গলা ব্যাথার ঔষধের নাম, চিকিৎসা ও ব্যাবহারবিধি 

গলা ব্যথ্যার ঔষধের নাম 

গলা ব্যথ্যা এই শব্দটার সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুবই কম পাওয়া যাবে। শুধু কি তাই! এই গলা ব্যথ্যার সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষও হাতে গোনা। গলা ব্যথ্যার এই সমস্যা একেক জন মানুষের একেক রকম কারণে হয়ে থাকে।

ভিন্ন ধরনের গলা ব্যথ্যার সমস্যার জন্য ভিন্ন গলা ব্যথ্যার ঔষধের নাম রয়েছে। তবে গলা ব্যাথার ঔষধের নাম জানার জন্য আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার গলা ব্যথ্যা কেন হচ্ছে। তাই আসুন আগে জেনে নেয়া যাক কেন বা কোন কারনে আপনার গলা ব্যথ্যা হচ্ছে। 

আরও পড়ুনঃ কাশি দূর করার উপায় ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি

গলা ব্যথ্যা হওয়ার কারণসমূহ

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম

নানা কারণে একজন মানুষের গলা ব্যথ্যা হয়ে থাকে। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি এসব রোগের পূর্বাভাস হিসেবেও অনেকের গলা ব্যথ্যা হয়ে থাকে। তাছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও ভাইরাসজনিত কারণেও অনেকের গলা ব্যথ্যা হয়ে থাকে। এই গলা ব্যথ্যার আরেক নাম ফ্যারিঞ্জাইটিস বলে।

জ্বর, ঠান্ডা, কাশি,ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও ভাইরাসজনিত কারণ ছাড়াও আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেও অনেকসময় মানুষের গলা ব্যথ্যা হয়ে থাকে।গরম, ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসের কারণেও গলা ব্যথ্যার উপসর্গ দেখা দেয়। গলায় আঘাত পেলে ও টনসিলের জন্যও এই সমস্যা হয়ে থাকে।

ধোয়া ও ক্যামিক্যালের জন্যও এই ব্যথ্যার উপশম হয়। এছাড়াও টনসিল, ডিপথেরিয়া,গলায় হাম, চিকেনপক্স ভাইরাসের জন্যও এই সমস্যা দেখা দেয়। আবার, অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে গলা ব্যথ্যা করে। এর কারণ হচ্ছে রাতে আমরা অনেকটা লম্বা সময় ধরে পানি না খেয়ে থাকি এরফলে আমাদের গলা অনেক শুষ্ক হয়ে থাকে।

তার ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমাদের অনেকরই গলা ব্যথ্যা হয়ে থাকে। আবার যাদের নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাদেরও এই ব্যথ্যার সম্মুখীন হন। রাতে ঘুমানোর আগে ঠান্ডা খাবার খেলেও এমনটা হয়।অধিক পরিমানে ধূমপান ও অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবারও এই রোগের অন্যতম কারণ। 

গলা ব্যথ্যা হলে কি কি সমস্যা হয়

ব্যথ্যা সেটা হোক আপনার মাথায় বা শরীরের অন্যকোন অঙ্গে কিছু কিছু সমস্যা ও অসুবিধা আপনাকে পোহাতেই হবে। ঠিক তেমনি আপনার যখন গলা ব্যথ্যা হয় তখনও আপনাকে কম করে হলেও ২-৩টি সমস্যা অবশ্যই পোহাতে হবে। যেমনঃ গলা ব্যথ্যা হলে যে সমস্যার সম্মুখীন আপনাকে হতেই হয় সেটি হল ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, খাবার খেতে অসুবিধা হওয়া।

অনেকেই আছেন আবার গলা ব্যথ্যা হলে কোন কথায় বলতে পারেন না। গলা ব্যথ্যা শুরু হলেই অনেকের জ্বর হয়, ঠান্ডা লেগে যায়। তাছাড়াও যদি ব্যাক্টেরিয়াজনিত কারণে গলা ব্যথ্যা হয় তখন টনসিলে প্রদাহ, কিডনির প্রদাহ, সাইনাসে প্রদাহ, বাতজ্বর,কানের ব্যথ্যা, মাথা ব্যথ্যা এমন অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

