গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম, খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা

গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম

যেসব দম্পতি এখনো সন্তানের মুখ দেখেননি তাদের প্রত্যেকেরই গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের ব্যাপারে বাড়তি আগ্রহ কাজ করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এখনো পর্যন্ত গর্ভাবস্থার গ্যারান্টি দেবে এমন কোনো “জাদুর বড়ি” আবিষ্কৃত হয়নি। 

তবুও গর্ভবতী হওয়ার পথকে সহজ করতে সচেতনতার অংশ হিসাবে আপনাকে বেশকিছু গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম এবং গর্ভবতী হওয়ার বাড়তি টিপস সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। 

আরও পড়ুনঃ Mm kit খাওয়ার নিয়ম, প্রতিক্রিয়া ও উপকারিতা

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম

গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম

গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো নারীর ডিম্বস্ফোটন হতে হবে। যদি তা না হয় সেক্ষেত্রে গর্ভধারণ করা সম্ভব হবে না। এই পর্যায়ে আমরা এমনকিছু দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কে জানবো যেসব ঔষধ সাধারণত নারীর দ্রুত ডিম্বস্ফোটন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। 

লেট্রোজোল মেডিসিন

অন্যান্য ঔষধের চাইতে দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার জন্য তুলনামূলকভাবে কার্যকর ঔষধ হলো এই লেট্রোজোল মেডিসিন। আমাদের দেহে এটি সাধারণত অ্যারোমাটেজ ইনহিবিটর এবং ক্লোমিফেনের মতো কাজ করে। 

এছাড়াও বর্তমানে দেখা দেওয়া বেশ কমন ফিমেল ডিজিজ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা PCOS এর ক্ষেত্রেও এটি ঔষধ হিসাবে কাজ করে। মোটকথা এই ঔষধটির কাজ হলো ডিম্বস্ফোটনের অংশ হিসাবে যথেষ্ট পরিমাণে ডিম নিঃসরণ নিশ্চিত করা। 

ক্লোমিফেন সাইট্রেট মেডিসিন

বন্ধ্যাত্ব রোগের মেডিসিন হিসেবে চিকিৎসকেরা রোগীদের ক্লোমিফেন সাইট্রেট মেডিসিনটি সাজেস্ট করেন। এছাড়াও অনিয়মিত চক্র এবং পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম রোগ সারাতেও ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই মেডিসিন। বলে রাখা ভালো এই মেডিসিনটির মূল কাজ হলো নারীর দেহে হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। 

বিশেষ করে ২ টি হরমোন বৃদ্ধিতে এই মেডিসিন কাজ করে থাকে। এগুলি হলো লুটেইনাইজিং হরমোন বা এলএইচ এবং ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফএসএইচ। আর এসব হরমোন আবার নারীর দেহে ডিম নিঃসরণকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। 

ব্রোমেক্রিপটিং মেডিসিন

সাধারণত একজন নারীর দেহে যখন প্রোল্যাক্টিন হরমোনের অতিরিক্ত প্রভাব থাকে তখন তাকে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

আর এই হরমোন যাতে নারী দেহে গর্ভধারনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে তা নিশ্চিত করতেই ব্যবহৃত হয় এই ব্রোমেক্রিপটিং মেডিসিন। তাছাড়া এটি পিটুইটারি টিউমারের মতো মারাত্মক ঔষধ নিরাময় করতেও সাহায্য করে। 

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ইনজেকশনের নাম

গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম তো জানলেন! যারা ঔষধ সেবনে অভ্যস্ত নন বা ঔষধ সেবন করে যাদের কাজ হচ্ছে না তারা দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারেন। চলুন এক নজরে বেশকিছু দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ইনজেকশনের নাম এবং এদের কার্যকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি। 

ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা FSH

যেকোনো দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ইনজেকশনের কাজ হলো আপনার দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোনের ব্যবস্থা করে। এই ফলিকল স্টিমুলেটিং ইনজেকশনটি নারী দেহে থাকা ডিম্বাশয়ে ডিমের পরিপক্কতা ঘটাতে সাহায্য করে। 

এমনকি নতুন অবস্থায় নারীর দেহে এটি ডিম্বস্ফোটনের যে কার্যক্রম সেটিকেও সহজ করে তুলতে সাহায্য করে। 

হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন বা এইচসিজি

পরিপক্ক ডিম্বাণু দেহে নিঃসরণ হতে যে হরমোনটি কাজ করে নারী দেহে সেই হরমোনের নিশ্চয়তা প্রদানে সাধারণত এই হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন বা এইচসিজি ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়। বলে রাখা ভালো নারীদের পাশাপাশি এটি পুরুষরাও ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটি পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন এবং শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। 

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটির সাইড এফেক্টও কিন্তু মারাত্মক। সাইড এফেক্ট হিসাবে এটি ব্যবহারে ব্রণ, ক্লান্তি লাগা, মুখে অবাঞ্চিত লোম বৃদ্ধি, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া, অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া এবং হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

হিউম্যান মেনোপজাল গোনাডোট্রপিন বা এইচএমজি

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ইনজেকশনের নাম হিসাবে এবারে এমন একটি ইনজেকশনের নাম বলবো যার একইসাথে দুটো হরমোন উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। বলছিলাম হিউম্যান মেনোপজাল গোনাডোট্রপিন ইনজেকশনের কথা। 

