক্সেল
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল এইচ ডি গ্রাফিক্স ৪০০
- ব্যাটারি- ২ সেলস ব্যাটারি
- রং- কালো
- অপারেটিং সিস্টেম- উইন্ডোজ ৭
- ওয়ারেন্টি- ১ বছর
- ওজন- ১. ১৩৩৯৮কেজি
- বাজারমূল্য- ১৩১২০ টাকা
উপযোগিতা– সহজে বহনযোগ্য এই ল্যাপটপটি যেকোন ধরনের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্যে অনায়াসে ব্যবহার উপযোগি, এছাড়াও ছবি দেখা বা ব্রাউজিং এর জন্যেও। দাম অনুযায়ী এর কার্যকারিতা যথেষ্ট ভালো। তবে যদি কেউ হায়ার রেজুলেশনের জন্যে এই ল্যাপটপটি কিনতে চায় সেক্ষেত্রে আরও একটু উচ্চ দামের ল্যাপটপের কথা বিবেচনা করা ভালো।
৩. লেনোভো আইডিয়া প্যাড ক্রমবুক ৩ঃ (Lenovo Ideapad Chromebook 3)
লেনোভো আইডিয়া প্যাড ক্রমবুক ৩ বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল সেলেরন (এন ৪০২০)
- র্যাম (RAM)- ৪ জিবি
- রম / স্টোরেজ- ৬৪ জিবি
- ডিসপ্লে-১১.১ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি ১৩৬৬*৭৬৮ পিক্সেল
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল এইচ ডি গ্রাফিক্স ৪০০
- ব্যাটারি- ৩ সেলস ব্যাটারি
- রং- কালো
- অপারেটিং সিস্টেম- ক্রম ও এস
- ওয়ারেন্টি- ১ বছর
- ওজন- ১. ১২ কেজি
- বাজারমূল্য- ১৮৭৭৬ টাকা
উপযোগিতা- করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসে আর হোম অফিসে আমরা অনেক অভ্যস্ত হয়ে পরেছিলাম, কিছু সংখ্যাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও সপ্তাহে ১-২ দিন অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস করার প্রচলন রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে এই ল্যাপটপটি বেশ কার্যকরী। এই ল্যাপটপটি সহজেই বাকানো যায় তাই সেদিকের কোন ভয় নেই, যেকোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে। তবে যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্যে কেউ ব্যবহার করতে চায় তাহলে সেটা সম্ভবপর নয়। এর জন্যে আরও ভালো মানের ল্যাপটপ দরকার হবে।
আরও পড়ুনঃ অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায়
৪. আসুস ক্রম বুকঃ (ASUS Chromebook)
আসুস ক্রম বুক এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল সেলেরন (এন ৩৩৫০)
- র্যাম (RAM)- ৪ জিবি
- রম / স্টোরেজ- ৩২ জিবি
- ডিসপ্লে- ১১.৬ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি ১৩৬৬*৭৬৮ পিক্সেল
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল এইচ ডি গ্রাফিক্স
- ব্যাটারি- ৩ সেলস ব্যাটারি
- রং- ধূসর
- অপারেটিং সিস্টেম- ক্রম ও এস
- ওয়ারেন্টি- ১ বছর
- ওজন- ১. ১২ কেজি
- বাজারমূল্য- ১৭৬৯৯
উপযোগিতা- স্বল্প ব্যবহারের জন্যে, বিজনেস পেজ রান করার জন্যে, ছোটখাটো ব্যবসায় সামলানোর জন্য বা বিনোদনের জন্যে এই ল্যাপটপটি বেশ উপযোগি।
৫. রিনিউড আর ডি পি থিনবুক ১০১০ঃ (Renewed RDP Thinbook 1010)
রিনিউড আর ডি পি থিনবুক ১০১০ এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল সেলেরন (আর ডি পি ১০১০)
- র্যাম (RAM)- ৪ জিবি
- রম / স্টোরেজ- ৬৪ জিবি
- ডিসপ্লে- ১৪.১ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি (১৩৬৬*৭৬৮ পিক্সেল)
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল এইচ ডি গ্রাফিক্স
- রং- কালো
- অপারেটিং সিস্টেম- উইন্ডোজ টেন(১০) প্রো
- ওয়ারেন্টি- ১ বছর
- ওজন- ১. ৪ কেজি
- বাজারমূল্য- ১৮৮৭০