গলা ব্যথার ধরণ অনুযায়ী আপনাকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কেননা গলা ব্যথ্যা যদি আপনার অতিরিক্ত এবং দীর্ঘ ধরে হয়ে থাকে তাহলে জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম – ঢোক গিলতে অসুবিধা হলে

গলা ব্যথ্যার ধরণ অনুযায়ী আপনাকে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। তাই আপনার যদি ঢোক গিলতে অসুবিধা হয় তখন নিমোক্ত ঔষধগুলোর মধ্যে যেকোন একটি ঔষধ আপনি সেবন করতে পারেন। 

  • নাপা (Napa)
  • নাপা এক্সন্টেড (Napa Extend)- ৬৬৫ মি.গ্রা
  • রোলাক (Rolac)-১০ মি.গ্রা.
  • ডক্সিক্যাপ (Doxicap)-১০০ মি.গ্রা.
  • ই-ফিক্স (E-Fix)-১০০ মি.গ্রা.
  • টিডোসিল (Tidosil)-৫০০ মি.গ্রা.
  • জিমাক্স (Zimax)-৫০০মি.গ্রা.
  • মকশাশিল (Moxasasil)-৫০০ মি.গ্রা.
  • জিরোডেল-পি (Zerodol-P)-১০০মি.গ্রা.
  • শোয়ালেক্স (Sualex)

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম – সিরাপ  

অনেকেই আছেন যারা ট্যাবলেট খেতে পারেন না বা গলা ব্যথ্যা হলে যেহেতু গিলতে কষ্ট হয় তাই ট্যাবলেট গিলে খাওয়া অনেকের জন্যই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যায়। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু গলা ব্যাথার ঔষধের নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ 

  • তুসকা প্লাস সিরাপ (Tusca plus syrup)- ১০০ মি.গ্রা.
  • এডোলিফ সিরাপ (Adolef syrup) -১০০ মি.গ্রা.
  • এডোভাস সিরাপ (Adovas syrup)- ১০০ মি.গ্রা.
  • টমিফেন সিরাপ (Tomephen syrup)-১০০ মি.গ্রা.
  • পিউরিসাল সিরাপ (Purisal syrup)-৫০মি.গ্রা. 
  • অফকফ সিরাপ (Ofkof syrup)-১০০ মি.গ্রা.
  • ডেক্সপোটেন প্লাস সিরাপ (Dexpoten syrup) -১০০ মি.গ্রা.
  • টুসপেল সিরাপ (Tuspel syrup)-১০০ মি.গ্রা.

উপরোক্ত সিরাপগুলো শুধু যে গলা ব্যাথ্যা হলেই সেবন করতে পারবেন এমনটা নয়,আপনার যদি কাশি থাকে তখনও আপনি এই সিরাপগুলো সেবন করতে পারবেন। 

গলা ব্যথ্যা ও সর্দি -এর ঔষধের নাম

আবহাওয়া পরিবর্তন হলে অনেকেরই সর্দি-কাশির সমস্যা হয় এবং সেই সর্দি-কাশি থেকে হয় গলা ব্যথ্যা। তাই গলা ব্যথ্যার পাশাপাশি যদি সর্দি-কাশি হয় তখন আপনার ঔষধ বাছাই করতে হবে ভিন্নভাবে যাতে করে আপনার সর্দি ও গলা ব্যথ্যা দুই সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়।

  • এইস প্লাস (Ace plus)-৫০০ মি.গ্রা.
  • নাপা এক্সন্টেড (Napa extend)-৬৬৫ মি.গ্রা.
  • হিস্টাসিন (Histasin)-৪ মি.গ্রা.
  • ফেক্সো (Fexo)-১২০ মি.গ্রা.
  • হিস্টা লেক (Hista lex)-১০ মি.গ্রা.
  • ডেসলর (Deslor)-১০০ মি.গ্রা.
  • নিওসিলর (Neocilor)-৫ মি.গ্রা.
  • ফিলা মেক্স (Fila Max)-৫০০ মি.গ্রা.
  • কারভা ৭৫ (Carva 75)-৭৫ মি.গ্রা.