এটি একই সাথে এফএসএইচ এবং এলএইচ নামের দু’টো হরমোন নিশ্চিত করে থাকে। নারীদেহে এটি ডিম্বাশয়কে ডিমযুক্ত একাধিক ফলিকল তৈরিতে সাহায্য করে। 

দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায়

অনেক সময় গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম কিংবা ইনজেকশনের নাম জানাটাই কেবল একমাত্র সমাধান হিসাবে কাজ করে না। পাশাপাশি জানতে হয় দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার উপায় এবং মানতে হয় নিয়ম-কানুন। চলুন পয়েন্ট আকারে বিস্তারিত এ-ব্যাপারে আলোচনা করা যাক। 

১. ওজন সম্পর্কে সচেতন থাকুন 

যাদের ওজন অনেক বাড়তি থাকে তাদের দ্রুত গর্ভধারণের চান্স তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে। আপনি জেনে অবাক হবেন স্বাভাবিকের চাইতে যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের বাচ্চার চান্স দ্বিগুণ কম থাকে। 

পুরুষ কিংবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এই বাড়তি ওজন সন্তান ধারণক্ষমতাকে ধীর করে ফেলে। সুতরাং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন। 

২. নিয়মিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা

গর্ভাবস্থার আগে সকলেরই উচিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণে বাড়তি ফোকাস রাখা। দেহের উপযোগী ভিটামিন হিসাবে কোন কোন ভিটামিন গ্রহণ করতে হবে সেটি জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। 

তবে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে বা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়াটা জরুরি। এই ঔষধ সেবন করলে আপনার অনাগত সন্তানের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং তুলনামূলকভাবে সুস্থ থাকবে। 

৩. অতিরিক্ত ভার বহন না করা

আপনি কি প্রতিদিন জিমে হার্ড ওয়ার্ক আউট করেন? অথবা আপনকে কি একজন নারী হিসাবে ভারী ওজন বহন করতে হয় এমন কোনো কাজ নিয়মিত করতে হয়? যদি উত্তর “হ্যাঁ” সেক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিয়ে এখনই আপনাকে সচেতন হতে হবে। 

কারণ ভারী ব্যায়াম বা ভারী জিনিসপত্র বহনের কারণে নারী দেহে ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। আর ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়া মানেই গর্ভধারণের চান্স একেবারে শূণ্যের কোঠায় নেমে আসা। 

৪. হরমোনজনিত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হোন

অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রেই আজকাল পিসিওএস সমস্যা দেখা দেয়। এই পিসিওএস হলো একধরণের হরমোনজনিত সমস্যা। বিশেষ করে যাদের বাড়তি ওজন রয়েছে তারা এই ধরণের রোগে অনেক বেশি পরিমাণে ভুগে থাকেন। যদি এই রোগ ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। 

৫. নিজের যত্ন নিন

নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন। যদি গর্ভধারণে কোনো সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই আমরা যেসব গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম নিয়ে আলোচনা করেছি সেসব ট্রাই করতে পারেন। তবে ঝুঁকি এড়াতে এসব ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। নতুবা হিতে-বিপরীত হতে পারে। 

শেষ কথা

গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম এবং কার্যকারিতাসহ দ্রুত গর্ভধারণে কি কি জানা জরুরি সে-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছি। আশা করি উপরোক্ত প্রতিটি টিপস মাথায় রাখলে স্বপ্ন সত্যি হবে। তবে পাশাপাশি সচেতন ব্যাক্তি হিসাবে ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। 

সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে। নিজে কোনো ধরণের সিগারেট বা মদ্যপানে অভ্যস্ত হওয়া যাবে না। পাশাপাশি কেউ ধুমপান করলে তার আশেপাশে মোটেও ঘেঁষা যাবে না। আশা করি এসব টিপস ফলো করতে পারলে আপনিও একটি সুস্থ সবল নবজাতের অভিভাবক হতে সক্ষম হবেন। 

গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

১. গর্ভবতী না হওয়ার ঔষধের নাম কি কি? 

উত্তরঃ গর্ভবতী না হওয়ার ঔষধের নাম হলো আই পিল এবং নোরিক্স

২. মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়?

উত্তরঃ মাসিকের ১১ থেকে ১৪ দিন পর গর্ভধারণ হয়

৩. ওভুলেশন না হওয়ার কারণ কি? 

উত্তরঃ ওভুলেশন না হওয়ার কারণ হলো জরায়ুতে কোনো ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া

৪. ওভুলেশন হওয়ার ইনজেকশনের নাম কি?

উত্তরঃ অভুলেট সি ৫০০ হলো ওভুলেশন হওয়ার ইনজেকশনের নাম

৫. গর্ভধারণ না হওয়ার কারণ কি কি? 

উত্তরঃ গর্ভধারণ না হওয়ার কারণ হলো বাড়তি ওজন, ডায়াবেটিস, টেনশন কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন 

আরও পড়ুন-

সহবাসের নিয়ম নীতি, করনীয় ও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা

মাসিকের কতদিন পর গর্ভধারণ হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Leave a Comment