ঠান্ডার ওষুধের নামসমুহের তালিকা ও ব্যবহারবিধি

ঠান্ডার ওষুধের নাম 

বছরে একদুই বার সর্দি কাশি হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। এতে চিন্তার কোন কারন নেই। সর্দি কাশি যেমন হয় ঠিক তেমনি তা সারানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন ওষুধ। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সিরাপ ও ট্যাবলেট। আজকে আমাদের আলোচনার মুল বিষয় হল ঠান্ডার ওষুধের নাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা।

সারাবছর জুড়েই সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দিলেও শীতে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এসব রোগের জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে ঠান্ডার ওষুধের নাম জানার প্রয়োজন হয়। কিছু সর্তকতা অবলম্বন করলে এবং উপদেশ মেনে চললে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।

সর্দি -কাশির উপসর্গগুলো হল হাঁচি এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া, নাক আটকানো,  কখনও কাশি হতে পারে ইত্যাদি।  সর্দি কাশির ঔষুধ বিভিন্ন কাজ করে থাকে যেমন: বুক পরিষ্কার করা, ব্যাথা, অস্বস্তি দূর করা ,কাশি কমানো ইত্যাদি।  আপনার উপসর্গের উপর ভিত্তি করে ঠান্ডার ওষুধের নাম নির্বাচন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম, কার্যকারিতা ও চিকিৎসা

ঠান্ডা কাশি হওয়ার কারণ

ঠান্ডার ওষুধের নাম

ঠান্ডা কাশিতে যেকোন সময় যেকোন বয়সের লোকেরা আক্রান্ত হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের পর ঠান্ডা কাশিতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। ঠান্ডা কাশি সাধারনত ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে।

১। সাধারণ সর্দি

২। ইনর্ফলুয়েঞ্জা (র্ফলু)

৩। অ্যালার্জি

৪। হাঁপানি

৫। ব্রঙ্কাইটিস

৬। নিউমোনিয়া

৭। ধূমপান 

৮। পরিবেশগত কারণ (ধুলো,দূষণ)

ঠান্ডাজনিত সমস্যার প্রকারভেদ

১.কাশি: শিশুরা ঠান্ডাজনিত সমস্যার মধ্যে কাশির সমস্যায় সবচাইতে বেশি ভুগে থাকে। কাশির মধ্যে রয়েছে : শুকনো কাশি,হুপিং কাশি, র্করপ কাশি ইত্যাদি। 

২.র্করুপ কাশি: এই কাশির সময় একধরনের আওয়াজ হয় কারণ এই কাশিতে শিশিুদের ট্রাকিয়া বা শ্বাসনিালী ফুলে যায়। 

 ৩.শুকনো কাশি: ঘুমের সময় বা উষ্ণ তাপমাএায় শিশুদের বেশি কাশি হয়ে থাকে। এই কাশি ইনর্ফলুয়েঞ্জা জন্য হয়ে থাকে।

৪.সিক্ত কাশি: শ্বাসনালীতে শ্লোষা জমে ঘাওয়ার কারণে এই কাশি হয়ে থাকে।

৫.হুপিং কাশি: হুপিং কাশি শুরু হলে সহজে বন্ধ হয় না ।অনেক সময় ধরে বার বার এই কাশি হতে থাকে কখনও ৫থেকে ১৫ টি বা তার চাইতেও বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।  রাতের দিকে এই কাশি বেড়ে যায় এবং শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ হয়।

শিশুদের ঠাণ্ডা লাগার কারণ  

শিশুদের কাশির অনেক কারণ রেয়েছে। দুইটি কারণে শিশুদের সাধারণত ঠান্ডা লেগে থাকে। ১.সর্দি বা ঠান্ডা লাগা ২. র্ফলু ।

১.সর্দি বা ঠান্ডা লাগা: শিশুদের  নাক ও চোখ থেকে পানি পড়ে এবং নাক বন্ধ হয়ে যায়। সর্দির কারণে প্রচন্ড মাথাব্যাথা কখনো জ্বরও আসতে পারে।

২.র্ফলু: এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো  জ্বর,ডাইরিয়া বা বমিও হতে পারে কখনও শিশুদের নাক দিয়ে পানি পড়ে। 

গুরুত্বপূর্ণ ঠান্ডা কাশির ওষুধের নাম

নিম্নের আর্টিকেল থেকে আমরা বিভিন্ন রকম ঠান্ডার ওষুধের নাম জানবো। সর্দি কাশির ওষুধের জন্য কোন ডাক্তারের প্রেসেক্রপসনের দরকার হয় না। ঠান্ডার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের ঔষুধ বেঁছে নেওয়ার বিভিন্ন টিপস দেওয়া হলো: 

১। Histacin

২। Fexo 60/120

৩। Histalex

৪। Deslor

৫। Napa Extend

৬। Ebasten

৭। Neocilor

৮। Doxicap

৯। Carva 75

১০। Cefotil

১১। Cefotil Plus

১২। Cinaron.