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম – টনসিল হলে

গলা ব্যথ্যার সাথে টনসিলের ব্যথ্যা যেল ওতপ্রোতভাবে জড়িত।টনসিলের ব্যথ্যার যন্ত্রণা যেন অনেক বেশি তীব্র। তাই আপনার টনসিলের সমস্যা দেখা দিলে গলা ব্যাথার ঔষধের নাম অনুযায়ী আপনি নিমোক্ত ঔষধগুলো খেতে পারেন।

  • ভিফাস (Vifas)-১০০মি.গ্রা.
  • মকশাসিল ক্যাপসুল (Moxasasil capsule)-৫০মি.গ্রা.
  • রফিউক্লাভ (Roficlav)-২৫০মি.গ্রা.
  • এইচ এক্স আর(HXR)-৫০মি.গ্রা.
  • ডেক্সিলেন্ড(Dexilant)-১০০মি.গ্রা.
  • ট্রিডোসিল ক্যাপসুল (Tridosil Capsule)-৫০০মি.গ্রা.  
  • ভায়োলিন মাউথ ওয়াশ (Violin mouthwash)-১০০মি.গ্রা.

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম – হোমিও ঔষধ

গলা ব্যথ্যা হলে কি শুধু অ্যালোপ্যাথিক ঔষধই সমাধান?! না, এমনটা ভাবায় ভুল, হোমিওপ্যাথি ঔষধেও রয়েছে এর সহজ সমাধান। 

  • ক্যালি বাইক্রোমিকাম
  • অ্যাকোনাইট
  • অ্যালিয়াম সেপা
  • আসেনিকাম অ্যালবাম
  • ফেরাম ফসফোরিকাম

তবে হোমিওপ্যাথি ঔষধের ডোজ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন।

গলা ব্যথ্যার ঔষধের মধ্যে কার্যকরী ঔষধ কোনগুলো

গলা ব্যথ্যার যতগুলো ঔষধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোই কার্যকরী। কিন্তু এরমধ্যে বেশকিছু ঔষধ আছে গলা ব্যথ্যা হলে কমবেশি সবাই সেবন করে থাকেন এবং উপকার পেয়েছেন। 

নাপা এক্সন্টেডঃ নাপা, নাপা এক্সন্টেড, প্যারাসিটামল, এইস প্লাস এই  ঔষধগুলো অনেকটা জাতীয় ঔষধ যা সবার ঘরে ঘরেই থাকে। এদের মধ্যে যেকোন একটি আপনি আপনার গলা ব্যথ্যা বা জ্বর হলে সেবন করতে পারবেন। এইসব ঔষধের তেমন কোন প্বাশপ্রতিক্রিয়া নেই, তাই এগুলো আপনি নিশ্চিন্তে সেবন করতে পারবেন।তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ায় ভালো কিন্তু না নিলেও বিশেষ কোন ক্ষতি নেই।

সুয়ালেক্সঃ গলা ব্যাথার ঔষধের নাম এর মধ্যে সুয়ালেক্স কার্যকরী। এটি আপনার গলা ব্যথ্যা থেকে আপনাকে অনেকটাই আরাম দিবে।তবে সুয়ালেক্স খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং এই ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জেনে এই ঔষধ সেবন করবেন।