উপযোগিতা- হাই কোয়ালিটি গ্রাফিক্স, আলাদা এস এস ডি স্লট রয়েছে যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী স্টোরেজ বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
সাধারণ ব্যবহার এবং গেমিং এর জন্যে ভালো।
৬. আভিটা কসমস টু ইন ওয়ানঃ (Avita Cosmos 2 in 1)
আভিটা কসমস টু ইন ওয়ান এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল সেলেরন ডুয়াল কোর (এন ৪০২০)
- র্যাম (RAM)- ৪ জিবি
- রম / স্টোরেজ- ৬৪ জিবি
- ডিসপ্লে- ১১.৬ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি (১৯২০*১০৮০ পিক্সেল, ১৯০ পি পি আই ডিসপ্লে)
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল ইউ এইচ ডি গ্রাফিক্স ৫০০
- রং- কালো
- অপারেটিং সিস্টেম- প্রিলোডেড উইন্ডোজ টেন (১০)
- ওয়ারেন্টি- ২ বছর
- ওজন- ১. ৩২ কেজি
- ব্যাটারি- ২ সেলস
- বাজারমূল্য- ১৬৪৯০
উপযোগিতা- এই ল্যাপটপটির সবচেয়ে দারুন ও মজার বিষয় হচ্ছে এটির দুই রুপে ব্যবহার। অর্থ্যাৎ এটিকে টু ইন ওয়ান বলার অর্থ হলো এটি ল্যাপটপ এবং ট্যাব দুইভাবেই ব্যবহার করা যাবে। যদি এমন হয় বহনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে অনায়াসেই ট্যাবের অংশটি কিবোর্ড থেকে খুলে আলাদা করে সাথে নিয়ে বহন করা যাবে আর এতে করে কার্যকারীতায় কোনরুপ সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুনঃ ডোমেইন কি এবং ডোমেইন হোস্টিং কিভাবে কাজ করে
৭. ওয়ালটন ডব্লিউ পি আর ওয়ান ফোর এন থ্রি থ্রি এস এলঃ (Walton WPR14N33SL)
ওয়ালটন ডব্লিউ পি আর ওয়ান ফোর এন থ্রি থ্রি এস এল এর বৈশিষ্ট্য
- প্রসেসর- ইন্টেল অ্যাপোলো লেক
- র্যাম (RAM)- ৪ জিবি ডি ডি আর থ্রি
- মেমোরি- ১ টিবি এইচ ডি ডি
- ডিসপ্লে- ১৪.১ ইঞ্চি
- ডিসপ্লে রেজুলেশন- ফুল এইচ ডি (১৩৬৬* ৭৬৮ পিক্সেল )
- গ্রাফিক্স কার্ড- ইন্টেল ইউ এইচ ডি গ্রাফিক্স ৫০০
- রং- কালো
- অপারেটিং সিস্টেম- উইন্ডোজ টেন (১০) হোম
- ওয়ারেন্টি- ২ বছর
- ওজন- ১. ৩৩ কেজি
- ব্যাটারি- ৩৮ ডব্লিউ এইচ ব্যাটারি
- বাজারমূল্য- ১৯৯৯০
উপযোগিতা- সাধারণ ব্যবহার যেমন ডাটা এন্ট্রি, কন্টেন্ট রাইটিং বা প্রেজেন্টেশনের কাজ এবং বিনোদনের জন্যে এটি হতে পারে একটি আদর্শ ল্যাপটপ।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজ আপনি ১৫- ২০ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে পেরেছেন। সবশেষে বলা যায় যে, ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, আমাদের সবার একই রকম সামর্থ্য হবে না মনের শখ অনুযায়ী ডিভাইস কেনার, তবে আমরা চাইলেই সহজলভ্যতার দরুন স্বল্প উপার্জনের অর্থ দিয়েও ভালো মানের ল্যাপটপ কিনতে পারি, উপরে যেসব ল্যাপটপ দেখানো ও বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো শিক্ষার্থীদের পড়শোনার এবং বিনোদন উপযোগি ডিভাইস।
উচ্চমাত্রার কাজের জন্যে যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশন ডিজাইন, গেমস খেলা এসব কাজের জন্যে আরও বেশি মূল্যের ল্যাপটপের প্রয়োজন পরবে। স্বল্প মূল্যের এই ল্যাপটপগুলো এখন অচিরেই আমাদের পড়শোনা সহজ করার এবং বিনোদনের কাজে এগিয়ে আসবে, আমরাও আর পিছিয়ে যাব না তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে।
আরও পড়ুন-
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি? এফিলিয়েট কিভাবে শুরু করবেন
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কেন ও কিভাবে করবেন