১৩। Cinaron Plus

১৪। Adolef

১৫। Remocof

১৬। Adovas

১৭। E-cof

১৮। Fexo 60

১৯। Dslr

২০। Ace plus

২১। Napa extend

২২। Flamex 400

২৩। Metil.

২৪। Histacin

২৫। Histalex

২৬। Histanol

২৭। Histin

২৮। Tofen

ঠান্ডা কাশির ক্যাপসুল এর নাম

ট্যাবলেটের  তুলনায় ক্যাপসুল তাড়াতাড়ি কাজ করে থাকে।  ঠান্ডা কাশি  লাগলে চিকিৎসকরা ক্যাপসুল লিখে থাকে । নিম্নে  ঠান্ডার ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো:

১। Ambrox SR 75 mg

২। Acorex 30 mg.

৩। Ambeet 75 mg

৪। Ambozin SR 75 mg

৫। Ambroxol 75 mg

ঠান্ডা কাশির সিরাপের নাম 

বাচ্চা এবং বয়স্করা ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খেতে সমস্যা হয়। এই জন্য বাচ্চা এবং বয়স্কদেরকে অনেক সময় চিকিৎসক সিরাপ খাওয়ার পরমর্শ দেয়। নিম্নে ঠান্ডার ওষুধের নাম বা সিরাপের নাম লেখা হলো:

১। Ambrox

২। Adovas

৩। Tusca plus

৪। Boxol

৫। Ambolit

৬। Dexpoten

৭। Sudoku

৮। Ocof

বাচ্চাদের ঠান্ডা কাশির ঔষুধের নাম

বাচ্চাদের সর্দি কাশি লেগেই থাকে এজন্য প্রতিটি মা বাবার ঠান্ডার ওষুধের নাম সর্ম্পকে জানা প্রয়োজন। শিশুদের যদি সর্দি কাশি লেগে থাকে তাহলে বাবা-মা ফার্মেসী থেকে এই সিরাপগুলো খাওয়াতে পারে। এই সিরাপ গুলে খাওয়ালে ১-২ দিনের মধ্যে কমতে শুরু করে। এই সিরাপগুলো ডাক্তারের পরমর্শ ছাড়া খাওয়াতে পারেন।

১। মিইকোসল ড্রপ/সিরাপ

২। পিডিয়ামিন সিরাপ 

৩। টোফেন সিরাপ

৪। ফেক্সো সিরাপ

৫। এ্যাডভাস সিরাপ ১০০ মিলিগাম 

৬। তুসকা প্লাস ১০০ মিলিগ্রাম

৭। নেকটার ১০০ মিলিগ্রাম ।

৮। মধুবাস ১০০ মিলিগ্রাম ।

৯। রেমোকফ ১০০ মিলিগ্রাম ।

১০। বোক্সল ১০০ মিলিগ্রাম  ।

১১। ওকফ ১০০ মিলিগ্রাম।

১২। এমব্রক্স  ১০০ মিলিগ্রাম ।

১৩। রিমোকফ ১০০ মিলি সিরাপ ।

১৪। এডোলেফ ১০০ মিলি । 

১৫। ই -কফ প্লাস ১০০মিলি ।

ঠান্ডা কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা

ঠান্ডা কাশি সাধারণ সমস্যা  তাই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ঠান্ডা কাশির প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায় :

১। তুলসী পাতাঃ ঠান্ডা কাশি জন্য সবচাইতে ভালো উপাদান হলো তুলসী পাতা। গ্রামবাংলই তুলসী পাতা ঠান্ডার ওষুধের নাম হিসাবে খুব পরিচিত। তুলসী পাতা বেটে রস দিয়ে তার সাথে কিছুটা পানি মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা কাশি থেকে পরিএাণ পাওয়া যায় ।

২। কালোজিরা: কালোজিরাকে বলা হয়ে থাকে সকল রোগের ওষুধ। কালোজিরা ভেজে কিংবা কাঁচা অথবা বেটে যে কোন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। 

৩। আদা: আদা ঠান্ডার ওষুধের নাম হিসাবে আদা খুব জনপ্রিয়। আদা রস করে অথবা কাঁচা আদা খাওয়া যেতে পারে। আদা গরম পানি কিংবা চায়ের সাথে খাওয়া যেতে পারে যা দ্রুত ঠান্ডাকাসি সেরে যায়।