এছাড়াও হিস্টাসিন, তুসকা প্লাস সিরাপ ও টমিফেন সিরাপও বেশ কার্যকরী।

গলা ব্যথ্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

যুগ যুগ ধরে মানুষ গলা ব্যথ্যা অথবা যেকোন সমস্যার জন্য ঘরোয়া উপায়ে সমাধান করে যাচ্ছেন। এমনকি যেকোন ঔষধ সেবন করার আগে অবশ্যই আগে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা উচিত। গলা ব্যথ্যা হলে প্রথম যে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যায় তা হলঃ 

  • দিনে কয়েকবার গরম পানি খাওয়া এবং অবশ্যই গরম পানি দিয়ে বার বার গারগেল করা। 
  • অবশ্যই সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি এবং লবণ দিয়ে গরগরা করলে গলা ব্যথ্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
  • সকালে এবং বিকালে অবশ্যই মধু ও কালোজিরা মিক্সড করে খাবেন।কেননা, কালোজিরা ও মধু সকল রোগের ঔষধ। 
  • তুলসী পাতার রস বা শুধু তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়াও গলা ব্যথ্যার জন্য কার্যকরী। 
  • এরপর আদা ছোট ছোট কুচি করে বা আদার রস খেলেও আপনার গলা ব্যথ্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 
  • তুলসী পাতার রস, লবঙ্গ, এলাচ, আদা কুচি, দারুচিনি একসাথে মিক্সড করে পানিতে ফু্টিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি দিনে দুই-তিন বার পান করলে গলা ব্যথ্যা থেকে আপনি আরাম পাবেন। 
  • আপনি সারারাত মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি আপনি যদি সকালে খালি পেটে সে পানি পান করেন তবে গলা ব্যথ্যা থেকে মুক্তি পাবেন।শুধু তাই নয়, এটি আপনার শারিরীক অনেক সমস্যার সমাধান পাবেন। 
  • গোলমরিচে থাকা অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি আপনার গলা ব্যথ্যা থেকে আপনাকে অনেকটা আরাম দিবে। 
  • গলা ব্যথ্যা থেকে বাচতে হলে বা দ্রুত সমাধান পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কথা অনেক কম বলতে হবে এবং প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। 

শেষ কথা

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম আপনি অনেক পাবেন। শুধু নামই নয়, আপনি অনেক ঔষধও পেয়ে যাবেন। তবে আপনাকে আগে অবশ্যই জানতে হবে কেন আপনার গলা ব্যথ্যা হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে ঔষধ সেবন করতে হবে।সবচেয়ে জরুরী যেই বিষয়টি হচ্ছে, যেকোন ঔষধ সেবন করার আগে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে।

গলা ব্যাথার ঔষধের নাম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১। গলা ব্যথ্যা কি কোন মারাত্মক জটিলতা? 

উত্তরঃ না, গলা ব্যথ্যা কোন মারাত্মক জটিলতা নয়। তবে এই ব্যথ্যা যদি আপনার অনেকদিন যাবত স্থায়ী হয় তবে এটি মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে তাই অল্প থাকতেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। 

২। বাচ্চাদের গলা ব্যথ্যা হলে কি ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বন করা যাবে? 

উত্তরঃ অবশ্যই! বাচ্ছা হোক বা প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ গলা ব্যথ্যায় আপনি সবার জন্যেই ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বন করতে পারবেন।

৩। গলা ব্যথ্যার ঔষধ খেলে কি ঘুম আসে? 

উত্তরঃ হ্যা,গলা ব্যথ্যার ঔষধ খেলে আপনার অবশ্যই ঘুম আসবে।কেননা, এটি আপনার নার্ভকে রিলাক্স করে আপনাকে স্বস্তি দেয় এইজন্যই গলা ব্যথ্যা ও ঠান্ডার ঔষধ খেলে মানুষের ঘুম আসে। 

৪।গলা ব্যথ্যার ঔষধের মূল্য কি অনেকবেশি? 

উত্তরঃ না,গলা ব্যথ্যার ঔষধের মূল্য নিম্নে ৩টাকা থেকে উর্দ্ধে ১০০ টাকা হয়ে থাকে।   

আরও পড়ুন-

লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা

Leave a Comment