৪। গরম পানি: গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গারগাল করলে কাশি এবং গলা ব্যাথা কমে যায়।

ঠান্ডার ওষুধের নাম -প্রতিরোধের উপায়

১। দীর্ঘদিনের কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরমর্শ অনুযায়ী সিরাপ খেতে হবে। চিকিৎসক সাধারণত রুগীকে সাপ্রেসেন্ট অথবা এক্সপেক্টোরেন্ট দিয়ে থাকে।

২। কাশির জন্য ডিকনজেস্ট্যান্ট ইনহেলার, কর্টিকোস্টেরয়েড, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যাসিড ব্লকার বা ওমেপ্রাজল সেবন করতে পারেন।

৩। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এতে শ্লেষা পাতলা হবে এবং কফ গুলো দ্রুত পাতলা হয়ে উঠে যাবে ।কাশির জন্য স্যুপ,চা,গরম পানি গলার জন্য খুবিই উপকারী।

৪। মধু কাশি নিরাময়ে খুব কার্যকর মাধ্যম  প্রতিদিন ১ চা চামচ খাটি মধুর সাথে আদা চা,গরম চা বা আঙ্গুরের চা যোগ করে সেবন করতে হবে। 

৫। যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্স থাকে তবে অতিরিক্ত ভোজন বা ভাজাপোড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘুমানোর ২-৩ ঘন্টা আগে যদি রাতের খাবার শেষ করা যায় তবে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমে যায়। শরীরের ওজন কমানো গেলে এবং বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে ঘুমালে কাশি সর্দির সমস্যা অনেক কম হয়।

৬। হিউমিডিফায়ার এবং গরম পানি ব্যাবহার করা যায় শ্বাসনালীর আদ্রতা বজায় রাখার জন্য।

৭। তামাকজাত দ্রব্য এবং ধুমপান বন্ধ করতে হবে।

৮। ধুলাবালিতে অনেক সময় অনেকের সর্দি কাশি লাগে। তাই সর্দি-কাশি লোকেদের ধোঁয়া, ধুলো, ঝুল ঝাড়া,ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

৯। যে সকল লোকেদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তাদেরকে গোসলে হালকা গরম পানি আরামদায়ক হয়ে থাকে এবং হালকা গরম পানি শীতের সময় খাবেন।

১০। গরম পানির সাথে সামান্য লবণ মিশিয়ে কুচকুচ করলে গলা পরিষ্কার হয় এবং শ্লেষা থেকে মুক্তি মেলে।

১১। কাশি প্রতিরোধের জন্য নানা রকম ফল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবর নিয়মিত খেতে হবে।

১২। শিশুদেরকে হুপিং কাশির টিকা দেওয়ার ব্যাপপারে সচেতন হতে হবে ।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

শিশুদের খুবি সারাধরণ সমস্যার মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা লাগা,কাশি,সর্দি,জ্বর ইত্যাদি। এগুলো রোগের জন্য সাধারণত  শিশুদের যত্ন ও বিশ্রাম নিলে রোগ সেরে যায়। তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে যদি নিম্ন লিখিত লক্ষণগুলো শিশুদের মাঝে দেখা দেয় :

১. শিশু যদি শুকনো কাশিতে সাত দিনের বেশি সময় ধরে ভুগে। 

২. সর্দি ও জ্বর যদি কাশির সঙ্গে থাকে।

৩. শ্বাস নেওয়ার সময় যদি বার বার কাশি হয় এবং আওয়াজ হয়।

৪. শিশুর যদি ওজন কমে যায় এবং ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়।

৫. শিশু যদি সারারাত ধরে কাশতে থাকে।

৬. শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে।

শিশুর যত্নে করণীয়

১। স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যাওয়া সাথে নিয়মিত বুকের দুধ পান করানো।

২। শিশিুদেরকে পর্যাপ্ত কাপড় পরিধান করানো যাতে শিশুরা গরম থাকে।

৩। শিশুদেরকে রোদে রেখে শর্ষের তেল বা অলিভ-ওয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসেজ করা।

৪। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়ানো।

পরিশেষে

সর্দি কাশি আমাদের খুব কমন একটি রোগ। শীত শেষ হওয়ার পর আমরা এই সমস্যায় বেশি ভুগে থাকি। আমাদের সর্দি-কাশি হলে প্রথমেই ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরোয়া উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবে শিশু এবং বয়স্কদের ঠান্ডা লাগলে চিকিৎসকের পরমর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করাতে হবে। 

আরও পড়ুন-

হাটুর ব্যাথা সারানোর ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা

চিকেন পক্স এর চিকিৎসা, রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

Leave a Comment